একটি গণহত্যাকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং তাদের বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। পাশাপাশি এই দলকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হলে মুক্তিকামী ছাত্র–জনতা তা রুখে দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দেয় তারা।

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হলের শহীদ পার্ক মসজিদ চত্বরে এক বিক্ষোভ সমাবেশে দলটির নেতারা এসব কথা বলেন। এনসিপির বৃহত্তর মোহাম্মদপুর জোনের উদ্যোগে ‘আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ, সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি’তে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহীদ পার্ক মসজিদ চত্বর থেকে শিয়া মসজিদ হয়ে আদাবর থানার সামনে গিয়ে শেষ হয়।

এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব আকরাম হুসাইন বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে মোহাম্মদপুরে ২০-৩০ জন শহীদ হয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাঁদের গেজেট যেমন প্রকাশ করা হয়নি, তেমনি খুনিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক।

প্রশাসনের আড়ালে এখনো আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের পাঁয়তারা হচ্ছে অভিযোগ করে এই নেতা বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক, যা এই অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে প্রত্যক্ষ গাদ্দারি। একটি গণহত্যাকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগের বিচার করতে নতুন কোনো আইন দরকার নেই। যে মামলা হয়েছে, সেই মামলায় গ্রেপ্তার করা যায়।

সংস্কারের বিকল্প নেই উল্লেখ করে আকরাম হুসাইন বলেন, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবল অভ্যুত্থান–পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব। এর অন্যথা হলে আবারও বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবে।

এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) ইমরান ইমন বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর, প্রেতাত্মারা এখনো বিভিন্ন জায়গায় রাজপথে নামার সাহস করছে। এনসিপি ও দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের কোনো ধরনের আস্ফালন বরদাশত করবে না। যারা আমাদের ভাইদের খুন করেছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, নির্যাতন-নিপীড়নের রাজনীতি করেছে, সেই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে কোনো প্রকার রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার রাখে না।

এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেন, যাঁরা বলেন আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন হলে গণতান্ত্রিক নির্বাচন হবে না, তাঁদের বলে দিতে চাই, জুলাইয়ে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁরা আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে রাজপথে নেমেছেন। আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা রাজপথ ছাড়বে না। আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের সঙ্গে কোনো আপস নয়।

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ঠাঁই হবে না উল্লেখ করে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করে পুনর্বাসনের চেষ্টার দুরভিসন্ধি করা হলে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে পরপর তিনটি নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য মীর হাবীব আল মানজুর। তিনি বলেন, যারা আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতির সাথি ছিল, সবাইকে বিচার করতে হবে। দলের আরেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দিন মাহাদী বলেন, গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনাকে দিল্লি থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক এম এম শোয়াইব বলেন, আওয়ামী লীগের ভালো লীগ বা মন্দ লীগ বলে কিছু নেই। তাদের একটাই পরিচয় গণহত্যাকারী লীগ। অবিলম্বে তাদের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং দল হিসেবে তাদের বিচার ও নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানান তিনি।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নেতা মুসফিক উস সালেহীন, আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, মুশফিকুর রহমান জোহান, রফিকুল ইসলাম এবং এনসিপি মোহাম্মদপুর জোনের নেতারা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এনস প র ক ন দ র ম হ ম মদপ র গণহত য আওয় ম সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল

ইসরায়েল আবারও ইরানে বড় রকমের হামলা করেছে। হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। হামলা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি ও আবাসিক এলাকায়। একদিন পর পাল্টা হামলা চালায় ইরান। এতে কয়েকজন ইসরায়েলি নিহত হয়। ধ্বংস হয় তেলআবিবের কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

ইসরায়েল তার ইরানবিরোধী এ হামলার নাম দিয়েছে ‘রাইজিং লায়ন’। এ নাম রাখা হয়েছে হিব্রু বাইবেলের একটি চরণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। যে নাম ইসরায়েলের একটি শক্তিশালী ও বিজয়দীপ্ত ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দেয়।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার ইহুদিদের সবচেয়ে পবিত্র উপাসনাস্থল জেরুজালেমের ওয়েস্টার্ন ওয়ালের একটি ফাটলে হাতে লেখা একটি চিরকুট রেখে আসার সময় ছবি তোলেন। এটি ছিল মূলত ইরানে ইসরায়েলের হামলার ইঙ্গিত।

শুক্রবার তার অফিস থেকে সেই চিরকুটে একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। সেখানে লেখা ছিল: ‘জনগণ সিংহের মতো উঠে দাঁড়াবে।’

এই বাক্যাংশটি হিব্রু বাইবেলের গ্রন্থ বুক অব নাম্বারস (গণনা পুস্তক) ২৩:২৪ পদ থেকে এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে: ‘দেখো, এই জাতি একটি মহান সিংহের মতো উঠে দাঁড়াবে এবং একটি তরুণ সিংহের মতো নিজেকে উদ্দীপ্ত করবে; সে শিকার না খাওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেবে না এবং নিহতদের রক্ত না পান করা পর্যন্ত থামবে না।’

এই চরণটি হিব্রু বাইবেলের অ-ইসরায়েলীয় একজন নবী ও ভবিষ্যদ্বক্তা বালামের প্রথম ভবিষ্যদ্বাণীর অংশ। সেখানে তিনি ইসরায়েলের শক্তি ও ক্ষমতার কথা বলেন। তাদের এমন এক সিংহের সঙ্গে তুলনা করেন যে নিজের ক্ষুধা না মেটানো পর্যন্ত বিশ্রামে যায় না।

অনেকেই মনে করেন, এই অভিযানের নাম ইরানের শেষ শাহ-এর পুত্রের প্রতি ইঙ্গিত হতে পারে। কারণ পারস্য রাজপরিবারের প্রতীক হিসেবেও সিংহ ব্যবহৃত হতো।

ইসরায়েলের ঐশ্বরিক অধিকারের দাবি

ইসরায়েল প্রায়শই তার সামরিক অভিযানের নাম হিব্রু বাইবেল বা ওল্ড টেস্টেমেন্ট থেকে নেয় বা ধর্মীয় অনুপ্রেরণা থেকে গ্রহণ করে। ফিলিস্তিনি ভূমির উপর ইহুদিদের তথাকথিত ঐশ্বরিক অধিকারের দাবি এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের যুদ্ধকে ন্যায্যতা দিতে ইসরায়েল এসব ধর্মীয় বিষয় ব্যবহৃত করে বলে অনেকে মনে করে থাকেন।

উদাহরণস্বরূপ, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সিরিয়ার সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে চালানো এক অভিযানের নাম দিয়েছিল, ‘অ্যারো অব বাশান।’ ‘বাশান’ শব্দটি ইসরায়েলিদের ধর্মগ্রন্থ ওল্ড টেস্টামেন্টে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি দিয়ে মূলত সিরিয়ার দক্ষিণ ও জর্ডান নদীর পূর্বে অবস্থিত একটি অঞ্চলকে নির্দেশ করা হয়। বাশানের রাজাকে পরাজিত করে ইসরায়েলিরা সেই অঞ্চলকে দখল করেছিল।

গাজা উপত্যকার ওপর হামলা চালাতেও অস্ত্র ও অভিযানের জন্য হিব্রু বাইবেলীয় প্রতীক বা অনুষঙ্গ ব্যবহার করছে ইসরায়েল। নেতানিয়াহু অন্তত তিনবার গাজায় আক্রমণের জন্য হিব্রু বাইবেলীয় আমালেক কাহিনি ব্যবহার করেছেন।

২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু হিব্রু বাইবেল ও ওল্ড টেস্টামেন্টের গ্রন্থ ‘বুক অব ডিউটেরনমি’(২৫:১৭) এর থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন:

‘আমালেক তোমার সঙ্গে যা করেছিল তা মনে রেখো, আমরা মনে রাখি এবং আমরা যুদ্ধ করি।’

এর মধ্য দিয়ে গাজাবাসীদের উপর পূর্ণাঙ্গ হামলা করা উচিত বলে নেতানিয়াহু ইঙ্গিত করেন। কারণ ডিউটেরনমির এই উদ্ধৃতি বাইবেলের স্যামুয়েল গ্রন্থে বর্ণিত আমালেকীয়দের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ ধ্বংসের আহ্বান হিসেবে বিবেচিত হয়।

বাইবেলের এ কাহিনিতে ইসরায়েলিদের ওপর আক্রমণকারীদের সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার আহ্বান জানানো হয়েছে। গাজার গোটা জনসংখ্যাকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দিতে বাইবেলের এ কাহিনিকে হাজির করেছেন নেতানিয়াহু।

গণহত্যার মামলায় নেতানিয়াহুর বক্তব্য

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা গণহত্যার মামলায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) প্রথম শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষের আইনজীবী হিব্রু বাইবেলের উদ্ধৃতির মাধ্যমে নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যকে গাজার জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যায় প্ররোচনা হিসেবে তুলে ধরেন।

আইনজীবী আরও জানান, নেতানিয়াহু ৩ নভেম্বর সেনাদের উদ্দেশ্যে লেখা আরেকটি চিঠিতে একই আমালেকীয় গল্প পুনরাবৃত্তি করেন।

ধর্মীয় নাম ব্যবহার করে সামরিক প্রযুক্তি

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি গাজায় বোমাবর্ষণে সহায়তা করছে, তাদের নাম ‘ল্যাভেন্ডার’ এবং ‘দ্য গসপেল’, যা উভয়ই হিব্রু বাইবেলীয় ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।

টিআরটি ওয়ার্ল্ডের বিশ্লেষক রাভালে মহিদিনের মতে, প্রায়ই ধর্মীয় ধর্মগ্রন্থ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ইসরায়েলের অস্ত্রের নামকরণ করা হয়। যেমন, স্যামসন রিমোট কন্ট্রোলড ওয়েপন স্টেশন।

জেরিকো ব্যালিস্টিক মিসাইল-এর নাম রাখা হয়েছে জেরিকো শহরের নামে। হিব্রু বাইবেল ও ওল্ড টেস্টামেন্টের একটি গ্রন্থ ‘বুক অব যশুয়া’ অনুসারে ইসরায়েলিরা এই শহর ফিলিস্তিনিদের কাছ দখল করেছিল।

ডেভিড’স স্লিং নামক আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার নাম রাখা হয়েছে বাইবেলের মেষপালক ডেভিড ও বিশাল যোদ্ধা গোলিয়াথের মধ্যকার বিখ্যাত সেই লড়াইয়ের স্মরণে, যেখানে ডেভিডের বিজয় হয়েছিল। এই কাহিনী আছে হিব্রু বাইবেল ও ওল্ট টেস্টামেন্টের একটি গ্রন্থ ‘বুক অব স্যামুয়েল’-এ।

*দ্য নিউ আরব, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম। টিআরটি ওয়ার্ল্ডের বিশ্লেষক ও হার্ভার্ডের গবেষক রাভালে মহিদিনের একটি লেখার অবলম্বনে দ্য নিউ আরব এ বিশ্লেষণটি প্রকাশ করেছে। অনুবাদ করেছেন: রাফসান গালিব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ভালো উদ্যোগ নিলেও বিরোধিতা আসে
  • যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
  • তেহরানে ইসরায়েলের বিমান হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল