পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর: যেভাবে রাজনীতির সমীকরণ পাল্টে দিয়েছিল
Published: 8th, November 2025 GMT
প্রায় সাড়ে ১২ বছর আগে ‘তাহের-জিয়া ও ৭ নভেম্বরের সাতকাহন’ শিরোনামে আমার একটি লেখা ছাপা হয়েছিল প্রথম আলোর সম্পাদকীয় পাতায়। ইতিমধ্যে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও দিনটি রয়ে গেছে জন-আলোচনায়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের যে কয়টি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদল হয়েছে, তার মধ্যে ৭ নভেম্বর অন্যতম। দিনটি দেশের পরবর্তী রাজনীতির সমীকরণ পাল্টে দিয়েছে।
আমরা কেউ কেউ মোটাদাগে দিনটির ব্যবচ্ছেদ করতে বসি। তিনটি পক্ষ খোঁজার চেষ্টা করি। এই তিন পক্ষের কেন্দ্রে আছেন ওই সময়ের সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, চিফ অব জেনারেল স্টাফ ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ ও লে.
আমরা অনেক কিছুই জানি না। আমরা অনুমাননির্ভর কথাবার্তা বলতে পারি। তাঁদের মধ্যে একমাত্র তাহের কিছু কথা বলে গেছেন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাবে সামরিক ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে। খালেদ কোনো কথা বলার সুযোগ পাননি। জিয়া এরপরও বেঁচে ছিলেন প্রায় ছয় বছর। তিনি এ নিয়ে মুখ খোলেননি। তাঁদের নিয়ে অন্যরা নানান কথা বলেছেন, ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেসব ব্যাখ্যায় পক্ষপাত আছে, আছে জয়ীকে ন্যায্যতা দেওয়ার ও পরাজিতের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা। এ নিয়ে এখনো যথেচ্ছ রাজনীতি হয়।
আরও পড়ুন৭ নভেম্বর: ‘সিপাহি ইন্তিফাদা’ যে কারণে আজও প্রাসঙ্গিক২০ ঘণ্টা আগে৭ নভেম্বরের সুলুকসন্ধান করতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে একাত্তরে। ২৫ মার্চ মাঝরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী আক্রমণ চালালে মানুষ দিশাহারা হয়ে যায়। ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ স্লোগানে যাঁরা এত দিন রাজপথ কাঁপিয়েছেন, তাঁরা প্রাণ বাঁচাতে ছোটেন সীমান্তের দিকে। পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনী আর সামরিক বাহিনীর বাঙালি সদস্যরা প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে তাঁরা পিছু হটে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে ঢোকেন।
৪ ও ৫ এপ্রিল কয়েকজন বাঙালি সেনা কর্মকর্তা সিলেটের তেলিয়াপাড়ায় একটি চা-বাগানের ম্যানেজারের বাংলোয় প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসেন। সেখানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জিয়াউর রহমান, কে এম সফিউল্লাহ, খালেদ মোশাররফ ও রফিকুল ইসলাম। উপস্থিত হয়েছিলেন কর্নেল (অব.) এম এ জি ওসমানী। কীভাবে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে মিলিত হলেন, এটি একটি প্রশ্ন। তাঁরা সবাই ভারতীয় গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের আওতায় ছিলেন। শুরুর দিকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ তাঁদের সব ধরনের সহায়তা দেয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সংগঠিত হওয়ার আগেই সামরিক নেতৃত্ব সংগঠিত হয়েছিল। তাঁরা একটি সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন।
আরও পড়ুন৭ নভেম্বর, ১৯৭৫ ও খালেদ মোশাররফের একটি চিঠি০৭ নভেম্বর ২০২২কাকতালীয়ভাবে ওই সময় নয়াদিল্লিতে মঞ্চস্থ হচ্ছিল আরেকটি দৃশ্য। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদের। বৈঠকে ভারতের কয়েকজন শীর্ষ মন্ত্রী, আমলা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকে তাজউদ্দীনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। বিএসএফের মুখ্য আইন কর্মকর্তা এন এস বেইনস স্বাধীনতার একটি ঘোষণাপত্রের খসড়া তৈরি করে দেন। তাজউদ্দীনের একটি বেতার ভাষণ রেকর্ড করা হয়। এই সরকার প্রকাশ্যে আসে ১৭ এপ্রিল।
একাত্তরে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছিল জোড়াতালি দেওয়া। কেউ কাউকে মানেন না। বাঙালি সেনা কর্মকর্তারা বিএসএফের সাহায্যে সীমান্ত এলাকায় প্রতিরোধযুদ্ধ চালিয়ে যান। ভারতীয় সেনাবাহিনীর চেষ্টা ও তত্ত্বাবধানে ৫-৬ জুলাই শিলিগুড়িতে ১৯৭০ সালের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরা প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসেন। সরকার কিছুটা থিতু হয়। জুলাইয়ের শেষ দিকে কলকাতায় বাঙালি সেনা কর্মকর্তারা বৈঠকে বসেন। বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। প্রতিরোধযুদ্ধে সংহতি ও শৃঙ্খলা ফিরে আসে।
দেশের মানুষ স্বাধীনতা চেয়েছিলেন একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আশায়। সেটি হয়নি। দেশে চালু হয় কর্তৃত্ববাদী শাসন। প্রতিষ্ঠিত হয় মুজিবের কাল্ট, ব্যক্তিপূজার রাজনীতি—এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, কালোবাজারি, চোরাকারবার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড—সব মিলিয়ে দেশে তৈরি হয় এক ভয়ংকর অস্থিতিশীল পরিস্থিতি। ক্ষমতাসীনেরা ছাড়া অনেকেই চাইছে মুজিব সরকারের উৎখাত। এ পরিস্থিতিতে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট এক অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবের পতন হয়।বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে এই প্রতীতি জন্মে যে একটি রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে তাঁরা প্রতিরোধযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ভারত সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে ‘জয়েন্ট কমান্ড’ তৈরি করে। এর ফলে ভারতীয় সামরিক বাহিনী যুদ্ধে সরাসরি ও প্রকাশ্যে জড়িয়ে পড়ে। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনী এই জয়েন্ট কমান্ডের অধিনায়কের কাছে আত্মসমর্পণ করে। ভারতীয় জেনারেলরাই ছিলেন পাদপ্রদীপের আলোয়। এটি পরে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল।
বাংলাদেশ মুক্ত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান থেকে ফিরে এসে প্রশাসন নিজের হাতে নেন। স্বাধীন দেশে সামরিক কমান্ডের নতুন যাত্রা শুরু হয়। সেই থেকে একটি অদৃশ্য দ্বন্দ্ব চলে আসছিল রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব মনে করেন, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ঔরসে জন্ম নেওয়া বাঙালি সেনা কর্মকর্তারা মনেপ্রাণে লালন করেন পাকিস্তানবাদ তথা রাজনীতিতে সামরিক কর্তৃত্ব।
আরও পড়ুন৭ নভেম্বর না হলে বিএনপির জন্ম হতো না০৭ নভেম্বর ২০২৪সেনা কর্মকর্তারা মনে করেন, রাজনীতিবিদেরা যখন ভারতে বসে আনন্দ-ফুর্তি করে দিন কাটিয়েছেন আর দলাদলি করেছেন, তখন তাঁরাই বৈরী পরিস্থিতিতে সীমিত সামর্থ্য নিয়ে প্রতিরোধযুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী আর দশটা দেশের বাহিনীর মতো ‘মার্সেনারি’ নয়। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের উদ্যোক্তা ও ফসল। সুতরাং দেশটা কীভাবে চলবে, এ ব্যাপারে তাঁদের একটা ভূমিকা থাকা দরকার। এই দ্বন্দ্ব দিন দিন বাড়ছিল।
দেশের মানুষ স্বাধীনতা চেয়েছিলেন একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আশায়। সেটি হয়নি। দেশে চালু হয় কর্তৃত্ববাদী শাসন। প্রতিষ্ঠিত হয় মুজিবের কাল্ট, ব্যক্তিপূজার রাজনীতি—এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, কালোবাজারি, চোরাকারবার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড—সব মিলিয়ে দেশে তৈরি হয় এক ভয়ংকর অস্থিতিশীল পরিস্থিতি। ক্ষমতাসীনেরা ছাড়া অনেকেই চাইছে মুজিব সরকারের উৎখাত। এ পরিস্থিতিতে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট এক অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবের পতন হয়।
১৫ আগস্টের অভ্যুত্থান অনিবার্য ছিল বলেই অনেকে মনে করেন। শেখ মুজিব নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাঁকে সরানোর কোনো পথ খোলা রাখেননি। তাঁর পতনের শর্ত তিনি নিজেই তৈরি করেছিলেন। ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই একটি আধা সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন৭ নভেম্বর কোন পরিস্থিতিতে ঘটেছিল০৭ নভেম্বর ২০২৪সামরিক বাহিনীতে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব ছিল। সেনা কর্মকর্তারা অনেকেই ছিলেন উচ্চাভিলাষী। একটি গোষ্ঠী ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থান ঘটায়। আরেকটি গোষ্ঠী খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান ঘটায় ৩ নভেম্বর। সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে অন্তরিণ করা হয়। দুটি অভ্যুত্থানকালের সবাই পরস্পরের সহকর্মী ও বন্ধু। ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকারীদের ‘সেফ এক্সিট’ দেওয়া হয়।
চুয়াত্তরের ২৮ ডিসেম্বর জরুরি অবস্থা জারির পর থেকেই দেশের রাজনীতি চলে গিয়েছিল ব্যাকফুটে। প্রচলিত কমিউনিস্ট ও বামধারার রাজনীতির বাইরে গিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) হাজির করেছিল বিপ্লবের তত্ত্ব। লক্ষ্য ছিল, একটি প্রচণ্ড গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা নিয়ে নেওয়া। ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানটি জনসমর্থন পায়নি। এ পরিস্থিতিতে জাসদ অভ্যুত্থানের সিদ্ধান্ত নেয়। দলের পক্ষ থেকে অভ্যুত্থান পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় আবু তাহেরকে। ৬ নভেম্বর মাঝরাতে অভ্যুত্থান হয়। পতন হয় খালেদের। জিয়া মুক্ত হন। সামরিক বাহিনী এবং বাইরে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল ঈর্ষণীয়।
আরও পড়ুনপ্রহসনের ফাঁসি ও কর্নেল তাহের২০ জুলাই ২০১৭বন্দুকের নল থেকে গুলি একবার বেরিয়ে গেলে তা আর ঢোকানো যায় না। জাসদের বিপ্লব তখনো অসমাপ্ত। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তাহের জিয়ার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। যে জিয়া হতে পারতেন জাসদের কৌশলগত মিত্র, তাহেরের অবিমৃশ্যকারিতায় তিনি হন শত্রু। আরেকটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা করতে গিয়ে তাহের ও তাঁর সহকর্মীরা ধরা পড়েন। দেশদ্রোহের অভিযোগে তাঁরা দণ্ডিত হন। অভ্যুত্থান ব্যর্থ হলে তার জন্য চরম মূল্য দিতে হয়। জাসদকে এ জন্য চড়া দাম দিতে হয়েছে।
৭ নভেম্বর জিয়ার আবির্ভাব হয় নতুন তারকা হিসেবে। চারদিকে তাঁর বন্দনা। জাসদের সমালোচনায় সবাই তখন এককাট্টা।
১৫ আগস্ট সামরিক বাহিনী ক্ষমতার বারান্দায় ঢুকে পড়েছিল। ৭ নভেম্বর দেশে পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয় সামরিক নেতৃত্ব। বাংলাদেশের রাজনীতিতে অভ্যুদয় ঘটে নতুন এক শক্তির—সামরিক বাহিনী। সমাজের অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের মতো এই বাহিনীও ক্ষমতার দাবিদার। এটিকে আর উপেক্ষা করা যায় না। দেখা গেছে, এর পর থেকে সামরিক বাহিনী দেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার কোনো সুযোগ হাতছাড়া করেনি। তারা ‘বিপথগামী রাজনীতিকদের’ শায়েস্তা করার ভার নিজের কাঁধে তুলে নেওয়া দায়িত্ব মনে করেছে।
● মহিউদ্দিন আহমদ লেখক ও গবেষক
*মতামত লেখকের নিজস্ব
[ ৮ নভেম্বর ২০২৫ প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণে এ লেখা ‘রাজনীতির সমীকরণ পাল্টে দেওয়ার দিন’—শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক ন ত ত ব দ শ র র জন ত ক ল দ শ র র জন ত খ ল দ ম শ ররফ ১৫ আগস ট র কর মকর ত র পর স থ ত ত র জন ত র দ বন দ ব র রহম ন ত তর র র একট সরক র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন সংঘাতের পর পাকিস্তান–আফগানিস্তানের মধ্যে আলোচনায় আবারও অচলাবস্থা
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে চলমান আলোচনায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। যুদ্ধবিরতির মধ্যেই সীমান্ত এলাকায় সংঘাতের ঘটনায় দুই পক্ষ একে অপরকে দায়ী করার এক দিন পরই পাকিস্তান এ কথা বলল।
গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার দুই দেশের মধ্যকার আলোচনার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে এমন তথ্য দিয়েছেন। পাকিস্তানের দাবির বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কাবুলের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে এর আগে এক আফগান কর্মকর্তা বলেন, যৌথ আলোচনা চলার মধ্যেও সীমান্তে পাকিস্তানি ও আফগান বাহিনীর সংঘর্ষে চার আফগান নাগরিক নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন।
আলোচনায় মধ্যস্থতা করায় তুরস্ক ও কাতারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আতাউল্লাহ তারার। তিনি উল্লেখ করেন, আফগান তালেবান ২০২১ সালের দোহা শান্তিচুক্তি অনুযায়ী ‘সন্ত্রাসবাদ’ রোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তারার বলেছেন, পাকিস্তান আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপকে সমর্থন করবে না, যা আফগান জনগণ বা প্রতিবেশী দেশগুলোর স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাহির আন্দরাবি বলেন, আফগানিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আসিম মালিক। আর আফগান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, আফগানিস্তানের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক আবদুল হক ওয়াসিক দেশটির প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ইসলামাবাদ আফগান নাগরিকদের শান্তি ও মঙ্গল কামনা করে যাবে। তবে একই সঙ্গে নিজস্ব নাগরিক ও সার্বভৌমত্বের সুরক্ষায় সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
কান্দাহার প্রদেশের স্পিন বোল্ডাক শহরের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান আলি মোহাম্মদ হাকমালের অভিযোগ, পাকিস্তানই আগে গুলি চালিয়েছে। তাঁর দাবি, ইস্তাম্বুলে দুপক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনা চলার কারণে আফগান বাহিনী এর জবাব দেয়নি।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাহির আন্দরাবি দাবি করেছেন, আফগানিস্তানই গুলি চালানো শুরু করেছে।
পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, দেশটি চলমান সংলাপের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তারা আফগান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একইরকম আচরণ আশা করছে।
মন্ত্রণালয়টির কর্তৃপক্ষের দাবি, দুপক্ষের যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর আছে।
ইসলামাবাদের অভিযোগ, পাকিস্তান তালেবান (টিটিপি)-এর মতো গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে আফগানিস্তান। টিটিপির বিরুদ্ধে পাকিস্তানে বিভিন্ন হামলা চালানোর অভিযোগ আছে। আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার অবশ্য ওইসব গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাহির আন্দরাবি বলেন, আফগানিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আসিম মালিক।
আর আফগান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, আফগানিস্তানের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক আবদুল হক ওয়াসিক দেশটির প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
মুজাহিদ আরও বলেন, সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদ থামানোর লক্ষ্যে পাকিস্তান তাদের দাবিগুলো মধ্যস্থতাকারীদের কাছে জমা দিয়েছে। মধ্যস্থতাকারীরা দাবিগুলোর বিষয়ে আফগান তালেবান প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এক এক করে আলোচনা করছেন।
আরও পড়ুননতুন করে যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেই পাকিস্তান–আফগানিস্তান পাল্টাপাল্টি গোলাগুলি২১ ঘণ্টা আগেইসলামাবাদের অভিযোগ, পাকিস্তান তালেবানের (টিটিপি) মতো গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে আফগানিস্তান। টিটিপির বিরুদ্ধে পাকিস্তানে বিভিন্ন সময় হামলা চালানোর অভিযোগ আছে। আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার অবশ্য ওইসব গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
২০২১ সালে আফগান তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তান তালেবানের অনেক নেতা ও যোদ্ধা আফগানিস্তানে আশ্রয় নিয়েছেন, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও টানাপোড়েনের মধ্যে ফেলেছে।
গত সপ্তাহের আলোচনা শেষে তুরস্ক কর্তৃপক্ষ বলেছিল, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান উভয় পক্ষ শান্তি বজায় রাখতে এবং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনকারীদের শাস্তি দিতে একটি পর্যবেক্ষণ ও যাচাই–বাছাই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সম্মত হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ অক্টোবর শুরু হওয়া সংঘর্ষে আফগানিস্তান সীমান্তে এ পর্যন্ত ৫০ বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৪৪৭ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া কাবুলে বিস্ফোরণে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হন। ওই বিস্ফোরণের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে আফগানিস্তান।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বলেছে, সংঘর্ষে তাদের ২৩ সেনা নিহত ও ২৯ জন আহত হয়েছেন, তবে বেসামরিক লোকজনের হতাহত হওয়ার কোনো তথ্য তারা উল্লেখ করেনি।