ডায়াবেটিসসহ যেসব রোগ থাকলে বাতিল হতে পারে মার্কিন ভিসার আবেদন
Published: 8th, November 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের জন্য ভিসাপ্রার্থীদের মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস বা স্থূলতার মতো স্বাস্থ্য সমস্যা আছে, তাদের আবেদন বাতিল হতে পারে- এমন একটি নির্দেশনা জারি করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর নতুন এই নির্দেশিকা জারি করেছে। খবর এনডিটিভির।
আরো পড়ুন:
মামদানিকে ‘ওয়াশিংটনের প্রতি সম্মান’ দেখাতে হবে: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউন: বিমানবন্দরগুলোতে ১০ শতাংশ ফ্লাইট কমানোর নির্দেশ
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এ ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত আবেদনকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘পাবলিক চার্জ’ বা অর্থনৈতিকভাবে বোঝা হয়ে উঠতে পারেন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ক্ষয় করতে পারেন, তাই যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে এসব বিষয় যাচাই করা হবে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কেএফএফ হেলথ নিউজের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে যে, নির্দেশনাটি মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোতে নোটিশ আকারে পাঠানো হয়েছে।
এতদিন ভিসা আবেদনকারীর কোনো ছোঁয়াচে রোগ আছে কি না দেখা হতো। নেওয়া হতো টিকাদানের ইতিহাস, মানসিক স্বাস্থ্যের তথ্য। নতুন নির্দেশিকায় ডায়াবেটিস এবং ওবেসিটির পাশাপাশি হৃদরোগ, ক্যানসার, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, স্নায়ু এবং বিপাকজনিত রোগ আছে কি না খতিয়ে দেখা হবে। এই সব রোগের চিকিৎসায় লাখ লাখ ডলার খরচ হয়। ভিসা আবেদনকারীর সেই টাকা খরচ করার মতো পকেটের জোর আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতেও ভিসা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অলাভজনক আইনি সহায়তা সংস্থা ক্যাথলিক লিগ্যাল ইমিগ্রেশন নেটওয়ার্কের সিনিয়র অ্যাটর্নি চার্লস হুইলার বলেছেন, যদিও এ নির্দেশনা সব ধরনের ভিসার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তবে এটি মূলত স্থায়ী বসবাসের (পারমানেন্ট রেসিডেন্সি) আবেদনকারীদের ওপরই প্রয়োগ করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হুইলার আরো বলেন, চিকিৎসাসংক্রান্ত বিষয়গুলো মূল্যায়নের ক্ষমতা ভিসা কর্মকর্তাদের ওপর ন্যস্ত করাটা উদ্বেগজনক। তারা চিকিৎসক নন, এ ক্ষেত্রে তাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই আর তাদের নিজস্ব ধারণা বা পক্ষপাতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া অনুচিত।
পররাষ্ট্র দপ্তরের নির্দেশিকায় ভিসা কর্মকর্তাদের অবশ্যই যাচাই করতে বলা হয়েছে যে, আবেদনকারীর কি আজীবন চিকিৎসার খরচ বহনের মতো পর্যাপ্ত আর্থিক সামর্থ্য আছে, যাতে তিনি সরকারি সহায়তা বা দীর্ঘমেয়াদি প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সেবার প্রয়োজন ছাড়াই জীবন যাপন করতে পারেন।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোনো নির্ভরশীল সদস্যের (ডিপেনডেন্ট) এমন কোনো শারীরিক বা মানসিক অবস্থা আছে কিনা, যার কারণে আবেদনকারীর কাজে কোনো প্রভাব পড়তে পারে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন এই নীতিমালা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের বিভাজনমূলক ও আক্রমণাত্মক ধারাবাহিক পদক্ষেপের অংশ, যা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করতে এবং অন্যদের দেশে অভিবাসন থেকে বিরত রাখতে চায়। অভিবাসীদের তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য হোয়াইট হাউজের অভিযানের মধ্যে রয়েছে প্রতিদিন গণগ্রেপ্তার, নির্দিষ্ট কিছু দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদিত মোট সংখ্যা কঠোরভাবে সীমিত করার পরিকল্পনা।
গত জুলাইতেই মার্কিন ভিসার জন্য আবেদন করলে ইন্টিগ্রিটি ফি দেওয়ার নিয়ম চালু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ফলে এমনিতেই খরচ বাড়তে চলেছে। ২০২৬ সাল থেকে এই ফি বাবদ ২৫০ ডলার দিতে হবে।
দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই অভিবাসন নীতিতে ব্যাপক রদবদল করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করা শুরু হয়েছে। গ্রিন কার্ড হোল্ডারদের উপরেও বেড়েছে চাপ। এর সঙ্গে এবার যোগ হলো রোগের তালিকাও। তাই বিদেশিদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দরজা ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন সংঘাতের পর পাকিস্তান–আফগানিস্তানের মধ্যে আলোচনায় আবারও অচলাবস্থা
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে চলমান আলোচনায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। যুদ্ধবিরতির মধ্যেই সীমান্ত এলাকায় সংঘাতের ঘটনায় দুই পক্ষ একে অপরকে দায়ী করার এক দিন পরই পাকিস্তান এ কথা বলল।
গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার দুই দেশের মধ্যকার আলোচনার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে এমন তথ্য দিয়েছেন। পাকিস্তানের দাবির বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কাবুলের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে এর আগে এক আফগান কর্মকর্তা বলেন, যৌথ আলোচনা চলার মধ্যেও সীমান্তে পাকিস্তানি ও আফগান বাহিনীর সংঘর্ষে চার আফগান নাগরিক নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন।
আলোচনায় মধ্যস্থতা করায় তুরস্ক ও কাতারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আতাউল্লাহ তারার। তিনি উল্লেখ করেন, আফগান তালেবান ২০২১ সালের দোহা শান্তিচুক্তি অনুযায়ী ‘সন্ত্রাসবাদ’ রোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তারার বলেছেন, পাকিস্তান আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপকে সমর্থন করবে না, যা আফগান জনগণ বা প্রতিবেশী দেশগুলোর স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাহির আন্দরাবি বলেন, আফগানিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আসিম মালিক। আর আফগান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, আফগানিস্তানের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক আবদুল হক ওয়াসিক দেশটির প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ইসলামাবাদ আফগান নাগরিকদের শান্তি ও মঙ্গল কামনা করে যাবে। তবে একই সঙ্গে নিজস্ব নাগরিক ও সার্বভৌমত্বের সুরক্ষায় সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
কান্দাহার প্রদেশের স্পিন বোল্ডাক শহরের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান আলি মোহাম্মদ হাকমালের অভিযোগ, পাকিস্তানই আগে গুলি চালিয়েছে। তাঁর দাবি, ইস্তাম্বুলে দুপক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনা চলার কারণে আফগান বাহিনী এর জবাব দেয়নি।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাহির আন্দরাবি দাবি করেছেন, আফগানিস্তানই গুলি চালানো শুরু করেছে।
পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, দেশটি চলমান সংলাপের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তারা আফগান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একইরকম আচরণ আশা করছে।
মন্ত্রণালয়টির কর্তৃপক্ষের দাবি, দুপক্ষের যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর আছে।
ইসলামাবাদের অভিযোগ, পাকিস্তান তালেবান (টিটিপি)-এর মতো গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে আফগানিস্তান। টিটিপির বিরুদ্ধে পাকিস্তানে বিভিন্ন হামলা চালানোর অভিযোগ আছে। আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার অবশ্য ওইসব গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাহির আন্দরাবি বলেন, আফগানিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আসিম মালিক।
আর আফগান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, আফগানিস্তানের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক আবদুল হক ওয়াসিক দেশটির প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
মুজাহিদ আরও বলেন, সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদ থামানোর লক্ষ্যে পাকিস্তান তাদের দাবিগুলো মধ্যস্থতাকারীদের কাছে জমা দিয়েছে। মধ্যস্থতাকারীরা দাবিগুলোর বিষয়ে আফগান তালেবান প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এক এক করে আলোচনা করছেন।
আরও পড়ুননতুন করে যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেই পাকিস্তান–আফগানিস্তান পাল্টাপাল্টি গোলাগুলি২১ ঘণ্টা আগেইসলামাবাদের অভিযোগ, পাকিস্তান তালেবানের (টিটিপি) মতো গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে আফগানিস্তান। টিটিপির বিরুদ্ধে পাকিস্তানে বিভিন্ন সময় হামলা চালানোর অভিযোগ আছে। আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার অবশ্য ওইসব গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
২০২১ সালে আফগান তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তান তালেবানের অনেক নেতা ও যোদ্ধা আফগানিস্তানে আশ্রয় নিয়েছেন, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও টানাপোড়েনের মধ্যে ফেলেছে।
গত সপ্তাহের আলোচনা শেষে তুরস্ক কর্তৃপক্ষ বলেছিল, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান উভয় পক্ষ শান্তি বজায় রাখতে এবং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনকারীদের শাস্তি দিতে একটি পর্যবেক্ষণ ও যাচাই–বাছাই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সম্মত হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ অক্টোবর শুরু হওয়া সংঘর্ষে আফগানিস্তান সীমান্তে এ পর্যন্ত ৫০ বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৪৪৭ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া কাবুলে বিস্ফোরণে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হন। ওই বিস্ফোরণের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে আফগানিস্তান।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বলেছে, সংঘর্ষে তাদের ২৩ সেনা নিহত ও ২৯ জন আহত হয়েছেন, তবে বেসামরিক লোকজনের হতাহত হওয়ার কোনো তথ্য তারা উল্লেখ করেনি।