মৃত্যু নিশ্চিত করতে ইব্রাহিমের মাথা, পিঠে ও পায়ে ৫টি গুলি করে রায়হান ও ইলিয়াছ
Published: 25th, April 2025 GMT
চট্টগ্রামের রাউজানে গত আট মাসে ১২ খুনের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার থানা প্রশাসনকে নিয়ে বৈঠক করেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এ বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নতি করে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দেওয়া হয়। এদিকে চট্টগ্রামের রাউজানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইব্রাহিম হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দুইদিন পর এজাহার দিয়েছেন নিহতের মা খালেদা বেগম। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি জানান, এজাহারে আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনকে আসামি করা হয়।
এজাহারে বলা হয়, ‘মৃত্যু নিশ্চিত করতে ইব্রাহিমের মাথা, পিঠে, কোমরে, নাভির নিচে ও ডান পায়ে পাঁচটি গুলি করে সন্ত্রাসী রায়হান ও ইলিয়াছ। এই কিলিং মিশনে অংশ নেয় ১২ থেকে ১৩ জন।’
মামলার এজাহোরে নাম ঠিকানাসহ এক নম্বর আসামি করা হয় বদিউল আলমের ছেলে রায়হানকে। এরপর পর্যায়ক্রমে আসামি হিসেবে রয়েছে- নুরুল আমিনের ছেলে মোঃ ইলিয়াছ, আবু বক্করের ছেলে মোঃ আলী, আনোয়ার মিয়ার ছেলে খোরশেদ, কবির আহমদের ছেলে মো.
গত আট মাসে রাউজানে খুন হয়েছে ১২ জন। বেশিরভাগ খুনই হয়েছে প্রকাশ্য দিবালোকে। কাউকে গুলি করে, কাউকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু মামলার এজাহার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ১০টি খুনের ঘটনাতেই আসামির ঘরে লেখা আছে ‘অজ্ঞাতনামা’। তিনজন খুন হয়েছেন কয়েকদিন নিখোঁজ থাকার পরে। পুলিশ এটা জানলেও তাদের উদ্ধারে তাৎক্ষণিক কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি মামলা হওয়ার পরেও উদ্বেগজনকভাবে নিস্ক্রিয় রাউজান থানা পুলিশ। ১২ খুনের মধ্যে তাই ১০টিতেই তারা কোন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি। তদন্ত প্রক্রিয়াতেও পুলিশের উদাসীনতা রয়েছে বলে সমকালকে অভিযোগ করেছেন বাদীরা। বিষয়টি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সমকালে ‘একের পর এক খুন, আসামি অজ্ঞাত’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। চট্টগ্রামে এসে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও গত বুধবার এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।
গত মঙ্গলবার দিনদুপুরে প্রকাশ্যে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারান রাউজান সদর ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের গাজীপাড়ার মো. আলমের ছেলে ইব্রাহিম। এরপর থেকে পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর দুইদিন আগে ১৯ এপ্রিল খুন হন বাগোয়ান ইউনিয়ননের গরীবুল্লাহ পাড়ার যুবদল কর্মী মানিক আবদুল্লাহ। সব মিলিয়ে গত আটমাসে ১২ জন খুন হওয়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে রাউজানে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল অব্যাহত থাকলেও ভয় কাটেনি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
রাউজানের স্থানীয় বাসিন্দা রহিম আজম সমকালকে বলেন, আমরা আতঙ্কিত। ভয়ে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। খুনি সন্ত্রাসী রায়হান এখনও এলাকায় আছে। সে কারণে অনেকেই এলাকায় নেই।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় ইউএনও জিসান বিন মজিদ ও পরিদর্শক (তদন্ত) নিজাম উদ্দিন বক্তব্য রাখেন। এসময় সন্ত্রাসীদের যে কোনো মূল্যে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিল দুপুর দেড়টায় গুলি করে হত্যা করা হয় যুবদলকর্মী ইব্রাহিমকে। তিনি রাউজান সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের শমশের নগর গাজী পাড়ার এলাকার মোহাম্মদ আলমের ছেলে। ইব্রাহিম হত্যার পর সন্ত্রাসীরা দুই কিলোমিটার অদূরে আরও একটি কিলিং মিশনে গিয়ে অটোরিকশা চালকের হাতে পায়ে গুলি করে ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে। গুলিবিদ্ধ সিএনজি চালক নাঈম উদ্দিনকে (২৫) চমেকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন হত
এছাড়াও পড়ুন:
কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার
গাজীপুরে ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। প্রায়ই রাতে বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক ও মহাসড়কে ডাকাতের কবলে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। এসকল ডাকাত সদস্যদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গত এক মাসে কালিয়াকৈর থানা ও মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ি অভিযান চালিয়ে ২০ জন ডাকাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। একইসঙ্গে ছয়টি পিকআপও জব্দ করেছে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে সুমন হোসেন ও সোহাগ নামে দুজন ডাকাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করে মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ি। এসময় তাদের দখলে থাকা একটি পিকআপ জব্দ করা হয়। পরে গ্রেপ্তারকৃতদের ডাকাতি মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এরআগে, গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ডাকাতির প্রস্তুতিকালে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের তিন গ্রেপ্তার করা হয়। উপজেলার মৌচাক ফকিরবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকমাস ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতের উপদ্রব বেড়েছে। বিশেষ করে কালিয়াকৈর-মাওনা আঞ্চলিক সড়ক ও ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে তাদের উৎপাত বেশি।
সড়কে পুলিশ টহল থাকলেও ডাকাত সদস্যরা বিভিন্ন ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকে এরপর সুযোগ বুঝে ডাকাতি করে। এছাড়াও মাওনা কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি করে তারা। পুলিশ এরপর থেকেই বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করে।
মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) আব্দুস সেলিম বলেন, “ডাকাতের উপদ্রব বেড়েছে। তবে আমরা ডাকাতদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। গত ১ মাসে আমাদের পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ১৫ জন ডাকাত সদস্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পাঁচটি পিকআপ জব্দ করা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মান্নান বলেন, “রাতে আমাদের টহল পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। আমরা গত এক মাসে ২০ জন ডাকাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন তথ্য মিলেছে। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
ঢাকা/রেজাউল/এস