রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ দুই সপ্তাহ আগে তিন কেজি পেঁয়াজ কিনেছিলেন। মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার থেকে কেনা প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৫০ টাকা। আজ রোববার তিনি আবার একই বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনেছেন, তবে এবার দাম দিতে হয়েছে কেজিতে ৬৫ টাকা। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ টাকা। পেঁয়াজের দাম বাড়ল ৩০ শতাংশ।

মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। একদিকে, সয়াবিন তেলের দাম বাড়ল, চালের দাম অনেক দিন ধরে চড়া, সবজির দামও আগের তুলনায় বেশি। এখন পেঁয়াজের দামও বাড়ল।

পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে পেঁয়াজচাষি, ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা প্রায় একই রকম তথ্য দিয়েছেন। তাঁরা জানান, জমিতে এখন আর কোনো পেঁয়াজ নেই। সব পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে উঠে গেছে। এসব পেঁয়াজের বেশির ভাগই কৃষক নিজেরা ও মজুতদারেরা কিনে সংরক্ষণ করছেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে দাম আরও বাড়বে, এমন আশায় তাঁরা বাজারে কম পরিমাণে পেঁয়াজ আনছেন। এসব কারণে পেঁয়াজের মৌসুম হওয়া সত্ত্বেও বাজারে পণ্যটির দাম বেড়ে গেছে।

আজ রাজধানীর শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউন হল বাজার ঘুরে দেখা যায়, এই তিন বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পাড়া-মহল্লায় সব ধরনের পেঁয়াজেই ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দাম রাখা হয়। এসব পেঁয়াজ মূলত ফরিদপুর ও মানিকগঞ্জ এলাকার। তবে পাবনায় উৎপাদিত পেঁয়াজের দাম আরেকটু বেশি, কেজি ৭০ টাকার আশপাশে।

বিক্রেতারা জানান, দুই সপ্তাহ আগেও পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কম ছিল। অর্থাৎ তখন এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায়। বাজারে বর্তমানে আমদানি করা পেঁয়াজ একেবারে কম। দু-এক দোকানে যা পাওয়া যায়, সেগুলোর কেজি ৫৫ টাকার আশপাশে।

পেঁয়াজের হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যেও উঠে এসেছে। টিসিবির হিসাবে, গত সপ্তাহে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ থেকে ৫০ টাকা। চলতি সপ্তাহে এই দাম বেড়ে ৪০ থেকে ৬৫ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ টিসিবির হিসাবেও কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। টিসিবির হিসাবে, গত বছর এ সময় পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।

ঢাকায় পেঁয়াজের খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদনস্থলেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা মো.

সেলিম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কৃষক ও আড়তদারের কাছ থেকে আমাদের বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। এ কারণে ঢাকার বাজারেও পণ্যটির দাম বাড়তি।’

উৎপাদনস্থলে কেমন দরদাম

দেশে পেঁয়াজের অন্যতম বড় উৎপাদনস্থল ও পাইকারি বিক্রির স্থান (মোকাম) হলো পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা। এই উপজেলায় গত শনিবার প্রতি মণ পেঁয়াজ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় (কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা) বিক্রি হয়েছে। অথচ সপ্তাহ দুয়েক আগেও এই পেঁয়াজের দাম ছিল মণপ্রতি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা (কেজি ৩০ থেকে ৩৮ টাকা)। অর্থাৎ প্রতি মণে দাম বেড়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।

বর্তমানে ঢাকার বাজারে ফরিদপুর এলাকার পেঁয়াজ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে ফরিদপুরের পাইকারি বাজারে মণপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৫০০ টাকা। গত শনিবার ফরিদপুরের অন্যতম বড় পেঁয়াজের বাজার বোয়ালমারী উপজেলার ময়েনদিয়া বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকায় (কেজি ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা)। পেঁয়াজের আরেক উৎপাদনস্থল মানিকগঞ্জে গত শনিবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ এখন ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

অর্থাৎ দেখা যায় উৎপাদনস্থলেই প্রতি কেজি পেঁয়াজ (পাইকারি) ৪৬ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই পেঁয়াজ ঢাকার খুচরা বাজারে আসতে আসতে দাম বেড়ে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায় ঠেকেছে।

দাম বাড়ার কী কারণ

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বোয়ালমারী হাটের পেঁয়াজের আড়তদার ও ব্যবসায়ী রাজা হোসেন এবং করমজা হাটের আড়তদার আবদুল মুন্নাফ জানান, ১৫ থেকে ২০ দিন আগপর্যন্ত কৃষকের জমি থেকে সরাসরি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। এখন জমিতে আর কোনো পেঁয়াজ নেই। সব পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে উঠে গেছে। এসব পেঁয়াজের বেশির ভাগই কৃষকেরা সংরক্ষণের জন্য মজুত করেছেন। আবার অনেক মজুতদারও সংরক্ষণের জন্য পেঁয়াজ কিনেছেন। কৃষক ও মজুতদারেরা দাম বাড়ার আশায় বাজারে পেঁয়াজ কম ছাড়ছেন।

অন্যদিকে, কৃষকেরা এবার চাষের খরচ তুলতে পেঁয়াজ তোলার মৌসুমে হাটে একসঙ্গে বেশি পেঁয়াজ এনেছিলেন। অর্থাৎ কৃষকেরা সংরক্ষণের অনুপযোগী পেঁয়াজ যা পেয়েছেন, সবই বাজারে এনেছেন। ফলে বাজারে সরবরাহ বেশি থাকায় পেঁয়াজের দাম কম ছিল। তবে এখন কৃষকের ঘরে বাছাই করা পেঁয়াজ মজুত আছে, যা লম্বা সময় ধরে সংরক্ষণ করা যাবে। ফলে তাঁরা বাজার পরিস্থিতি দেখে পেঁয়াজ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

এ ছাড়া চলতি বছর এখন পর্যন্ত দেশে ভারতীয় পেঁয়াজ তেমন আসছে না। এ কারণে দেশি পেঁয়াজের বেশ চাহিদা রয়েছে। এই সুযোগে কৃষকেরা কিছুটা দাম বাড়াতে পেরেছেন।

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার কয়ড়া গ্রামের পেঁয়াজচাষি মো. রুবেল হোসেন জানান, তিনি এ বছর দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। তবে রোজার মাসে বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো বাতাসের কারণে পেঁয়াজ গাছ নুয়ে পড়ে। এতে ফলন কম হয়েছে। বর্তমানে পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় তিনি বাড়িতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে রেখেছেন। কয়েক দিন পরে তা বিক্রি করবেন।

এদিকে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় বড় লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন কৃষক। যেমন ফরিদপুরের সালথা উপজেলার খোয়ার গ্রামের পেঁয়াজচাষি মাফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর আমরা মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম পাইনি। অনাবৃষ্টির কারণে তিন দফা সেচ দিতে হয়েছে। ফলে পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এখন দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ উঠছে। তবে পেঁয়াজের দাম মণপ্রতি ৩ হাজার (কেজি ৭৫ টাকা) না হওয়া পর্যন্ত আমরা লাভজনক অবস্থায় যেতে পারব না।’

ফরিদপুর জেলার জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সাহাদাত হোসেন বলেন, বর্তমানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। বেশি দামের আশায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করছেন বলে বাজারে পেঁয়াজ কম আসছে। এ ছাড়া পেঁয়াজের আমদানি কম হওয়ায় দাম বেড়ে গেছে।

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, ফরিদপুর; প্রতিনিধি, বেড়া, পাবনা ও প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ)

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ উপজ ল র ব যবস য় আড়তদ র ৫৫ ট ক ৬৫ ট ক উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মায় জেলের জালে ধরা পড়ল ১১ কেজির কাতল

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে পদ্মা নদীতে ধরা পড়েছে ১১ কেজি ওজনের একটি কাতল মাছ। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ভোরের দিকে উপজেলার চালা ইউনিয়নের দিয়াপাড় এলাকার মৎস্য শিকারী রাজ্জাকের জালে মাছটি ধরা পড়ে। 

মাছ ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা জানান, আজ সোমবার ভোরে আন্ধারমানিক আড়তের সুবাশ রাজবংশীর আড়তে মাছটি তোলেন রাজ্জাক। নিলামে মাছটি ১২ হাজার ৬০০ টাকায় কিনে নেন ব্যবসায়ী ইয়েমেল। তিনি মাছটি বলড়া বাজারে নিয়ে যান। সেখানে বলড়া ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের হাসান আলী ১৪ হাজার ৬০০ টাকায় মাছটি কিনে নেন। 

আরো পড়ুন:

জেলের জালে ২ কেজির ইলিশ, ৬ হাজার টাকায় বিক্রি

আরাকান আর্মির ধাওয়ায় নাফ নদীতে ট্রলার ডুবি

আড়তদার হৃদয় রাজবংশী বলেন, ‍“পদ্মা নদী থেকে সোমবার ভোরে কাতল মাছটি ধরেন রাজ্জাক। আজ সকালে আড়তে নিয়ে আসলে বলড়া বাজারের মাছ ব্যবসায়ী ইয়েমেল মাছটি কিনে নেন।” 

ইয়েমেল বলেন, “আজ সাড়ে ১১ কেজির কাতল মাছটি ১২ হাজার ৬০০ টাকায় কিনে সুলতানপুরের হাসান কাকার কাছে ১৪ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করেছি।”

হরিরামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নুরুল ইকরাম বলেন, “মানিকগঞ্জের পদ্মা নদীতে মাঝে মাঝে বড় বড় পাঙাশ, আইড়, কাতল, চিতল ও বোয়াল মাছ  ধরা পড়ে। আজ বড় একটি কাতল মাছ ধরা পড়েছে।” 

ঢাকা/চন্দন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পদ্মায় জেলের জালে ধরা পড়ল ১১ কেজির কাতল