এবার গরমকালে লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় থাকবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। একই সঙ্গে গ্রাম ও শহরের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না বলেও জানান তিনি।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে ‘সেমিনার অন এনার্জি ক্রাইসিস: ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, “গরমকালে লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় রাখার চেষ্টা করব। তবে সম্পূর্ণরূপে লোডশেডিং ফ্রি হবে না। এটার জন্য যা করণীয় সেটাই করব। আমরা বাড়তি এলএনজি ও কয়লা আনার চেষ্টা করছি। জ্বালানি তেলের ব্যবহার সীমিত রাখা হবে।”

আরো পড়ুন:

আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের ১৭ ঘণ্টা পর এক ইউনিট চালু

রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র: প্রথম ইউনিটের হাইড্রোলিক প্রেসার টেস্ট সম্পন্ন 

ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি) মো.

শামীম জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম।

আলোচক ছিলেন ভোক্তা সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন।

উপদেষ্টা বলেন, “আমরা লোডশেডিং সীমিত রাখার চেষ্টা করব। আমাদের ১৬,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। সেখানে ১৭৯ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। কিন্তু আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৮,০০০ মেগাওয়াট। এজন্য আমরা বাড়তি এলএনজি ও কয়লা আনার চেষ্টা করছি।”

তিনি বলেন, “আমাদের অর্থনীতি নিম্নমুখী ছিল, এখন আর নেই। আমরা আশা করছি, এটা ম্যানেজ করতে পারব। তবে লোডশেডিং হবে না-এটা বলতে পারব না। কিন্তু লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় থাকবে। একই সঙ্গে গ্রাম ও শহরের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না।”

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “যেকোনো সময় একটা বড় পাওয়ার প্ল্যান্ট বসে যেতে পারে। গরমকালে এগুলো বেশি হয়। সেগুলো মাথায় রেখেই এলএনজি আমদানি করব। তারপর কয়লা আমদানি করব। আমরা সবদিক থেকেই চেষ্টা করছি, আমরা জ্বালানি আমদানি করতে পারব। তবে সম্পূর্ণরূপে লোডশেডিং ফ্রি হবে না।”

তিনি বলেন, “আমাদের খরচ কমাতে হবে। সেজন্য আমাদের জ্বালানি তেলের ব্যবহার মিনিমাম রেখে লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় রাখা হবে। একটা জিনিস মনে রাখবেন-ক্রাইসিস বলেই রাজনীতিবিদদের সুবিধা হয়। পাওয়ারে থাকে ক্রাইসিসের নাম করেই। তাই ক্রাইসিস শব্দটি ব্যবহারের আগে একটা মাত্রা থাকতে হবে। ক্রাইসিস কখনো সমস্যা সমাধান করে না, বরং উল্টোটা হয়। এটাকে অনেকেই সুযোগ হিসেবে দেখে। ফলে ছোট একটা ক্রাইসিস বড় ক্রাইসিসে পরিণত হয়।”

মূল প্রবন্ধে জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, “দেশে নতুন করে গ্যাসের ক্রাইসিস শুরু হয়েছে, তাহলে নতুন শিল্প কীভাবে হবে? ২০৩১ সালে আমাদের নিজস্ব গ্যাসের রিজার্ভ শেষ হয়ে যাবে। এজন্য আমরা ২০০০ এমএমসিএফডি উৎপাদন করতে পারি।তবে বাংলাদেশে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, যা আমরা সার্চ করতে পারিনি। এখন আমাদের যা আছে, তার তিনগুণ বাড়াতে হবে। শেভরন যতটুকু চায়, তাকে সেটা করতে দিতে হবে।”

আলোচকের বক্তব্যে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “আমাদের জ্বালানি নীতির সংস্কার প্রয়োজন। এটা খুব দ্রুত নিতে হবে। যেখানে জ্বালানি রূপান্তরের বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে থাকবে। একই সঙ্গে ২০৪১ সালে আমরা জ্বালানিকে কী অবস্থায় দেখতে চাই সেই জিজ্ঞাসা থাকতে হবে।আমরা যেভাবে কাতার ও ইউএই-এর সঙ্গে জ্বালানির চুক্তি করতে যাচ্ছি, সেটা দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি নীতির সঙ্গে যায় না।”

তিনি বলেন, “আমরা যেভাবে এলএনজিতে যাচ্ছি, এজন্য নতুন করে জ্বালানির প্রাক্কলন করা দরকার। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানির প্রক্ষেপণ যেটা আছে, সেটা সংশোধন প্রয়োজন। আমরা দেখছি, এলএনজি আমদানিকে যেভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে, এতে বিগত সরকারের মতো দেশীয় গ্যাস সম্পদকে নিরুৎসাহিত করার মতো হয়ে যাবে। কোনোভাবেই এলএনজিকে উৎসাহিত করা যাবে না, ন্যূনতম যেটুকু দরকার, সেটা করতে হবে।”

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “গ্যাস খাতে আমাদের পর্যাপ্ত নজর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আমি তো মনে করি, বাংলাদেশ এই মুহূর্তে অর্থনীতির সংকট যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, তাতে যদি অর্থের দরকার হয়, তাহলে অন্য যেকোনো জায়গা থেকে অর্থ এনে গ্যাস খাতকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য অর্থ দেওয়া উচিত। এজন্য পরিকল্পনা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে কথা বলা উচিত। প্রয়োজনে তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি আর্থিক রিকভারি প্ল্যান তৈরি করতে হবে।”

মূল প্রবন্ধে তিনি কিছু স্বল্প মেয়াদি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন। সেগুলো হলো: আমাদের ২০০০ এমএমসিএফডি প্রক্রিয়াজাতকরণ সক্ষম রিগ্যাসিফিকেশন টার্মিনাল স্থাপন করতে হবে। এলপিজি বিতরণ নেটওয়ার্ক উন্নত করা এবং নগর পরিবার ও পরিবহনে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে রূপান্তর হিসেবে ৪-৫ মিলিয়ন টন এলপিজি আমদানি সহজতর করতে হবে।

এছাড়া নিজস্ব কয়লা খনন (প্রথম অগ্রাধিকার) অথবা কম খরচে সরবরাহ নিশ্চিত করা। প্রয়োজনে কয়লা খনি কিনতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রবেশ বর্তমান ২ থেকে কমপক্ষে ১০ শতাংশে বৃদ্ধি করতে হবে।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট সহন য় ম ত র য় উপদ ষ ট আম দ র এজন য আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ