ভারতের হামলায় উচ্ছ্বসিত বলিউড, ‘কাপুরুষতা’ বলছেন পাকিস্তানের তারকারা
Published: 7th, May 2025 GMT
গত ২২ এপ্রিল ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানি হয়। এর পর থেকে পারমাণবিক ক্ষমতাধর দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তানের ছয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। নয়াদিল্লি এই হামলার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। এসব হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হওয়ার কথা এএফপিকে জানিয়েছেন, পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র । এ হামলার পর প্রশংসায় শামিল হয়েছেন বলিউড আর ‘কাপুরুষতা’ বলছেন পাকিস্তানি তারকারা।
ভারতের বিতর্কিত সিনেমা ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’খ্যাত নির্মাতা বিবেক অগ্নিহোত্রী ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্যের প্রশংসা করে এক্সে লিখেছেন ‘জয় হিন্দ’। এ পরিচালকের সঙ্গে যোগ দিয়ে বলিউড অভিনেতা অনুপম খেরও এর সমর্থনে এক্সে , ‘অপারেশন সিঁদুর’ লিখে গর্ব প্রকাশ করেছেন।
ভারতীয় অভিনেতা রিতেশ দেশমুখ ও ভারতীয় নির্মাতা মধুর ভান্ডারকরও ভারতের হামলার প্রশংসা করেছেন। রিতেশ দেশমুখ লিখেছেন, ‘অপারেশন সিঁদুরের জন্য ভারতীয় সেনাদের স্যালুট। আমাদের সাহসী জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা।’ মধুর ভান্ডারকর পোস্টে লিখেছেন, ‘সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব। অপারেশন সিঁদুর প্রমাণ করে, ভারত যেকোনো রকম হুমকির জবাব দিতে প্রস্তুত। ভারত মায়ের জয়।’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে পোস্ট দিয়েছেন অভিনেতা পরেশ রাওয়াল।
এদিকে ভারতের এ হামলাকে ‘কাপুরুষতা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মাহিরা খান ও হানিয়া আমির। ভারতের সামরিক এ পদক্ষেপের সমালোচনা করে লেখিকা ফাতিমা ভুট্টোর পোস্ট করা একটি টুইট আবার শেয়ার করেন মাহিরা, ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে এক হৃদয়গ্রাহী বার্তায় লিখেছেন, ‘কাপুরুষ!!! আল্লাহ আমাদের দেশকে রক্ষা করুন, বিবেক জাগ্রত হোক। আমিন।’
অভিনেত্রী হানিয়া আমির তাঁর ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এই হামলাকে ‘কাপুরুষতা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তিনি। ঘুমন্ত মানুষের ওপর এ ধরনের হামলা কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে ক্ষোভ ঝেড়েছেন এ অভিনেত্রী।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
এনজিওর ফাঁদ পেতে প্রতারণা
পাবনায় এনজিও খুলে সঞ্চয়পত্র ও ডিপিএসের নামে ২৫০ গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক দম্পতির বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের কাছে জামানত নেওয়ার পর লভ্যাংশ না দিয়ে আত্মগোপনে গেছেন তারা। সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রায় ৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।
ওই দম্পতি হলেন আব্দুল কাইয়ুম ও তাঁর স্ত্রী রঞ্জনা খাতুন। তারা পাবনা শহরের দিলালপুরে মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেড নামে এনজিও চালু করে প্রতারণা শুরু করেন। আব্দুল কাইয়ুম নিজেকে এনজিওর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রঞ্জনা চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিতেন। গ্রাহকরা লভ্যাংশের টাকা চাওয়া শুরু করলে টালবাহানা শুরু করেন তারা। তিন মাস ধরে পলাতক রয়েছেন তারা। অফিসও তালাবদ্ধ। টাকা হারিয়ে দিশেহারা অসহায় দরিদ্র নারীরা। এদিকে গ্রাহকের চাপে দিশেহার মাঠকর্মীরা। অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।
প্রতারক দম্পতিকে গ্রেপ্তার ও টাকা ফেরত চেয়ে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগীরা। বুধবার দুপুরে পাবনা প্রেস ক্লাবের সামনে আব্দুল হামিদ সড়কে সমবেত হন তারা। এ সময় বলরামপুর গ্রামের হাশেম আলীর স্ত্রী ময়না খাতুন জানান, তাঁর পরিবারের চারজন সদস্যের নামে এনজিওতে ১৫ লাখ টাকার ডিপিএস করেছিলেন। সেই টাকা নিয়ে পালিয়েছে প্রতারক দম্পতি।
কথা হয় পাবনা পৌর সদরের লাইব্রেরি বাজারের আব্দুল মালেকের স্ত্রী আফসানা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২৩ লাখ টাকা নিয়ে প্রতারক কাইয়ুম পালিয়েছেন। ফোন বন্ধ। অফিসেও তালা। তাঁকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন টাকা কীভাবে ফিরে পাব, সেই চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছি।
পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন লস্করপুর এলাকার মৃত মনিরুল হকের স্ত্রী রেহেনা খাতুন। কান্নাভেজা চোখে তিনি বলেন, দুই মেয়ের বিয়ের জন্য ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা ডিপিএস করেছিলেন। লাভ তো দেয়ইনি, আসল টাকা পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
গ্রাহকরা জানান, ২০১১ সালে পাবনা শহরের দিলালপুরে মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেড নামে একটি এনজিও চালু করে আব্দুল কাইয়ুম-রঞ্জনা দম্পতি। বেশ কিছু নারী মাঠকর্মী নিয়োগ করে গ্রামের অসহায় মানুষকে বেশি লাভ দেওয়ার কথা বলে সঞ্চয় ও ডিপিএস করার নামে টাকা জমা নেন। তাদের কথায় ভুলে গ্রামের সহজ-সরল নারীরা জমানো টাকা লগ্নি করেন এনজিওটিতে। তিন মাস আগে বেশ কয়েকজন গ্রাহকের ডিপিএসের মেয়াদ শেষ হয়। তারা লভ্যাংশসহ আসল টাকা চাইতে গেলে টালবাহানা শুরু করেন কাইয়ুম। গ্রাহকদের কাছে বারবার সময় নিয়েও কাউকেই টাকা দিতে পারেননি। এক পর্যায়ে অফিস তালা দিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন তারা। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ।
এনজিওটির মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন সদর উপজেলার বলরামপুর মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত মোস্তফার স্ত্রী সুলতানা খাতুন। তিনি বলেন, মাঠকর্মী হিসেবে গ্রামে গ্রামে ঘুরে নারীদের বুঝিয়ে টাকা সংগ্রহ করেছেন। তাদের ডিপিএস করিয়েছি। আমার মাধ্যমে ৮০ লাখ টাকা এনজিওতে জমা হয়েছে। এখন মালিক প্রতারণা করে পালিয়ে যাওয়ায় গ্রাহকরা আমার বাড়িতে চড়াও হচ্ছে। টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। এতগুলো টাকা কীভাবে পরিশোধ করব?
একই কায়দায় টাকা সংগ্রহ করেছেন লাইব্রেরি বাজার এলাকার মাঠকর্মী জামিরুল ইসলামের স্ত্রী নীপা আক্তার। তিনি প্রায় ৪০ লাখ টাকা তুলে জমা দিয়েছেন। এখন টাকা ফেরতের সময় আর মালিক কাইয়ুমকে পাচ্ছেন না। স্ত্রীও লাপাত্তা। কোথায় গেছেন কিছুই জানেন না। প্রতারক দম্পতিকে খুঁজে পেতে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ শোনার পর বিকেলে পাবনা শহরের দিলালপুরে মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে গেলে তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। পরে অভিযুক্ত আব্দুল কাইয়ুম ও তাঁর স্ত্রী রঞ্জনা খাতুনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া গেছে। মেসেজ পাঠিয়েও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে পাবনার সমাজসেবা বিভাগের উপপরিচালক রাশেদুল কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, এনজিও ব্যুরো, মহিলাবিষয়ক, যুব উন্নয়ন ও সমবায় অধিদপ্তর রেজিস্ট্রেশন দিয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেড নামে কোনো এনজিওকে নিবন্ধন দেওয়া হয়নি বলেই জানি। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জানতে পেরেছি এনজিওটি নিবন্ধনহীন। যাচাই না করে অধিক লাভের আশায় বিনিয়োগ করে লোকজন প্রতারিত হয়েছে। এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করা হবে।