অবশেষে সরে যেতে হচ্ছে বক্ষব্যাধি হাসপাতালকেই
Published: 10th, May 2025 GMT
ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতালের (যক্ষ্মা হাসপাতাল) নিজস্ব জায়গায় স্থাপিত হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে জায়গা দিতে ও নিরিবিল পরিবেশে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ফৌজদারহাট থেকে স্থানান্তরে উদ্যোগ নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন জায়গার খোঁজে নেমেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। সম্ভাব্য স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে সীতাকুণ্ডের কুমিরা রেলস্টেশন সংলগ্ন পাহাড়ের টিলায় অবস্থিত রেলওয়ের পরিত্যক্ত বক্ষব্যাধি হাসপাতাল এলাকা।
গত ১৯ এপ্রিল দৈনিক সমকালের প্রিয় চট্টগ্রাম-এ ‘ছোঁয়াচে রোগের হাসপাতালে কেন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটি বক্ষব্যাধি হাসপাতালকে ফৌজদারহাট থেকে অন্যত্র স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়। গত বুধবার দুপুরে সীতাকুণ্ডের কুমিরায় পাহাড়ের ওপর পরিত্যক্ত রেলওয়ে যক্ষ্মা হাসপাতালটির জায়গা পরিদর্শনে যান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা.
এ সময় তিনি সমকালকে বলেন, ‘কুমিরায় পাহাড়ের ওপর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে রেলওয়ে যক্ষ্মা হাসপাতাল। ১০ একরের বেশি জমি রয়েছে এই পরিত্যক্ত হাসপাতালের। হাসপাতালের একাধিক ভবন থাকা থাকলেও সেসবের দরজা, জানালাও নেই। এই পরিত্যক্ত হাসপাতালে নতুন করে কোনো হাসপাতাল করা যায় কিনা তা দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতাল বা ইনফেকশন ডিজিজের হাসপাতাল করা যায় কিনা তা দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে যেসব রোগীর জন্য আলাদাভাবে আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু রাখা দরকার সেসব রোগীর জন্য হাসপাতাল তৈরি করতে জায়গা দেখা হচ্ছে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ ও ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতালের পরিচালক ডা. এস এম নুরুল করিম।
যক্ষ্মা একটি ছোঁয়াচে রোগ। এই রোগের সংক্রমণ-ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে ৬০ বছর আগে শহর থেকে কিছুটা দূরে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে স্থাপন করা হয় ১০০ শয্যার বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। তখন সেখানে জনবসতি ছিল খুবই কম, প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল নিরিবিলি। ২৮ দশমিক ২৯ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতাল এলাকায় ছিল পর্যাপ্ত আলো-বাতাস, ছিল পুকুর, গাছগাছালি। পরে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে দুই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি), ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনো (আইএইচটি)। এতে করে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আয়তন সংকুচিত হয়েছে, নিরিবিলি পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে।
কুমিরা রেলস্টেশন থেকে প্রায় ২০০ ফুট ওপরে পাহাড়ের টিলায় অবস্থিত রেলওয়ের পরিত্যক্ত বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও সেনেটোরিয়াম (স্বাস্থ্য নিবাস) ভবন। একসময় এ অবকাঠামো রক্ষায় নিরাপত্তা প্রহরী থাকলেও, গত ২০ বছর ধরে তাও নেই। যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত রেলওয়ের কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ আমলে এই হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছিল।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, যক্ষ্মা থেকে মুক্তির জন্য লোকালয় থেকে অনেকটা দূরে পাহাড়ের টিলায় এ হাসপাতাল নির্মাণ করে রেলওয়ে। যক্ষ্মা কমে আসার পর ১৯৯২ সালে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি
কুমিরার এই ভবন থেকে স্থানান্তর করে চট্টগ্রাম শহরে অবস্থিত সিআরবি এলাকার রেলওয়ে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে বিশাল এই জায়গা ও ভবন নিয়ে রেলওয়ে কোনো পরিকল্পনা করেনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিরাপত্তা প্রহরী না থাকায় দিনদুপুরে দুষ্কৃতকারীরা ভবনের ইট, রড খুলে নিয়ে যায়, কেউ বাধা দেয় না। হাসপাতালের অবকাঠামো রক্ষায় উদাসীন রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশল বিভাগও।’
কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের আত্নগোপনে থাকা চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, ‘একসময় হাসপাতালটি এ অঞ্চলের যক্ষ্মা রোগীদের একমাত্র ভরসা ছিল। কয়েক বছর ধরে স্থানীয় দুষ্কৃতকারীরা ভবনটির ইট, রড খুলে নিয়ে যাচ্ছে। যদি ভবনের ছাদ, দেয়াল থাকত, সেটি ভাড়া কিংবা ইজারা দিলে রেলের কিছুটা আয় হতো। রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সুন্দর ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।’
রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতাল এলাকার আয়তন প্রায় ১০ একর। এছাড়া, হাসপাতালের আশপাশে রেলওয়ের জায়গা রয়েছে আরও অন্তত ৩০ একর। স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে ওই এলাকায় জায়গা–জমি মৌজা দরের চেয়ে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজার দর অনুযায়ী, হাসপাতালের জমির দাম অন্তত ২০ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী আবু রাফি মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হোছাইন বলেন, ‘পরিত্যক্ত ভবনে কোন পাহাদার ও গার্ড দেওয়ার প্রয়োজন নেই। মূল্যবান এই জায়গা নিয়ে আপাতত রেলওয়ের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনাও নেই।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলাউদ্দিন স্বপন বলেন, ‘মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ তলা ভবনে বক্ষব্যাধি হাসপাতাল স্থান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে। যক্ষা ছোঁয়াচে রোগ। এ রোগীদের কথা বিবেচনা করে নিরিবিল পরিবেশ হাসপাতালটি স্থানান্তর করা হতে পারে। সেই আলোকে নতুন জায়গা দেখা হচ্ছে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের জন্য।’
বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক তত্ত্বাবধায়ক ডা. এসএম নুরুল করিম বলেন, ‘যক্ষ্মা ছোঁয়াচে রোগ। বর্তমানে যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে এমডিআর ও এক্সডিআরের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি। এসব রোগীর যক্ষ্মা সাধারণ ওষুধে ভালো হয় না। হাসপাতালে ভর্তি রেখে বিশেষ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দিতে হয়। রোগীদের জন্য খোলামেলা পরিবেশ দরকার।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত র লওয় র র জন য পর ব শ অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
বৃন্দাবনী: যে আমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বনেদিপনা
ছোট গড়নের আম। একটু গোলগাল ধরনের। যেখানে রাখা হয়, মুহূর্তেই সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পাকলে খোসাটা গাঢ় হলুদাভ হয়। কাটার পর শাঁসের রংটাও মন জুড়ায়। স্বাদে টক-মিষ্টির এক সুন্দর সংমিশ্রণ। রূপে-গন্ধে-স্বাদে অন্য আমের তুলনায় একেবারেই আলাদা। নাম বৃন্দাবনী আম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া, ফজলি, ক্ষীরশাপাতের পাশে বহু বছর ধরেই এক নীরব মর্যাদা নিয়ে আছে বৃন্দাবনী আম। তবে এ আম সহজে চোখে পড়ে না। কারণ, সবাই এই আম সম্পর্কে জানেন না। যাঁরা জানেন, বোঝেন; তাঁরা ঠিকই জোগাড় করেন। নিজেরা খান, স্বজন-বন্ধুদের পাঠান।
এই আম সম্পর্কে চমৎকার সব তথ্য দিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আইনজীবী আনন্দ শংকর রায় চৌধুরী। আইনজীবী হয়েও বৃন্দাবনী আম নিয়ে এত জানা-বোঝার সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর পারিবারিক ইতিহাস। আনন্দের বাবা রূপেন্দ্র নাথ রায় চৌধুরী (ভুতু উকিল নামে পরিচিত) ছিলেন আইনজীবী ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব। তাঁর বন্ধুত্ব ছিল আরেক আইনজীবী সবিতা রঞ্জন পালের (এস আর পাল) সঙ্গে। তাঁরা দুজনই বৃন্দাবনী আমের ভক্ত ছিলেন। আমের মৌসুমে রূপেন্দ্র বৃন্দাবনী আম কিনে পাঠাতেন এস আর পালকে। ছোটবেলা থেকে দেখে, খেয়ে এই আমের প্রতি ভালো লাগা আনন্দ শংকরের।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায় এই আমের উৎপত্তি। মালদহ ও মুর্শিদাবাদে এই আম খুবই জনপ্রিয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ একসময় মালদহ জেলার অংশ ছিল।আনন্দ শংকর রায় চৌধুরী, আইনজীবী ও আমপ্রেমীবাবার মৃত্যুর পর আনন্দ শংকর রায় চৌধুরী বৃন্দাবনী আম নিয়ে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। এর ভিত্তিতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায় এই আমের উৎপত্তি। মালদহ ও মুর্শিদাবাদে এই আম খুবই জনপ্রিয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ একসময় মালদহ জেলার অংশ ছিল। আর মালদহ প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড়ের অংশ। কলির কৃষ্ণ হিসেবে শ্রীচৈতন্যের বৈষ্ণব আন্দোলনের বেশ প্রভাব ছিল গৌড়ে। কোনো বৈষ্ণবভক্ত বৈষ্ণব আন্দোলনের সূতিকাগার বৃন্দাবনের নামানুসারে আমের নাম ‘বৃন্দাবনী’ রেখেছেন বলে জনশ্রুতি আছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের দেড় শ থেকে দু শ বছরের পুরোনো আমবাগানের কোনো কোনোটিতে বৃন্দাবনী আমগাছ আছে। বিশেষ করে বনেদি, শৌখিন ও ধনাঢ্য আমবাগানিদের বাগানে বহুল প্রচলিত ফজলি, ক্ষীরশাপাত ও ল্যাংড়া আমের পাশাপাশি দু-চারটি বৃন্দাবনী আমের গাছ আছে। সাধারণত নিজেদের খাওয়ার জন্য, প্রিয়জনদের উপহার দেওয়ার জন্য তাঁরা এই জাতের গাছ লাগাতেন। একসময় জমিদার, কুলীন হিন্দু ও মুসলিম পরিবারগুলোর বিশেষ পছন্দের আম ছিল বৃন্দাবনী, এমনটাই ভাষ্য আনন্দ শংকর রায় চৌধুরীর।
সব বাগানে বৃন্দাবনী জাতের আম নেই। মাত্র কয়েকটি পুরোনো আমবাগানে এই আমের গাছ আছে