ময়মনসিংহ সদরে পরিত্যক্ত ও ছায়াযুক্ত জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে বস্তায় আদা চাষ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে খাগডহর ইউনিয়নের বাদেকল্পা এলাকায় প্রাথমিকভাবে ১ হাজার বস্তায় আদার চাষ হচ্ছে।

এ প্রকল্পে আনুমানিক ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হলেও বিক্রিয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। কৃষকদের মতে, খরচ কম ও লাভ বেশি হওয়ায় বস্তায় আদা চাষ করে কোনোরকম ঝুঁকি ছাড়াই সফলতা অর্জন করতে চান তারা। 

কৃষি অফিসের তথ্যমতে, যাদের চাষের জমি নেই তারা বাড়ির আশপাশে বা আঙিনায় বস্তায় আদা চাষ করে লাভবান হতে পারেন। এতে ঝুঁকির পরিমাণ শূন্যের কোঠায়। বস্তায় আদা চাষে গাছের তেমন কোনো রোগবালাই হয় না। এছাড়া সার ও কীটনাশক কম লাগে। স্বল্প পরিশ্রমে অন্যান্য যেকোনো কাজের পাশাপাশি বাড়ির মহিলারাও এ কাজ করতে পারেন। তাছাড়া, অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে সঙ্গী ফসল হিসেবে বস্তায় আদা চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব। 

সরেজমিনে বাদেকল্পায় জসীম উদ্দীনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির আঙ্গিনায় গাছ গাছালিতে ভর্তি ছায়াযুক্ত পরিত্যক্ত স্থানে ১ হাজার পলিব্যাগে আদা রোপণ করা হয়েছে। সামান্য দু-একদিনের বৃষ্টিতেই বীজ আদাগুলো থেকে কাণ্ড তৈরি হতে শুরু করেছে। সদর উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় এ প্রকল্প দেখে আগ্রহী এলাকার অনেক চাষী। তাদের মতে, প্রতিবছর অল্প পরিশ্রমে আদা চাষ করে স্বাবলম্বী হতে চান তারা।

জসীম উদ্দিন জানান, বস্তায় আদা চাষ দেশে নতুন না হলেও তাদের এলাকায় এ পদ্ধতি নতুন। প্রতিদিন অনেক মানুষ এ প্রকল্প দেখতে আসে। খুব সহজে আদা চাষ করা যায় বলে অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে ঘরের বারান্দায় এবং ছাদে কয়েকটি বস্তা নিয়ে চাষ শুরু করেছেন। 

প্রতিবেশী কৃষক আব্দুল মান্নান জানান, এরকমভাবে আদার চাষ করে বছরের লাখ টাকা আয় করা সম্ভব এটা আমাদের জানা ছিল না। এই প্রযুক্তি আগে থেকে জানলে বাড়ির পরিত্যক্ত ছায়াযুক্ত স্থান ও ঘরের আশপাশে সবাই মিলে আদা চাষ করতাম। বছরের কোনও কোনও সময় বাজারে আদার দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি হয়ে যায়। এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করলে আমরা এলাকার চাহিদা মিটিয়ে অন্য এলাকায় বিক্রি করতে পারবো। 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একগ্রোনোমি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড.

মো. রমিজ উদ্দিন বলেন, আদা একটি ভেষজ মসলা, এর গুণাগুন সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না। বর্তমানে এর চাষ লাভজনক হওয়ায় অনেক নতুন চাষীই এতে আগ্রহী হচ্ছে।  বস্তায় আদা চাষ করে অন্যান্য যে কোনো পেশার পাশাপাশি বাড়তি আয় করা সম্ভব। এতে বাড়তি কোনও কীটনাশক ও সার প্রয়োগ করতে হয় না। যেহেতু এখানে খুব বেশি ইনভেস্টের প্রয়োজন হয় না তাই বাড়ির মহিলারা এবং বেকার যুবকেরা খুব সহজেই এটি করতে পারে। 

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ জানান, বসতবাড়ির আঙিনায় অনাবাদি পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষ লাভজনক পদ্ধতি। বস্তায় আদা চাষ খুবই সহজ ও খরচ কম যা চাইলে যে কেউই করতে পারবে। বস্তার মাটি তৈরি করতে দুইভাগ মাটি একভাগ পচা গোবর ও হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, অল্প ছাই এবং অল্প পরিমাণে রাসায়নিক সার মিশিয়ে ৭-১০ দিন রেখে তারপর বস্তায় মাটি ভরাট করে অঙ্কুরিত আদা বীজ রোপণ করা যায়। 

একটি বস্তায় ১০০ গ্রাম আদা রোপণ করতে হয়। প্রতিটি বস্তায় আদা চাষ করতে সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা খরচ হয়। অনুকূল পরিবেশ এবং সঠিক পরিচর্যা পেলে ১ থেকে দেড় কেজি আদা উৎপাদন করা সম্ভব।

পরীক্ষামূলক আধা চাষ প্রকল্পের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জুবায়রা বেগম সাথী। তিনি সমকালকে বলেন, অন্যান্য ফসল চাষের পাশাপাশি কৃষকরা বস্তায় আদা চাষ করে প্রতিবছর এক থেকে দুই লাখ টাকা বাড়তি আয় করতে পারেন। তাছাড়া যারা শহরে থাকেন তারা বাড়ির ছাদে, বারান্দা ও বেলকনিতে সহজেই চাষ করতে পারেন। একবার বস্তায় মাটি ভরাট করে বারবার চাষ করা যায়।

তিনি আরও বলেন, এ পদ্ধতিতে জমি তৈরির সময় আগাছা পরিষ্কার করতে হয় না। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করলে কাণ্ড পচা রোগ হয় না। এ পদ্ধতিতে পোকার আক্রমণ কম হয়। ফলে কৃষকের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। তাই উপজেলার অনেক কৃষক আদা চাষে আগ্রহী হচ্ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন য ন য প রকল প চ ষ কর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

উৎসব ঘুরে প্রেক্ষাগৃহে ‘বাড়ির নাম শাহানা’

কৈশোর পেরোনোর আগেই শাহানাবাড়ির মেয়ে দীপার বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর নির্যাতনের জাল ছিঁড়ে নিজের মতো করে বাঁচতে চেয়েছেন তিনি। নব্বইয়ের দশকের পটভূমিতে দীপার বেঁচে থাকার লড়াইয়ের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে বাড়ির নাম শাহানা।

সত্য কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত বাড়ির নাম শাহানায় দীপা চরিত্রে অভিনয় করেছেন আনান সিদ্দিকা। ছবিটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে কমলা কালেক্টিভ ও গুপী বাঘা প্রোডাকশন্স লিমিটেড।

নির্মাণের বাইরে লীসা গাজী লেখক, নাট্যকর্মী হিসেবে পরিচিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ