সহিংসতার মামলা প্রত্যাহারের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
Published: 22nd, April 2025 GMT
ভারতে ওয়াক্ফ সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে সহিংসতার ঘটনায় করা মামলা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। গতকাল সোমবার বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি এন কে সিংহের বেঞ্চ ওই মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ সময় মামলাকারী আইনজীবীকে কড়া ভাষায় ধমকও দেন বিচারক। একই সঙ্গে আইনটি বাতিলের দাবিতে দেশটিতে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। গত রোববার তেলেঙ্গানা রাজ্যে বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গত ৮ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে গোটা ভারতে ওয়াক্ফ কার্যকর করা হলে মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এতে তিনজন নিহত হয়। মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গায় বোমাবাজি, বাড়িঘর, দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। রেলগেটে হামলা-ভাঙচুরসহ যানবাহনে আগুনও দেওয়া হয়।
পরে ওই সহিংসতার তদন্ত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন আইনজীবী শশাঙ্ক শেখর ঝা। মামলায় তিনি সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে ঘটনার তদন্ত দাবি করেছিলেন। সেই মামলা এখন প্রত্যাহার করার নির্দেশ এলো। মামলাটি নিয়ে গতকাল একাধিক প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। কোন তথ্যের ভিত্তিতে মামলাটি করা হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। মামলায় দেওয়া ভুল তথ্য সংশোধন করে নতুন করে মামলার অনুমতি দিয়েছেন বিচারপতিরা।
আদালত জানিয়েছেন, নাগরিকদের সমস্যা নিয়ে মামলার শুনানিতে আপত্তি নেই। কিন্তু এই মামলাটি শুধু সংবাদমাধ্যমের খবরের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। আদালতের বক্তব্য, যাদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে, যারা ঘরছাড়া হয়েছে, তাদের তথ্য মামলায় থাকতে হবে। তা না হলে অভিযোগের আইনি দিক স্পষ্ট হবে না।
এদিকে ওয়াক্ফ সংশোধনী আইনের সব দিক নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে গুরুত্ব সহকারে অধ্যয়ন করার আহ্বান জানিয়েছে দ্য হিন্দু। গণমাধ্যমটি তাদের সম্পাদকীয়তে লিখেছে, সরকার কিছু বিতর্কিত বিধানের ওপর জোর দেওয়ায় মুসলমানদের মধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। আইনে রাজ্যকে ওয়াক্ফ সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের একতরফা ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এসব বিতর্কিত বিষয় সরকারকে বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছে তারা।
অন্যদিকে তেলাঙ্গানা রাজ্য সরকারের উপদেষ্টা মোহাম্মদ আলী শাব্বির গত রোববার নিজামবাদ শহরে আইনটি বাতিল দাবিতে সমাবেশে নেতৃত্ব দেন। তিনি মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, ওয়াক্ফ আইন সংশোধনের মাধ্যমে সরকার মুসলিমদের ধর্মীয় সম্পদ ও প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দক্ষিণ ভারতের নিষ্পেষিত মুসলিম নারীদের কণ্ঠস্বর
বানু মুশতাক বললেন, ‘মানুষ ও তার মৌলিক স্বভাব সবখানেই একই ধরনের। এটাই আমার লেখার উদ্দেশ্য। আমার বিষয়বস্তু নারী, প্রান্তিক মানুষ, কণ্ঠহীন সমাজের কণ্ঠস্বর হওয়া।’
বানু মুশতাকের মাধ্যমে এ বছরই প্রথম কোনো ছোটগল্প সংকলন বুকার জিতেছে। আবার কন্নড় ভাষাতেও এসেছে প্রথম বুকার। হার্ট ল্যাম্প ইংরেজি ভাষায় অনূদিত বানু মুশতাকের প্রথম বই। তাঁর বয়স এখন ৭৭ বছর।
বানু মুশতাক একজন আইনজীবী, সমাজকর্মী ও লেখক। ১৯৮১ সাল থেকে তিনি গল্প লিখছেন। হার্ট ল্যাম্প তাঁর বিভিন্ন সময়ে লেখা গল্পের একটি সংকলন। তাঁর গল্পে দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকের মুসলিম নারীদের জীবনের গল্প ফুটে উঠেছে। সেখানে দেখানো হয়েছে, তাঁরা কীভাবে পারিবারিক রীতির জাঁতাকলে পড়েন।
বানু মুশতাক বলেন, ‘হ্যাঁ, মেয়েরা, আজও তারা অবহেলিত। আর ঘর থেকেই এর শুরু।’
তাঁর অনুবাদক দীপা ভাস্তি বলেন, ‘এই গল্পগুলো একটি সুনির্দিষ্ট অঞ্চলের সুনির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও একেবারে সর্বজনীন।’
একজন আইনজীবী ও সমাজকর্মী হিসেবে তাঁর কাজ লেখালেখিতে কী প্রভাব ফেলে—এ প্রশ্নের জবাবে বানু মুশতাক বলেন, ‘কেউ যখন কোনো আইনি সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসে, তখন তারা তাদের সব অনুভূতি ভাগ করে নিতে চায়। সেসব তাড়না আমার মধ্যে ক্রমাগত বাড়তে থাকে। তারপর একদিন ছোটগল্পে পরিণত হয়।’
কিন্তু আইনি মামলা নাহয় সমস্যার সমাধান করতে পারে, ছোটগল্প কি পারে? ‘অবশ্যই। কারণ নীরবতা কোনো সমাধান নয়। তারা যে পাল্টা লড়াই করতে পারে, সেই দৃষ্টিভঙ্গি আমি গল্পের মাধ্যমে দিয়েছি।’
বানু মুশতাকের ‘কালো গোখরারা’ গল্পে একজন নারীকে জানানো হয়েছে, ইসলাম নারীদের শিক্ষিত হওয়ার এবং কাজ করার কথা বলেছে। কিন্তু সমাজ সুবিধার জন্য তাদের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখে। গল্পে আমি বলেছি, নিজের অধিকারের কথা বলো।’ বলেন বানু মুশতাক।
বানু মুশতাকের গল্পে কমেডিও আছে। তাঁর ভাষ্য, ‘এই স্টাইল ব্যবহারের কারণ আমি ক্ষমতাকাঠামোর মুখে সত্য বলছি। পিতৃতন্ত্র, রাজনীতি, ধর্ম—সব একসঙ্গে মিলিয়েই ক্ষমতাকাঠামো। খুব গম্ভীর সুরে কথাটি বললে এর পরিণতি যা–ই হোক না কেন, আমি দায়বদ্ধ থাকব। তাই আমি ব্যঙ্গাত্মক মোচড় দিই। সেলফ সেন্সরশিপের বদলে এই কৌশল ব্যবহার করি।’
অনুবাদক ভাস্তি বলেন, ‘নারীরা যে পুরুষদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, রসিকতা করে এই গল্পে সেটাই বোঝানো হয়েছে।’
বানু মুশতাক বান্দায়া সাহিত্যের (কন্নড়ের প্রতিবাদী সাহিত্য আন্দোলন) ঐতিহ্যে লিখেছেন। ১৯৭০–এর দশকে লেখকেরা ছিলেন ‘বেশির ভাগ পুরুষ এবং উচ্চবর্ণের’। সে আন্দোলনের স্লোগান ছিল, ‘লেখক হলে আপনিও একজন যোদ্ধা’। এটি নারী ও সংখ্যালঘু লেখকদের নিজস্ব পরিচয়ে লিখতে উত্সাহিত করেছিল।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ
রবিউল কমল