চার মাস পরে আগামী সোমবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে সকাল নয়টায় প্রথমে তিনি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসবেন। এরপর একই ফ্লাইটে তিনি ঢাকায় ফিরবেন।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী সিলেট হয়ে খালেদা জিয়ার ঢাকায় যাওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে থাকছেন তাঁরই দুই পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান ও শর্মিলা রহমান। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, এপিএস মাসুদুর রহমান ও দুই গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগম ও রূপা হকও সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন।

সিলেট বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার সিলেট হয়ে ঢাকা ফেরার বিষয়টি সামনে রেখে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে দল ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী এবং সর্বস্তরের মানুষকে আগামী সোমবার সকাল ৮টার মধ্যে বিমানবন্দরের সামনে উপস্থিত থাকতেও শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা নির্দেশনা দিয়েছেন।

স্থানীয় বিএনপি জানিয়েছে, খালেদা জিয়া সিলেট হয়ে ঢাকায় ফিরলেও এখানে কোনো সভা কিংবা সমাবেশে অংশ নেবেন না। বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটের সিলেটের যাত্রীদের নামিয়ে বিমানটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ওসমানী বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন। এ সময় প্রায় ঘণ্টাখানেক খালেদা জিয়া সিলেটের বিমানবন্দরে অবস্থান করবেন। সেখানে অবস্থানকালে সিলেটে অবস্থানরত বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক এবং সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের একটি প্রতিনিধিদল সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পরে তাঁরা উপস্থিত নেতা-কর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন ও খালেদা জিয়ার বার্তা পৌঁছে দেবেন।

মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর সিলেটের মাটি স্পর্শ করবেন আমাদের নেত্রী। এটা স্থানীয় নেতা-কর্মীদের প্রাণিত করেছে। নিজেদের ভালো লাগার এই মুহূর্ত ও অনুভূতিটুকু আরও আনন্দময় করতে সবাই বিমানবন্দরের সামনে জড়ো হবেন। সে অনুযায়ী মহানগর ও জেলা বিএনপি প্রস্তুতি নিচ্ছে।’

২০১৮ সালে খালেদা জিয়া একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন। করোনা মহামারির সময় বিগত সরকার তাঁকে বিশেষ বিবেচনায় কারামুক্তি দেয়। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো.

সাহাবুদ্দিনের এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী ছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।

চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর লন্ডন ক্লিনিক থেকে গত ২৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে তাঁর ছেলে তারেক রহমানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। অর্ধ যুগের বেশি সময় পর এবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করেছেন খালেদা জিয়া।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কারাবন্দী অবস্থায় চারটি ঈদ কেটেছে কারাগার ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। বর্তমানে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া। সেখানে তাঁর পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন।

আরও পড়ুন১৭ বছর পর শাশুড়ির সঙ্গে দেশে ফিরছেন জুবাইদা রহমান১৭ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনখালেদা জিয়া ৫ মে দেশে ফিরছেন, শারীরিক অবস্থা ‘বেশ ভালো’০২ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ল ট হয় ব এনপ র করব ন অবস থ রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ