রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এক যুগ: বিচার-পুনর্বাসন আর কবে?
Published: 23rd, April 2025 GMT
সকালে কারখানায় এসেছিলেন পারুল বেগম। শুরু করেছিলেন কাজও, এর মধ্যে বিদ্যুৎ চলে যায়। জেনারেটর চালু হতেই বিকট আওয়াজে ধসে পড়ে ভবন। দৌড় দেন, তবে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। রাতে যখন জ্ঞান ফেরে নিজেকে আবিষ্কার করেন হাসপাতালের বিছানায়। পেটজুড়ে ব্যান্ডেজ। তার কিডনি ভেদ করে ঢুকে গিয়েছিল রড।
এক যুগ আগে ভাগ্যক্রমে বাঁচলেও আজ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন পারুল বেগম।
রাইজিংবিডি ডটকমের সঙ্গে কথা হলে সেদিনের সেই ভয়াল স্মৃতির প্রসঙ্গ টেনে পারুল বেগম বলেন, তিনি এখন আর স্বাভাবিক চলাচল করতে পারেন না, হারিয়েছেন কর্মক্ষমতাও।
আরো পড়ুন:
বরগুনায় ডেভিল হান্ট অভিযানে যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার
মাসুদ রানা সিরিজের ২৬০ বইয়ের লেখক স্বত্ব বিষয়ক আদেশ স্থগিত
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে আহত পারুল বেগম ভবনটির পাঁচতলায় ফ্যানটম টেক্স লিমিটেড কারখানার সুইং অপারেটর ছিলেন।
সেদিন দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় রানা প্লাজার ১ হাজার ১৭৫ জন শ্রমিকের। আহত হন ২ হাজারের বেশি পোশাক শ্রমিক। বেঁচে যাওয়া বেশিরভাগ শ্রমিক পারুল বেগমের মতো আজো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি।
বছরের পর বছর কেটে গেলেও রানা প্লাজা ধসের মামলা নিষ্পত্তি হয়নি; বিচারকাজ চলছে তো চলছেই। এক যুগ পরে এসে আজো রানা প্লাজার শ্রমিকদের চাওয়া সুষ্ঠু বিচার এবং পুনর্বাসন।
ভয়ংকর ওই দুর্ঘটনার পরও রাজধানীর অদূরে সাভারে এখনো ভবন নির্মাণে শৃঙ্খলা ফেরেনি। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, রানা প্লাজার ঘটনার পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি আজও রয়ে গেছে। এ জন্য কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ তাদের।
এর মধ্যেই বুধবার (২৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় স্বজনহারা মানুষ এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা রানা প্লাজার শহীদ বেদিতে জড়ো হয়ে স্মরণ করেছেন নিহত শ্রমিকদের। ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর জন্য ন্যায্য পুনর্বাসন এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তারাও।
ফিরে দেখা ২৪ এপ্রিল ২০১৩
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ছিল রানা প্লাজা। ভবনের প্রথম তলায় ছিল বিভিন্ন দোকান। দ্বিতীয় তলায় দোকান ও ব্যাংকের শাখা। তৃতীয় থেকে সপ্তম তলায় ছিল পোশাক কারখানা। এরমধ্যে তৃতীয় তলায় নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেডে এবং ফ্যানটম ট্যাক লিমিটেড, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় ইথারটেক্স লিমিটেড গার্মেন্টস। অষ্টম ও নবম তলা ছিল ফাঁকা।
সেদিন সকালে ভবনে কাজ করছিলের প্রায় তিন হাজার শ্রমিক। ৮টার দিকেই কর্মব্যস্ততা শুরু হয়েছিল। সাড়ে ৯টার দিকে বিকট শব্দে প্রথম তলার ওপরে পুরো ভবন ধসে পড়ে।
রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপে উদ্ধারে শুরুতে এগিয়ে আসে স্থানীয়রা। দ্রুত সময়ে তাতে যোগ দেয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, র্যাব ও পুলিশ।
‘এমন ইতিহাসের জন্ম নাও হতে পারত’
২৪ এপ্রিল ধসের এক দিন আগেই ওই ভবনের চার ও পাঁচ তলার কয়েকটি পিলারে ফাঁটল দেখা গিয়েছিল। এ কারণে শ্রমিকরা সড়কে নেমে আসেন। খবর পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা সেখানে যান। তবে মালিক কর্তৃপক্ষ সংবাদকর্মীদের ভবনে প্রবেশ করতে দেয়নি। তারা যোগাযোগ করেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশ হয় সংবাদমাধ্যমে।
বিকালের দিকে ওই সময়ে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.
ওই বক্তব্য দিয়ে ইউএনও কবির হোসেন চলে যান।
এর কয়েক ঘণ্টা পরেই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভবন ধসের সাক্ষী হয় বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব। প্রাণ হারান হাজারো শ্রমিক। দুর্ঘটনার পরেই ওই ইউএনওকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আহত শ্রমিক, শ্রমিকনেতা ও সুশীল সমাজের দাবি, প্রশাসন যথাযথ তৎপর হলে হয়তো এমন ঘটনা এড়ানো যেত।
অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন, মৃত লাশের গন্ধের সাক্ষী অধরচন্দ্র স্কুল মাঠ
ধসে পড়া রানা প্লাজা থেকে একে একে উদ্ধার হতে থাকে জীবিত, আহত, মৃত মানুষের দেহ। আহতদের নেওয়া হয় আশপাশের হাসপাতালে। আর মৃতদেহগুলো নেওয়া হয় সাভারের অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে।
টানা ১৭ দিন ধরে চলা উদ্ধার অভিযানে পাওয়া প্রতিটি মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে নেওয়া হতো অধরচন্দ্র মাঠে। লাশের অপেক্ষায় থাকা স্বজনরা ছুটে আসত সাইরেন শুনলেই। এই বুঝি স্বজনের মরদেহ এলো! স্বজনদের আহাজারিতে দিনরাত ভারি হয়ে থাকতো অধরচন্দ্র স্কুল মাঠ।
প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কের পুরোটা জুড়েই তখন কান্না আর সাইরেনের আওয়াজে এক অন্য রকম আবহ। অধরচন্দ্রের ওই মাঠে সেই শোকস্মৃতি আজো হৃদয়ে ব্যথা জাগায়।
ওই সময় স্কুলটিতে পড়তেন আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, “আগে ক্লাসের বাইরেও প্রচুর ঘোরাফেরা, খেলাধুলা করতাম এই মাঠে। কিন্তু রানা প্লাজা ধসের পর সেখানকার লাশগুলো সারি সারি করে রাখা হয়েছিল এখানে। এখনো গা ছমছম করে ওঠে।”
হতাহত যত
প্রায় ১৭ দিনের উদ্ধার অভিযানে রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ১ হাজার ১৩৬ শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল ২ হাজার ৪৩৮ জনকে।
আহতদের অনেকেই আজো দুর্বিষহ সেইদিনের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকেই অঙ্গ হারিয়ে পঙ্গু। এখরো সেদিনের স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় তাদের।
হতাহত শ্রমিকের স্মৃতিতে নির্মিত শহীদ বেদি এখন “প্রতিবাদের প্রতীক”
হতভাগ্য শ্রমিকদের স্মরণে ২০১৩ সালের ২৪ মে রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের সামনে একটি শহীদ বেদি নির্মাণ করেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।
অস্থায়ী শহীদ বেদিটির নামকরণ করা হয় “প্রতিবাদ-প্রতিরোধ”।
এই শহীদ বেদিটিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন চালিয়ে আসছে আন্দোলন। এটি এখন হয়ে উঠেছে ‘প্রতিবাদের প্রতীক।’
এখন যেমন আছে রানা প্লাজার জায়গাটি
ধসের পরপরই প্রায় সব ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। এরপর জমিটির চারপাশ কাঁটাতার ও টিনের বেড়া দিয়ে রাখা হয়েছিল। ওই সময় প্রায় প্রতিদিনই রানা প্লাজায় আহত, নিহত আর নিখোঁজদের স্বজনরা জায়গাটিতে আসতেন। ধীরে ধীরে জায়গাটি পরিণত হয় পরিত্যক্ত ভূমিতে।
বর্তমানে জায়গাটিতে লতাপাতার দখলে। সামনে বেদি, ফুটপাতজুড়ে রাখা থাকে রেন্ট-এ কারের গাড়ি। তবে ২৪ এপ্রিল এলে নানা কর্মসূচিতে কিছুটা প্রাণ পায় জায়গাটি।
বিচার পাননি হতভাগারা
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। এরমধ্যে শ্রমিকদের মৃত্যুতে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে মামলা করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে অন্য মামলাটি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আর ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তিনটি মামলার কোনোটিই এখনো শেষ হয়নি। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা আইনে দায়ের করা মামলাটি দীর্ঘদিন হাইকোর্টে স্থগিত হয়ে আছে। এটি বর্তমানে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন।
‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগে পুলিশের করা মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। আর ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে দুদকের করা মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
ফলে হাজারো শ্রমিকের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার ওই ঘটনায় আজো কোনো বিচার পাননি হতভাগ্যরা।
বাঁচার লড়াই আহতদের, চান ন্যায্য পুনর্বাসন
প্রায় ১২ বছর ধরেই পঙ্গুত্ব নিয়ে এখনো বাঁচার লড়াই করছেন অনেকেই। অসুস্থতা আর দরিদ্রতা নিয়ে দীর্ঘদিন জীবন সংগ্রাম করে টিকে থাকলেও কেউ তাদের পুনর্বাসনে এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ শ্রমিকদের।
শ্রমিক সংগঠনের নেতারাও রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ দোষীদের শাস্তি ও শ্রমিকদের পুনর্বাসনের দাবি করে আসছেন এতদিন।
রানা প্লাজার আহত শ্রমিক পারুল বেগম বলেন, “আমি পেটে আঘাত পাই। এত বছর ধরে কাজ করতে পারি না। অনেক কষ্টে পরিবার নিয়ে আছি। রানা প্লাজা ধসের এতদিন হয়ে গেছে আমাদের কেউ খবর নেয় নাই। আমরা কারো কাছে ভিক্ষা চাই না। আমাদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হোক।”
তিনি বলেন, “আমাদের যারা ক্ষতি করেছে, এই ভবন মালিক রানা, গার্মেন্টস মালিকসহ জড়িত সবার ফাঁসি চাই। সরকার আমাদের সুষ্ঠু বিচার করে নাই; যদি বিচার করতো তাইলে এক যুগ শেষ হতো না।”
“আর সরকারের কাছে আমাদের অনেক দিন ধরেই দাবি, রানা প্লাজা যেখানে ছিল সেখানে একটা মার্কেট করুক এবং রানা প্লাজার ভাই-বোনদের একটা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিক,” যোগ করেন পারুল বেগম।
রানা প্লাজার একটি কারখানার সুইং অপারেটর ছিলেন নীলুফা বেগম। ভবন ধসে মারত্মক আহত হয়েছিলেন তিনি। এক যুগ ধরে বয়ে বেড়াচ্ছেন পায়ের ক্ষত। সুচিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে যাচ্ছেন মৃত্যুর মুখে।
রাইজিংবিডি ডটকমের সঙ্গে কথা হলে নীলুফা বেগম বলেন, “রানা প্লাজা ধসে পড়ার ১২ বছর হয়ে যায়, তারপরও আমাদের কোনো খোঁজ কেউ নেয় না। আমার একটা পা মারাত্মকভাবে জখম হয়। ১১টা অপারেশন করা লাগছে পায়ে। পা কেটে ফেলার জন্য অনেক জায়গায় গেছি। শেষ একটা অপারেশন আছে, যার জন্য অনেক টাকা লাগবে। অপারেশনের আগে টাকা জমা দেয়া লাগবে। কিন্তু ওই টাকা আমি কই পাব?”
বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন নীলুফা বেগম, বলেন, “মিডিয়ার ভাইগো ধন্যবাদ দেই। তারাই মনে রাখে। কেউ কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি কোনো দিন। ক্ষতিপূরণ পাই নাই, বিচার পাই নাই।”
“এইখানে হাজারো লাশ ছিল। এইখানে এখন সবাই পেশাব-পায়খানা করে,” যোগ করেন তিনি।
রানা প্লাজার জায়গায় কর্মসংস্থান করে দেওয়ার আকুতি জানিয়ে নীলুফা বেগম বলেন, “আমরা এখন প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করি, জায়গাটাতে একটা বিল্ডিং কইরা যারা ক্ষতিগ্রস্ত, পঙ্গু, আহত, ভিক্ষা করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিক।”
যা বলছেন শ্রমিক নেতারা
রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর প্রায় প্রতিটি শ্রমিক সংগঠনই নড়েচড়ে বসে। শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ নিরাপদ রাখতে আন্দোলন শুরু করে। নিহত ও আহতদের ‘লস অব আর্নিং’-এর ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও করেন তারা। ২৪ এপ্রিলকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করার জোর দাবি তোলেন তারা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটারস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, “রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১২ বছরে এসেও আমাদের দাবি যেগুলো ছিলো, তার কিছুই পূরণ হয়নি। চিকিৎসা আর পুণর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক পরিবারগুলো মানবেতর দিন পার করছে।”
“সরকার ও বিজিএমইএর প্রতি আমাদের দাবি, দ্রুত বিচার নিশ্চিত ও শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হোক,” যোগ করেন মিন্টু।
রাইজিংবিডি ডটকমের সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ গার্মেন্টস এবং শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজনের।
তিনি বলছেন, “রানা প্লাজার সব দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে আমরা এক যুগ ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করছি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের দাবি, রানা প্লাজার জমি অধিগ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও পরিবারগুলোর পুনর্বাসন করা হোক। সেই সঙ্গে সুচিকিৎসা নিশ্চিত, ২৪ এপ্রিলকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা ও রানা প্লাজার সামনে একটা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানিয়েছি আমরা।”
ঢাকা/এস/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র ঘটন ভবন ন র ম ণ প র ল ব গম গ র ম ন টস য গ কর ন র ঘটন র দ র ঘটন র ব যবস ব যবস থ আহতদ র হয় ছ ল পর ব র আম দ র এক য গ সরক র র ভবন
এছাড়াও পড়ুন:
শিশু শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত, থানায় অভিযোগ করায় নানাকে কুপিয়ে হত্যা
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় কয়েক বখাটের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন তার স্বজন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ছাত্রীর নানা আজগর আলীকে (৬০) কুপিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়ভাবে বখাটে হিসেবে পরিচিত আল-আমিন নামে এক যুবক ও তার সহযোগীরা। গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের রায়দক্ষিণ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আজগর আলী রায়দক্ষিণ গ্রামে একটি চায়ের দোকান চালাতেন। অভিযুক্ত আল-আমিন একই গ্রামের মৃত কালু প্রামাণিকের ছেলে।
পুলিশ, নিহতের পরিবার এবং স্থানীয় সূত্র জানায়, যে শিশুটিকে উত্ত্যক্ত করত বখাটেরা, তার মা পাঁচ বছর আগে মারা যান। মেয়েটি নানা আজগর আলীর বাড়িতে থেকে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পড়ত। বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে শিশুটিকে প্রায় উত্ত্যক্ত এবং অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করত আল-আমিন। এ নিয়ে আজগর আলীসহ মেয়েটির স্বজন বেশ কয়েকবার প্রতিবাদ করলেও কোনো কাজ হয়নি। গত সোমবার মেয়েটির নানা আজগর আলী সিংগাইর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। মঙ্গলবার অভিযোগটি তদন্ত করার পর তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয় আল-আমিন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আল-আমিন চার থেকে পাঁচটি মোটরসাইকেলে করে সহযোগীদের নিয়ে আজগর আলীর চায়ের দোকানে যায়। তারা বৃদ্ধ আজগর আলীকে দোকান থেকে বের করে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও লাটিসোঠা দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। হামলাকারীরা চলে গেলে স্বজন ও প্রতিবেশীরা আজগর আলীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে রাতেই তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা আজগর আলীকে মৃত ঘোষণা করেন।
আজগর আলীর শ্যালক নজরুল ইসলাম জানান, মাদক সেবন, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িত বখাটে আল-আমিন।
সিংগাইর থানার ওসি তৌফিক আজম বলেন, নিহতের বড় ছেলে আইয়ুব খান বুধবার আল-আমিনকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। ঘটনার পর থেকে আল-আমিন ও তার সহযোগীরা পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।