সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ ফেরি চলাচল বন্ধ হচ্ছে কাল
Published: 22nd, April 2025 GMT
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ নৌপথে ফেরি চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হচ্ছে আগামীকাল বুধবার। নৌপথটিতে নির্ধারিত ফেরিটির চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তারা।
এর আগে গত ২৪ মার্চ নৌপথটিতে ফেরি চলাচল শুরু হয়। কপোতাক্ষ নামের একটি ফেরির মাধ্যমে যাত্রী পরিষেবা দেওয়া হচ্ছিল। ফেরিটির চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সন্দ্বীপ যাত্রী কল্যাণ পরিষদ নামে একটি সংগঠন আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলা পরিষদের মূল ফটকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে।
বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মৌসুমি আবহাওয়া দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকায় এই সামুদ্রিক রুটে কপোতাক্ষের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এটিকে অভ্যন্তরীণ নৌরুটে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কপোতাক্ষকে ফিরিয়ে নেওয়ার পর সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ ফেরিঘাটটিও আপাতত সচল রাখা যাচ্ছে না। তবে বিআইডব্লিউটিসির যাত্রীবাহী জাহাজ এমভি মালঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার অব্যাহত থাকবে। এমভি মালঞ্চ দুই পাড়ে ফেরিঘাটের পন্টুন থেকে যাত্রী ওঠানামা করাবে।
এস এম আশিকুজ্জামান আরও বলেন, ফেরি কপোতাক্ষ এই রুট থেকে চাঁদপুরে ফিরে যাবে। এই রুটে দুটি সি-ট্রাক নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে। প্রক্রিয়া শেষ হতে জুন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কোনো যানবাহন আটকে না পড়া সাপেক্ষে বুধবার থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করা হবে।
সন্দ্বীপের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিগ্যান চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ হওয়ার বিষয়টি বিআইডব্লিউটিসির এক উপমহাব্যবস্থাপক মৌখিকভাবে তাঁকে অবহিত করেছেন।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, শুরু থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কপোতাক্ষ এই পথে বছরব্যাপী চলাচলের উপযুক্ত নয়। এই পথে চলাচলের জন্য তখন উপকূলীয় ফেরি নিয়ে আসার কথা বলা হয়। বিআইডব্লিউটিসির নির্মাণাধীন একটি উপকূলীয় ফেরি আগামী অক্টোবরের মধ্যে এই পথে সংযুক্ত হতে পারে।
ফেরি বন্ধের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার সন্দ্বীপ প্রেসক্লাবে একটি সভা ডেকে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করে সন্দ্বীপ যাত্রী কল্যাণ পরিষদ। সংগঠনটির অন্যতম সমন্বয়কারী ওমর ফয়সাল বলেন, ‘বিরূপ আবহাওয়ায় ফেরি বন্ধ হতে পারে। তবে ঘাট অচল করে ফেরিটি অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদ জানাচ্ছি আমরা। আমরা চাই, ফেরি কপোতাক্ষ পরিষেবা সাময়িক বন্ধ থাকলেও এই ঘাট ছেড়ে না যাক। আবহাওয়া অনুকূলে থাকা সাপেক্ষে বিরতি দিয়ে হলেও ফেরি সেবা অব্যাহত থাকুক।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উপপরিচালক মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। কিন্তু দুই দিনে একজন পর্যটকও যেতে পারেননি। কারণ, পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। কবে থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হবে, তা নিয়েও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।
কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের কথা। এ জন্য ১ হাজার ৭০০ জন ধারণক্ষমতার দুটি জাহাজ—এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু গতকাল শনিবার ও আজ রোববার ওই রুটে কোনো জাহাজ চলেনি। আরও চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত যাপন করা যাবে না, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকতে হবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল বলে গণ্য হবে।
সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল বা সি-বাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচলও বন্ধ। নিষিদ্ধ পলিথিন বহন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, পানির বোতল ইত্যাদি) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
পর্যটক নেই, ফাঁকা ঘাটআজ সকাল সাতটায় নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রী নেই। বাঁকখালী নদীতেও পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ দেখা যায়নি। ঘাটে অবস্থান করছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। জানা যায়, গতকাল সকালে তিনজন পর্যটক টিকিট কেটে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পরে জাহাজ না থাকায় ফিরে যান।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গত দুই দিনে কোনো পর্যটক যেতে পারেননি। নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার নিয়ম থাকায় সময় ও সুযোগ কম, আবার দীর্ঘ জাহাজযাত্রার কারণে অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তারপরও আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘাটে অবস্থান করছি।’
জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট কিংবা টেকনাফের কোনো স্থান থেকে এখনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই।
জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।
গত ডিসেম্বরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়ে কক্সবাজারের পথে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ