রাজারহাটে অপরিকল্পিতভাবে কৃষিজমিতে বসতবাড়ি নির্মাণ ও পুকুর খনন করা হচ্ছে। এতে গত পাঁচ বছরে উপজেলায় ৩৫১ হেক্টর ফসলি জমি কমেছে। এটি ফসল উৎপাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
উপজেলা কৃষি ও পরিসংখ্যান দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজারহাট উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ৬৩টি গ্রামে ২০০৮ সালে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৮৮১ হেক্টর। বর্তমানে সে জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৬৬৩ হেক্টরে। গত ৫ বছরে উপজেলায় ফসলি জমি কমেছে ৩৫১ হেক্টর। বেসরকারি হিসাবে, এ পরিমাণ আরও বেশি। জমি কমার কারণ– জনসংখ্যা বৃদ্ধি, যৌথ পরিবার ভেঙে নতুন ঘরবাড়ি তৈরি, অফিস ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ। এসব তথ্য কৃষি অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয় বলে জানান উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা এটিএম রিয়াসাদ। এসব তথ্য পাওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কেন ব্যবস্থা নেয়না তা নিয়ে প্রশ্ন সচেতন মহলের।
স্থানীয়রা বলছেন, পৌরসভা বা জেলা শহরে বাড়ি নির্মাণে প্ল্যানসহ অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হলেও গ্রামাঞ্চলে এ নিয়ম মানছে না কেউ। বিধিনিষেধ পালনে কঠোরতা না থাকায় জমি ভরাট করে প্রতিবছর শত শত বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে। দশ বছর আগেও গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাটের দু’ধারে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ছিল শুধু জমি আর জমি। এখন তা নেই। এমনকি বিল, জলাশয় ও প্লাবনভূমি পর্যন্ত ভরাট করে বাড়িঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
গ্রাম ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার হরিশ্বর তালুক মৌজার দেউলার বিলে ২৫ বছর আগে ৫ শতাধিক একর আবাদি জমি ছিল। কৃষকরা সেখানে ধান, পাটসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ করতেন। বর্ষাকালে পানি আর শুকনো মৌসুমে জমির আইল ছাড়া আর কিছুই দেখা যেত না বিলে। এখনকার চিত্র ভিন্ন। দুই সহস্রাধিক ঘরবাড়ি নির্মাণ করে মানুষ বসবাস করছে। যাতায়াতের জন্য তৈরি হয়েছে একাধিক কাঁচা-পাকা রাস্তা। খনন করা হয়েছে পুকুর। প্রতিবছর নতুন নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে বিলে। একই অবস্থা চাকিরপশার বিল, ইটাকুড়ির দোলা, ঘড়িয়ালডাঙ্গা, জুগিদাহ, উকিলের ছড়া, খাউরিয়ার দোলা, বেদারজাল, জোকমারীর দোলাসহ ছোট-বড় ৩০টি বিল, জলাশয় ও প্লাবনভূমির। বর্ষাকালে এসব বিলে মাছ ও শুষ্ক মৌসুমে ধান চাষ হতো। এখন এগুলো সংকুচিত হয়েছে। চারধারে ভরাট করে মানুষ গড়ে তুলেছে বসতবাড়ি ও হাটবাজার।
চাকিরপশার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম বলেন, নতুন বসতভিটা স্থাপন বা নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বিধান আছে। তবে রাজারহাটে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে খেয়ালখুশিমতো বসতবাড়ি নির্মাণ করায় ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ প্রবণতা বাড়ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার সাথী বলেন, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা শক্তিশালী হলে অর্থনৈতিক অবস্থাও স্থিতিশীল থাকে। তখন বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। আর খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন কৃষিজমি। সেই কৃষিজমিই কমছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষিজমির বিকল্প নেই।
ইউএনও মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস থ বসতব ড় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।