গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ছে না: জ্বালানি উপদেষ্টা
Published: 7th, May 2025 GMT
সরকারের এই মুহূর্তে গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চিন্তা নেই বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবীর খান।
তিনি জানান, সংকট থাকলেও জনস্বার্থে এই সিদ্ধান্ত সরকারের। গ্যাসের জন্য ভোলায় পাঁচটি কূপ খননের টেন্ডার দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৭ মে) শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা জানান তিনি।
আরো পড়ুন:
রংপুরে বিদ্যুৎ অফিসের সামনে গ্রাহকদের বিক্ষোভ
পর্তুগাল ও স্পেনে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ বিপর্যয়, পর্যুদস্তু জনজীবন
উপদেষ্টা ফাওজুল কবীর খান বলেন, “দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রমজান উপলক্ষে যে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে ১৫০ মেগাওয়াট দেওয়া হবে শিল্প কারখানায়।”
মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই সময়ে ১০০ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে বলেও জানান ফাওজুল কবীর খান। তিনি বলেন, “এর ফলে যত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে তা শিল্প কারখানায় দেওয়া হবে। এই দুই সিদ্ধান্তের ফলে ২৫০ এমএমসিএফ গ্যাস বাড়বে শিল্প কারখানায়।”
উপদেষ্টা বলেন, “গ্যাসের জন্য এ বছর ৫০টি কূপ খনন করা হবে। আগামী বছর ১০০টি কূপ খনন করা হবে। সেখান থেকে ৫০০ এমএমসিএফ গ্যাস উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।”
ঢাকা/হাসান/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
দেশজুড়ে গ্যাস সংকট চরমে
এমনিতেই দেশে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। এর মধ্যে সরবরাহ আরও কমে যায়। বৈরী আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজারের মহেশখালীর গভীর সাগরে অবস্থিত টার্মিনাল থেকে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। গত মঙ্গলবার থেকে এ সমস্যা শুরু হয়। এতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে আজ দিনভর বাসাবাড়ি ও শিল্পে ভোগান্তি চরম আকার নেয়। তবে এদিন সন্ধ্যা থেকে এলএনজি সরবরাহ বাড়তে থাকায় পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে।
বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত দুই এলএনজি টার্মিনাল থেকে ১১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে। গত সোমবার দেওয়া হয় প্রায় ১০০ কোটি ঘনফুট। সাগর উত্তাল থাকায় মঙ্গলবার থেকে টার্মিনালগুলোতে এলএনজি আমদানি করা কার্গো যুক্ত হতে পারছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে টার্মিনালে মজুত এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশন করে লাইনে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। এতে মঙ্গলবার রাত থেকেই সরবরাহ কমতে শুরু করে। বুধবার সন্ধ্যায় সরবরাহ কমে ২০ কোটি ঘনফুটে নেমে আসে। বৃহস্পতিবারও দিনভর ২০-২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে এলএনজি টার্মিনালগুলো।
দেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক অন্তত ৪২০ কোটি ঘনফুট। বিপরীতে এলএনজিসহ বর্তমানে দিনে গড় সরবরাহ ২৮১ কোটি ঘনফুট। এলএনজির সরবরাহ কমায় মোট গ্যাস সরবরাহ কমে দাঁড়ায় ২০০ কোটি ঘনফুট। ফলে দেশজুড়ে সংকট বিরাট আকার ধারণ করে।
আজ সন্ধ্যায় পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জানান, বিকেলের মধ্যে দুই টার্মিনালে দুটি কার্গো জাহাজ যুক্ত হয়েছে। সন্ধ্যায় এলএনজি সরবরাহ বেড়ে ৬০ কোটি ঘনফুট হয়েছে। সকাল নাগাদ তা ১০০ কোটিতে পৌঁছাবে বলে তিনি আশা করেন।
ভোগান্তি
ঢাকার গোপীবাগ এলাকার ঝর্ণা রায় বৃহস্পতিবার সকালে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, তাঁর বাসায় গ্যাস নেই। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারাও তাঁর স্ট্যাটাসে কমেন্ট করে জানান, তাদের এলাকাতেও গ্যাস নেই। চুলা জ্বলছে না। জানতে চাইলে সন্ধ্যায় ঝর্ণা বলেন, সকাল থেকে চুলায় গ্যাস ছিল না বললেই চলে। সন্ধ্যার দিকে একটু চাপ বেড়েছে, তাও চুলা জ্বলার মতো গ্যাস আসেনি। আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা রফিকুল জানান, বুধবার রাত থেকেই গ্যাসের চাপ কম ছিল। বৃহস্পতিবার সারাদিন চুলা জ্বলেনি। বাইরে থেকে খাবার এনে খেতে হয়েছে।
ঢাকা, সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর অঞ্চলের শিল্পকারখানাগুলোতেও বুধবার থেকে গ্যাসের সংকট বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। অধিকাংশ কারখানায় বৃহস্পতিবার দিনভর উৎপাদন বন্ধ ছিল। অনেকে উৎপাদন ধরে রাখতে ডিজেলসহ অন্য বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করেন।
চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকার গৃহিণী সানজিদা আক্তার জানান, গ্যাস না থাকায় তিনি চুলা জ্বালাতে পারেননি। তাই সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবারও আনতে হয় হোটেল থেকে।
হোটেলগুলোতে দেখা যায় খাবার কিনতে যাওয়া মানুষের দীর্ঘ সারি। এ অবস্থা শুধু বহদ্দারহাটের নয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার চিত্রও ছিল এমন। গ্যাসের অভাবে সংকটে পড়ে চট্টগ্রামের কারাখানাগুলোও।
চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহকারী কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির (কেজিডিসিএল) মহাব্যবস্থাপক শফিউল আজম খান বলেন, তাদের গ্যাস সরবরাহ ২৮ কোটি ঘনফুট ১৬ কোটিতে নেমেছে। এ জন্য সংকট হচ্ছে।
গ্যাসের সংকট দেখা দেয় কুমিল্লাতেও। আজ ভোর থেকে সরবরাহ একেবারে কমে যায়। গ্যাস সংকটে বৃহস্পতিবার বিপাকে পড়েন চাঁদপুর জেলার ২০ হাজার আবাসিক গ্রাহক। বুধবার সকাল থেকে আবাসিকে গ্যাস সরবরাহ কমে যায়। আজ সকাল থেকে একবারে বন্ধ হয়ে যায়।
চাঁদপুর শহরের মমিনপাড়ার গৃহিণী লাবণী বলেন, সকালে (বৃহস্পতিবার) চুলা ধরাতে গিয়ে দেখি খুবই কম গ্যাস আসছে। সকাল ৯টার দিকে গ্যাস আসা পুরো বন্ধ হয়ে যায়।