রাইজিংবিডির যুগপূর্তি এবং গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ
Published: 26th, April 2025 GMT
চলতি বছরের ১৮ মার্চের ঘটনা। সাংবাদিকতার জগতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে বিশেষ উদ্যোগ নেয় ইতালির সংবাদপত্র ইল ফোইও।বিশ্বে প্রথমবারের মতো এই সংবাদপত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে লেখা ‘এআই সংস্করণ’ প্রকাশ করে।এই সংস্করণের প্রতিটি লেখা এআই ব্যবহার করে তৈরি করা হয়।পত্রিকার পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে তারাই বিশ্বের প্রথম পুরো ছাপা সংস্করণের সংবাদগুলোয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করেছে।একই সঙ্গে তা অনলাইনেও ব্যবহার করা হয়।চার পাতায় ২২টি খবর ও ৩টি সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়।পত্রিকাটির নিয়মিত সংস্করণের পাশাপাশি এআই সংস্করণ প্রকাশ করা হয়।এসব পাতায় খবরের মধ্যে ঠাঁই পায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির বক্তব্যের বিশ্লেষণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ফোনালাপ নিয়ে সম্পাদকীয়, ফ্যাশন দুনিয়ার খবরের মতো নানা বৈচিত্র্যময় খবর।
ইল ফোইওর পরিচালক ক্লডিও সেরাসা এআই নিয়ে পরীক্ষার বিষয়টি নিয়ে বলেন, ‘দুটি উদ্দেশ্যে এ পরীক্ষা চালানো হয়। একটি হচ্ছে তত্ত্বকে বাস্তবে রূপান্তরিত করা। অন্যটি হচ্ছে, নিজেদের পরীক্ষা করা এবং এআইর সীমা বোঝা। পাশাপাশি এর সুযোগ ও সীমাবদ্ধতাগুলো খতিয়ে দেখা। আমাদের মতো একটি বিশেষ সংবাদপত্র থেকেই এসবের উদ্ভব হতে পারে। কারণ, আমাদের সংবাদপত্রটিতে বিদ্রূপাত্মক ও সৃজনশীল লেখা তৈরি করা হয়। আমরা এমন কাজ করি যা যন্ত্র দিয়ে সহজে তৈরি করা যায় না। আমাদের লক্ষ্য ছিল, বিশেষত্ব প্রদর্শনের সঙ্গে কিছু নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ইচ্ছা যা বিশ্বের কেউ কখনো করেনি।’
প্রিয় পাঠক, আপনাদের জানিয়ে রাখি, ইল ফোইও ইতালির বেশ পরিচিত পত্রিকা।এর প্রচার সংখ্যা ২৯ হাজার।
দুই.
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থানে সাংবাদিকতা শেষ হয়ে যাবে, নাকি এর পুনর্জন্ম হবে, প্রযুক্তি ও সংবাদপত্র দুনিয়ায় সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। একটু পেছনের সময়ের কথা বলি। ২০২৪ সালের এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে ‘সংবাদপত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা’ নিয়ে ইতালির পেরুগা শহরে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতা উৎসব।এই উৎসবে যেসব প্রশ্ন উঠেছিল তার মধ্যে রয়েছে-নিউজরুমগুলোকে সহায়তা বা সম্পূর্ণরূপে রূপান্তরিত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কতটুকু ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এএফপির খবরে বলা হয়, দ্রুত উত্থান ঘটছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই)। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই প্রযুক্তির কারণে সাংবাদিকেরাও এখন নৈতিক ও সম্পাদকীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
তিন.
গত ২১ এপ্রিল ২০২৫ এর ঘটনা।সেদিন রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভাঙার কিছু ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পরে।ভিডিওতে দেখা যায়, স্মৃতিসৌধের কয়েকটি অংশের ইট খুলে ফেলা হয়েছে, স্তম্ভের ওপর ছড়িয়ে রয়েছে ভাঙা অংশ।কিছু অংশের প্লাস্টারও খসে পড়েছে।এমন ভিডিও দেখে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয় জনমনে।আমার মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়। পরের দিন আমি সেখানে গিয়ে জানতে পারি, ভেঙে ফেলার বিষয়টি সঠিক নয়। সেখানকার কর্মকর্তারা বলেন, ফেসবুকের কারণে এসব ভুল তথ্য ছড়িয়েছে।বিষয়টি নিয়ে একটা ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে, মানুষকে ভুল ধারণা দেওয়া হয়েছে। বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভাঙা হচ্ছে না। এখানে চলছে সংস্কার কার্যক্রম।
চার.
প্রিয় পাঠক, উপরের কয়েকটি ঘটনায় আপনারা বুঝতে পারছেন গণমাধ্যমের সামনে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ আসছে।নিউ মিডিয়ার যুগে সংবাদমাধ্যম এখন নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।মিথ্যা তথ্যে ভরা খবরের ভিড়ে সঠিক খবর খুঁজে বের করা দিন দিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ২৬৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে। শুধু তাই নয়, কনটেন্ট চুরির ঝুঁকি বার্তাকক্ষগুলোতে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।২০২৪ সালের ডিসেম্বরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমের এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “একটি ভালো খবর তৈরি করতে অর্থ ও সময় বিনিয়োগ করতে হয়, ভালো বেতন দিয়ে দক্ষ সাংবাদিক রাখতে হয়। অথচ দেখা যায়, এই পদ্ধতিতে একটি কনটেন্ট তৈরি করে সেই সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করামাত্রই চুরি হয়ে যায়; অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান সেটি এদিক-সেদিক করে প্রকাশ করে দেয়।এই চুরি ঠেকাতে হবে।এদের জন্য সাংবাদিকরা ভালো বেতন পাচ্ছেন না; তাদের সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না।”
পাঁচ.
‘গণমাধ্যম বিষয়ে জাতীয় জনমত জরিপ’ নামে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সম্প্রতি গণমাধ্যম সম্পর্কে মানুষের মতামত জানার জন্য দেশব্যাপী একটি জরিপ করে।এর উদ্দেশ্য ছিল মানুষ গণমাধ্যমকে কত সহজে পান, কীভাবে ব্যবহার করেন, কতটা বিশ্বাস করেন আর গণমাধ্যম কতখানি স্বাধীন, সে সম্পর্কে ভাবনা জানা। এই জরিপে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। মাত্র ১৭ দশমিক ২৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন, গণমাধ্যম পুরোপুরি স্বাধীন, যেখানে ২৪ দশমিক ১৮ শতাংশ মনে করেন, এটি অনেকটা স্বাধীন। বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ (৭৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ), সরকারি নিয়ন্ত্রণ (৭১ দশমিক ৫০ শতাংশ) এবং ক্ষমতাশালীদের প্রভাব (৫০ দশমিক ১৪ শতাংশ) গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পথে বাধা। প্রায় ৪৭ দশমিক ২২ শতাংশ মানুষ মনে করেন, সাংবাদিকেরা স্বাধীনভাবে প্রতিবেদন করতে পারেন না। জরিপে ৬৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ মানুষ চান গণমাধ্যম স্বাধীন হোক, ৫৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ চান এটি নিরপেক্ষ হোক, ৩২ দশমিক ৬৮ শতাংশ চান এটি সরকারি হস্তক্ষেপমুক্ত থাকুক এবং ৩৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত গণমাধ্যম চান।
ছয়.
দেশের জনপ্রিয় ও শীর্ষ অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম এক যুগ অতিক্রম করলো।অনলাইন নিউজ পোর্টাল এক যুগ অর্থাৎ ১২ বছর অতিক্রম করা মানে যুদ্ধ জয় করা।এটি একটি মাইলফলক।
রাইজিংবিডির যাত্রা শুরু ২০১৩ সালের ২৬ এপ্রিল। ‘পজিটিভ বাংলাদেশ’ বিষয়টিকে ধারণ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পাঠকদের কাছে বাংলাদেশকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরার প্রতিপাদ্য নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে সংবাদমাধ্যমটি। সহজ ভাষার গণমাধ্যমের বৈশিষ্ট্য এমন হতে হবে যেখানে পাঠকদের মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হয়-এই মন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে কাজ নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাইজিংবিডি পরিবারের একঝাঁক সংবাদকর্মী। অনলাইন গণমাধ্যমের পরিবারে যে কয়টি গণমাধ্যম বাংলাদেশে পাঠকদের কাছে শক্তিশালী জায়গা করে নিয়েছে তার মধ্যে রাইজিংবিডি ডটকম অন্যতম। ‘প্রতি মুহূর্তের খবর’ এই স্লোগান ধারণ করে নিউজ পোর্টালটি শুধু সংবাদ পরিবেশন করেই দায়িত্ব শেষ করে না, পজিটিভ জার্নালিজমের মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নে নানা ধরনের ভূমিকা রেখে চলেছে। রাইজিংবিডি বর্তমানে অগ্রসর পাঠকের পোর্টাল এবং নির্ভরযোগ্য সংবাদের উৎস- এটা পাঠকদেরই ভাষ্য।
সাত.
ইতিবাচক সাংবাদিকতার মাধ্যমে বাংলাদেশের গণমাধ্যম অঙ্গনে স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেছে রাইজিংবিডি। রাইজিংবিডিতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রকাশিত হচ্ছে নানা প্রতিবেদন, ফিচার, বিশ্লেষণ। ক্যাটাগরিগুলো দেখলেই তা বোঝা যায়। জাতীয়, পজিটিভ বাংলাদেশ, নারী ও শিশু, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, ব্যাংক-বীমা, শেয়ারবাজার, করপোরেট কর্নার, কৃষি, রাজনীতি, স্পেশাল, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, শিক্ষা, সাহিত্য, বিনোদন, খেলাধুলা, আন্তর্জাতিক, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ, মতামত, সাক্ষাৎকার, মিডিয়া, আইন ও অপরাধ, প্রবাস, ছবিঘর, সাতসতেরো, অন্য দুনিয়া ও দেহঘড়ি, মটো কর্নার। এছাড়া মতামত প্রকাশিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া বিশেষ দিবসে রাইজিংবিডির কর্মীরা পয়লা বৈশাখ, বসন্তবরণ উৎসবসহ নানা অনুষ্ঠানও করছেন।
আট.
বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গনেও বিশেষ প্রভাব ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে রাইজিংবিডি। প্রকাশ হচ্ছে বিশেষ দিনে বিশেষ সংখ্যা।প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা, বৈশাখ সংখ্যা, ঈদসংখ্যা নিয়মিত মুদ্রিত সংখ্যা হিসেবে বের হচ্ছে। এখানে দেশ-বিদেশের জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।
নয়.
রাইজিংবিডিতে প্রকাশিত সংবাদ, ছবি, ভিডিও- সবকিছুতে পজিটিভ বাংলাদেশের বার্তা থাকে।এ কারণে রাইজিংবিডি কারও পক্ষে নয়, দেশের পক্ষে বলে। বর্তমানে সংবাদপত্রের কাজের ধারা পাল্টেছে। পাঠক খুব দ্রুত সঠিক সংবাদ এবং এর আদ্যোপান্ত জানতে চায়।এখন মোবাইল সাংবাদিকতার যুগ।সংবাদের পাশাপাশি মানুষ ভিডিও দেখতে চায়। এসব দিকে রাইজিংবিডি অন্য অনেকের চেয়ে এগিয়ে আছে।
দশ.
প্রতিষ্ঠার ১৩তম বছরে পা রেখে রাইজিংবিডি সব খবর সবার আগে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর।এজন্য যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সংবাদ পরিবেশনায় প্রতিষ্ঠানটির একঝাঁক তরুণ, মেধাবী এবং প্রতিশ্রুতিশীল সংবাদকর্মী রাতদিন একনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে এবং সামনে যেকোনো পরিস্থিতিতে রাইজিংবিডি প্রধান ভূমিকা রাখবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আজকের এইদিনে আমাদের শপথ-‘মাথা উঁচু বাংলাদেশের সাথে আমরা।’
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, রাইজিংবিডি
ঢাকা/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ত র ম ব দ ধ মত ত র ব যবহ র কর স ব দপত র ব দ কত র প ঠকদ র স স করণ আম দ র পর ক ষ ব ষয়ট দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ