ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়্যার’-এর ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির সরকার। শুক্রবার এক বিবৃতিতে দ্য ওয়্যার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভারত সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি আইন-২০০০–এর অধীনে ইলেকট্রনিকস ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আদেশে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা তাদের ওয়েবসাইট ব্লক করেছে।

দ্য ওয়্যার কর্তৃপক্ষ ভারত সরকারের এই পদক্ষেপকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ভেরিফায়েড পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে দ্য ওয়্যার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীরা ওয়েবসাইটটি বন্ধের বিষয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য দিচ্ছে। তবে তারা জানতে পেরেছে, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

দ্য ওয়্যার এই ঘটনাকে ‘নগ্ন সেন্সরশিপের’ শামিল বলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, বর্তমানে ভারতে যখন সুস্থ, সত্যনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যমের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি, তখন এই ধরনের পদক্ষেপ দেশের জন্য ক্ষতিকর।

গণমাধ্যমটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এই স্বেচ্ছাচারী ও অস্পষ্ট সরকারি নির্দেশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বিবৃতিতে দ্য ওয়্যারের পক্ষ থেকে গত ১০ বছর ধরে তাদের পাশে থাকার জন্য পাঠকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে এবং এই কঠিন সময়েও সবার সমর্থন কামনা করা হয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে, সত্য ও নির্ভুল সংবাদ পরিবেশনে তারা কোনো প্রকার বাধার কাছে নতি স্বীকার করবে না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ