নির্বাচিত সরকার ছাড়া কেউ সংস্কার করতে পারবে না: জিএম কাদের
Published: 1st, May 2025 GMT
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, “এই মুহূর্তে অবাস্তব সংস্কার চাই না। নির্বাচিত সরকার ছাড়া কেউ সংস্কার করতে পারবে না। নির্বাচনের কথা বলে আপনারা দেশের অর্ধেক মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর ভোটাধিকার দিতে চান না। যেহেতু আপনারা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে পারছেন না, দয়া করে বিদায় হোন।”
মে দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১ মে) কাকরাইলে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে জাতীয় শ্রমিক পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, “ড.
আরো পড়ুন:
জিএম কাদেরের প্রশ্ন
তোমরা কেমন করে ফাইভ স্টারে চলাফেরা করো?
দুদকের সামনে জিএম কাদেরকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন
“আপনার দ্বারা কোনো সংস্কার আমরা বিশ্বাস করি না। যারা সংস্কার করছেন, তারা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট জানেন না। আপনারা সংস্কার প্রস্তাবগুলো টেবিলে রেখে যান, পরবর্তী নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় আসবে তারাই সংস্কার করবে। এই মুহূর্তে আমরা সংস্কার চাই না। সরকারপ্রধান হিসেবে তার উপরে আমাদের কোনো আস্থা নেই, আমরা তাকে চাই না। তারা যে সংস্কারের কথা বলছে, তা বাস্তবায়নযোগ্য নয়,” বলেও মনে করেন জাপা চেয়ারম্যান।
তিনি দুঃখ করে বলেন, “কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে বের করে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। কোন আইনে রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখবেন? কেউ দোষ করলে এটা তার দল বা ধর্মের দোষ নয়। আপনারা কাউকে নির্বাচন থেকে বাদ দিতে পারবেন না। সবাইকে নিয়েই নির্বাচন করতে হবে, সেই বুকের পাটা নিয়ে রাজপথে দাঁড়ান। বিচার ও সংস্কারের কোনো টাইম লিমিট নেই, এগুলো সবসময় করা যায়। একসাথেই সব সংস্কার করবেন বিষয়টা এমন নয়। চারা গাছ দিয়ে ফুল, ফল ও ছায়া সম্ভব নয়। চারা গাছকে বড় হতে সময় দিতে হবে। যতই সার, পানি ও ইনজেকশন দেন চারা গাছকে বড় হতে সময় দিতেই হবে।”
জাপার ওপর আর কোনো অন্যায় অত্যাচার সহ্য করা হবে না হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জিএম কাদের বলেন, “আমাদের কর্মসূচিতে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে, নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও নির্যাতন চলছে। আপনারা দেশের অর্ধেক মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে রাজনীতি করতে দিতে চান না, আমরা আপনাদের ঐ চিন্তার ধার ধারি না। আমরা এদেশের সন্তান, এদেশের জন্য আমাদের ত্যাগ আছে। এদেশের জন্য আমরা কাজ করেছি, ভবিষ্যতেও কাজ করে যাব। দেশের মানুষ যদি আমাদের গ্রহণ না করে আমরা মাথা পেতে নেব, কিন্তু আপনারা আপনাদের সুবিধার জন্য আমাদের রাজনীতি বাধাগ্রস্ত করবেন তা মেনে নেব না। কোনো ফ্যাসিবাদি সিদ্ধান্ত আমরা দেখতে চাই না। যতদিন পর্যন্ত নব্য ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত না হবে, ততদিন আমাদের সংগ্রাম চলবে।”
সরকারপ্রধান ও নিয়োগ কর্তাদের ক্ষমতা ছেড়ে রাজনীতিতে আসার আহ্বান জানিয়ে সাবেকবিরোধী দলের নেতা বলেন, “ক্ষমতা ছেড়ে রাজনীতিতে আসুন। জনগণ যদি আপনাদের গ্রহণ করে আমরা গ্রহণ করব। কিন্তু সরকারের ছত্রছায়ায় তারা যে নতুন দল করেছে তা পূরনো স্টাইলেই আগাচ্ছে। চাঁদাবাজি ও শোডাউনের রাজনীতি করতে গিয়ে তারা কাকের গায়ে ময়ুয়ের পালক লাগিয়েছে। তারা দেশের পরিবর্তনের জন্য কোনো কাজ করছে না। যারা সরকারে থেকে দল করছেন, তারা সরকার থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতির মাঠে আসুন। দেশের জনগণ যাকে মেনে নেয়, আমরাও তাকেই গ্রহণ করব।”
তিনি বলেন, “সরকারের ক্ষমতা আর মববাজি দিয়ে দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার চালাবে আমরা তা মেনে নেব না। সাংবাদিকরা রাজনীতিবিদদের প্রশ্ন করে, এটাই স্বাভাবিক। সেজন্য সাংবাদিকদের চাকরি চলে যাবে, টিভি স্টেশন বন্ধ হয়ে যাবে এমন কালচার আমরা দেখতে চাই না। আমরা এক ফ্যাসিবাদকে বিদায় করেছি আরেক ফ্যাসিবাদকে গ্রহণ করতে নয়। আমরা এই নব্য ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব। আমরা নব্য ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসরদের রুখে দেব।”
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে জিএম কাদের বলেন, “বাংলাদেশের লাখ লাখ বেকার হয়ে পড়েছে। আরো অনেকেই বেকার হওয়ার আশঙ্কায় উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছে। ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে অনেক কল কারখানা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মিল কারখানা চালু করে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে। মালিকপক্ষ যে দলই করুক শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কৃষকরা ফসল উৎপাদন করছে, দাম পাচ্ছে না। গেল রমজানে সরকার বাহাদুরি করে বলেছে, সব নিত্যপণ্যের দাম কম। কিন্তু, সরকার বোঝে নাই কৃষকদের কষ্ট। ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে কৃষকরা ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। এখন মালামালের দাম বেড়েছে, কিন্তু কৃষক ও শ্রমিকের হাতে টাকা নেই এবং ব্যবসায়ীদের হাতেও টাকা নেই। প্রতিদিন রপ্তানি কমে যাচ্ছে, দেশে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে। নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসলে বিশ্বের কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে ঋণ দেবে না। বিদেশি সাহায্য পাওয়া যাবে না এবং দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি হবে না। এই সরকার দেশকে বিপজ্জনক ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
তিনি বন্ধ সব কলকারখানা চালু এবং বেকার শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির দাবি জানান।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস, খলিলুর রহমান খলিল, আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিন।
জাতীয় শ্রমিক পার্টির সভাপতি মেফতাহ উদ্দিন জসিমের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ শান্তর সঞ্চালনায় মে দিবসের আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, শেরিফা কাদের, লিয়াকত হোসেন খোকা, মোস্তফা আল মাহমুদ, মনিরুল ইসলাম মিলন, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, মো. আরিফুর রহমান খান, হেনা খান পন্নী, অ্যাডভোকেট লাকি বেগম, হারুন অর রশিদ, ইঞ্জিনিয়ার মনির আহমেদ, মাশরেকুল আজম রবি, জাহিদ হাসান, একেএম নূরুজ্জামান জামান, মাতলুব হোসেন লিয়ন, সুলতান মাহমুদ, বোরহান উদ্দিন, গোলাম মোহাম্মদ রাজু, সুলতান আহমেদ সেলিম, নূরুন্নাহার বেগম, আমির উদ্দিন আহমেদ ডালু, হেলাল উদ্দিন, এম এ সোবহান, আকতার হোসেন দেওয়ান, মো. নোমান মিয়া, শামসুল হক, অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ভাসানী, শামীম আহমেদ রিজভী, হেলাল উদ্দিন, দ্বীন ইসলাম শেখ, আবু সাঈদ স্বপ্ন, জুবের আলম রবিন, নির্মল চন্দ্র দাস, কাজী আবুল খায়ের, আনিস উর রহমান খোকন, এবিএম লিয়াকত হোসেন চাকলাদার, আজাহারুল ইসলাম সরকার, মো. আব্দুল হান্নান, মিজানুর রহমান মিরু, মাহমুদ আলম, এম এ রাজ্জাক খান, হাফেজ কারী ইসারুহুল্লা আসিফ, মোড়ল জিয়া উর রহমান, গোলাম মোস্তফা, বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ, অ্যাডভোকেট সেরনিয়াবাত সেকান্দার আলী, জাকির হোসেন মৃধা, শারমিন পারভীন লিজা, ডা. সেলিমা খান,হুমায়ুন কবির শাওন, লোকমান ভূঁইয়া রাজু, ইঞ্জিনিয়ার জুবায়ের আহমেদ, জাতীয় মহিলা পার্টির তাসলিমা আকবর রুনা, জেসমিন নূর প্রিয়াংকা, জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুক সুজন, কৃষক পার্টির সদস্য সচিব এম এ কুদ্দুস মানিক, মোটরশ্রমিক পার্টির আহ্বায়ক মেহেদী হাসান শিপন, সদস্য সচিব আবদুর রহিম, জাতীয় ছাত্রসমাজের আহ্বায়ক মারুফ ইসলাম তালুকদার প্রিন্স, সদস্য সচিব আরিফ আলী, পল্লীবন্ধু পরিষদের সদস্য সচিব ইমন প্রমুখ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ এম ক দ র ম হ ম মদ ল ইসল ম র রহম ন জ এম ক আম দ র র জন য র জন ত আহম দ সরক র আপন র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর আলাপ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বৃহস্পতিবার ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় সাধারণ মানুষের মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এ তথ্য জানিয়েছে রাজনাথ সিংয়ের কার্যালয়।
এক্স পোস্টে বলা হয়েছে, ‘মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভারতের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এবং ভারতের আত্মরক্ষার অধিকার সমর্থন করে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ে মার্কিন সরকারের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।’
আলাপকালে হেগসেথকে রাজনাথ সিং বলেন, পাকিস্তান একটি ‘দুর্বৃত্ত’ রাষ্ট্র হিসেবে সামনে এসেছে। তারা বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদকে উসকে দিচ্ছে এবং অঞ্চলকে ‘অস্থিতিশীল’ করছে। সন্ত্রাসবাদ এড়িয়ে যেতে পারে না বিশ্ব।
২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এ ঘটনার পেছনে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ নয়াদিল্লির। সন্দেহভাজন হামলাকারীদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি বলেও দাবি করেছে তারা। তবে পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এরপর থেকে দুই দেশ পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিয়েছে।
হেগসেথ–রাজনাথ সিং আলাপের আগে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেন। এ সময় হামলার ঘটনা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।