ভূমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রীতাসহ নানা জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে সর্বাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত পাবনার নগরবাড়ী নৌবন্দর উদ্বোধন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পণ্য খালাসে আগের চেয়ে গতি বাড়বে ১০ গুণ। রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থানও।

শনিবার (৮ নভেম্বর) সকাল সোয়া এগারোটায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.

) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে এর উদ্বোধন করেন। পরে মোনাজাত ও বৃক্ষরোপন করা হয়।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমরেড আরিফ আহমেদ মোস্তফার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দেলোয়ারা বেগম।

উদ্বোধন শেষে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌ পরিবহন উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘‘আধুনিকায়ন ও বিনোয়োগ আনতে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি ব্যবস্থাপনায় দেওয়ার বিকল্প নেই, ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষায় অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’’

তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নয়নের অন্যতম একটি বড় জায়গা। কিন্তু গত ১৭ বছরে যা হয়েছে সেখানে তা দেখে আমার খুব কষ্ট লেগেছে। আমরা চেষ্টা করছি সেখান থেকে উত্তোরণ ঘটানোর। যাদের স্বার্থে আঘাত লাগে তারা ষড়যন্ত্র করে।”

সাখাওয়াত আরো বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি চট্টগ্রাম থেকে, মংলা বন্দর থেকে কিছু কিছু জায়গায় কন্টেইনার সরাসরি পৌঁছে দিতে। অতীতে নদীপথ ছিল চলাচলের একমাত্র পথ। আমরা পরিকল্পনা করছি পানগাঁওকে মেইন টার্মিনাল করে, শুধু পানগাঁও নয়, নগরবাড়ির মতো টার্মিনালেও ছোট ছোট লাইটারেজ জাহাজ দিয়ে আমরা কন্টেইনার নিয়ে আসতে এবং নিয়ে যেতে পারি।” 

তিনি বলেন, “আমরা খুব শিগগির টেন্ডার করব। নগরবাড়ী নদী বন্দর পরিচালনায় থাকবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এই ব্যবস্থাপনায় যা ইকুইপমেন্ট দরকার তা সেই প্রতিষ্ঠানই দেবে। আমরা চারটি নতুন ড্রেজার পেয়েছি। নদীপথ সচল রাখতে সেগুলো কাজ করবে।”

বন্দর সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলে কম খরচে সহজে নদীপথে বিপুল পরিমাণ সার, কয়লা, সিমেন্ট, পাথরসহ অন্যান্য পণ্য আনা-নেওয়া হয় পাবনার নগরবাড়ী নৌবন্দর দিয়ে। এ কারণে নৌপথে পণ্য পরিবহনের সুবিধা বাড়াতে নগরবাড়ীতে দেশের সবচেয়ে আধুনিক নদীবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। 

৫৬৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরে ৩৬ একর যায়গার ওপর ২০১৮ সালে বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী ঘাটে যমুনা নদীর পাড়ে শুরু হয় কর্মযজ্ঞ। চার বছর মেয়াদী প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের জুনে। তবে ভূমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতাসহ নানা জটিলতা থাকায় মেয়াদ বাড়ানো হয় দুইবার।

আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত এই নৌবন্দরে তৈরি হয়েছে ৩৬০ মিটার কংক্রিটের জেটি, টার্মিনাল, ওয়ারহাউস, গোডাউন, বাফার গোডাউন, ওপেন শেড, ওপেন স্টেজসহ দ্রুততম সময়ে পণ্য লোড-আনলোডের সব সুব্যবস্থা। 

স্থানীয়রা মনে করছেন, প্রকল্পটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যাবসা-বাণিজ্যে প্রসারের পাশাপশি পাল্টে যাবে এলাকার আর্থ সামাজিক চিত্র।

নগরবাড়ী থেকে পণ্য আনা-নেওয়ার কাজে থাকা ট্রাকচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘বন্দরটা নির্মাণ হওয়ায় বন্দর এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে। আগে ভাঙা রাস্তার কারণে যাতায়াতে সমস্যা হতো। আধুনিক বন্দর হওয়ায় পণ্য আনা-নেওয়ায় গাড়ি চলাচল বাড়বে, আমাদের কাজ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আয়ও বাড়বে।’’

স্থানীয় শ্রমিক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরে নদীবন্দরের নির্মাণকাজ চলছিল। অবশেষে কাজ শেষ হওয়ায় উদ্বোধন হলো। আমাদের হতাশা কাটিয়ে আশার সঞ্চার হলো। সরকার এখানকার মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ালে আমাদের অনেক উপকার হবে।’’

নগরবাড়ী-কাজীরহাট-নরাদহ নদীবন্দরের পোর্ট অফিসার মো. খাইরুজ্জামান বলেন, ‘‘আধুনিক নৌবন্দর চালু হওয়ায় উত্তররবঙ্গ তথা দেশের মানুষ এই প্রকল্পের সুফল পাবে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই নৌবন্দর ভূমিকা রাখবে। বন্দরটিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে ফলে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বাড়বে অন্তত দশ গুণ। আগে যেখানে প্রতিদিন মালপত্র খালাস করা হতো গড়ে ২ হাজার টন, এখন সেখানে পণ্য খালাস করা যাবে অন্তত ২০ হাজার টন; পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।’’

ঢাকা/শাহীন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর বহন নগরব ড় হওয় য়

এছাড়াও পড়ুন:

অভিযোগ ফেসবুকে নয়, সরাসরি জানান: চট্টগ্রামের মেয়র

গৃহস্থালির বর্জ্য সংগ্রহে বাড়তি ফি নিলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে না দিয়ে সরাসরি অভিযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শাহাদাত হোসেন এই অনুরোধ করেন। নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এ অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে আগামী এক বছরের কাজের পরিকল্পনা তুলে ধরেন মেয়র।

চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সামাজিক সংগঠন ডাকবাক্স ফাউন্ডেশনের হয়ে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে কথা বলেন ব্যাচেলর পয়েন্ট খ্যাত অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশ। তিনি জানান, ডাকবাক্স কিশোর অপরাধ দূর করতে ও নারীদের সমস্যা নিয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কাজ করবে।

মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, নগরে দৈনিক সৃষ্ট সব আবর্জনা সংগ্রহ করতে পারলে আর জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না। বর্জ্য যাতে বাইরে পড়ে না থাকে সে জন্য বাসাবাড়ি ও দোকানপাট থেকে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহে ডোর টু ডোর কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এ জন্য বাসাবাড়ি থেকে ফি নিতে পারবে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা। কিন্তু নিয়োগ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউ কেউ হয়তো বেশি নিচ্ছে। এ বিষয়ে ফেসবুকে দিলে হয়তো ভিউ পাওয়া যাবে, তবে কাজের কাজ হবে না। সিটি করপোরেশনকে সরাসরি অভিযোগ দিলে যারা বেশি নিচ্ছে তাদের বাদ দেওয়া হবে।

নগরে সৃষ্ট সব বর্জ্য সংগ্রহ করতে পারলে চট্টগ্রামে আর জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন নগরে ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। কিন্তু সিটি করপোরেশন সংগ্রহ করতে পারে ২ হাজার ২০০ টন। কারণ, বাকি বর্জ্য নগরবাসী ডাস্টবিনে না ফেলে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলছেন। চলতি পথে গাড়ি থেকে বাইরে থেকে ফেলে দেন। তবে ডোর টু ডোর কর্মসূচি চালুর পর বর্জ্য সংগ্রহের পরিমাণ বেড়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আবর্জনা থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদনের একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, এখন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। বায়োগ্যাস উৎপন্ন হলে বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য নগরবাসীকে এখন যে টাকা দিতে হচ্ছে তা হয়তো আর দিতে হবে না। তবে এ জন্য একটু সময় দিতে হবে।

দায়িত্ব গ্রহণের পর নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমিয়ে এনেছেন দাবি করে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এখন নগরের মানুষকে পানির মধ্যে বাস করতে হচ্ছে না। আগের মেয়রের ঘরেও পানি ঢুকে যেত, বাসা থেকে বের হতে পারত না। বহদ্দারহাট, মুরাদপুরে পানি জমে থাকত। এ নিয়ে মানুষ নানা কৌতুক করতেন। এবার টানা ৫ মাস ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। তবু জলাবদ্ধতার সমস্যা হচ্ছে না।’

আগামী এক বছরের পরিকল্পনা তুলে ধরে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, এবার বর্ষা দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে নগরবাসীকে প্রত্যাশা অনুযায়ী রাস্তা উপহার দিতে পারেননি। তবে আগামী এক বছরের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০টি বড় সড়ক উপহার দেবেন। সিটি করপোরেশনের ১০টি সেবা নিয়ে ‘আমাদের চট্টগ্রাম’ নামের একটি অ্যাপ চালু করা হবে আগামী ডিসেম্বরে। ময়লা, আলো, রাস্তা, মশা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা নিয়ে নগরবাসী তাঁদের মতামত খুব সহজে জানাতে পারবেন।

দায়িত্ব নেওয়ার পর দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য কাজ করেছেন বলে জানান মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, তবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে গৃহকর আদায়ে শক্ত অবস্থানে আছেন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গৃহকর আদায়ে ছাড় দিচ্ছেন না। ২০০ কোটি টাকার মতো গৃহকর যাতে আদায় করতে পারেন সে চেষ্টা করছেন। বন্দরের গাড়ির কারণে নগরের রাস্তাঘাট দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। তাই বন্দরের প্রতি এটি সিটি করপোরেশনের হক।

নগরে কিশোর গ্যাং বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন করতে না পারলে নতুন বাংলাদেশ মুখ থুবড়ে পড়বে। তারা যাতে সন্ত্রাস–মাদকের পথে না যায় সে উদ্দেশ্যে অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশের টিম (ডাকবাক্স ফাউন্ডেশন) সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে। বাইরের কিশোর–তরুণদের সঙ্গেও কাজ করবে।

মেয়র আরও বলেন, নাগরিকদের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রাইমারি হেলথকেয়ার সিস্টেম চালু করবেন আরবান হেলথকেয়ার সেন্টারগুলোতে। সিটি করপোরেশন হাসপাতালে স্বল্প মূল্যে কিডনির রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা করা হবে। অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র নগরের ৫টি জোনে ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার করার ঘোষণা দেন। ডাকবাক্স ফাউন্ডেশন সিটি করপোরেশনের সঙ্গে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। আগামী মাস থেকে এসব সেন্টার চালু করা হবে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বক্তারা জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখায় মেয়রকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিম, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ নূরল্লাহ নূরী, চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ারা বেগম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন।

মেয়রের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সিটি করপোরেশন উন্নয়ন প্রতিবেদন ও তথ্যচিত্র প্রকাশ করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অভিযোগ ফেসবুকে নয়, সরাসরি জানান: চট্টগ্রামের মেয়র