‘তোর মা এখান থেকে না গেলে তোকে খুন করব’
Published: 9th, May 2025 GMT
“বাসায় আসলেই আমাকে ধরে, অনেক ভাউচার দেয় এটা দিলি না, ওটা দিলে না। প্রতিদিনই একই কথা বলে আমাকে শেষ করে দিচ্ছে। তোর মা এখান থেকে যায় না ক্যা? তোর মা এখান থেকে না গেলে তোকে খুন করব।” এভাবেই কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলেছিলেন নিহত ছেলে পলাশ সাহার মা আরতী সাহা।
তিনি বলেন, “ছেলের সংসারে এভাবে আড়াই বছর ধরে অশান্তি চলে আসছিল। গত পরশু দিন পলাশ আমার সাথে কথা বলার সময় এসব কথা জানায়। আমার সাথেই কথা বললেই ফেসবুকে লিখে দেয়- মার সাথে কি কথা বলেছিস, আমাকে বলতে হবে। এভাবেই সংসারে অশান্তি করে আসছিল পলাশের স্ত্রী।”
চট্টগ্রামে র্যাব-৭ এ কর্মরত সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহার মরদেহ গ্রামের বাড়ী গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তাড়াশী গ্রামে নেওয়া হলে স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে আকাশ বাতাস।
সেসময় পলাশের মা আরো বলেন, “তোরা আমার বাবার কাছে নিয়ে যা, আমি আমার বাবাকে একটু দেখবো। কি এমন রাগ করে আমাকে ছেড়ে চলে গেলি!”
গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে র্যাবের পাহারায় একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহার মরদেহ নিয়ে আসা হয় গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তাড়াশী গ্রামে। অ্যাম্বুলেন্স থেকে মরদেহ বের করার পর রাখা হয় উঠানে। এসময় স্বজনদের আহাজারীতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। পলাশকে এক নজর দেখতে আসা লোকজনেরও চোখ ভারী হয়ে ওঠে। পলাশের মা কান্নার মধ্যে বার বার ছেলের বউয়ের নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
দুপুরে উপজেলার পারকোনা শ্মাশানে তার মরদেহের শেষকৃত্য করা হয়। এর আগে র্যাব-৬ এর পক্ষ থেকে পলাশের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এর আগে বুধবার (৭ মে) দুপুর সাড়ে ১২ টায় র্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের তৃতীয় তলা থেকে সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহের পাশ থেকে একটি চিরকুট পাওয়া যায়।
ওই চিরকুটে উল্লেখ করা হয়, ‘‘আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।”
ঢাকা/বাদল/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পল শ স হ র র মরদ হ পল শ র
এছাড়াও পড়ুন:
ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের অবৈধ শেয়ার ইস্যু, তদন্ত করবে বিএসইসি
পুঁজিবাজারে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লিমিটেডের অবৈধ শেয়ার ইস্যু করার বিষয়ে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ লক্ষ্যে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।
সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে শর্তসাপেক্ষে এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়ে ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন—বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মো. ওহিদুল ইসলাম এবং সহকারী পরিচালক রেজাউন নূর মেহেদী।
আরো পড়ুন:
ইতিবাচক লেখনিতে ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার: ডিবিএ সভাপতি
পুঁজিবাজারে সূচকের পতন, কমেছে লেনদেন
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের ২৭তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) বেশিরভাগ শেয়ারহোল্ডারের মতামতকে মূল্যায়ন না করে অবৈধভাবে কোম্পানির পরিচালকদের আত্মীয়-স্বজনদের নামে নতুন ৪ কোটি ৬৭ লাখ শেয়ার ১০ টাকা ফেস ভ্যালুতে ইস্যু করার এজেন্ডা পাস করা হয়। বিএসইসির তদন্ত কমিটি এ অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখবে। কী উদ্দেশ্যে কোম্পানির পরিচালকদের আত্মীয়-স্বজনদের নামে এত বড় অংকের শেয়ার ইস্যু করার এজেন্ডা পাস করা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।
কোম্পানির বোর্ড ড্যাফোডিল পরিবারের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তার বিপরীতে শেয়ারে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা করে ৪.৬৭ কোটি শেয়ার ইস্যু করার অনুমোদন দেয় ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের পরিচালনা পর্ষদ, যা বিএসইসির অনুমোদন সাপেক্ষে করার কথা ছিল। তবে, এর আগে কোম্পানিকে এ বিষয়ে এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, কোম্পানি তা করেনি। ফলে, অবৈধভাবে শেয়ার ইস্যু করার হয়েছে বলে মনে করছেন শেয়ারহোল্ডাররা।
বিএসইসির তদন্তের আদেশ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এ মর্মে অভিমত দিয়েছে যে, ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স ২৭তম বার্ষিক সাধারণ সভায় বেশিরভাগ শেয়ারহোল্ডারের মতামতকে মূল্যায়ন না করে অবৈধভাবে কোম্পানির পরিচালকদের আত্মীয়-স্বজনদের নামে নতুন ৪ কোটি ৬৭ লাখ শেয়ার ১০ টাকা ফেসভ্যালুতে ইস্যু করার এজেন্ডা পাস করেছে। তাই, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন বলে মনে করে বিএসইসি।
এমতাবস্থায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে দুজন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এ বিষয়ে অনুসন্ধান পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ৬০ কার্মদিবসের মধ্যে অনুসন্ধান সম্পন্ন করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের পরিচালনা পর্ষদ। সর্বশেষ হিসাববছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.০১ টাকা। আগের হিসাববছরের একই সময়ে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.৫৪ টাকা। গত ৩০ জুন, ২০২৪ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৩.২৪ টাকা।
শেয়ার ধারণ পরিস্থিতি
ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৬ সালে। বর্তমানে কোম্পানিটি ‘বি’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। এ কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ৪৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার ৪ কোটি ৯৯ লাখ ১২ হাজার ২৬২টি। ২০২৫ সালের ৩১ মে পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে ৪১.৪০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৪.১১ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.১০ টাকা এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৪.৩৯ শতাংশ শেয়ার আছে। এ কোম্পানির স্বল্প মেয়াদি ঋণ আছে ২৯ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং দীর্ঘ মেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৮২১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। গত সোমবার (৩০ জুন) কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৫৪ টাকায়।
ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স ড্যাফোডিল পরিবারের একটি প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিটি আইটি সলিউশন, কম্পিউটার অ্যাসেম্বলিং এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের ব্যবসা করে।
ঢাকা/এনটি/রফিক