আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি
Published: 21st, April 2025 GMT
একটি গণহত্যাকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং তাদের বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। পাশাপাশি এই দলকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হলে মুক্তিকামী ছাত্র–জনতা তা রুখে দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দেয় তারা।
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হলের শহীদ পার্ক মসজিদ চত্বরে এক বিক্ষোভ সমাবেশে দলটির নেতারা এসব কথা বলেন। এনসিপির বৃহত্তর মোহাম্মদপুর জোনের উদ্যোগে ‘আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ, সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি’তে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহীদ পার্ক মসজিদ চত্বর থেকে শিয়া মসজিদ হয়ে আদাবর থানার সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব আকরাম হুসাইন বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে মোহাম্মদপুরে ২০-৩০ জন শহীদ হয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাঁদের গেজেট যেমন প্রকাশ করা হয়নি, তেমনি খুনিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক।
প্রশাসনের আড়ালে এখনো আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের পাঁয়তারা হচ্ছে অভিযোগ করে এই নেতা বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক, যা এই অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে প্রত্যক্ষ গাদ্দারি। একটি গণহত্যাকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগের বিচার করতে নতুন কোনো আইন দরকার নেই। যে মামলা হয়েছে, সেই মামলায় গ্রেপ্তার করা যায়।
সংস্কারের বিকল্প নেই উল্লেখ করে আকরাম হুসাইন বলেন, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবল অভ্যুত্থান–পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব। এর অন্যথা হলে আবারও বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবে।
এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) ইমরান ইমন বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর, প্রেতাত্মারা এখনো বিভিন্ন জায়গায় রাজপথে নামার সাহস করছে। এনসিপি ও দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের কোনো ধরনের আস্ফালন বরদাশত করবে না। যারা আমাদের ভাইদের খুন করেছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, নির্যাতন-নিপীড়নের রাজনীতি করেছে, সেই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে কোনো প্রকার রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার রাখে না।
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেন, যাঁরা বলেন আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন হলে গণতান্ত্রিক নির্বাচন হবে না, তাঁদের বলে দিতে চাই, জুলাইয়ে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁরা আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে রাজপথে নেমেছেন। আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা রাজপথ ছাড়বে না। আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের সঙ্গে কোনো আপস নয়।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ঠাঁই হবে না উল্লেখ করে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করে পুনর্বাসনের চেষ্টার দুরভিসন্ধি করা হলে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে পরপর তিনটি নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য মীর হাবীব আল মানজুর। তিনি বলেন, যারা আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতির সাথি ছিল, সবাইকে বিচার করতে হবে। দলের আরেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দিন মাহাদী বলেন, গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনাকে দিল্লি থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক এম এম শোয়াইব বলেন, আওয়ামী লীগের ভালো লীগ বা মন্দ লীগ বলে কিছু নেই। তাদের একটাই পরিচয় গণহত্যাকারী লীগ। অবিলম্বে তাদের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং দল হিসেবে তাদের বিচার ও নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানান তিনি।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নেতা মুসফিক উস সালেহীন, আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, মুশফিকুর রহমান জোহান, রফিকুল ইসলাম এবং এনসিপি মোহাম্মদপুর জোনের নেতারা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এনস প র ক ন দ র ম হ ম মদপ র গণহত য আওয় ম সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ