একদিকে বঙ্গোপসাগর, অন্যদিকে সদা প্রবহমান বাঁকখালী নদী; তারই মধ্যখানে অবস্থান পর্যটন শহর কক্সবাজারের। অথচ একটু ভারী বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় পর্যটন শহরের অর্ধেক এলাকা। বন্যার পানি ঢুকে যায় বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে, এমনকি হোটেল-রেস্তোরাঁয়ও। এতে তৈরি হয় চরম জনভোগান্তি। এসব জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে এবার বর্ষা শুরুর আগেই নালার ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছে কক্সবাজার পৌরসভা।
জানা যায়, কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধতার পেছনে চারটি কারণ চিহ্নিত করেছে কক্সবাজার পৌরসভা। এগুলো হচ্ছে নালা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, পাহাড় কাটা, বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনা নালায় ফেলার কারণে নালা ভরাট হয়ে যাওয়া এবং অপরিকল্পিত উন্নয়ন।
স্থানীয় লোকজন জানান, ভারী বর্ষণ হলেই কক্সবাজার শহরের রাস্তাঘাটা, সমিতিপাড়া, কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোন, টেকপাড়া, বিজিবি ক্যাম্প এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যার পানি ঢুকে যায় বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। তৈরি হয় চরম জনভোগান্তি। বিশেষ করে শহরের সাগর তীরবর্তী কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় এ ভোগান্তি চরম আকার নেয়। এখানে অন্তত চার শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস রয়েছে। অধিকাংশ পর্যটক বেড়াতে এসে এখানেই অবস্থান করেন।
কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসক রুবাইয়া আফরোজ বলেন, ‘পর্যটন জোনের জলাবদ্ধতা নিরসনে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই কাজ শুরু করেছি। কক্সবাজার পৌরসভা, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও জনপথ, পর্যটন ব্যবসায়ী, হোটেল মালিকসহ সবাইকে নিয়ে আমি জরুরি সভা করেছি। সবাই যার যার অবস্থান থেকে তার কাজগুলো সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত কাজ শুরু করতে পারব। আমরা চেষ্টা করছি আগামী বর্ষার আগেই সব সমস্যা সমাধান করার জন্য।’
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, শুধু নালা পরিষ্কার করলেই জলাবদ্ধতা কমবে না, জলাবদ্ধতার মূল কারণ পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ বাঁকখালী নদীর পানি প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। এসব কাজ বাস্তবায়ন করতে পারলে জলাবদ্ধতা থাকবে না, জনভোগান্তি কমে আসবে।
কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল বলেন, ‘গত এক দশকে কক্সবাজার পৌরসভার উন্নয়নে কয়েকশ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। অথচ জলাবদ্ধতার মতো মূল সমস্যাগুলো সমাধান করা হয়নি। এর অন্যতম কারণ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি। পাশাপাশি পাহাড় কাটার মাটি এসে নালাগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় সহজে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তাই জলাবদ্ধতা নিরসনে উন্নয়নকাজে দুর্নীতি বন্ধের পাশাপাশি পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে।
সমৃদ্ধ কক্সবাজারের ভাইস চেয়ারম্যান আদনান সাউদ বলেন, ‘সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য কক্সবাজার শহরের সবচেয়ে বড় নালাটি বন্ধ করে দেয়। কক্সবাজার পুরোনো ঝিনুক মার্কেটের সামনের বড় নালাটি দিয়ে পুরো শহরের সিংহভাগ পানি সাগরে যেত, সেই নালাটি হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর কুফল এসে পড়েছে পর্যটন জোনে। অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে পরিবেশ ও প্রতিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে।’
কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘জলাবদ্ধতার কারণে অনেক রেস্টুরেন্টে পানি ঢুকে যায়। হোটেল-মোটেল জোনের নালাগুলো মাটি এসে ভরাট হয়ে যায়। এখানে আড়াইশর বেশি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের ছয়টি কালভার্ট নিচু হয়ে গেছে। সড়কের পশ্চিম পাশের নালার ওপর বড় স্ল্যাব দেওয়ার কারণে পৌরসভার ময়লা পরিষ্কারের গাড়িগুলো সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। পানি বাধাগ্রস্ত হয়, এ কারণেও জলাবদ্ধতা হয়।’
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘মূলত পাহাড় কাটা মাটি এসে আমাদের আশপাশের সব নালা ভরাট হয়ে যায়। এ ছাড়া সড়ক বিভাগ সড়কের সংস্কার করতে গিয়ে পুরনো ৬টি কালভার্ট উঁচু না করে এর ওপর রাস্তা নির্মাণ করেছে। ফলে এসব কালভার্ট দিয়ে পর্যাপ্ত পানি সরতে পারছে না। হোটেল শৈবালের সামনে দিয়ে যে বড় নালাটি আছে তার দুটি জায়গায় গাড়ি পারাপারের রাস্তা করায় পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর এ সমস্যার কারণে পর্যটন জোনে জলাবদ্ধতা হয়। ফলে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ‘জলাবদ্ধতা থেকে ব্যবসায়ীদের মুক্তি দিতে হবে। এক্ষেত্রে অপরিকল্পিত উন্নয়ন বন্ধ করার পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাহলেই জলাবদ্ধতা থেকে পরিত্রাণ সম্ভব।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জনভ গ ন ত প রসভ র র কল প ব যবস শহর র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবকে এখনও দেশের সবচেয়ে বড় তারকা মানেন তামিম
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে মুখ খুলেছেন তামিম ইকবাল। সমকালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তারকা খ্যাতি বা ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এই দুই তারকার দূরত্বের পেছনে অন্য কারণ কাজ করেছে। তবে সেই দূরত্ব ঘোচানোর জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কোনও উদ্যোগ নেয়নি বলেও আক্ষেপ করেছেন তিনি।
তামিম বলেন, ‘অনেকে বলে, কে কার চেয়ে সেরা। কার এনডোর্সমেন্ট বেশি। এগুলো কিছুই আমাদের সম্পর্ককে প্রভাবিত করেনি। আমি সব সময় বলেছি, বাংলাদেশের স্পোর্টসে সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব। আমি নিজেই যখন এটা বলি, তখন তারকা খ্যাতি সম্পর্কের অবনতির কারণ হতে পারে না।’
তিনি জানান, বিসিবির পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হলে সাকিব ও তার মধ্যকার দূরত্ব কমত। ‘তারা আলাদাভাবে কথা বলেছেন, কিন্তু দু’জনকে একসঙ্গে বসিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেননি’, বলেন তামিম।
তামিম আরও বলেন, অধিনায়ক থাকার সময় সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে তিনি নিজেই চেষ্টা করেছেন। যদিও সে চেষ্টা তখন সফল হয়নি, ভবিষ্যতে সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা এখনও তিনি দেখেন।
এমনকি নিজের অসুস্থতার সময় সাকিবের সহানুভূতিশীল আচরণের কথাও কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করেন তামিম। বলেন, ‘আমার অসুস্থতার সময়ে সাকিব তার ফেসবুকে দোয়ার অনুরোধ করেছিল। তার বাবা-মা হাসপাতালে আমাকে দেখতে গিয়েছেন। আমরা দু’জনই পরিণত। সামনাসামনি হলে এবং নিজেদের মধ্যে কথা হলে সম্পর্ক উন্নত হতে পারে।’
তামিমের এই মন্তব্যেই বোঝা যায়, ব্যক্তিগত বিরোধ থাকলেও তামিম এখনও চান সাকিবের সঙ্গে তার সম্পর্কটা সুস্থতায় ফিরুক।