ভারতীয় নাগরিককে বাড়ি ফেরালেন বাংলাদেশের সাংবাদিক
Published: 11th, May 2025 GMT
গ্রেপ্তার হওয়ার দুইমাস পর আদালত সাজা দিয়েছিলেন ১৫ দিন। অর্থাৎ রায় ঘোষণার দেড়মাস আগেই সাজা খাটা শেষ হয়েছিল ভারতীয় নাগরিক আর সালাইন হোসেনের। তবে, আইনি জটিলতায় বাড়ি ফেরা হচ্ছিল না তার। কারাগারে ছিলেন আরো প্রায় সাড়ে ৪ মাস। অবশেষে রবিবার (১১ মে) আর সালাইন বাড়ি ফিরলেন বাংলাদেশি সংবাদিকের সহযোগিতায়।
ফিরে যাওয়া ভারতীয় নাগরিক আর সালাইনের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ে। তার বাবার নাম মৃত হামিদ হোসাইন।
আর সালাইন ছিলেন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে। আজ রবিবার তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আমান উল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন:
অনেক মিডিয়া আওয়ামী লীগের টুলস হিসেবে কাজ করেছে: শফিকুল আলম
ভারতে ‘দ্য ওয়্যার’ নিউজ সাইট বন্ধ
আর সালাইনের বিষয়টি গত ২২ ফেব্রুয়ারি জানতে পারেন ঢাকার সাংবাদিক শামসুল হুদা। তিনি দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটকে থাকা বিদেশি নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরাতে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছেন। আর সালাইনকে ফেরাতেও ঢাকায় বিভিন্ন দপ্তরে ছোটাছুটি করেন তিনি। রবিবার আর সালাইনের প্রত্যার্পণের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে ছুটে আসেন শামসুল হুদা। কারাগারের সামনে থেকে আর সালাইনকে নিয়ে কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যান সোনামসজিদ স্থলবন্দরেও।
ভারত থেকে সেখানে এসেছিলেন আর সালাইনের ভাই ফয়সাল হোসেন। তিনি ভাইকে বুঝে নিয়ে বাড়ি রওনা দেন। আর সোনামসজিদ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন শামসুল হুদা।
ফেরার পথে মোবাইলে শামসুল হুদা জানান, গত বছরের শেষের দিকে দার্জিলিং থেকে কাজের খোঁজে ব্যাঙ্গালোর যান আর সালাইন। সেখানে কিছুদিন শেফ হিসেবে একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করেন। কিছুদিন পর ভালো কাজের আশায় পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় যান তিনি। সেখানে কিছু দিন কাজ করে বন্ধুর পরামর্শে বাংলাদেশে রেস্তোরাঁয় কাজ করার জন্য অবৈধভাবেই এই দেশে প্রবেশ করেন তিনি। তারপর প্রায় ছয় মাস ধরে কাজ করছিলেন ঢাকার একটি রেস্তোরাঁয়।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অস্থির সময় তিনি আতঙ্কিত হয়ে দেশে ফেরার জন্য রাজশাহী সীমান্তের দিকে রওনা হন। সে সময় সীমান্তে কড়াকড়ি থাকায় তিনি নিজেই থানায় আত্মসমর্পণ করেন। পরবর্তীতে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
শামসুল হুদা জানান, মেয়াদি সাজা শেষ হলেও বিভিন্ন আইনি জটিলতায় তার (আর সালাইন) ভারতে ফেরাটা আটকে গিয়েছিল। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে জানতে পারেন, আর সালাইনের ভাই ফয়সাল হোসেন রাজশাহীতে অবস্থান করছেন ভাইয়ের মামলা নিষ্পত্তির জন্য। ফয়সালের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরো বিষয়টি জেনে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যাবাসন বিষয়ক চিঠি ও ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। অবশেষে গত ২১ এপ্রিল ছাড়পত্র পাওয়া যায়। এরপর সব প্রক্রিয়া শেষে আর সালাইনকে তার ভাইয়ের কাছে তুলে দিয়ে এলেন। তিনি এখন খুশিমনে ঢাকায় ফিরে যাচ্ছেন।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আমান উল্লাহ জানান, গত বছরের ২৯ জুলাই আর সালাইন রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় আত্মসমর্পণ করেন। পুলিশ তার নামে একটি মামলা করে পরদিন কারাগারে পাঠায়। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীর আদালত অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
তিনি আরো জানান, বন্দির হাজতবাস বিবেচনায় গত বছরের ১৪ ডিসেম্বরেই তার সাজাভোগের মেয়াদ শেষ হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারতীয় হাইকমিশনের অনুমোদনের পর রবিবার তাকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়। কারা কর্মকর্তা, বিজিবি ও বিএসএফের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পুলিশ ভারতীয় ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে তাকে হস্তান্তর করে।
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গত বছর র র জন য রব ব র ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
উখিয়ায় একে-৪৭সহ তরুণের আত্মসমর্পণ, বিজিবি বলছে আরাকান আর্মির সদস্য
কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে অস্ত্রসহ এক তরুণ আত্মসমর্পণ করেছেন। আজ সোমবার সকাল ৯টার দিকে তিনি বিজিবি সদস্যদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
বিজিবি বলছে, আত্মসমর্পণ করা তরুণ সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্য। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের একটি ক্যাম্প থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর কাছে একটি একে-৪৭ রাইফেল, দুটি ম্যাগাজিন ও ৫২ রাউন্ড গুলি ছিল। আরাকান আর্মির ওই সদস্য নিজেকে জীবন তঞ্চঙ্গ্যা (২১) নামে পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার গর্জবুনিয়া গ্রামে বলে দাবি করছেন তিনি।
বিজিবি উখিয়া ৬৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, আত্মসমর্পণকারী ব্যক্তি নিজেকে বাংলাদেশের নাগরিক দাবি করেছেন। তাঁর পরিচয় ও নাগরিকত্ব যাচাই করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসেছেন। তাঁর দাবি, ওই ক্যাম্প থেকে আরও অন্তত ৩০০ আরাকান আর্মি সদস্য পালিয়েছেন, যাঁদের কেউ কেউ যেকোনো সময় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে পারেন।
বিজিবি জানিয়েছে, অস্ত্র ও গুলিসহ ওই ব্যক্তিকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং উখিয়া থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে রাখাইন রাজ্যে থেমে থেমে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, আরাকান আর্মির সঙ্গে আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) বা আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
বিজিবি কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম খায়রুল আলম বলেন, শূন্যরেখা থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে গোলাগুলি হয়েছে। তবে কোনো গুলি বাংলাদেশের ভেতরে আসেনি।