ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতালের (যক্ষ্মা হাসপাতাল) নিজস্ব জায়গায় স্থাপিত হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে জায়গা দিতে ও নিরিবিল পরিবেশে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ফৌজদারহাট থেকে স্থানান্তরে উদ্যোগ নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন জায়গার খোঁজে নেমেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। সম্ভাব্য স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে সীতাকুণ্ডের কুমিরা রেলস্টেশন সংলগ্ন পাহাড়ের টিলায় অবস্থিত রেলওয়ের পরিত্যক্ত বক্ষব্যাধি হাসপাতাল এলাকা।
গত ১৯ এপ্রিল দৈনিক সমকালের প্রিয় চট্টগ্রাম-এ ‘ছোঁয়াচে রোগের হাসপাতালে কেন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটি বক্ষব্যাধি হাসপাতালকে ফৌজদারহাট থেকে অন্যত্র স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়। গত বুধবার দুপুরে সীতাকুণ্ডের কুমিরায় পাহাড়ের ওপর পরিত্যক্ত রেলওয়ে যক্ষ্মা হাসপাতালটির জায়গা পরিদর্শনে যান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা.

অংসুইপ্রু মারমা।
এ সময় তিনি সমকালকে বলেন, ‘কুমিরায় পাহাড়ের ওপর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে রেলওয়ে যক্ষ্মা হাসপাতাল। ১০ একরের বেশি জমি রয়েছে এই পরিত্যক্ত হাসপাতালের। হাসপাতালের একাধিক ভবন থাকা থাকলেও সেসবের দরজা, জানালাও নেই। এই পরিত্যক্ত হাসপাতালে নতুন করে কোনো হাসপাতাল করা যায় কিনা তা দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতাল বা ইনফেকশন ডিজিজের হাসপাতাল করা যায় কিনা তা দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে যেসব রোগীর জন্য আলাদাভাবে আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু রাখা দরকার সেসব রোগীর জন্য হাসপাতাল তৈরি করতে জায়গা দেখা হচ্ছে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ ও ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতালের পরিচালক ডা. এস এম নুরুল করিম।
যক্ষ্মা একটি ছোঁয়াচে রোগ। এই রোগের সংক্রমণ-ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে ৬০ বছর আগে শহর থেকে কিছুটা দূরে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে স্থাপন করা হয় ১০০ শয্যার বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। তখন সেখানে জনবসতি ছিল খুবই কম, প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল নিরিবিলি। ২৮ দশমিক ২৯ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতাল এলাকায় ছিল পর্যাপ্ত আলো-বাতাস, ছিল পুকুর, গাছগাছালি। পরে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে দুই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি), ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনো (আইএইচটি)। এতে করে  বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আয়তন সংকুচিত হয়েছে, নিরিবিলি পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে।
কুমিরা রেলস্টেশন থেকে প্রায় ২০০ ফুট ওপরে পাহাড়ের টিলায় অবস্থিত রেলওয়ের পরিত্যক্ত বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও সেনেটোরিয়াম (স্বাস্থ্য নিবাস) ভবন। একসময় এ অবকাঠামো রক্ষায় নিরাপত্তা প্রহরী থাকলেও, গত ২০ বছর ধরে তাও নেই। যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত রেলওয়ের কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ আমলে এই হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছিল।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, যক্ষ্মা থেকে মুক্তির জন্য লোকালয় থেকে অনেকটা দূরে পাহাড়ের টিলায় এ হাসপাতাল নির্মাণ করে রেলওয়ে। যক্ষ্মা কমে আসার পর ১৯৯২ সালে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি 
কুমিরার এই ভবন থেকে স্থানান্তর করে চট্টগ্রাম শহরে অবস্থিত সিআরবি এলাকার রেলওয়ে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে  বিশাল এই জায়গা ও ভবন নিয়ে রেলওয়ে কোনো পরিকল্পনা করেনি।
 স্থানীয়দের অভিযোগ, নিরাপত্তা প্রহরী না থাকায় দিনদুপুরে দুষ্কৃতকারীরা ভবনের ইট, রড খুলে নিয়ে যায়, কেউ বাধা দেয় না। হাসপাতালের অবকাঠামো রক্ষায় উদাসীন রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশল বিভাগও।’
কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের আত্নগোপনে থাকা চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, ‘একসময় হাসপাতালটি এ অঞ্চলের যক্ষ্মা রোগীদের একমাত্র ভরসা ছিল। কয়েক বছর ধরে স্থানীয় দুষ্কৃতকারীরা ভবনটির ইট, রড খুলে নিয়ে যাচ্ছে। যদি ভবনের ছাদ, দেয়াল থাকত, সেটি ভাড়া কিংবা ইজারা দিলে রেলের কিছুটা আয় হতো। রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সুন্দর ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।’
রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতাল এলাকার আয়তন প্রায় ১০ একর। এছাড়া, হাসপাতালের আশপাশে রেলওয়ের জায়গা রয়েছে আরও অন্তত ৩০ একর। স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে ওই এলাকায় জায়গা–জমি মৌজা দরের চেয়ে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজার দর অনুযায়ী, হাসপাতালের জমির দাম অন্তত ২০  কোটি টাকা। 
চট্টগ্রাম রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী আবু রাফি মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হোছাইন বলেন, ‘পরিত্যক্ত ভবনে কোন পাহাদার ও গার্ড দেওয়ার প্রয়োজন নেই। মূল্যবান এই জায়গা নিয়ে আপাতত রেলওয়ের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনাও নেই।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলাউদ্দিন স্বপন বলেন, ‘মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ তলা ভবনে বক্ষব্যাধি হাসপাতাল স্থান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে। যক্ষা ছোঁয়াচে রোগ। এ রোগীদের কথা বিবেচনা করে নিরিবিল পরিবেশ হাসপাতালটি স্থানান্তর করা হতে পারে। সেই আলোকে নতুন জায়গা দেখা হচ্ছে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের জন্য।’
বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক তত্ত্বাবধায়ক ডা. এসএম নুরুল করিম বলেন, ‘যক্ষ্মা ছোঁয়াচে রোগ। বর্তমানে যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে এমডিআর ও এক্সডিআরের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি। এসব রোগীর যক্ষ্মা সাধারণ ওষুধে ভালো হয় না। হাসপাতালে ভর্তি রেখে বিশেষ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দিতে হয়। রোগীদের জন্য খোলামেলা পরিবেশ দরকার।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত র লওয় র র জন য পর ব শ অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

দূষণ শুষে নেওয়া পদ্ম ফুল কেন হারিয়ে যাচ্ছে

পদ্ম জলাভূমিতে শোভা ছড়ায়, এর ফুল মধু বিকোয়, কিছু খাদ্যমূল্যও আছে। তবে বিজ্ঞানী, উদ্ভিদবিদ ও জলবায়ুবিশেষজ্ঞরা বলছেন, বহুগুণে সমৃদ্ধ পদ্ম বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন উদ্ভিদের একটি। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণে অন্যান্য জলজ উদ্ভিদের তুলনায় পদ্ম অনেক বেশি সক্ষম।

শুধু কার্বন শোষণ নয়, সিসা, তামা, ফ্লোরাইড কিংবা নাইট্রেটের মতো ভারী ধাতু শোধনের ক্ষমতাও রাখে পদ্ম। পানির মান কতটা ভালো হতে পারে, তার নির্ণায়ক পদ্ম। বৈশ্বিক নানা গবেষণায় দেখা গেছে, যে জলাশয়ে পদ্মের উপস্থিতি থাকে, সেখানে দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডিও) ভালো থাকে। খাবার, ওষুধ ও কসমেটিক–সামগ্রী হিসেবে পদ্মের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। পদ্মের বিশ্ববাজার এখন ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

কার্বনসহ ভারী ধাতু শোধনের ক্ষমতা রাখে পদ্ম। পানির মান নির্ণায়ক পদ্ম। এর বিশ্ববাজার এখন ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতায় প্রেমিকা বরুনার জন্য ‘বিশ্বসংসার তন্নতন্ন করে খুঁজে’ ১০৮টা নীলপদ্ম আনার কথা বলেছিলেন। সম্প্রতি আমরাও পদ্ম আর পদ্মবিলের খোঁজে বেরিয়েছিলাম। মাঝশরতের সকাল পেরিয়ে দুপুর। টাঙ্গাইলের নানা স্থানে পদ্মবিলের খ্যাতি আছে। একসময় কালিহাতীর বিলগুলোয় ‘পদ্ম’ ফুটত। আমাদের উদ্দেশ্য, পদ্মশোভিত বিল দেখা। তপ্ত রোদ আর গরম উপেক্ষা করে ঘুরে বেড়ালাম পাইকড়া বিল, চারাণ বিল, নকীল বিল, কুমার বিল, সিংগুলি বিলসহ আরও কত বিল। কোথাও পদ্ম ফুলের দেখা পাওয়া গেল না। কচুরিপানায় ভরা বিলগুলোর একটির নাম সাতবিল। একটি ছোট নৌকার মাঝি মজনু শাহ বলেন, এ বিলে আগে পদ্ম থাকলেও এখন নেই।

ঘুরতে ঘুরতে জানতে পারলাম, কালিহাতীর নাগবাড়ী ইউনিয়নের ধানগড়া গ্রামের নান্দাই বিলে পদ্মফুল থাকতে পারে। কচুরিপানা আর হরেক রকম জলজ উদ্ভিদ ভেদ করে মাঝ বিলে গিয়ে দেখলাম, পদ্মপাতা ভাসছে। কিন্তু ফুল খুব কম। নৌকাচালক আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বিলে মাছে ছাষ অয়। আগে তো ম্যালা জায়গায় পদ্ম হইত। এহন এহানেই টিক্যা আছে। মাছের চাষ করতে গিয়্যা পদ্ম উডাইয়া ফেলে।’

আন্ধাশুরা বিলে ফুটে আছে পদ্ম। একসময় এ বিলে অনেক পদ্ম ফুটত। এখন তা কমে গেছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা কি ‘গ্ল্যামার’ হারাচ্ছে?
  • দূষণ শুষে নেওয়া পদ্ম ফুল কেন হারিয়ে যাচ্ছে