মুন্সীগঞ্জে ৬৩ সহকারী শিক্ষকের বেতন হঠাৎ বন্ধ
Published: 8th, November 2025 GMT
কোন প্রকার নোটিশ না দিয়েই হঠাৎ করেই মুন্সীগঞ্জ সদরের ৪৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৩ জন সহকারী শিক্ষকের বেতন বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে শিক্ষকরা চলতি মাসে বেতন উত্তোলন করতে পারেননি।
গত অক্টোবর মাসের বেতন না পাওয়ায় ওইসব শিক্ষকদের পরিবারে নেমে এসেছে অনামিশার অন্ধকার। পরিবার-পরিজন নিয়ে পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
এসব শিক্ষক ২০০৮ ও ২০০৯ সালে সদর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পান। ১০ বছর পূর্তিতে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে তারা উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত হন। সেই মোতাবেক নিয়মিত তাদের বেতন হয়ে আসছিল। দীর্ঘদিন সেই সুবিধাভোগ করে এলেও পূর্ব ঘোষণা বা লিখিত কোনো নির্দেশনা ছাড়াই হঠাৎ করেই অক্টোবর মাসের বেতন বন্ধ হয়ে গেছে তাদের।
এদিকে, শিক্ষকদের বেতন বন্ধের কারণ হিসেবে জেলা হিসাব রক্ষণ কার্যালয় ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস একে অপরকে দোষারোপ করছে।
গত বুধবার (৫ নভেম্বর) বেতন বন্ধের কারণ জানতে হিসাব রক্ষণ কার্যালয়ে গেলে শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের অডিট অফিসার মেহেদী হাসান শরীফ।
এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) শিক্ষকরা জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাতের বরাবরে ওই অডিট অফিসারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সহকারী শিক্ষকরা।
সদর উপজেলার নৈরপুকুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, চলতি বছরের গত ২০ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি পরিপত্রের আলোকে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর মেহেদী হাসান শরীফ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে এসব শিক্ষকের উচ্চতর গ্রেড বাতিল হতে পারে বলে জানান। এরপর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে উপজেলা শিক্ষা অফিসকে বেতন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। অথচ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা বা লিখিত নোটিশ দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, “চলতি মাসে আমরা গত অক্টোবর মাসের বেতন উত্তোলন করতে গিয়ে দেখি আমাদের বেতন হয়নি। এ বিষয়ে জানতে আমরা শিক্ষা অফিসে গেলে বলা হয় জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের নির্দেশ এসেছে। কিন্তু সেই চিঠি কেউ আমাদের দেখাতে পারেনি।”
মুন্সীগঞ্জ সদরের ইদ্রাকপুর ১নং মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা খালেদা আক্তার বলেন, “চাকরিতে যোগদানের ১০ বছর পর আমরা উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত হই। সেই মোতাবেক আমাদের বেতন হয়ে আসছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই চলতি মাসে বেতন উত্তোলনে গেলে বাঁধে বিপত্তি। অক্টোবর মাসের বেতন হয়নি আমাদের। এ অবস্থায় চলতি মাসে কোনো বেতন তুলতে পারিনি।”
তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, “বেতন বন্ধের বিষয়ে জানতে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে গেলে সেখানে দায়িত্বে থাকা অডিটর অফিসার মেহেদী হাসান শরীফ তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। ওই কর্মকর্তা তাদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ পর্যন্ত করেছেন। এমনকি হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে প্রবেশের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।”
মুন্সীগঞ্জ সদরের কোটগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শারমিন ইয়াসমিনসহ একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে জানান, বেতন বন্ধের বিষয়ে জানতে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে গেলে সেখানে দায়িত্বে থাকা অডিটর মেহেদী হাসান শরীফ তাঁদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের অডিট অফিসার মেহেদী হাসান শরীফ বলেন, “তাদের সাথে খারাপ আচরণ ও গালাগালি করার দাবি মিথ্যা। তারা উল্টো ২০-২৫ জন নিয়ে এসে আমাকে হুমকি দিয়েছে। অথচ তাদের বেতন আটকে রাখা হয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিসের চিঠির কারণে।”
সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো.
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “আমি সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মোমিন মিঞাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষকদের বেতন প্রতি মাসের ন্যায় নিয়মিত করে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছি। এতে যেন কোন কালক্ষেপণ করা না হয় সে ব্যাপারেও সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
ঢাকা/রতন/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সদর উপজ ল শ ক ষকদ র অফ স র ম শ ক ষকর আম দ র সরক র সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
এশিয়া কাপে আচরণবিধি ভঙ্গের শাস্তি পেলেন রউফ-সূর্যকুমারসহ পাঁচজন
এশিয়া কাপ-২০২৫ এ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনা কেবল মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, পৌঁছে গেছে শৃঙ্খলাজনিত ব্যবস্থাতেও। খেলোয়াড়দের আচরণবিধি ভঙ্গের ঘটনায় এবার শাস্তির মুখে পড়েছেন দুই দেশের কয়েকজন তারকা ক্রিকেটার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) সূর্যকুমার যাদব ও হারিস রউফের ওপর জরিমানা ও ‘ডিমেরিট পয়েন্ট’ আরোপ করেছে। আর ভারতীয় পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ পেয়েছেন আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা।
আইসিসির এলিট প্যানেল অব ম্যাচ রেফারিরা সেপ্টেম্বর ১৪, ২১ ও ২৮ তারিখে অনুষ্ঠিত ভারত-পাকিস্তান ম্যাচগুলোর কয়েকটি ঘটনার তদন্ত করেন।
প্রথমবার, সেপ্টেম্বর ১৪:
প্রথম ম্যাচেই মাঠ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই ম্যাচে ভারতের সূর্যকুমার যাদব এবং পাকিস্তানের হারিস রউফ ও সাহিবজাদা ফারহানকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় আইসিসির আচরণবিধির ২.২১ অনুচ্ছেদ ভঙ্গের দায়ে। যেখানে বলা আছে, এমন আচরণ যা খেলাটির সুনাম ক্ষুণ্ন করে।
ফলাফল হিসেবে সূর্যকুমারকে জরিমানা করা হয় ম্যাচ ফি’র ৩০ শতাংশ এবং দেওয়া হয় দুই ডিমেরিট পয়েন্ট। ফারহান পান আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা ও এক ডিমেরিট পয়েন্ট। রউফের শাস্তিও একই; ৩০ শতাংশ জরিমানা ও দুই ডিমেরিট পয়েন্ট।
দ্বিতীয়বার, সেপ্টেম্বর ২১:
এক সপ্তাহ পরের ম্যাচে আবার বিতর্ক। ভারতীয় পেসার অর্শদীপ সিং অভিযুক্ত হন আইসিসির ২.৬ অনুচ্ছেদে, “অপমানজনক ভঙ্গি প্রদর্শনের” অভিযোগে। তবে ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের শুনানিতে প্রমাণ না মেলায় তিনি মুক্তি পান। কোনো শাস্তি হয়নি তার।
ফাইনালের উত্তেজনা, সেপ্টেম্বর ২৮:
এশিয়া কাপের ফাইনালও ছাড় পায়নি শৃঙ্খলাভঙ্গের ছোঁয়া থেকে। ভারতের জাসপ্রিত বুমরাহ স্বীকার করেন যে তিনি খেলাটির মর্যাদাবিরোধী আচরণ করেছেন। ফলে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সতর্ক করা হয় ও দেওয়া হয় এক ডিমেরিট পয়েন্ট। যেহেতু তিনি অপরাধ স্বীকার করেছিলেন, তাই আলাদা শুনানির প্রয়োজন হয়নি।
অন্যদিকে, হারিস রউফ আবারও জড়িয়ে পড়েন একই ধরনের ঘটনায়। ম্যাচ রেফারি রিচি রিচার্ডসনের শুনানিতে দোষী প্রমাণিত হয়ে তিনি আবার জরিমানা পান ম্যাচ ফি’র ৩০ শতাংশ এবং আরও দুই ডিমেরিট পয়েন্ট। এতে তার মোট ডিমেরিট পয়েন্ট দাঁড়ায় চার। যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাকে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞায় ফেলে। ফলে নভেম্বর ৪ ও ৬ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তানের দুইটি ওয়ানডে থেকে ছিটকে গেলেন তিনি।
আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, লেভেল–১ ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ম্যাচ ফি জরিমানা এবং দুই ডিমেরিট পয়েন্ট পর্যন্ত দেওয়া যায়। কোনো খেলোয়াড় যদি ২৪ মাসের মধ্যে চার বা তার বেশি ডিমেরিট পয়েন্ট পান, তবে তা রূপান্তরিত হয় সাসপেনশন পয়েন্টে। অর্থাৎ পরবর্তী ম্যাচে নিষেধাজ্ঞা অবশ্যম্ভাবী।
এশিয়া কাপে শাস্তিপ্রাপ্ত খেলোয়াড়দের তালিকা:
সূর্যকুমার যাদব (ভারত): ম্যাচ ফি’র ৩০% জরিমানা, ২ ডিমেরিট পয়েন্ট।
সাহিবজাদা ফারহান (পাকিস্তান): আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা, ১ ডিমেরিট পয়েন্ট।
হারিস রউফ (পাকিস্তান): দুই আলাদা অপরাধে দু’বার জরিমানা, মোট ৪ ডিমেরিট পয়েন্ট ও ২ ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা।
জাসপ্রিত বুমরাহ (ভারত): সতর্কবার্তা, ১ ডিমেরিট পয়েন্ট।
অর্শদীপ সিং (ভারত): অভিযোগ থেকে মুক্ত, কোনো শাস্তি নয়।
এশিয়া কাপের মাঠে যেমন ব্যাট-বল লড়াই জমেছিল, মাঠের বাইরে ঠিক তেমনই শৃঙ্খলাভঙ্গের নাটকও কম আলোচনার জন্ম দেয়নি। ক্রিকেটের সৌন্দর্য রক্ষায় এবার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে আইসিসি- “খেলা উত্তেজনার হতে পারে, কিন্তু সীমা অতিক্রম নয়।”
ঢাকা/আমিনুল