রাজধানীর বনানীর কড়াইল বস্তিতে টানা ১৬ বছর ‘রাজত্ব’ করেছেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। মার্কেট বসিয়ে চাঁদাবাজি, ঘর দখল, ঘর কেনাবেচায় কমিশন, অবৈধ গ্যাস সংযোগ, পানি ও বিদ্যুৎ খাতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রভাবশালী কিছু নেতা এলাকা থেকে পালালেও চাঁদাবাজি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি বাণিজ্য থেকে মুক্তি মেলেনি বস্তিবাসীর। আগের নিয়মেই তাদের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে এসব কিনতে হচ্ছে।  

বস্তির চাঁদাবাজিসহ নানা বাণিজ্য অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী সরকার পতনের পর খোলস পাল্টে বিএনপিতে ভিড়েছেন। এসব নেতাকর্মী এবং বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী মিলে নতুন করে সিন্ডিকেট তৈরি করছেন বস্তিতে। তবে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছে সেখানে। এর জেরে সম্প্রতি হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দু’জনকে কুপিয়ে আহত করা হয়। যে কোনো সময় সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জানা গেছে, অবৈধ অস্ত্র রয়েছে অনেকের কাছে। সম্প্রতি তুচ্ছ ঘটনায় বস্তিতে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে। মাত্র এক হাজার টাকার জন্য মো.

এরশাদ নামে এক যুবক হোসেন আলী নামে একজনের পেটে গুলি করে।
বস্তিবাসী জানান, আওয়ামী লীগ আমলের সিন্ডিকেটের হোতারা পালিয়েছেন। কিন্তু তাদের অনুসারী অনেকেই বস্তিতে রয়েছেন, যারা এখন নিজেদের বিএনপির নেতাকর্মী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। তারা এবং বিএনপি নেতাকর্মী মিলে নতুন করে বস্তিতে রাজত্ব শুরু করেছেন। রাতের নিরাপত্তা ও ময়লা অপসারণের নামে নেওয়া হচ্ছে চাঁদা। পালিয়ে যাওয়া নেতাদের ঘরবাড়িও দখল করে নেওয়া হয়েছে।
এটি ‘কড়াইল বস্তি’ নামে পরিচিত হলেও এর ভেতরে বিভিন্ন নামে বস্তি রয়েছে। বস্তিটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। তবে বেশির ভাগ অংশ পড়েছে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। ৯৫ একর সরকারি জমিতে গড়ে ওঠা বস্তিতে ৬০ হাজারের মতো ঘর রয়েছে। সেখানে অন্তত ৪০ হাজার পরিবার বাস করে।

জানা যায়, স্থানীয় বিএনপি নেতা মো. খররুম ও  মো. রাজা কড়াইলের বেলতলা, এরশাদনগর, আদর্শনগর, বেদে বস্তি ও ওয়ালভাঙা বস্তি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। পানি ও বিদ্যুৎ বিলের টাকা তুলছে খররুমের লোকজন। বেলতলা ইউনিট স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহসভাপতি কাজী রফিকুল ইসলামও এই সিন্ডিকেটের সদস্য। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি নিজেকে বিএনপি কর্মী বলে পরিচয় দেন।
এই এলাকা ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির ত্রাণ ও পুনবার্সন সম্পাদক খান মো. সবুজ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। শুরুতে সবুজ-খররুম এক গ্রুপে থাকলেও আধিপত্য নিয়ে কোন্দল শুরু হয়েছে তিন মাস আগে। এর জেরে গত ২২ জানুয়ারি বস্তিতে দু’পক্ষে সংঘর্ষ হয়। খররুমের ভাই মো. টিপু ও তার বন্ধু সোহেল রানাকে কুপিয়ে আহত করা হয়। এ ঘটনায় বেলতলা বস্তির বাসিন্দা আহত সোহেল রানা বাদী হয়ে পরদিন বনানী থানায় মামলা করেন। এতে সবুজ, ইসরাফিল, মোমিন, পারভেজ, নাসির, রব মিয়া, বাবু, কালন, মণ্ডল হোসেন ও শাহজালালকে আসামি করা হয়। মামলার প্রতিবাদ ও পাল্টা মামলা নেওয়ার দাবিতে ২৬ জানুয়ারি রাতে আসামিপক্ষের অন্তত ৫০ জন বনানী থানার সামনে বিক্ষোভ করে। 

মামলার বাদী সোহেল রানা সমকালকে বলেন, ‘আমরা বেলতলা-টিঅ্যান্ডটি ব্রিজপাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ সময় সবুজ ও তার লোকজন খররুমকে খুঁজছিল। তাকে না পেয়ে খররুমের ভাই টিপু ও আমার ওপর হামলা চালায়।’ 
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বস্তির অটোরিকশার টোকেন বাণিজ্য করতেন বনানী থানা শ্রমিক লীগ নেতা ইসরাফিল। এক সময়ের বস্তির নিয়ন্ত্রক জুনায়েদের (পলাতক) কাছের লোক ছিলেন তিনি। ইসরাফিল বর্তমানে নিজেকে বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। এ ছাড়া দখল ও বাণিজ্য সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য মোমিন, সাগর, নাসির ও বাবু মহাখালীর যুবলীগ নেতা সুন্দরী সোহেলের অনুসারী কর্মী ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তারা বস্তিতে নিজেদের বিএনপি নেতা বলে পরিচয় দেন। 
২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পদাক খান মো. সবুজ সমকালকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কিছু লোক বিএনপিতে অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের সঙ্গে নিয়ে খররুম বস্তিতে চাঁদাবাজি ও দখলবাজি করছে।’ 
বেলতলা, এরশাদনগর, আদর্শনগর, বেদে বস্তি ও ওয়ালভাঙা বস্তি ৫ আগস্টের আগে নিয়ন্ত্রণ করতেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জুনায়েদ, নায়েব আলী, সোহাগ ও রাজু। জুনায়েদের বাড়ি দখল করেছেন ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক মণ্ডল হোসেন; নায়েব আলীর বাড়ি দখল করেছেন মো. কালন, রুবেল, কাঞ্চন ও মিলন। শ্রমিক লীগ নেতা সোহাগের বাড়ি দখল করেছেন ২০ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজা মিয়া।
রাজা মিয়া সমকালকে বলেন, বাড়ি কারও দখলে না। জুনায়েদ, নায়েব আলী, সোহাগসহ তাদের সিন্ডিকেট বস্তির এক কোটি ৯ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখে পালিয়েছে। এখন ওদের বাড়ির ভাড়া তুলে বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে।

মণ্ডল হোসেন বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে বিএনপির রাজনীতি করি। ২০১৮ সাল থেকে রাজনৈতিক কারণে বস্তিতে থাকতে পারতাম না। ৫ আগস্টের পর থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে জুনায়েদের বাড়িতে আছি। জুনায়েদ আমার পরিচিত। তার বাড়ি দখল করব কেন? জুনায়েদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সে বাসা ছেড়ে দেবে।’
বেলতলা বস্তিতে প্রবেশ করার আগে বাঁ পাশে ‘আদর্শ মার্কেট’ নামে একটি বাজার বসিয়েও চাঁদাবাজি করতেন জুনায়েদ-নায়েব আলীরা। এই মার্কেটও এখন খররুমদের দখলে। সেখানে মুদি দোকান, কাঁচাবাজার, মুরগিসহ নানা সামগ্রীর অন্তত ৪০টি দোকান আছে। এসব দোকান থেকে ভাড়া তুলছেন তারা। 
জানা যায়, মোশারফ বাজার বস্তিতে অন্তত ৭ হাজার পরিবার বাস করে। এটি নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগের মোস্তফা, শহীদুল, জিয়ারুল, তাসলিমা, মন্জুল হক। ৫ আগস্টের পর তারা পালিয়েছেন। বতর্মানে মোশারফ বাজার বস্তি ইউনিট বিএনপির সভাপতি আকমল হোসেন, সহসভাপতি মোমিনুল ইসলাম, আল আমিন নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন।
মোমিনুল বলেন, ‘১৬ বছর দৌড়ের ওপর ছিলাম। এলাকায় থাকতে পারিনি। পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকায় এসেছি। নিয়ন্ত্রণ বলতে কিছু না; আমরা এলাকায় থাকি।’
আওয়ামী লীগের আব্দুস সোবহান মাওলানা, পানি শহীদ, সেলিম ঢালী কামালের দখলে ছিল বউবাজার। এখন দখলে নিয়েছেন বিএনপির মো. মামুন. মো. ইমরান,  আলমগীরসহ কয়েকজন। জামাই বাজারের দখলদার ছিলেন হাসান, এনামুল, মো. আলী, নুরু, জুয়েল। তারা সবাই পালিয়েছেন। এখন নিয়ন্ত্রক নজরুল, রোকেয়া, জসিম, জানু খাতুন, আমেনা ও বলাকা। তারা বিএনপি নেতাকর্মী হিসেবে পরিচয় দেন।
যেসব খাতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয় 

বস্তির অন্তত ৪০ বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় সমকালের। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বস্তিতে বিদ্যুতের বৈধ প্রিপেইড মিটার প্রায় একশ। এগুলো বাড়িওয়ালারা ব্যবহার করেন। এ ছাড়া বৈধভাবে অন্তত ৭০টি মিটার রয়েছে, যেগুলো দিয়ে ব্যবসা করা হয়। এসব মিটার থেকে বিভিন্ন ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ ছাড়া চোরাই সংযোগও দেওয়া হয়। প্রতিটি বাল্ব ও ফ্যানের জন্য মাসে তিনশ টাকা করে আদায় করা হয়। টেলিভিশনের জন্য তিনশ এবং ফ্রিজ ব্যবহার করলে ৬০০ টাকা গুনতে হয় বাসিন্দাকে। পানি তোলার মোটর চালাতে মাসে দিতে হয় ৩ হাজার টাকা।
অন্তত ৭০ হাজার কক্ষের এই বস্তিতে পানির বৈধ মিটার আছে প্রায় ১ হাজার ৭০০টি। অধিকাংশ বাসিন্দা বৈধ মিটারের বাইরে। বিভিন্ন সিন্ডিকেট চোরাই পানির সংযোগ দিয়ে বাসিন্দাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে। বৈধ পানির পাইপ ছিদ্র করেও চোরাই পথে পানি নেওয়া হয়। মিনিট ও ঘণ্টা হিসেবে পানি বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন ৩০ মিনিট পানি নিলে মাসে বিল দিতে হয় দেড় হাজার টাকা। দিনে এক ঘণ্টা পানি নিলে মাসে গুনতে হয় আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা।  
বনানী থানার ওসি রাসেল সরোয়ার সমকালকে বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বস্তির বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য পুলিশ তৎপর।  
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বস ত ৫ আগস ট র পর ন ত কর ম ন য় ব আল ব এনপ র কর ছ ন সমক ল র দখল করত ন ব লতল সরক র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

আবরার ফাহাদ হত্যা: হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের স্বাক্ষরের পর ১৩১ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়েছে।

শনিবার আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এম শাহজাহান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত ১৬ মার্চ আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায় অপরিবর্তিত রেখে সব আসামির (২০ জন) মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ৫ জনের যাবজ্জীবনের আদেশও বহাল রাখা হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), সদস্য মোজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুর রহমান মাজেদ (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), এস এম নাজমুস সাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোর্সে‌স, ১৬ ব্যাচ), শামছুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল) এবং এসএম মাহামুদ সেতু (কেমিকৌশল)।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামি হলেন— বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ), আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), সদস্য আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) ও মোয়াজ আবু হোরায়রা (সিএসই, ১৭ ব্যাচ)।

এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষ হয়। গত বছরের অক্টোবর মাসে এ মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এ উদ্যোগ নেন।

বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র আবরার থাকতেন শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে। সেখান থেকে ডেকে নিয়ে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। রাত ৩টার দিকে হলের সিঁড়ির করিডোর থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। ফেসবুকে ভারতবিরোধী স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ নিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন হয়। হত্যাকাণ্ডের পরদিন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে রাজধানীর চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। একই বছরের ১৩ নভেম্বর ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়। ওই মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার বিচারিক আদালত।

রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামিদের মধ্যে তিনজন মামলার শুরু থেকেই পলাতক। তিন আসামি হলেন– এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মাহমুদুল জিসান ও মুজতবা রাফিদ। রায়ের পরপরই সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামিরা এবং রাষ্ট্রপক্ষে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) আবেদন করা হয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর গত অক্টোবরে এই মামলায় আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি শুরু হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ