লন্ডন থেকে সিলেট হয়ে ঢাকায় ফিরবেন খালেদা জিয়া, স্বাগত জানাতে বিএনপির প্রস্তুতি
Published: 3rd, May 2025 GMT
চার মাস পরে আগামী সোমবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে সকাল নয়টায় প্রথমে তিনি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসবেন। এরপর একই ফ্লাইটে তিনি ঢাকায় ফিরবেন।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী সিলেট হয়ে খালেদা জিয়ার ঢাকায় যাওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে থাকছেন তাঁরই দুই পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান ও শর্মিলা রহমান। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, এপিএস মাসুদুর রহমান ও দুই গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগম ও রূপা হকও সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন।
সিলেট বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার সিলেট হয়ে ঢাকা ফেরার বিষয়টি সামনে রেখে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে দল ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী এবং সর্বস্তরের মানুষকে আগামী সোমবার সকাল ৮টার মধ্যে বিমানবন্দরের সামনে উপস্থিত থাকতেও শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা নির্দেশনা দিয়েছেন।
স্থানীয় বিএনপি জানিয়েছে, খালেদা জিয়া সিলেট হয়ে ঢাকায় ফিরলেও এখানে কোনো সভা কিংবা সমাবেশে অংশ নেবেন না। বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটের সিলেটের যাত্রীদের নামিয়ে বিমানটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ওসমানী বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন। এ সময় প্রায় ঘণ্টাখানেক খালেদা জিয়া সিলেটের বিমানবন্দরে অবস্থান করবেন। সেখানে অবস্থানকালে সিলেটে অবস্থানরত বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক এবং সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের একটি প্রতিনিধিদল সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পরে তাঁরা উপস্থিত নেতা-কর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন ও খালেদা জিয়ার বার্তা পৌঁছে দেবেন।
মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর সিলেটের মাটি স্পর্শ করবেন আমাদের নেত্রী। এটা স্থানীয় নেতা-কর্মীদের প্রাণিত করেছে। নিজেদের ভালো লাগার এই মুহূর্ত ও অনুভূতিটুকু আরও আনন্দময় করতে সবাই বিমানবন্দরের সামনে জড়ো হবেন। সে অনুযায়ী মহানগর ও জেলা বিএনপি প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
২০১৮ সালে খালেদা জিয়া একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন। করোনা মহামারির সময় বিগত সরকার তাঁকে বিশেষ বিবেচনায় কারামুক্তি দেয়। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো.
চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর লন্ডন ক্লিনিক থেকে গত ২৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে তাঁর ছেলে তারেক রহমানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। অর্ধ যুগের বেশি সময় পর এবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করেছেন খালেদা জিয়া।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কারাবন্দী অবস্থায় চারটি ঈদ কেটেছে কারাগার ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। বর্তমানে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া। সেখানে তাঁর পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ল ট হয় ব এনপ র করব ন অবস থ রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলও কি স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে
১৫ বছর ধরে অনেক ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল আর সংগঠন মিলে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসেন।
এর ফলে হাসিনা সরকারের পতন হয় ও তিনি এবং তাঁর দলের কর্মীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এ পরিবর্তন শুধু একটা সরকারের পরিবর্তন নয়, বরং দীর্ঘ সময়ের ভয় ও দমনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সাহস, আশা ও গণতান্ত্রিক চেতনার একটি বড় জয় ছিল।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায়, কিছু গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দল এই আন্দোলনের সফলতাকে শুধু নিজের নামে দাবি করতে শুরু করে। কেউ কেউ বলতে থাকে, তাদের কারণেই সরকার পতন ঘটেছে। তাই তারাই ভবিষ্যতে ক্ষমতার একমাত্র ভাগীদার।
আবার কিছু ধর্মীয় বা আদর্শিক গোষ্ঠী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে, যারা আগে প্রকাশ্যে তেমন সক্রিয় ছিল না। এ ছাড়া কিছু নতুন দল, যারা আগে রাজনীতিতে খুব একটা পরিচিত ছিল না, তারাও হঠাৎ করে সামনে চলে এসেছে। তারা নিজেদের ‘নতুন শক্তি’, ‘ভিন্নধারার দল’ হিসেবে উপস্থাপন করে, কিন্তু তাদের আচরণে কখনো কখনো পুরোনো রাজনীতির কৌশলই দেখা যায়।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনা স্বৈরশাসকদের টিকে থাকার দুটি মূলমন্ত্রেই ব্যর্থ২২ আগস্ট ২০২৪এই আন্দোলনের সময় বিভিন্ন গোষ্ঠী একসঙ্গে থাকলেও আন্দোলনের পর তারা নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে গিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ আবার নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার হিসাব-নিকাশ করছে। এতে আন্দোলনের মূল চেতনা—জনগণের অধিকার, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেন ধীরে ধীরে পেছনের দিকে চলে গেছে।
এ বাস্তবতায় প্রশ্ন ওঠে, যাঁরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন, তাঁরাই কি আবার ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গিয়ে নতুন একধরনের স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দেবেন?
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ৫ আগস্ট, ২০২৪