বটগাছ প্রতীক ফেরত চায় খেলাফত আন্দোলনের কাশেমী অংশ
Published: 27th, April 2025 GMT
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বটগাছ প্রতীক ফেরত পেতে নির্বাচন কমিশনে দরখাস্ত করেছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের এক অংশের সভাপতি আবু জাফর কাশেমী।
আদালতের রায় তারা পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। তারা হেরে গেছে। এখন বটগাছ প্রতীক আমাদের প্রাপ্য। আমরা এটা নির্বাচন কমিশনকে জানানোর জন্য দরখাস্ত করেছি।”
রবিবার (২৭ এপ্রিল) রাজধানীর নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসিরউদ্দিনসহ আরেক কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য দেন তিনি।
“আমরা চাই, আগামী নির্বাচনে যেন আমরা বটগাছ প্রতীকে নির্বাচন করতে পারি,” প্রত্যাশা করছেন আবু জাফর কাশেমী।
তিনি বলেন, “আমাদের খেলাফত আন্দোলনের যে আরেক অংশ রয়েছে, তারা বিগত দিনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রতীকটা ব্যবহার করেছে। আমরা আগে নির্বাচন করি নাই। এখন যেহেতু আমরা নির্বাচন করব, সেহেতু প্রতীকটা আমরা চাচ্ছি; আমাদের নামে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য।”
খেলাফত আন্দোলনের আরেক অংশের প্রধান আতাউল্লাহ হাফেজ্জী ‘বটগাছ’ প্রতীকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেন।
আবু জাফর কাশেমী বলেন, “আমরা আজকে এসেছি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় করতে। নির্বাচন কখন হবে, কীভাবে হবে, এটা নিয়ে বিতর্ক চলছে। নির্বাচন কমিশনকে বলেছি, আগে সংস্কার হতে হবে। প্রত্যেক জায়গায় স্বৈরাচারী সরকারের কর্মকর্তারা রয়েছেন, পতিত দলের সরকারি কর্মকর্তারা রয়েছেন। সংস্কার ছাড়া গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন। এবং নির্বাচন যেন একটি যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য সময়ের মধ্যে হয়।”
দ্বিতীয় এজেন্ডা কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আগে জাতীয় নির্বাচন হবে নাকি স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হবে; যদি আগে জাতীয় নির্বাচন হয়, যে দল ক্ষমতায় আসবে, মেয়র থেকে মেম্বর পদ পর্যন্ত তাদের দলীয় লোক ছাড়া অন্য কারো নির্বাচন করার সুযোগ নেই। সেজন্য আমরা চাচ্ছি, আগে স্থানীয সরকারের নির্বাচন হবে, পরে জাতীয় নির্বাচন হবে।”
“তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এবং যোগ্য লোক দেশের সেবা করার সুযোগ পাবে,” মনে করছেন আবু জাফর কাশেমী।
খেলাফত আন্দোলন বৈষম্যের শিকার বলে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “আমরা বিগত সরকারের নির্বাচন বয়কট করেছি। বয়কট করার কারণে আমরা নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমি চার মাস জেল খেটেছি। আমাদের মহাসচিব ৩২ মাস জেল খেটেছেন। আমাদের নেতাকর্মীরা সারা দেশে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।”
তারা বিদেশেও সফর করেছিলাম জানিয়ে আবু জাফর কাশেমী বলেন, “চায়না আমাদের পাঁচটি দলের সঙ্গে দাওয়াত দিয়েছিল। সেখানে আমাদের আলোচনা হয়েছিল। আমরা চাই, ইসলামী দলগুলো যেন একটি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারে ঐক্যবদ্ধভাবে। আলোচনা হইতেছে। বিভিন্ন দলের সঙ্গে আমরা বারবার বসতেছি। একটি নির্বাচনি এলাকায় আমাদের একটি প্রতীক থাকবে। যার যেখানে গ্রহণযোগ্যতা আছে, যেন সে পাস করে আসতে পারে।”
অভিন্ন প্রতীকে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনে যে কোনো আসনে একক প্রার্থী দিয়ে তাকে পাস করিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা অনেক দূর আগাইছি। সবাই চায়, আমরা যেন ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করি। যার যে মত, সে অবস্থায় থাকবে কিন্তু নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা সবাই একমত।”
‘‘আমরা এখন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি দেশ গঠনে’’ এমন দাবি করে আবু জাফর কাশেমী বলেন, “যেহেতু পতিত স্বৈরাচার দেশ থেকে পালিয়ে গেছে, সেহেতু এখন সময় এসেছে, দেশটাকে নতুন করে গড়ার। সেজন্য আমাদের যত দ্বন্দ্ব আছে, আমরা সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে দেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। ইনশাআল্লাহ, সমস্ত ইসলামী দল আমরা একসঙ্গে হব, এটাই আমাদের প্রচেষ্টা। আমরা অনেক দূর এগেয়েছি। আমাদের মিল হয়ে গেছে। এখন শুধু ঘোষণাটা বাকি।”
ঢাকা/হাসান/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ফর ক শ ম সরক র র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন: জামায়াতে ইসলামী
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাভাবিক বললেও, দুইজনের যৌথ বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জামায়াতে ইসলামী।
শনিবার জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের বৈঠকের পর বিবৃতিতে দলটি বলেছে, ‘যৌথ বিবৃতি প্রদান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে আমরা মনে করি। এর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে।’
দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ‘১৩ জুন লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাকে জামায়াত খুবই স্বাভাবিক মনে করে। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে এবং যৌথভাবে বৈঠক করেছেন।’
লন্ডন বৈঠকের যৌথ বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে জামায়াত বলেছে, ‘গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা। তার এই ঘোষণার পর লন্ডন সফরে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিদেশে যৌথ প্রেস ব্রিফিং এবং বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতি প্রদান করা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে জামায়াত মনে করে। এর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করে।’
লন্ডন বৈঠকের যৌথ বিবৃতিতে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। জামায়াত এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা মনে করি দেশে ফিরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার অভিমত প্রকাশ করাই সমীচীন ছিল।’
জামায়াত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিরোধী নয় বিবৃতিতে স্পষ্ট করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘গত ১৬ এপ্রিল জামায়াত আমির দলীয় দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরে জানিয়েছিলেন ২০২৬ সালের রসজানের পূর্বে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জামায়াত মনে করে সরকার প্রধান হিসেবে কোনো একটি দলের সঙ্গে যৌথ প্রেস ব্রিফিং নৈতিকভাবে কিছুতেই যথার্থ নয়। প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি দেওয়ায় আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল সক্রিয়ভাবে বিদ্যমান, সেখানে শুধু একটি দলের সঙ্গে আলাপে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সঠিক বলে বিবেচিত হতে পারে না। জামায়াত আশা করে, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার নিরপেক্ষ থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে এবং বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে। সরকারের নিরপেক্ষতা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় দেখা দিয়েছে তা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা জাতির সামনে স্পষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের দিন জামায়াত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না জানালেও দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা সমকালকে বলেছিলেন, ‘জামায়াতই প্রথম বলেছে, রমজানের আগে নির্বাচন হওয়া উচিত। তাই নির্বাচনের যে নতুন সময়সীমা বলা হচ্ছে, এ নিয়ে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু সরকার যেভাবে শুধু বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে সময়সীমা নির্ধারণ করেছে, তা অগ্রহণযোগ্য।’
জামায়াত নেতারা শুক্রবার রাতেই সমকালকে বলেছিলেন, যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে– সরকার এবং বিএনপি সমশক্তি। এর পর আর সরকারের নিরপেক্ষতা থাকে না। এ বক্তব্য ড. ইউনূসকে জানাবে জামায়াত।