Prothomalo:
2025-05-01@00:02:34 GMT

লাল ফলে রাঙা হাসি ‘উদাল’গাছে

Published: 24th, April 2025 GMT

তখন ধীরে ধীরে রোদ বাড়ছে। সকালের হালকা রোদে জড়িয়ে আছে মিঠে ভাব। একটা কোমল শান্তি-প্রশান্তি আছে প্রকৃতিতে, শহরের এলোমেলো দালানকোঠার অলিতে-গলিতে। পথের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাছে গাছে মৃদু হাওয়ার টোকা, পাতায় শান্ত কোলাহল ফুটছে।

এ রকম শান্ত সময়টিতে একটা জায়গায় চোখ আটকে যায়। সেই ‘তোমার অশোকে কিংশুকে/ অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে’.

..রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মনের ভেতর স্তব্ধতা ভেঙে বেজে উঠলেন, গুনগুনিয়ে উঠল কথামালা, সুর। জায়গাটিতে আরও কিছু গাছের ভেতরে একটি গাছে থোকা থোকা আগুনের মৃদু শিখা যেন থমকে আছে, দুলছে। গাছটির ডালে কোনো পাতা নেই। দূর থেকে দেখেও মনে হয় ‘চিনি উহারে’। দেখতে অশোক-কিংশুক মনে হলেও ওটা তা নয়, ওটা অন্য কিছু।

মৌলভীবাজার শহরের কোর্ট রোড থেকে পশ্চিম দিকে একটু ভেতরে, কোদালীছড়ার উত্তর পাশে শরীরভরা থোকা থোকা লালে রঙিন হয়ে আছে গাছটি। দুই পাশে সবুজ আরও কিছু গাছপালা আছে। সেই সবুজের ভেতর গাছটি আলাদা। ওটা আসলে একটি ‘উদাল’গাছ। গাছটি অনেকের কাছেই অচেনা। শহর, গ্রাম কোনোখানেই খুব বেশি চোখে পড়ে না এখন উদাল। আর গাছের ডালে ডালে লাল রঙের যেটুকু উচ্ছ্বাস, তা এই গাছের ফুল নয়। এগুলো উদালগাছের ফল। ফুল অন্য রকম। ফুল কমলা-হলুদে মাখা, ঝুলন্ত মঞ্জরিতে গুচ্ছবদ্ধ থাকে। এখন ফুল নেই, ফুল ঝরে গেছে।

২০১২ সালের বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-৪ অনুযায়ী উদাল প্রজাতি সংরক্ষিত।

ফুল যে ঝরে গেছে, তা দেখা গেছে শহরের আরও দু-একটি গাছে। তার একটি মৌলভীবাজার শহরের মুসলিম কোয়ার্টারে। একটি বাসার গাছে তখন লাল ফল ঝুলছিল। এক সকালবেলা গাছটিতে দেখা গেছে, অনেকগুলো কাঠশালিক ফলের ওপর এসে বসছে, এ–ডাল থেকে ও–ডালে উড়ে যাচ্ছে। দু-একটা বুলবুলিও ছিল। পাখিগুলো কোথা থেকে আসে, আবার হঠাৎ চলে যায়।

শহরের সৈয়ারপুর এলাকার মাঝেরহাটি সড়কে আরও একটি গাছে একইভাবে লাল ফল ঝুলে আছে। কিছু ফল তখনো কাঁচা, দেখতে অনেকটা বাঁকা লোমশ শক্ত শিমের মতো। হয়তো অনেকের চোখে পড়ে গাছগুলো, কেউ হয়তো মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে দেখেন। কারও হয়তো চোখ এড়িয়ে যায়। প্রকৃতি এ রকমই, তার আপন খেয়ালে আছে।

উদালের প্রিয় আবাসভূমি হচ্ছে পাহাড়ি এলাকা। সে কারণে উদালের সঙ্গে সাধারণ নাগরিকের খুব একটা চেনা জানা নেই

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।

মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।

লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।

দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।

জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।

রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।

দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ