কোরবানির ঈদ সামনে রেখে চোরাইপথে আসছে গরু
Published: 2nd, May 2025 GMT
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সীমান্ত থেকে গত বুধবার সন্ধ্যায় ৯০ ভারতীয় গরু জব্দ করা হয়েছে। একসঙ্গে এতো গরু ধরায় টনক নড়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসহ স্থানীয় প্রশাসনের।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ২৮ ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক একেএম জাকারিয়া কাদির জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চোরাই পথে গরু আসছে। এসব গরু আটকাতে বিজিবি সদস্যরা মার খাচ্ছে, হামলা হচ্ছে। গেল তিন মাসে চোরাই পথে আসা সাড়ে চারশ গরু জব্দ হয়েছে।
তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারি, ভারতীয় চোরাই গরুর চালান নদীপথে আসছে। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ট্রাস্কফোর্স বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অভিযান চালায়। এসময় একটি ট্রলার জব্দ করা হয়। গরুগুলো জব্দের পর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে দিয়ে যাচাই করা হয়।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ গরু মেঘালয়ের। এসব গরু আপাতত স্থানীয়দের জিম্মায় দেওয়া হবে। এগুলোর বাজার মূল্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা। নিয়মিত মামলা হবে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে।
তিনি আরো জানান, প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে গরুগুলো দোয়ারার ভোগলা বাজার থেকে এসেছে। গরু বহনকারীরা হাট ইজারা কর্তৃপক্ষের হাসিলের মাধ্যমে বিক্রয় রশিদ দিয়েছে। বৈধ, অবৈধের বিষয় জেলা প্রশাসন দেখবে। স্থানটি ভোগলা বাজার গরুর হাট সীমান্ত এবং বাগানবাড়ি বিওপির কাছাকাছি হওয়ায় আভিযানিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হয়। বাজারটি একটু দূরে হলে অভিযান পরিচালনায় সুবিধা হত।
বিজিবি ক্যাম্প থেকে এই গরুর চালান ছাড়ানোর জন্য এসেছিলেন দোয়ারাবাজারের মিতালী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ছবির আহমেদ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ইজারাদার এলাকার মানুষ হওয়ায় আমাকে পাঠিয়েছে। এডিসি জেনারেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। উনি বিজিবির কাছে পাঠিয়েছেন। এই গরুগুলো যেন মারা না যায়, জিম্মায় নেওয়ার জন্য এসেছি।’ গরুগুলো হাসিল দিয়ে বাজার থেকে ছাড়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের পর্যবেক্ষণের কথা এবং গরুর গায়ে ভারতীয় চিহ্ন থাকার বিষয়টি সাংবাদিকরা বললে এই শিক্ষক জানান, আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন তারা। এ সময় দোয়ারা বাজারের যুবদল কর্মী বাহার উদ্দিনকে ওই শিক্ষকের সঙ্গে দেখা যায়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পাল বলেন, ‘এখানে এডিসি জেনারেলের কোনো ভূমিকা নেই। আমরা কোনো বেসরকারি লোককে পাঠাইনি। বিজিবি গরু আটক করেছে, তারা কি করবে না করবে, এর বিষয়ে সিদ্ধান্ত তারা নেবে। যে ব্যক্তি এডিসি জেনারেল পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গর চ র চ ল ন
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় ব্যবসায়ীকে রাতে ফেলে গেছে অপহরণকারীরা
কুষ্টিয়ার সদর উপজেলা থেকে অপহৃত ব্যবসায়ী মো. জাহা বক্সকে বাড়ির সামনে ফেলে গেছেন অপহারণকারীরা। সোমবার (১৬ জুন) দিবাগত রাত ১২টার দিকে মোটরসাইকেলে দুইজন ব্যক্তি জাহা বক্সকে চোখ ও মুখ বেঁধে বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায় বলে পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। তাকে মারধর করা হয়েছে। অসুস্থ থাকায় জাহা বক্সের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
পরিবারের সদস্যরা জানান, জাহা বক্স জীবিত ফিরে এসেছেন, এতেই তারা সন্তুষ্ট। কারো বিরুদ্ধে তাদের কোনো অভিযোগ নেই। জাহা বক্স উপজেলার আব্দালপুর ইউনিয়নের পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামের মৃত কুদ্দুস আলীর ছেলে। তিনি বাড়ির পাশে প্রান্ত স্টোর নামে একটি পাইকারি মুদি দোকান চালাতেন। গত রবিবার (১৫ জুন) দিবাগত রাত ১টার দিকে নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে নগদ টাকাসহ জাহা বক্সকে অপহরণ করার অভিযোগ ওঠে। অপহরণকারীরা চিঠিতে লিখে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পাঁচ দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট ঠিকানায় টাকা না পৌঁছালে লাশ গুম করার হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলী হায়দার স্বপনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকাল ৮টায় জাহা বক্সের ছেলে প্রান্ত বলেন, ‘‘বাবা ফিরে এসেছেন। রাত ১২টার দিকে বাড়ির বারান্দায় কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পাই। বাইরে বেরিয়ে দেখি, অচেতন অবস্থায় বাবা পড়ে আছেন। তার মুখ ও চোখ বাঁধা ছিল। পরে জানতে পারি, দুইজন ব্যক্তি মোটরসাইকেল করে বাড়ির সামনে তাকে নামিয়ে দিয়ে গেছেন। বাবাকে মারধর করা হয়েছে। মাথায় একটু দাগও আছে। তিনি কারো সঙ্গে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।’’
আরো পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় ব্যবসায়ীকে অপহরণ, ইউপি চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ
র্যাব পরিচয়ে অপহরণ: চক্রের মূল হোতা গ্রেপ্তার
প্রান্ত আরো বলেন, ‘‘অপহরণের রাতে যে ব্যক্তি স্যালাইন নেয়ার জন্য বাবাকে বাড়ি থেকে ডেকে দোকানে নিয়ে যান, তাকে বাবা পরিচিত কেউ মনে করেন। বাইরে বেরিয়ে দেখেন তিনি অপরিচিত। প্রথমে একজন থাকলেও পরে আরো একজনকে দেখতে পান। দোকান খোলার সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে বাবাকে মুখ, চোখ ও হাত বেঁধে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যান। এরপরের আর কিছু বাবা বলতে পারেননি।’’
প্রান্ত আরো বলেন, ‘‘দোকানে ক্যাশ বক্সের নিচে যে টাকা ছিল তাও নিয়ে গেছে। আব্বা বাড়ি আসার পর রাতেই বাড়িতে পুলিশ এসে কথা বলে গেছে। আমাদের আর কিছু দরকার নেই। কারোর বিরুদ্ধে অভিযোগও নেই। বাবা জীবিত ফিরে এসেছেন, এটাই যথেষ্ট।’’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান জানান, জাহা বক্স অসুস্থ। পুলিশের তত্ত্বাবধানে আছেন। সুস্থ হলে তাকে সার্বিক বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
আটক হওয়া ইউপি চেয়ারম্যানের বিষয়ে ওসি জানান, তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে। তাকে অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
ঢাকা/কাঞ্চন/বকুল