মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা শুল্ক বিশ্ব অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। শুল্ক আরোপের প্রথম সপ্তাহেই বিশ্ব অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এখন পর্যন্ত দেশে দেশে রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন দেশের সামগ্রিক রপ্তানি গত বছরের তুলনায় কমেছে। বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ফের রেকর্ড গড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্স ৩ হাজার ৫০০ ডলার ছুঁয়েছে। এর প্রভাব বিভিন্ন দেশের বাজারেও পড়তে পারে। আর শুল্কের প্রভাবের কারণে আইএমএফ বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে।  

অন্যদিকে তিন বছরের মধ্যে গতকাল সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গেছে ডলারের মূল্য। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রা বিনিময়ের ক্ষেত্রে গতকাল ডলার সূচক ছিল ৯৮ দশমিক ৪। ২০২২ সালের পর এটি ডলারের সর্বনিম্ন সূচক। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় উৎপাদিত সোলার প্যানেলের ওপর অন্তত ৩ হাজার ৫২১ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ। 

দক্ষিণ কোরিয়ার কাস্টমস সার্ভিস বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির সামগ্রিক রপ্তানি গত বছরের তুলনায় ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। এপ্রিলের প্রথম ২০ দিনের রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অ্যালুমিনিয়াম, ইস্পাত ও গাড়ি আমদানি কমে গেছে। 
দক্ষিণ কোরিয়ার ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের  সিনিয়র অর্থনীতিবিদ মিন জু কাং সোমবার সিএনএনকে বলেন, তাঁর দেশের রপ্তানি চিত্র প্রমাণ করে, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপে বিশ্ববাণিজ্য কোন দিকে যাচ্ছে। তিনি মনে করেন, শুল্ককাণ্ডে বিশ্ববাণিজ্যের গতি মন্থর হয়ে গেছে। 

বাণিজ্য শুল্কের কারণে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এই বছরের জন্য মার্কিন প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে। 

জানুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আইএমএফের ২ দশমিক ৭ শতাংশ অনুমানের তুলনায় এই বছর প্রবৃদ্ধি এখন ১ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পূর্বাভাস অনুসারে, শুল্ক এবং অনিশ্চয়তার তীব্র বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধিতে ‘উল্লেখযোগ্য মন্দা’ ডেকে আনবে। যুক্তরাজ্যের জন্যও পূর্বাভাস কমানো হয়েছে এবং এই বছর অর্থনীতি এখন ১ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের সমালোচনা করার পর সোমবার মার্কিন বাজার পতনের দিকে চলে যায়। 
অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য তিনি পাওয়েলকে সুদের হার কমানোর আহ্বান জানান। কিন্তু তাঁর কথা না শোনায় ট্রাম্প তাঁকে গ্রেট লুজার বা হেরে যাওয়া ব্যক্তি বলে আখ্যায়িত করেন। এর আগে পাওয়েল সতর্ক করেছিলেন, ট্রাম্পের আমদানি কর অর্থনীতিকে ধীর করে দিতে পারে।
বিবিসি জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন সোলার প্যানেলের ওপর ৩ হাজার ৫২১ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করেছে। 

প্রস্তাবিত এই শুল্ক কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের যেসব প্রতিষ্ঠান চীনের অর্থে পরিচালিত হয় এবং সস্তায় যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য বিক্রি করে, সেগুলোর ওপরও প্রযোজ্য হবে। দেশ ও প্রতিষ্ঠান ভেদে শুল্কের পরিমাণ ভিন্ন হবে।


 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প প রব দ ধ র জন য দশম ক বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ

২৩ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি উত্থাপনের কথা রয়েছে। বৈঠকে অনুমোদন হলে চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় একসঙ্গে দুই কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ গতকাল শুক্রবার তার কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকের এ তারিখ নির্ধারণসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের এ বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার (রিভিউ) প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন পর্ষদ অনুমোদন করলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পেয়ে যাবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ। দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে হতে পারে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার।

এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া—মূলত এ তিন কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।

আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিলসহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।

আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও তা আর পাওয়া যায়নি। আইএমএফের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত। প্রায় প্রতিবছর ওয়াশিংটনসহ প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের তুষারপাত হয়। গত বছরও তাই হয়েছে। অতিমাত্রার বরফের কারণে অচল হয়ে যায় জনজীবন। মার্কিন প্রশাসন সতর্কবার্তা জারি করে। তুষারপাতের কারণে আইএমএফসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল অনেক দিন।

পরে আইএমএফের পক্ষ থেকে প্রথমে এ বছরের ফেব্রুয়ারি ও পরে মার্চে পর্ষদ বৈঠকের কথা বলা হয়। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি দল পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসে দুই সপ্তাহের জন্য। এর মধ্যে শর্ত পরিপালন নিয়ে দর–কষাকষিতে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তখন দর-কষাকষি হচ্ছিল মূলত মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে। আইএমএফ তা চাইলেও করতে চাইছিল না সরকার।

সবশেষে গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছায় ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত পর্ষদ বৈঠকে অনুমোদন হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মাথায় আইএমএফ অর্থ ছাড় করে দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশের কিস্তির প্রস্তাব উঠছে আইএমএফ পর্ষদে
  • আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ
  • ট্রাম্প ও আইএমএফ—এই দুই পায়ের ওপর দাঁড়ানো এবারের বাজেট: আনু মুহাম্মদ