চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ নৌপথে ফেরি চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হচ্ছে আগামীকাল বুধবার। নৌপথটিতে নির্ধারিত ফেরিটির চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তারা।

এর আগে গত ২৪ মার্চ নৌপথটিতে ফেরি চলাচল শুরু হয়। কপোতাক্ষ নামের একটি ফেরির মাধ্যমে যাত্রী পরিষেবা দেওয়া হচ্ছিল। ফেরিটির চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সন্দ্বীপ যাত্রী কল্যাণ পরিষদ নামে একটি সংগঠন আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলা পরিষদের মূল ফটকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে।

বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মৌসুমি আবহাওয়া দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকায় এই সামুদ্রিক রুটে কপোতাক্ষের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এটিকে অভ্যন্তরীণ নৌরুটে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কপোতাক্ষকে ফিরিয়ে নেওয়ার পর সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ ফেরিঘাটটিও আপাতত সচল রাখা যাচ্ছে না। তবে বিআইডব্লিউটিসির যাত্রীবাহী জাহাজ এমভি মালঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার অব্যাহত থাকবে। এমভি মালঞ্চ দুই পাড়ে ফেরিঘাটের পন্টুন থেকে যাত্রী ওঠানামা করাবে।

এস এম আশিকুজ্জামান আরও বলেন, ফেরি কপোতাক্ষ এই রুট থেকে চাঁদপুরে ফিরে যাবে। এই রুটে দুটি সি-ট্রাক নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে। প্রক্রিয়া শেষ হতে জুন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কোনো যানবাহন আটকে না পড়া সাপেক্ষে বুধবার থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করা হবে।

সন্দ্বীপের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিগ্যান চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ হওয়ার বিষয়টি বিআইডব্লিউটিসির এক উপমহাব্যবস্থাপক মৌখিকভাবে তাঁকে অবহিত করেছেন।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, শুরু থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কপোতাক্ষ এই পথে বছরব্যাপী চলাচলের উপযুক্ত নয়। এই পথে চলাচলের জন্য তখন উপকূলীয় ফেরি নিয়ে আসার কথা বলা হয়। বিআইডব্লিউটিসির নির্মাণাধীন একটি উপকূলীয় ফেরি আগামী অক্টোবরের মধ্যে এই পথে সংযুক্ত হতে পারে।

ফেরি বন্ধের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার সন্দ্বীপ প্রেসক্লাবে একটি সভা ডেকে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করে সন্দ্বীপ যাত্রী কল্যাণ পরিষদ। সংগঠনটির অন্যতম সমন্বয়কারী ওমর ফয়সাল বলেন, ‘বিরূপ আবহাওয়ায় ফেরি বন্ধ হতে পারে। তবে ঘাট অচল করে ফেরিটি অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদ জানাচ্ছি আমরা। আমরা চাই, ফেরি কপোতাক্ষ পরিষেবা সাময়িক বন্ধ থাকলেও এই ঘাট ছেড়ে না যাক। আবহাওয়া অনুকূলে থাকা সাপেক্ষে বিরতি দিয়ে হলেও ফেরি সেবা অব্যাহত থাকুক।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উপপরিচালক মো.

কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, সি-ট্রাক না আসা পর্যন্ত ঘাটটি হয়তো আর সচল রাখা সম্ভব হবে না।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট

পদ্মা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ভাঙন বেড়ে যাওয়ায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। এ ছাড়া ঘাটসংলগ্ন বহু স্থাপনা রয়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয় সূত্র জানায়, দৌলতদিয়ার সাতটি ফেরিঘাটের মধ্যে ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট সচল। ৬ নম্বর ঘাট থাকলেও এখনো সচল করা যায়নি। এ ছাড়া কয়েক বছর আগে ১, ২ ও ৫ নম্বর ঘাট নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।

গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাটসহ মধ্যবর্তী এলাকার ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে ৪ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাটে কিছু বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্র বলছে, দৌলতদিয়া ঘাটের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় বর্তমানে সচল সব ঘাটই (৩, ৪ ও ৭ নম্বর) ভাঙনের ঝুঁকিতে। এর মধ্যে ৪ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাট বেশি ঝুঁকিতে।

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘ভাঙন দেখা দেওয়ায় ফেরিঘাট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিআইডব্লিউটিএকে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছি। তিনটি ঘাট সচল থাকলেও ভাঙন আরও বৃদ্ধি পেলে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নেপাল চন্দ্র দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফেরিঘাটের দুই কিলোমিটারজুড়ে ভাঙন দেখা দেয়। ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জরুরি মেরামত ও সংরক্ষণকাজের অংশ হিসেবে তিন দিনে প্রায় সাত শ বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। তবে ফেরিঘাটের মধ্যবর্তী এলাকায় বস্তা ফেলা হয়নি। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ মিললে বাকি কাজ করা যাবে।

ঘাটসংলগ্ন এলাকায় ভাঙনের ঝুঁকি

ঘাটসংলগ্ন বাহিরচর ছাত্তার মেম্বার পাড়া, মজিদ মাতুব্বর পাড়া, শাহাদত মেম্বার পাড়া, বাজার, মসজিদ, স্কুলসহ একাধিক স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে অনেকে স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। ছাত্তার মেম্বার পাড়ার চারটি পরিবার তাদের ঘর সরিয়ে নিয়েছে।

ছাত্তার মেম্বার পাড়ার নদীর পাড়ের শেষ বসতি আলতাফ মোল্লার পরিবারের। বসতভিটা রক্ষা করতে না পেরে দুটি ঘর অন্যত্র সরিয়ে ফেলছে পরিবারটি। আলতাফ মোল্লার স্ত্রী সূর্য বেগম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ছয়বার ভাঙনে ভিটামাটি হারায়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এইবার ভাঙলে সাতবার হইবে। এখন কোথায় দাঁড়াব বলতে পারছি না। ঘর, টিনের চাল, জিনিসপত্র ভেঙে পাশে রাখছি। এখন কোথাও জায়গা হলে চলে যাব।’

স্থানীয় আলতাফ মোল্লা, শাহাদৎ প্রামাণিক ও ময়ান সরদার বলেন, ‘কয়েক দিনে যে হারে ভাঙছে, এভাবে ভাঙন চললে ফেরিঘাট, বাহিরচর ছাত্তার মেম্বার পাড়া, মজিদ মাতুব্বর পাড়া, শাহাদত মেম্বার পাড়াসহ অনেক স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পদ্মা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট