সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সীমান্ত থেকে গত বুধবার সন্ধ্যায় ৯০ ভারতীয় গরু জব্দ করা হয়েছে। একসঙ্গে এতো গরু ধরায় টনক নড়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসহ স্থানীয় প্রশাসনের।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ২৮ ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক একেএম জাকারিয়া কাদির জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চোরাই পথে গরু আসছে। এসব গরু আটকাতে বিজিবি সদস্যরা মার খাচ্ছে, হামলা হচ্ছে। গেল তিন মাসে চোরাই পথে আসা সাড়ে চারশ গরু জব্দ হয়েছে।

তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারি, ভারতীয় চোরাই গরুর চালান নদীপথে আসছে। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ট্রাস্কফোর্স বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অভিযান চালায়। এসময় একটি ট্রলার জব্দ করা হয়। গরুগুলো জব্দের পর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে দিয়ে যাচাই করা হয়। 

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ গরু মেঘালয়ের। এসব গরু আপাতত স্থানীয়দের জিম্মায় দেওয়া হবে। এগুলোর বাজার মূল্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা। নিয়মিত মামলা হবে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে।

তিনি আরো জানান, প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে গরুগুলো দোয়ারার ভোগলা বাজার থেকে এসেছে। গরু বহনকারীরা হাট ইজারা কর্তৃপক্ষের হাসিলের মাধ্যমে বিক্রয় রশিদ দিয়েছে। বৈধ, অবৈধের বিষয় জেলা প্রশাসন দেখবে। স্থানটি ভোগলা বাজার গরুর হাট সীমান্ত এবং বাগানবাড়ি বিওপির কাছাকাছি হওয়ায় আভিযানিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হয়। বাজারটি একটু দূরে হলে অভিযান পরিচালনায় সুবিধা হত।

বিজিবি ক্যাম্প থেকে এই গরুর চালান ছাড়ানোর জন্য এসেছিলেন দোয়ারাবাজারের মিতালী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ছবির আহমেদ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ইজারাদার এলাকার মানুষ হওয়ায় আমাকে পাঠিয়েছে। এডিসি জেনারেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। উনি বিজিবির কাছে পাঠিয়েছেন। এই গরুগুলো যেন মারা না যায়, জিম্মায় নেওয়ার জন্য এসেছি।’ গরুগুলো হাসিল দিয়ে বাজার থেকে ছাড়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের পর্যবেক্ষণের কথা এবং গরুর গায়ে ভারতীয় চিহ্ন থাকার বিষয়টি সাংবাদিকরা বললে এই শিক্ষক জানান, আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন তারা। এ সময় দোয়ারা বাজারের যুবদল কর্মী বাহার উদ্দিনকে ওই শিক্ষকের সঙ্গে দেখা যায়।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পাল বলেন, ‘এখানে এডিসি জেনারেলের কোনো ভূমিকা নেই। আমরা কোনো বেসরকারি লোককে পাঠাইনি। বিজিবি গরু আটক করেছে, তারা কি করবে না করবে, এর বিষয়ে সিদ্ধান্ত তারা নেবে। যে ব্যক্তি এডিসি জেনারেল পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গর চ র চ ল ন

এছাড়াও পড়ুন:

সোহরাওয়ার্দীতে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ শুরু 

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবিতে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ শুরু হয়েছে। এতে হাজার হাজার নেতকর্মী উপস্থিত হয়েছেন।  

শনিবার (৩ মে) সকাল ৯টায় মহাসমাবেশ শুরু হয়। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এতে সভাপতিত্ব করছেন। 

এর আগে ভোর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও তার আশপাশের এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন সংগঠনটির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

এ সমাবেশের মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—২০১৩ সালের শাপলা চত্বরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত গণহত্যার বিচার, ফ্যাসিবাদের আমলে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের কুরআন বিরোধী প্রতিবেদন বাতিল এবং কমিশন বিলুপ্ত করা, সংবিধানে প্রস্তাবিত বহুত্ববাদ বাতিল, আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল এবং ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন ও গণহত্যা বন্ধের জোর দাবি।

নারী উন্নয়ন নীতি ও শিক্ষা নীতির বিরোধিতা করে ২০১০ সালে গড়ে উঠেছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তবে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ আন্দোলনের পাল্টায় রাজপথে নেমে সংগঠনটি বেশি পরিচিতি পায়।

শাহবাগের আন্দোলনের বিপরীতে ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে সমাবেশ ডাকে সংগঠনটি। সেই সমাবেশ ঘিরে পুরো মতিঝিল এলাকায় ব্যাপক সহিংসতা আর তাণ্ডব চলে। পরে সেই রাতে যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের মতিঝিল থেকে সরানো হয়।

শাপলা চত্বরের অভিযানে ৬১ জন নিহত হন বলে সে সময় এক প্রতিবেদনে দাবি করে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’। যদিও পুলিশের দাবি, রাতের অভিযানে কেউ মারা যাননি, আর দিনভর সংঘাতে মারা যান ১১ জন। 

অধিকারের প্রতিবেদনে প্রকাশিত সংখ্যাটি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলে ওই বছরের ১০ অগাস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে জিডিটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।

ওই মামলায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে থাকা অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের দুই বছরের কারাদণ্ড হয় গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর। এক মাস জেলে ধাকার পর তারা জামিনে মুক্তি পান।

আদিলুর রহমান খান বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন।

২১ সদস্যের এ সরকারে ধর্ম উপদেষ্টা হয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমির ও সুন্নি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত আ ফ ম খালিদ হাসান।

ঢাকা/রায়হান/ইভা   

সম্পর্কিত নিবন্ধ