জামালপুরে ভাঙন ঠেকাতে নদীতে পাল্টাপাল্টি বাঁধ, ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত
Published: 28th, April 2025 GMT
নদীভাঙন থেকে রক্ষায় জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় দশানী নদীতে পাল্টাপাল্টি বাঁধ নির্মাণ করেছেন এলাকাবাসী। বাঁধ নির্মাণকে কেন্দ্র করে দুই উপজেলার কয়েকটি গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
বাঁধের কারণে পানিনিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গিয়ে নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা আরও বাড়ছে।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখা নদী হলো দশানী। এটি দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দশানী নদী থেকে আরেকটি শাখা বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের খাপড়াপাড়া গ্রাম দিয়ে প্রবাহিত হয়। প্রতিবছর এই এলাকায় নদীভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনরোধে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি জানিয়ে এলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার খাপড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দারা সম্প্রতি নদীতে আড়াআড়িভাবে একটি বাঁধ নির্মাণ করেন।
ওই বাঁধের ফলে নদীর পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কামালের বার্ত্তী, শেখপাড়া, খানপাড়া, বাঙালপাড়া, মদনেরচর, নীলেরচর, কুতুবেরচর, চরগাজিরপাড়া গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করে। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে বকশীগঞ্জের চর আইরমারী গ্রামের বাসিন্দারাও নদীতে আরেকটি পাল্টা বাঁধ নির্মাণ করেন।
পাল্টাপাল্টি বাঁধ ও উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ এপ্রিল জেলা প্রশাসক, দুই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো বাঁধ অপসারণ করা হয়নি। বাঁধ এলাকায় নিরাপত্তার কারণে অপরিচিত কেউ সহজে প্রবেশ করতে পারছেন না।
জামালপুরের জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীতে পাল্টাপাল্টি বাঁধ নির্মাণের খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা করেছি। উভয় পক্ষ বাঁধ অপসারণে সম্মত হয়েছে এবং নিজেদের ভুল স্বীকার করেছে। আশা করি, তারা স্বেচ্ছায় বাঁধ সরাবে। না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চর আইরমারী গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাপড়াপাড়ার বাঁধের কারণে সাধুরপাড়া, মেরুরচর ও নিলক্ষিয়া ইউনিয়নের ৩২টি গ্রামের ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে ঘরবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ঝুঁকির মুখে পড়বে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আইরমারীতে পাল্টা বাঁধ দিয়েছি।’
খাপড়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো.
পানি উন্নয়ন বোর্ডের জামালপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, নদীতে পানিপ্রবাহ বন্ধের জন্য বাঁধ নির্মাণের কোনো নিয়ম নেই। নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাঁধ অপসারণ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ধ ন র ম ণ কর উপজ ল র ব যবস থ প রব হ
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)