“আমি করোনার পরে দোকানটা নিয়েছি। শুরুতে ২-৩ লাখ টাকা লোকসান গুণেছি। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে ব্যবসা দাঁড় করাতে প্রায় ২ বছর লেগেছে। দোকান সরানোর জন্য আমাদের মাত্র ১ সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। এখন সময় নেই, জায়গা নেই, দোকান কোথায় বসাব, সেটাও নিশ্চিত না। এখানে ১৪ জন লোক কাজ করত। এখন সবাই বসে আছে।”

এভাবেই হতাশা জর্জরিত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) জব্বার হোটেলের মালিক মাহবুব আলম। এ হোটেলের নাম থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র বহুল আলোচিত আব্দুল জব্বার মোড়ের নামকরণ করা হয়। কিন্তু উন্নয়নের নামে আব্দুল জব্বার মোড় থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে হোটেল সরিয়ে নিতে বলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। 

জানা গেছে, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গেট (কেবি কলেজ) থেকে শুরু করে ফসিল মোড় পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে চার লেনের সড়ক। এই সড়ক আব্দুল জব্বার মোড় হয়ে যাবে বলে সড়কের দুই পাশে থাকা দোকানগুলো স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তবে বর্তমানে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শুধু জব্বার মোড়ের পূর্ব পাশের দোকানগুলোই জিমনেশিয়ামের সামনের স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে। আর মোড়ের পশ্চিম পাশের দোকানগুলো বর্তমান অবস্থান থেকে সামান্য পেছনে সরিয়ে দেওয়া হবে। 

শনিবার (২৬ এপ্রিল) শেষ হয়েছে প্রশাসনের বেধে দেওয়া সময়। ফলে নিজেদের আয়ের একমাত্র উৎস নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জব্বার মোড়ের পূর্ব পাশের জব্বার হোটেল, মুদি দোকান, লাইব্রেরি, সেলুনসহ বিভিন্ন স্থাপনার অসহায় মালিকরা। 

দোকান ভাঙা নিয়ে জব্বার হোটেলের মালিক মাহবুব আলম আরো বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর দোকান এইটা, এখন রাস্তার ওই পাশে জিমনেশিয়ানমের সামনে যেতে হচ্ছে। দোকানটা বসার কথা মিলনের হোটেল আর জিমনেশিয়াম- এ দুইটার মাঝামাঝিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাশের হলগুলোর ছাত্ররা সাধারণত এ পাশের দোকানগুলোতে খাবার খেয়ে থাকে। আর পশ্চিম পাশের হলগুলোর ছাত্ররা রাস্তার অপর পাশে খায়। এখন যদি সব দোকান এক পাশে সরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে পূর্ব পাশের ছাত্ররাই মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

তিনি বলেন, “আমি করোনার পরে দোকানটা নিয়েছি। শুরুতে ২-৩ লাখ টাকা লোকসান গুনেছি। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে ব্যবসা দাঁড় করাতে প্রায় দুই বছর লেগেছে। এখন আবার নতুন জায়গায় গেলে কতদিনে জমে উঠবে বলা কঠিন। আগে যেমন সময় পেয়েছি, এবার তা পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেওয়া সময় ও ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দোকান সরানোর জন্য আমাদের মাত্র ১ সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন দোকান তো হুট করে হয় না। তিন-চার মাস সময় দিলে আমরা প্রস্তুতি নিতে পারতাম। এখন সময় নেই, জায়গা নেই, দোকান কোথায় বসাব, সেটাও নিশ্চিত না।”

রাস্তার একই পাশে থাকা এক মুদি দোকানদার বলেন, “আমাদের দোকান এখন রাস্তার অন্য পাশে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ওখানে গিয়ে কীভাবে দোকান চালাব, বুঝতে পারছি না। প্রথমত, ওই পাশে তেমন বেচাকেনা হয় না। দ্বিতীয়ত, আমার কাছে নতুন করে দোকান গড়ার মতো টাকাও নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে আমাদের কোনো ক্ষতিপূরণও দেওয়া হচ্ছে না। এখন নিজের খরচে পুরনো দোকান ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। আমরা বলেছিলাম, দোকান পেছনে সরিয়ে দিলে খুশি হতাম। কিন্তু রাস্তার একদম অন্য পাশে নিয়ে যাওয়া হলে ব্যবসা নষ্ট হয়ে যাবে, সেই চিন্তায় আছি।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.

শহীদুল হক বলেন, “দোকান সরানোর বিষয়ে দোকান মালিকদের অনেক আগে থেকেই জানানো হয়েছিল। এখন ১ সপ্তাহ সময় তাদের শেষবারের মতো দেওয়া হয়েছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই।”

ঢাকা/লিখন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ওভালে ১৬ উইকেটের দিন

টেস্ট ক্রিকেট ভিন্ন রকম একটি দিনের দেখা পেল। ব‌্যাট-বলের সমানে-সমান লড়াই হলো। ওভালে ভারত ও ইংল‌্যান্ডের মধ‌্যকার শেষ টেস্টের দ্বিতীয় দিনে চরম রোমাঞ্চও ছড়াল। কিন্তু দিন শেষে কে এগিয়ে সেটা নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই।
দলগতভাবে কে এগিয়ে সেটা পরিস্কার না হলেও নিশ্চিতভাবে বোলাররা আপারফ্রন্টে। কেননা ২২ গজে তাদের পকেটে গেছে ১৬ উইকেট। আগের দিনের ৬ উইকেটে ২০৪ রানের সঙ্গে মাত্র ২০ রান যোগ করতে শেষ ৪ উইকেট হারায় ভারত।
জবাব দিতে নেমে ইংল‌্যান্ডের ১২ ওভারেই রান বিনা উইকেটে ৯২। অথচ তারাই কি না পরের ১৫৫ রান তুলতে হারায় ১০ উইকেট। ২৪৭ রানে অলআউট হয়ে লিড পায় ২৩ রানের। পিছিয়ে থেকে ব‌্যাটিংয়ে নেমে ভারত ২ উইকেটে ৭৫ রান তুলে দিন শেষ করেছে। তাদের লিড ৫২ রানের।

ভারতের প্রথম ইনিংসের রান কতদূর যাবে তা নির্ভর করছিল করুন নায়ারের ওপর। আগের দিন ৫২ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। গতকাল দিনের তৃতীয় ওভারেই সাজঘরে ফেরেন ৫৭ রান করে। ভালো করতে পারেনি ওয়াসিংটন সুন্দর। ২৬ রানে থেমে যায় তার ইনিংস। বাকিরা তেমন কিছু করতে পারেনি। ভারতের স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ করেছে অতিরিক্ত রান। ইংল‌্যান্ডের বোলাররা ৩৮ রান দিয়েছেন অতিরিক্ত। যেখানে ওয়াইড বলই ছিল ১৬টি। নো বল ৪টি।

পেসার গুস আটিকসন ৩৩ রানে পেয়েছেন ৫ উইকেট। আরেক পেসার টং পেয়েছেন ৩ উইকেট।

ইংল‌্যান্ডের ব‌্যাটিং ছিল উড়ন্ত। দুুই ওপেনার ‌জ‌্যাক ক্রয়লে ও বেন ডাকেট সামনে যাকে পেয়েছেন তাকেই পিটিয়েছেন। বাউন্ডারির ফোয়ারা ছুটিয়েছেন ২২ গজে। বেন ডাকেট ৪৩ রানে আউট হলে ভাঙে জুটি। আরেক ওপেনার ক্রয়লে অবশ‌্য ফিফটি তুলে নেন। ৫৭ বলে ১৪ চারে ৬৪ রান করে আউট হন।

ইংল‌্যান্ডের মিডল অর্ডারে ভাঙন ধরান পেসার মোহাম্মদ সিরাজ। ওলি পোপে (২২), জো  রুট (২৯) ও হ‌্যারি ব্রুককে (৫৩) আউট করেন এ পেসার। তাকে সঙ্গ দেওয়া প্রসিদ্ধ কৃষ্ঞা নেন ৪ উইকেট। দুই পেসারের ভয়ংকর আক্রমণে ইংল‌্যান্ড ভালো অবস্থানে থেকেও বড় কিছু করতে পারেনি।

দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ভারত রাহুল (৭) ও সুদর্শনের (১১)  উইকেট হারায়। ফিফটি তোলা জয়সওয়াল ৫১ ও আকাশ দীপ ৪ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন।

পাঁচ ম‌্যাচ সিরিজে ইংল‌্যান্ড ২-১ ব‌্যবধানে এগিয়ে। একটি টেস্ট ড্র হয়েছে। এই ম‌্যাচ ভারত জিতলে সিরিজ বাঁচাতে পারবে। ইংল‌্যান্ড জিতলে নিশ্চিত করবে সিরিজ। তৃতীয় দিন শেষে বোঝা যেতে পারে কারা শেষ হাসি হাসবে।

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ