গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দেশের স্বার্থে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, এবি পার্টি, গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিভিন্ন ইসলামি দল এবং সব রাজনৈতিক পক্ষের ঐকমত্য জরুরি। ঐকমত্যের ভিত্তিতে ফ‍্যাসিস্টদের বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং একটি অবাধ–সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে না পারলে জুলাই অভ‍্যুত্থানের স্বপ্ন ব‍্যর্থতায় পর্যবসিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু।

আজ শনিবার রাতে ফেনীর একটি রেস্তোরাঁয় গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী প্রত‍্যাশা, প্রেক্ষাপট ও সংস্কারবিষয়ক এক নাগরিক সভা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এবি পাটির চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি-আওয়ামী লীগ এ দেশে সুশাসন দিতে পারেনি। একদল শেখ মুজিব আর আরেক দল জিয়াউর রহমান নিয়ে পড়ে আছে। এ দেশে মডেল মসজিদ নির্মাণেও দুর্নীতি হয়েছে। দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়েছে, লুটপাট হয়েছে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করলে এ দেশে সুশাসন ফিরে আসবে।

মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, জুলাই অভ‍্যুত্থানের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, যারা জনগণের অধিকার কেড়ে নেয়, জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে তারা একসময় পালিয়ে যেতে বাধ‍্য হয়। আজ ফেনীসহ দেশের প্রায় সব জেলার আওয়ামী লীগের বড় নেতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। পাড়ায়–মহল্লায় আওয়ামী লীগের যেসব নেতা আছেন, তাঁদের মাথা নিচু হয়ে আছে অথচ কিছুদিন আগেও তাঁদের দাপটে মানুষ কথা বলতে পারেনি।

মুজিবুর রহমান মঞ্জু আরও বলেন, আওয়ামী লীগ বারবার ভুল করে এবং ক্ষমা চায়, কিন্তু সুযোগ পেলেই তারা আবার বাকশাল ও ফ‍্যাসিবাদ কায়েম করে। এ জন্য আওয়ামী লীগের বিচার দ্রুত করতে হবে।

ফেনীতে বিএনপি-জামায়াত, হেফাজত, এবি পার্টিসহ বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মঞ্জু বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময় পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আমরা বিশৃঙ্খলা চাই না, আমরা চাই ন‍্যায়সংগত বিচার ও খুনি লুটেরাদের শাস্তি।’

সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভেদ খুবই দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে অধ্যপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য জরুরি।

ফেনী প্রসঙ্গে এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘ফেনীতে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও চীনের অর্থায়নে আধুনিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানাই আমরা। দলমত–নির্বিশেষে এটা ফেনীর জনগণের প্রাণের দাবি। বিগত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সীমান্তবর্তী বল্লামুখা বাঁধ পুনর্নির্মাণ করতে হবে। ফেনী ও চট্টগ্রামের মিরসরাই সীমান্ত অংশ নিয়ে একটি ক্যান্টনমেন্ট স্থাপন প্রয়োজন। ফেনীর এ দাবি পূরণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার তিনটি সংসদীয় আসন থেকে এবি পার্টি অংশগ্রহণ করবে।’

ফেনী জেলা এবি পার্টির সদস্যসচিব ফজলুল হকের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আহ্বায়ক আহসান উল্লাহ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান লে.

কর্নেল (অব) মো. দিদারুল আলম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী শাহ আলম। মতবিনিময় সভায় বিএনপি, জামায়াত, ইসলামি দলগুলোর নেতারা মতামত তুলে ধরেন।

এর আগে বিকেলে ফেনী শহরের মিজান রোডে দলের নতুন কার্যালয় উদ্বোধন ও দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে এক রাজনৈতিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মজিবুর রহমান মঞ্জু প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক ঐকমত য ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

আসামির কাঠগড়ায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের ৪৫ মিনিট

সকালে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একটি প্রিজন ভ্যানে করে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে আদালতে আনা হয়। সকাল ৯টার দিকে তাঁকে রাখা হয় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানায়। এর প্রায় আধা ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে নয়টার আগে হাজতখানার ভেতর থেকে এ বি এম খায়রুল হককে বের করা হয়। এ সময় তাঁর মাথায় ছিল পুলিশের হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট।

হাজতখানার ভেতর থেকে হাঁটিয়ে আদালতের ভেতরের একটি সরু রাস্তা দিয়ে খায়রুল হককে নিচতলায় সিঁড়ির সামনে আনা হয়। পরে দুজন পুলিশ কনস্টেবল সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের হাত ধরে রাখেন। তিনি হেঁটে হেঁটে নিচতলা থেকে দোতলায় ওঠেন। পরে দোতলা থেকে আবার হেঁটে হেঁটে তিনতলায় ওঠেন। পরে তাঁকে নেওয়া হয় আসামির কাঠগড়ায়। তখন সময় সকাল ৯টা ৩৫ মিনিট। নিজের দুই হাত পেছনে রেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক। তখনো বিচারক আদালতকক্ষে আসেননি। তবে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা আদালতকক্ষে উপস্থিত ছিলেন। তখন দেখা যায়, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক মাথা উঁচু করে সামনের দিকে তাকাতে থাকেন। কিছুক্ষণ দেখার পর আবার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন।

সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে আদালতকক্ষে আসেন ঢাকার সিএমএম আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) মো. ছানাউল্লাহ। এ সময় একজন পুলিশ কর্মকর্তা এ বি এম খায়রুল হকের নাম ধরে ডাকেন।

তখন রায় জালিয়াতির অভিযোগে করা শাহবাগ থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খালেক মিয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। এসআই খালেক মিয়া আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায় বাতিল করে ২০১১ সালের ১০ মে একটি সংক্ষিপ্ত রায় দেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। সেই সংক্ষিপ্ত রায়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক মতপ্রকাশ করেন যে পরবর্তী ১০ম ও ১১তম সংসদ নির্বাচন দুটি সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সাবেক প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের বিচারপতিদের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না বলেও সংবিধান সংশোধনের জন্য মত দেন। ওই সংক্ষিপ্ত আদেশটি সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে দেওয়া হয়। সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আদেশের পক্ষে বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি), সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি) ও সৈয়দ মাহমুদ হোসেন (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি) মত দেন। তবে আপিল বিভাগের বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়া, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। অর্থাৎ আপিল বিভাগের এই তিন বিচারপতি ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ মর্মে ঘোষণার বিপক্ষে মত দেন।’

প্রিজন ভ্যানে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। আজ বুধবার ঢাকার আদালত এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আসামির কাঠগড়ায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের ৪৫ মিনিট
  • পরবর্তী সরকারের পক্ষে এত সহজে সংস্কার আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না: আসিফ নজরুল
  • সংরক্ষিত নারী আসনসংখ্যা বৃদ্ধি ও সরাসরি নির্বাচনের দাবি মহিলা পরিষদের
  • বিসিআইসির নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ
  • এলডিসি উত্তরণের পরবর্তী প্রস্তুতি নিতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন
  • ‘আগামীর বাংলাদেশে মিডিয়াকে দালাল হিসেবে দেখতে চাই না’ 
  • কিছু দল পিআর ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে শপথ করেছে: ফখরুল
  • মাইলস্টোনে দগ্ধ ৩৩ জন এখনো ভর্তি, আইসিইউতে ৩
  • শেখ হাসিনার অডিওগুলো শুনলে বোঝা যায়, তাঁর এখনো প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা আছে: আইন উপদেষ্টা
  • দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে