নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে নিলে সেটার কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে: জোনায়েদ সাকি
Published: 27th, April 2025 GMT
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যে সময়সীমার কথা বলেছেন, তা আরও নির্দিষ্ট হওয়া দরকার বলে মনে করছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ডিসেম্বরের পরে যদি নির্বাচন নিতে হয়, তাহলে কী কারণে, সেটি ব্যাখ্যা করতে হবে।
আজ রোববার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে গণসংহতি আন্দোলনের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে দুপুরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন জোনায়েদ সাকি।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘অন্য উপদেষ্টারাও বলেছেন এই টাইমলাইনের বাইরে তাঁরা যাচ্ছেন না। আমরা যেটা বলেছি, এই টাইমলাইন আরও নির্দিষ্ট হওয়া দরকার এবং আলোচনার মধ্য দিয়ে হওয়া দরকার। ফলে অংশীদারিদের সঙ্গে তাঁরা বসবেন আশা করি এবং বসে ঠিক করবেন কবে নির্বাচন হবে। ডিসেম্বরের পরে যদি নির্বাচন নিতে হয়, তাহলে কী কারণে নিচ্ছে, সেটি ব্যাখ্যা করতে হবে।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, সংস্কার পরিষদ কিংবা সংস্কার সভা করতে হবে জনগণের ম্যান্ডেট (মতামত) নেওয়ার জন্য। এখন অনেকে বলছেন সংবিধান এবং সংবিধান সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নির্বাচনের আগে না পরে হবে; আগে করার সুযোগ নেই। এটা জনগণের ম্যান্ডেড এবং একটা সংসদ ছাড়া আপনি সংবিধান বদলাতে পারবেন না। সংবিধান এবং সংবিধান সংশ্লিষ্টের বাইরে অন্যান্য প্রশাসনিক যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাহী আদেশে করতে পারে। পরবর্তী সংসদ এবং সরকার সেগুলোকে জাস্টিফাই (ন্যায্যতা) করবে।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, আস্থা ভোট ও বাজেট—এ দুই বিষয় বাদে সব বিষয়ে যাতে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেন, সেই সুযোগ রেখে ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কারের কথা আমরা বলেছি। আমরা মনে করি, এটি ক্ষমতাকাঠামোর ভারসাম্য এবং সংসদকে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এবং বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করা হবে।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের কথা বলা হয়েছে উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, এখন কোনো কাজই রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া করতে পারেন না। আমরা চাই, এই জায়গা থেকে সরে গিয়ে রাষ্ট্রপতিকে নির্দিষ্ট করে বেশ কিছু নিয়োগের ক্ষমতা প্রদান করা হোক, তাঁকে অনেকগুলো কাজের ক্ষমতা প্রদান করা হোক। এ বিষয়গুলো এখনো আলাপ–আলোচনার ভেতরে আছে। সামগ্রিকভাবে আইন, নির্বাহী ও বিচার বিভাগে একটা ভারসাম্য তৈরির ব্যবস্থা যাতে সংবিধানে থাকে সে দাবি জানানো হয়েছে।
গণসংহতি আন্দোলন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৩৮টি প্রস্তাবে একমত, ১১টি প্রস্তাবে দ্বিমত, ১৩টি প্রস্তাবে আংশিক একমত এবং ৪টি বিষয়ে কোনো মতামত দেয়নি।
অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক বিচারপতি এমদাদুল হক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।
বৈঠকে গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য দেওয়ান আবদুর রশিদ, তাসলিমা আখতার, হাসান মারুফ রুমি, মনির উদ্দিন পাপ্পু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, শ্যামলী সরকার, ইমরাদ জুলকারনাইন, তরিকুল সুজন, মুরাদ মোর্শেদসহ কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা।সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, জুলহাসনাইন বাবু প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনের কাজ সফলভাবে শেষ হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন
সাফল্যের সঙ্গে সব সক্রিয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লাগাতার বৈঠকের মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছে জুলাই জাতীয় সনদ তৈরি ও বাস্তবায়নের রূপরেখা নির্ধারণ করায় জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বাসস লিখেছে, বাংলাদেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কারের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু হয় চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি, যার মেয়াদ শেষ হয় ৩১ অক্টোবর।
আরো পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়া সম্ভব
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ আমাদের ঐতিহাসিক অর্জন। এই সনদ আমাদের জাতির এক মূল্যবান দলিল, যা আমাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের পথকে কেবল সুগমই করবে না, জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে এবং আমাদের গণতন্ত্রকে সুসংহত করবে।”
প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, “জনগণ প্রত্যাশায় আছে জাতীয় জীবনে এমন কিছু পরিবর্তন দেখার জন্য, যা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাবে; এমন কিছু পরিবর্তন যা এদেশে আর কখনো কোনো স্বৈরাচারের আগমন ঘটতে দেবে না, এমন কিছু পরিবর্তন যা আমাদের জাতীয় জীবনে সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটাবে, সবার নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করবে।”
“সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে, আমরা নিজেরাই এই সংস্কার প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে কাজ করেছি, একমত হয়েছি। বাইরের কেউ আমাদের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়নি,” বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
‘অতীতে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে যে সমস্ত রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে, তাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমরা বিদেশিদের আসতে দেখেছি’ জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বন্ধু রাষ্ট্রসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিবৃন্দ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে এক টেবিলে আনার চেষ্টা করেছেন। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে যে, আমাদের নিজেদের সংকট নিজেদেরই সমাধান করতে হবে।”
“এই কারণেই সকল রাজনৈতিক দল এক কাতারে এসেছে, রাজনৈতিক বিতর্কে অংশ নিয়েছে এবং আমাদেরকে সমাধানের পথ দেখিয়েছে। বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট সমাধানে আমন্ত্রণ জানানোর পরিবর্তে আমরা নিজেরাই বিশ্ববাসীর দরবারে আমাদের জাতীয় ঐক্যকে তুলে ধরেছি,” বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলকে এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “রাজনৈতিক দলের নেতারা যারা এই সনদ তৈরিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তাদের সকলকে আমি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।”
এই জুলাই সনদ সারা বিশ্বের জন্যই একটি অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পৃথিবীর আর কোথাও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটা পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ঘটনা হয়ে থাকবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশও সংকটকালীন সময়ে দেশগঠনের পদক্ষেপ হিসেবে ‘ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের কথা বিবেচনা করবে।”
প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং বিশেষ সহকারী মনির হায়দারকে ধন্যবাদ জানান। এর পাশাপাশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ যারা মাসের পর মাস এই দীর্ঘ আলোচনার সঙ্গে থেকেছেন, ঐকমত্য কমিশনের সকল কার্যকলাপ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় পৌঁছে দিয়েছেন, তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে, যে অভূতপূর্ব ঐক্য আমাদের মাঝে রয়েছে রাষ্ট্র সংস্কারে এই জাতীয় ঐক্য আমাদের ধরে রাখতেই হবে। কারণ ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী এ জাতিকে বিভক্ত করতে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছে। গত ১৫ মাস আমরা তাদের নানা ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করেছি। ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করতে হলে, এই দেশকে বাঁচাতে হলে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই।”
‘দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ আছে’ বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কোনো একক ব্যক্তি, একক সংগঠন, একক সংস্থা অথবা একক সরকার দিয়ে সম্ভব হবে না; এজন্য সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মধ্যে একতা থাকতে হবে, যত প্রতিকূলতাই আসুক না কেন ঐক্য ধরে রাখতে হবে।”
ঢাকা/রাসেল