কাল রাতে পাকিস্তানের ছয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। জবাবে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি পাকিস্তানের। কাল দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে নিজেদের বিচার-বিবেচনা অনুযায়ী ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার পূর্ণ অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকে।

তবে কি দুই দেশের যুদ্ধটা শেষ পর্যন্ত লেগেই গেল? বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) এ ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। আমিরাতের সঙ্গে দুটি টি-টোয়েন্টি খেলতে ১৪ মে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার কথা বাংলাদেশ দলের। সেখান থেকেই তাদের পাকিস্তানে যাওয়ার কথা লাহোর ও ফয়সালাবাদে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে। কিন্তু বর্তমান যুদ্ধাবস্থায় বিসিবি পাকিস্তানে দল পাঠাবে কি না, সেই প্রশ্নটাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ এবং আরও তিন-চারজন পরিচালক আজ সন্ধ্যায় এ নিয়েই জরুরি সভায় বসেছিলেন মিরপুরের বোর্ড কার্যালয়ে। তবে সভায় পাকিস্তান সফর এখনই স্থগিত করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিসিবি চাইছে আরও কয়েক দিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে।

সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানে ভারতের আক্রমণকে এখন পর্যন্ত বিসিবি দেখছে পেহেলগামে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ২৬ পর্যটক হত্যার ঘটনার ‘একমাত্র’ প্রতিশোধ হিসেবে। এটি শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত যুদ্ধে রূপ নেবে না এবং পরিস্থিতি বাংলাদেশ দলের পাকিস্তানে যাওয়ার আগেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে তাদের আশা। সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানে খেলতে যেতে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করে বোর্ড। তবে পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ থাকলে বিসিবি হয়তো পাকিস্তানে দল না পাঠানোরই সিদ্ধান্ত নেবে।

পাকিস্তানে আপাতত দল না পাঠানো হলে আমিরাত সফরটি হবে কি না, সেটিও একটি প্রশ্ন। দুই টি-টোয়েন্টির এই সিরিজের সূচিই যে করা হয়েছিল বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফর মাথায় রেখে! পাকিস্তানে দল যাবে দুবাই হয়ে, কাজেই যাওয়ার পথে সেখানে দুটি ম্যাচ খেলাই যায়—এই ছিল ভাবনা। তবে যদি পাকিস্তান সফরই না হয়, সে ক্ষেত্রে দুবাইয়ে মে মাসের প্রচণ্ড গরমের মধ্যে সিরিজ না খেলে পরে কোনো এক সময়েও খেলা যেতে পারে বলে মনে করেন কেউ কেউ।

পাকিস্তান সফরের ব্যাপারে বিসিবির সর্বশেষ অবস্থান জানতে চাইলে আজ রাতে ফারুক আহমেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ১০ মে পর্যন্ত পাকিস্তানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করব। এরপর আবার বসব এবং পাকিস্তানে দল পাঠানো নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’ বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সঙ্গে বিসিবি যোগাযোগ রাখছে বলেও জানান তিনি।

পিএসএলে খেলতে বর্তমানে পাকিস্তানে অবস্থান করা বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটার রিশাদ হোসেন আর নাহিদ রানার ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে সভায়। তাঁদের নিরাপত্তার ব্যাপারে ফারুক আহমেদ নিজে পিএসএলের প্রধান নির্বাহী সালমান নাসিরের সঙ্গে কথা বলেছেন, কথা বলেছেন লাহোর কালান্দার্সের হয়ে খেলতে যাওয়া রিশাদ এবং পেশোয়ার জালমির হয়ে খেলতে যাওয়া নাহিদ রানার সঙ্গেও।

বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন, রিশাদ ও নাহিদ দুজনই তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন, তাঁদের এখন পর্যন্ত সেখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ‘দুজনই আমাকে বলেছে তারা ভালো আছে এবং সেখানে থাকতে তাদের এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হচ্ছে না’— বলেছেন ফারুক। জানা গেছে, যেহেতু কোনো দেশের বোর্ডই এখনো পিএসএল থেকে তাদের খেলোয়াড়দের ফিরিয়ে নেয়নি, পরিস্থিতি খুব বেশি খারাপ না হলে বিসিবি আগ বাড়িয়ে সে রকম সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না।

আজ এক বিবৃতিতে পিসিবি জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতেও পিএসএল নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী চলবে। পরশু রাওয়ালপিন্ডিতে মুখোমুখি হবে রিশাদ ও নাহিদ রানার দল। এই ম্যাচে হেরে যাওয়া দল ছিটকে যেতে পারে টুর্নামেন্ট থেকেও। সে ক্ষেত্রে ফ্লাইট পেলে ম্যাচটির পরই দেশে ফিরতে পারবেন দুজনের একজন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ক স ত ন সফর ল দ শ দল র পর স থ ত প এসএল র এখন

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কার কমিশনের সব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নের জন্য নয়: আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, “সংস্কার কমিশনগুলোর সব সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই বাস্তবায়ন করতে হবে-এমন নয়। কিছু সুপারিশ বর্তমান সরকার গ্রহণ করছে, কিছু রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন হবে, বাকিগুলো ভবিষ্যতের জন্য দিক-নির্দেশনা হিসেবে থাকবে।”

রবিবার (২২ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘ফার্স্ট পলিটিক্যাল সায়েন্স কনফারেন্স'-এর কি-নোট স্পিচ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

কনফারেন্সের উদ্বোধনী সেশন ও কি-নোট স্পিস সেশন পরিচালনা করেন কনফারেন্সের আহ্বায়ক অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।

আরো পড়ুন:

রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনের ওপর কনফারেন্স রবিবার, মূল বক্তা আলী রিয়াজ

ফিলিস্তিন-ইরানে হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে ইসরাইলি পতাকায় অগ্নিসংযোগ

কি-নোট স্পিসে আলী রীয়াজ বলেন, “স্বৈরশাসক যেকোনো ধরনের অসন্তোষ, যেমন ভিন্নমত ও বিরোধীদল দমন করে শাসনব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ভিন্নমত প্রকাশ পায়। যেটা অনেকক্ষেত্রে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করে। যেটাকে বলা হয় অটোক্রেটিক নস্টালজিয়া। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দুইটি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করা বেশি কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। একটি বিচার বিভাগ এবং অন্যটি সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনী। দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসন এই দুই প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করে দেয়। অনেক সময় এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি করে। যেমনটা আমরা বিগতে বছরগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যে দেখেছি। এছাড়া, পতিত শাসকের সমর্থকরা ট্রানজিশনাল সময়ে অস্থিরতা তৈরি করে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্থিতিশীল রাখা শুধু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নয়। বরং রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্ব। কারণ নিকট ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলগুলো এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর ভর করে শাসনকার্য পরিচালনা করবে।”

তিনি বলেন, “অনেক সময় যেসব সরকার ক্ষমতা হারিয়েছে, তাদের সমর্থকেরা ইচ্ছাকৃতভাবে গণতান্ত্রিক পরিবর্তন আটকে দিতে চায় এবং গণতন্ত্রকে দুর্বল করার চেষ্টা করে। তারা মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেয়। যদি সরকার সত্য তথ্য দিয়ে এর জবাব না দিতে পারে এবং কিছুটা স্থিতিশীলতা বা সদিচ্ছা দেখাতে না পারে, তাহলে এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ দেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যেতে ব্যর্থ হয়েছে, আর ৪০ শতাংশ দেশ সফল হয়েছে। যেখানে এসব সমস্যা সঠিকভাবে মোকাবিলা করা গেছে, সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। আর যেখানে মোকাবিলা করা যায়নি, সেখানে আবার পিছিয়ে যাওয়া বা গণতন্ত্র থেকে সরে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।”

শ্যাডো রিফর্ম কমিশন, শ্যাডো ন্যাশনাল কনসেনসাস কমিশন এবং পলিটিক্যাল অ্যান্ড পলিসি সায়েন্স রিসার্চ ফাউন্ডেশনের যৌথভাবে কনফারেন্সটি আয়োজন করেছে। এরআগে, দুপুর আড়াইটায় কনফারেন্সে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান।

তিনি বলেন, “জুলাই এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আমরা এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে এ সময় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজন দূর করে আমাদের একযোগে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।”

পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার ও নেটওয়ার্ক বৃদ্ধিতে এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অত্যন্ত সময়োপযোগী বিষয়কে উপজীব্য করে এই সম্মেলন আয়োজন করায় তিনি আয়োজকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, “রাষ্ট্র যখন ট্রানজিশনাল পর্যায়ে থাকে, তখন তা শক্তিশালী ও স্বচ্ছ ইনস্টিটিউশন গঠনের সুযোগ সৃষ্টি করে। যদি আমরা এই সুযোগ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারি, তবে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ হবে উজ্জ্বল ও আশাব্যঞ্জক।চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে তরুণ প্রজন্ম ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার, স্বচ্ছ নির্বাচন এবং দুর্নীতির অবসানের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। এই অভ্যুত্থান লাখো মানুষের মনে নতুন আশা ও প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছে।”

এছাড়া, সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক নাছিমা খাতুন।

কনফারেন্সের আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, “এই কনফারেন্সে বাংলাদেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীসহ অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ উপস্থাপন করছেন। এসব প্রবন্ধ বর্তমান বাংলাদেশে রাষ্ট্রসংস্কার ও নির্বাচনকে ঘিরে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা থেকে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ খুঁজে পেতে সহায়ক হবে।”

তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে আমি দেশ-বিদেশ থেকে আগত সব প্রবন্ধ উপস্থাপক, অংশগ্রহণকারী, স্বেচ্ছাসেবক এবং সম্মানিত অতিথিদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা জানাই। এই সম্মেলনকে আমরা যেন একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করি এবং জ্ঞান আহরণ, ভাবনার বিনিময়, ন্যায়ভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের লক্ষ্যে একসাথে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করি।”

কনফারেন্সে প্রথমদিন দশটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন সেশনে চেয়ার ও আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ব্যারিস্টার এম মঈন আলম ফিরোজী, কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলামসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

কনফারেন্সের দ্বিতীয় দিন সোমবারে (২৩ জুন) বাকি সেশনগুলো অনুষ্ঠিত হবে। এ দিন সমাপনী বক্তব্য রাখবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ইয়াহইয়া আখতার।

ঢাকা/সৌরভ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংস্কার কমিশনের সব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নের জন্য নয়: আলী রীয়াজ
  • ইরান এখনই শান্তি স্থাপন না করলে আরও বড় হামলা হবে: ডোনাল্ড ট্রাম্প
  • নীহা কি এখনই সিনেমায় অভিনয় করবেন
  • পন্টিংয়ের পছন্দেই হোবার্ট হারিকেন্সে রিশাদ