আর্নে স্লট: কিংবদন্তির জায়গা নিলেন এবং নিজেই কিংবদন্তি হয়ে গেলেন
Published: 28th, April 2025 GMT
ফ্ল্যাশব্যাকে এক বছর আগের এই সময়ে ফিরে যাওয়া যাক। লিভারপুল শহরের লাল অংশ তখন মেঘাচ্ছন্ন। প্রায় কারও মনই ভালো নেই। পুরো শহরে তখন ছড়িয়ে পড়েছে বিদায়রাগিণী। লিভারপুলের পুনরুত্থানের নায়ক ইয়ুর্গেন ক্লপ ক্লাব ছাড়বেন। এমন কাউকে তো আর যেনতেনভাবে বিদায় দেওয়া যায় না! ক্লপের বিদায় রাঙানোর প্রস্তুতিতে নিজেদের ব্যস্ত করে রাখেন লিভারপুলবাসী। এই ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে ক্লপকে হারানোর যন্ত্রণাটাকেও হয়তো কবর দিতে চান তাঁরা।
বিদায়ের এই ক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছিল, পুরো লিভারপুল শহর তখন ক্লপময় হয়ে উঠছিল। বিলবোর্ড, রাস্তার দেয়াল কিংবা কফি শপ—সব জায়গা ছেয়ে গেছে ক্লপের পোস্টারে। বিদায় আয়োজন যখন তুঙ্গে, তখনই আর্নে স্লটের কোচ হওয়ার বিষয়টি সামনে আসে।
খুব পরিচিত কোনো নাম নয়। নেদারল্যান্ডসের ক্লাব ফেইনুর্দের কোচ হিসেবে সাফল্য পেয়েছেন বটে, তবে লিভারপুলের মতো ক্লাবে কতটা কী করতে পারবেন, তা অনিশ্চিত। লিভারপুল সমর্থকরা অবশ্য তাঁর আসার পথে ফিরেও তাকালেন না। স্লট কে, কেমন তাঁর কোচিং–দর্শন, ক্লপের সঙ্গে তাঁর কী পার্থক্য, সেসব নিয়ে ভাবলেনও না কেউ।
কেউ কেউ অবশ্য আলটপকা মন্তব্যও করে বসলেন, ‘এক মৌসুমও টিকবে না’, ‘পরের মৌসুমে ৮–১০ নম্বরে থেকে শেষ করবে লিভারপুল, আর ছাঁটাই হবে স্লট’। এ রকম বহু মন্তব্য সে সময় খোদ লিভারপুল সমর্থকেরাও করেছিলেন। পরিস্থিতি এমন ছিল, স্লট তখন লিভারপুলে সবচেয়ে অগুরুত্বপূর্ণ একজন, যাঁকে নিয়ে কেউ ভাবছে না। ক্লপের পরিবর্তে কাউকে না কাউকে তো আসতেই হতো। ফলে কে আসছেন, তা নিয়ে অত মাথা ঘামানোর দরকার কী, কেউ একজন এলেই হলো!
আরও পড়ুনলিভারপুলের পথে থাকা আর্নে স্লটের ‘আবেদনময়ী’ ফুটবল–দর্শন কেমন ২৭ এপ্রিল ২০২৪টাক মাথার আপাতনিরীহ-দর্শন মানুষটির এই অনাদর মেনে নিতে পারেননি ক্লপ নিজেই। নিজের বিদায়বেলায় ক্লপকেই ‘স্লট, স্লট’ বলে স্লোগান ধরতে হয়েছিল। ক্লপ যেন সবাইকে মনে করিয়ে দিলেন, তিনিই ক্লাবের শেষ কোচ নন। দায়িত্ব নিতে অন্য একজন এরই মধ্যে চলে এসেছেন। ক্লপের সেই স্লোগান অবশ্য অ্যানফিল্ডের গ্যালারিতে কোনো ঢেউ তুলতে পারেনি। পারার অবশ্য কথাও নয়।
এমন নীরস ও হতশ্রী দশার ভেতর বাক্স–পেটরা নিয়ে অনেকটা আগন্তুকের মতো অ্যানফিল্ডের দায়িত্ব সামলাতে আসেন স্লট। নিজের প্রথম মৌসুমে দল গড়তে কোনো রসদও পাননি এই ডাচ কোচ। উইঙ্গার ফেদেরিকো কিয়েসাকেই কেবল দলে ভেড়াতে পেরেছেন। চোটপ্রবণ কিয়েসা সব মিলিয়ে খেলেছেন ১২ মাচ। মূলত ক্লপের রেখে যাওয়া দলকে নিয়েই পথচলা শুরু করেছিলেন স্লট।
এত প্রতিকূল পরিবেশে সত্ত্বেও নিজের লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থেকেই ধীরপায়ে এসে ‘অল রেড’ ডাগআউটে দাঁড়ান স্লট। তারপর জাদুকরের মতো চোখ ইশারাতেই লিভারপুলকে জিতিয়েছেন একের পর এক ম্যাচ। একপর্যায়ে লিভারপুলের ট্রেবল জয়ের সম্ভাবনাও উজ্জ্বল করে তুলেছিলেন স্লট। মাঝের বাজে সময় অবশ্য দলটিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ ও এফএ কাপ থেকে ছিটকে দিয়েছে। কিন্তু তত দিনে লিগ জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে।
স্লট নিয়েছিলেন ইয়ুর্গেন ক্লপের জায়গা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অবশ য
এছাড়াও পড়ুন:
স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগীকেও বাঁচানো যায়
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হতাহত হওয়ার ঘটনার পর দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এ ব্যাংকের অবস্থান। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর অনেকেই স্কিন (চামড়া বা ত্বক) দান করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করছেন। স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি পুড়ে যাওয়া রোগীকেও বাঁচানো সম্ভব।
২১ জুলাই দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। গত সোমবার রাত ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৩৪ জন মারা গেছে। আর সোমবার বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৪৫ জন। তাদের মধ্যে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৩৩ জন।
দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।জীবিত ব্যক্তির শরীর থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা ত্বক মারাত্মকভাবে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া যে কেউ চাইলে মরণোত্তর ত্বক দান করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দাতার মৃত্যুর পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মরদেহ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা হয়। পরে সেই ত্বক দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
ওজন কমানোসহ কিছু প্লাস্টিক সার্জারির পর বেঁচে যাওয়া ত্বক সংরক্ষণ করার মধ্য দিয়ে দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করে। আগে এ ধরনের অস্ত্রোপচারের পর বাড়তি ত্বক ফেলে দেওয়া হতো।
স্কিন ব্যাংকের সমন্বয়কারী ও জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে; বিশেষত অনেক নারী আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে যোগাযোগ করেছেন।
তবে সমস্যা হলো, আগ্রহী ব্যক্তিদের বেশির ভাগ চাইছেন, মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষার্থীদের শরীরে যাতে তাঁদের দান করা ত্বক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে প্রক্রিয়া শেষে কার দান করা ত্বক কার শরীরে ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া ত্বক দান করার ক্ষেত্রে স্ক্রিনিংসহ পুরো প্রক্রিয়া শুনে অনেকে আর আগ্রহ দেখাননি। এখন পর্যন্ত যাঁরা যোগাযোগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ জন ত্বক দান করতে চেয়েছেন বলে জানান চিকিৎসক মাহবুব হাসান।
ভবিষ্যতে দগ্ধ রোগীর চিকিৎসায় ত্বক সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। ত্বক সংগ্রহের পর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। তাহলে সেই ত্বক পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।মাহবুব হাসান, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক।৩ জুলাই মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম আন্তর্জাতিক দগ্ধ ও আঘাতপ্রাপ্তদের সম্মেলন। এই সম্মেলনে ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ফার্স্ট স্কিন ব্যাংক ইন বাংলাদেশ: দ্য ওয়ে অব ওভার কামিং দ্য চ্যালেঞ্জেস’ শিরোনামের বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাহবুব হাসান। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। আর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।
আপাতত রেজিস্ট্রেশন ও স্ক্রিনিংদেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংক উদ্বোধন করা হয় গত ৯ জানুয়ারি। তবে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। ব্যাংকটিতে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল। বর্তমানে এই ব্যাংকে দুজন চিকিৎসক ও একজন নার্স দায়িত্ব পালন করছেন।
স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যাংকে ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে ৩ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।
স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ত্বকদানের আহ্বান জানিয়ে অনেকেই পোস্ট দিচ্ছেন। তবে কিছু কিছু ভুল তথ্যও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুনস্কিন ব্যাংক চালু হলো বাংলাদেশে, দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত২৫ জুলাই ২০২৫মাইলস্টোনের ঘটনার পর জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অনেকেই ত্বক দান করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক সংরক্ষিত আছে।
এ বিষয়ে চিকিৎসক মাহবুব হাসান বলেন, এ মুহূর্তে ত্বকদানে আগ্রহী ব্যক্তিদের রেজিস্ট্রেশন আর স্ক্রিনিং করে রাখার বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে তাঁদের কাছ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা যায়।
সংগ্রহ করা ত্বক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখলে পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে