‘কেউ কেউ বলছেন, আগের চেয়েও খারাপ অবস্থা। তিনজন সাংবাদিকের চাকরি চলে গেছে, আগে কি এমন ঘটনা ঘটেছে? তিনজন সাংবাদিকের চাকরি তো আমরা খাইনি। আপনারা সাংবাদিকেরা যাঁরা আন্দোলন করছেন, আপনারা টিভি স্টেশনগুলোর বাইরে গিয়ে প্রোটেস্ট করেন। আমরা কোনো সাংবাদিকের চাকরি খাচ্ছিও না, জব (চাকরি) দিচ্ছিও না। বাক্‌স্বাধীনতা হরণ করা হয়—এমন কোনো কাজ অন্তর্বর্তী সরকার করবে না।’

আজ শুক্রবার ‘জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশ: গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে এ কথাগুলো বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের জুলাই বিপ্লব স্মৃতি হলে এ সভার আয়োজন করে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন। এ সময় শফিকুল আলম অপতথ্য রুখে দিতে সাংবাদিকদের ফ্যাক্ট চেকিংসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণের পরামর্শ দেন।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে যাঁরা সাংবাদিকতা করছেন, তাঁদের জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আসেনি। আমরা কারও মুখ বন্ধ করছি না। কারও কলম ভেঙে ফেলছি না, কারও ছাপাখানায় গিয়ে সিলগালা করছি না। আমরা সবাইকে বলছি, আপনারা সাংবাদিকতা করুন। অধ্যাপক ইউনূস (প্রধান উপদেষ্টা) ক্ষমতা গ্রহণের পর সব সম্পাদককে ডেকেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, আপনারা মন খুলে লিখেন, আমরা ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়৷ আমার ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আপনার।’

অপতথ্যের বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘জুলাই পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের শিকার হয়েছি এই অপতথ্য নিয়ে। এর সঙ্গে দুটি ফোর্স—একটা হচ্ছে ইন্ডিয়ান মিডিয়া একটা বড় রকমের অপতথ্যের সোর্স, আরেকটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের লোকেরা। এরা সব এক হয়েছে। তাঁরা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার নিয়ে বসে আছে। তাঁরা প্রতিদিন একটার পর একটা (ভিডিও) দিচ্ছে। আপনি যেহেতু ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে কনজিউম করছেন, আপনি বুঝতেও পারছেন না এটি সত্য না মিথ্যা।’

শফিকুল আলম বলেন, ‘নিউজ কনজিউমের ধরন বদলে গেছে। ফলে প্রতিনিয়ত অপতথ্য আসছে, মিস ইনফরমেশন আসছে, ডিস ইনফরমেশন আসছে। এবং এগুলো দিয়ে সমাজকে ডিস্টেবিলাইজ (অস্থিতিশীল) করা হচ্ছে। আগে দেখা যেত এটি ডমেস্টিক্যালি হতো। এখন দেখা যাচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়াও এটার সঙ্গে ভয়াবহভাবে জড়িত। প্রতিদিন তাঁরা মিথ্যা নিউজ দিচ্ছে। অনেকে এটা বিশ্বাস করছে। তাঁদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের নামে অপতথ্য ছড়ানো।’

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী। বক্তব্যে তাঁরা সাংবাদিকতার নীতিনৈতিকতা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনা করেন। সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার৷

লিখিত ধারণাপত্রে আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উল্লেখ করেন, ‘আমরা সবাই জানি, অতীতে সরকারের লোকজনই ঠিক করে দিতেন টকশোগুলোতে আলোচক হিসেবে কারা আসবেন কিংবা কারা আসতে পারবেন না। এখন এ ধরনের চর্চা বন্ধ করা হয়েছে। অতীতে এমনও হয়েছে কোনো একটা বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট কোনো রিপোর্টার কাভার করবেন এটা সরকারের লোকজন ঠিক করে দিয়েছে। এখন এ ধরনের চর্চাও বন্ধ করা হয়েছে।’

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম নছরুল কদির, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহিদুল হক, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুস সাত্তার, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রাম বিভাগের সদস্যসচিব খুরশীদ জামিল চৌধুরী প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব দ ক র চ কর অপতথ য ব দ কত আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

তেহরান থেকে এক কোটি মানুষ কীভাবে সরে যাবে

ইরানের রাজধানী তেহরান ছাড়ার চেষ্টা করছেন অনেক মানুষ। তবে গত কয়েক দিনের মতোই তেহরানের রাস্তাঘাট এখনো যানজটে ঠাসা।

বিবিসি পার্সিয়ানের প্রতিবেদক ঘোনচে হাবিবিয়াজাদ জানান, তিনি এমন একটি পরিবারকে চেনেন, যারা তেহরান থেকে রওনা হয়ে গন্তব্যে পৌঁছেছে ১৪ ঘণ্টা পর। অথচ এই যাত্রাপথ সাধারণত তিন ঘণ্টায় শেষ হওয়ার কথা।

এত সময় লাগলেও শেষ পর্যন্ত তেহরান থেকে বেরিয়ে আসতে পারায় পরিবারটি নিজেদের ‘ভাগ্যবান’ মনে করছে।

পরিবারটির সদস্যদের ভাষায়, ‘ভাগ্যক্রমে’ শেষ পর্যন্ত তাঁরা তেহরান থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন।

তেহরানের বাসিন্দাদের আরও অনেকেই এমন কথা বলেছেন। তাঁরা রাজধানী থেকে বেরিয়ে আসতে পেরে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। তবে তাঁদের অনেকে আবার উদ্বিগ্ন প্রিয়জনদের নিয়ে, যাঁরা এখনো তেহরান ছাড়তে পারেননি।

বিবিসির এই সাংবাদিক গত রাতে তাঁর এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি তেহরান ছাড়তে পেরেছেন কি না।

জবাবে বন্ধু বলেন, ‘রাস্তা একেবারে আটকে আছে। এখন বেরোলে শুধু যানজটে আটকে থাকতে হবে। আর এই সময়ে তা খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।’

প্রথমে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তেহরানের একটি অংশের বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়তে বলেন। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সবাইকে তেহরান ছেড়ে যেতে হবে।

ইরান-ইসরায়েলের মধ্যকার নজিরবিহীন সংঘাত পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে। উভয় পক্ষ আকাশপথে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের হামলায় ইরানে অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ২৪ জন।

তেহরানে তখন ভোর সাড়ে চারটা বাজে। তবু বহু মানুষ তখনো জেগে ছিলেন।
সাংবাদিক ঘোনচে হাবিবিয়াজাদ যে ইরানি গ্রুপ চ্যাটগুলোতে আছেন, সব কটিই এখন রূপ নিয়েছে রাজনৈতিক আলোচনার জায়গায়। সঙ্গে কোথায় কোথায় হামলা হচ্ছে, তা জানানোর প্ল্যাটফর্মও হয়ে উঠেছে সেগুলো।

একটি চ্যাট গ্রুপে একজন লিখেছেন, ‘আমি একদম বিধ্বস্ত-শরীরেও, মনেও। টানা চার রাত ঘুমাইনি।’

চ্যাট গ্রুপে আরেকজন জিজ্ঞেস করেছেন, ‘তেহরান থেকে এক কোটি মানুষ কীভাবে সরে যেতে পারে?’

এই প্রশ্নের কোনো উত্তর আসেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ