এক চার্জে ১০০ কিলোমিটার, খরচ হবে ৩০০ টাকার কম
Published: 29th, April 2025 GMT
বিওয়াইডি গাড়ির কথা উঠলেই মনে হতে পারে তারা শুধু বৈদ্যুতিক গাড়িই তৈরি করে। বাস্তবে কিন্তু কোম্পানিটি জ্বালানিতে চলে এমন গাড়িও বানায়। বাংলাদেশের ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে সে রকম, অর্থাৎ জ্বালানি ও বৈদ্যুতিক চার্জ উভয় পদ্ধতিতে চালিত একটি গাড়ি নিয়ে এসেছে সিজি রানার বাংলাদেশ। তারা এনেছে বিওয়াইডির সিলায়ন-৬ মডেলের এসইউভি গাড়ি।
আমন্ত্রিত সাংবাদিক ও অতিথিদের সিলায়ন-৬ মডেলের গাড়িতে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দিতে সিজি রানার বাংলাদেশ আজ মঙ্গলবার সকালে ‘বিওয়াইডি মিডিয়া ড্রাইভ’ শীর্ষক একটি ইভেন্টের আয়োজন করে। সে অনুযায়ী রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বিওয়াইডি ফ্ল্যাগশিপ বিক্রয়কেন্দ্র থেকে শুরু করে মাওয়ার হিলশা রেস্তোরাঁ পর্যন্ত সাংবাদিক ও অতিথিদের নেওয়া হয়।
এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল গাড়িটির শক্তি, দক্ষতা, স্টাইল আর প্রযুক্তির উৎকর্ষ প্রদর্শন। দিনব্যাপী এই আয়োজনে বিওয়াইডি সিলিয়ন-৬-এ চড়ার মাধ্যমে এক আধুনিক, আরামদায়ক ও স্মার্ট ড্রাইভিং বা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা পাওয়া গেছে বলে জানান সাংবাদিক ও অতিথিরা।
সকাল সাড়ে ৮টায় বিওয়াইডি ফ্ল্যাগশিপ শোরুমে সকালের নাশতা পরিবেশন ও আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় কর্মসূচি। এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়। গন্তব্য—মাওয়ার প্রজেক্ট হিলশা। প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরত্বের এই যাত্রায় মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের মসৃণ পথ যেন বিওয়াইডি সিলিয়ন-৬-এর কার্যদক্ষতা (পারফরম্যান্স) প্রদর্শনের এক আদর্শ পথ হয়ে উঠেছিল। আসা-যাওয়া মিলিয়ে ঘণ্টা তিনেকের এই ভ্রমণ ছিল দারুণ।
বিওয়াইডি সিলায়ন-৬ মূলত একটি হাইব্রিড ধরনের এসইউভি (স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল)। আধুনিক প্রযুক্তি আর চমৎকার কার্যক্ষমতার এক দারুণ সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়েছে এ গাড়ি। প্রথম দেখায় বিওয়াইডি সিলায়ন-৬ চোখে পড়বে এটির চমৎকার ডিজাইন বা নকশার কারণে। ওসেন অ্যাসথেটিকস ধারণা অনুযায়ী নকশা করা হয় গাড়িটির। তাই এটির নামকরণও করা হয় সামুদ্রিক প্রাণী সিলায়নের নামে।
এসইউভিটির সামনের দিকে রয়েছে বড় ফ্রন্ট গ্রিল, স্লিক এলইডি হেডলাইট ও স্কাল্পটেড বডি শেপ, যা গাড়িকে একটি প্রিমিয়াম স্পোর্টিং লুক দিয়েছে। গাড়ির ১ হাজার ৯৪০ কেজি ওজন ও ৭ ইঞ্চির গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স বৈশিষ্ট্য, শহরের রাস্তাসহ অফ-রোড বা লম্বা হাইওয়ে ট্রিপেও অনায়াসে মানিয়ে চলতে সক্ষম বলে জানানো হয়। গাড়িটিতে ভ্রমণ করেও সে প্রমাণই পাওয়া গেল।
বিওয়াইডি সিলায়ন-৬ একটি প্লাগ-ইন হাইব্রিড গাড়ি। এতে রয়েছে ডিএমআই প্লাগ-ইন হাইব্রিড ধরনের অকটেন ইঞ্জিন ও শক্তিশালী ইলেকট্রিক মোটর, যা শূন্য থেকে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতি তুলতে সময় নেয় মাত্র ৮ দশমিক ৫ সেকেন্ড। হাইওয়েতে চলার সময় মনে হয়েছে গাড়িটি ঝাঁকুনিহীন।
বিওয়াইডির গ্রাহকসেবা বিশেষজ্ঞ রেজওয়ান রহমান বলেন, বিওয়াইডি সিলায়ন-৬ একটা প্লাগ-ইন হাইব্রিড ইলেকট্রিক গাড়ি। এটার সুবিধা হচ্ছে শুধু ইলেকট্রিক চার্জেও চালানো যায়। প্রয়োজন হলে রেগুলার তেলের গাড়ির মতো চালানো সম্ভব।
গাড়িটিতে রয়েছে প্যানারোমিক সানরুফ। ফলে দূরের যাত্রায় মাথার ওপরের এই ছাদ খুলে মাওয়ার নীল আকাশ উপভোগ করতে ভালোই লাগছিল। সিজি রানার বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানান, বিওয়াইডি সিলায়ন-৬-এ রয়েছে অ্যাডভান্সড ড্রাইভার অ্যাসিস্ট্যান্স সিস্টেম। এতে আছে লেন কিপ অ্যাসিস্ট, অ্যাডাপ্টিভ ক্রুজ কন্ট্রোল, অটোনোমাস ইমার্জেন্সি ব্রেকিংয়ের মতো আধুনিক নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য। গাড়িটির ইন্টেরিয়র বা অভ্যন্তরীণ নকশা ও সুবিধাগুলো বেশ আকর্ষণীয়। যেমন এতে কৃত্রিম (সিনথেটিক) চামড়ার সিট, ১৫ দশমিক ৬ ইঞ্চির টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে, ইনফিনিটি ব্র্যান্ডের ১০টি স্পিকারের সাউন্ড সিস্টেম ও মাল্টি জোন ক্লাইমেট কন্ট্রোল পদ্ধতি এটিকে বিশেষ উপভোগ্য করেছে। এ ছাড়া সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা। অর্থাৎ ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে গাড়ির জানালা, এসি, সানরুফ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
এ ছাড়া ১০টি ক্যামেরার মাধ্যমে ৩৬০ ডিগ্রির এইচডি ক্যামেরা ও ৬টি এয়ারব্যাগের মতো উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গাড়িটিকে অধিকতর সুরক্ষিত ও নির্ভরযোগ্য করে তুলেছে। ইকো, নরমাল ও স্পোর্টস—এই তিনটি ড্রাইভিং মোডে চালানো যাবে গাড়িটি। সিলায়ন-৬ হারবার গ্রে, স্টোন গ্রে, আর্কটিক হোয়াইট ও ডিলান ব্ল্যাক—এই চার রঙে পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম ২০০ জন ক্রেতার জন্য গাড়িটির দাম ৬৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্রেতারা চাইলে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে দামের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নিয়ে গাড়িটি কিনতে পারবেন।
গাড়ির সামনে চাইলে যে কেউ তাঁর মোবাইল ফোনে তারবিহীন চার্জ দিতে পারবেন। এ ছাড়া সামনে ও পেছনে ইউএসবি ও টাইপ সি চার্জিং পদ্ধতি রয়েছে। ধরা যাক, কেউ ১০ তলা বাড়ি থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে নামতে ভুলে গেলে পকেটে থাকা এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) কার্ড দিয়ে চালাতে পারবেন গাড়িটি। ‘বিওয়াইডি সিলায়ন-৬’ মডেলের গাড়িটি এক চার্জে ও ফুল ট্যাংক জ্বালানিতে চলবে ১ হাজার ৯২ কিলোমিটার পথ। জ্বালানি ও চার্জ—এই দুই মাধ্যমে গাড়িটি চালালে প্রতি কিলোমিটার ৪ টাকা ১২ পয়সা খরচ হবে। শুধু ব্যাটারিতে চালালে প্রতি কিলোমিটারে ৩ টাকার কম খরচ হবে। পূর্ণ এক চার্জে গাড়িটি চলবে ১০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ এ গাড়িতে ১০০ কিলোমিটার যেতে খরচ হবে ৩০০ টাকার কম।
সর্বাধুনিক সব ফিচারের পাশাপাশি ওয়ারেন্টি সুবিধা মিলবে এই গাড়িতে। এর মধ্যে ব্যাটারি ও ড্রাইভ ইউনিটের জন্য ৮ বছর এবং অন্যান্য প্রধান যন্ত্রাংশের জন্য ৬ বছরের ওয়ারেন্টি রয়েছে।
বিওয়াইডি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক চার্লস রেন বলেন, ‘বিওয়াইডি সিলায়ন-৬ গাড়ি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি, যা আমাদের এটাকে আরও বেশি পরিবেশবান্ধব ও শক্তিশালী করে তুলেছে। আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আরও সাশ্রয়ী ও উন্নত প্রযুক্তির গাড়ি বাজারে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ১০০ ক ল ম ট র ভ রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।
এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।
শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।
সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫