ফিলিপাইনে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা। মধ্যবর্তী এই নির্বাচন মিত্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী বনে যাওয়া দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র ও ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতার্তের মধ্যে ছায়া লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।

যদিও সোমবারের ভোটের ব্যালটে ফার্দিনান্দ বা সারা—দুজনের কারও নামই নেই, তবে তাঁরা তাঁদের পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে জোরালো প্রচার চালিয়েছেন।

দেশটির ভোটাররা আজ ১ হাজার ৮০০–এর বেশি পদে প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন, যা ১১ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশটিতে ভবিষ্যৎ ক্ষমতার ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

এই ভোটের মধ্য দিয়ে বোঝা যেতে পারে, প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দের নীতিগত কর্মসূচি এবং ২০২৮ সালে উত্তরাধিকার নির্বাচনে তাঁর প্রভাব কতটা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

অন্যদিকে ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতার্তের রাজনৈতিক অস্তিত্ব এই ভোটের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসন বিচার শুরুর আশঙ্কা রয়েছে, যা তাঁর বাবা রদ্রিগো দুতার্তের পথ অনুসরণ করে ভবিষ্যতে দেশটির প্রেসিডেন্ট হওয়ার আশা একেবারেই শেষ করে দিতে পারে।

আজ দেশটির ভোটাররা মেয়র, গভর্নর ও নিম্নকক্ষের আইনপ্রণেতাদের নির্বাচন করবেন। তবে ফার্দিনান্দ ও সারা দুতার্তের মধ্যে লড়াই মূলত সিনেট সদস্য নির্বাচন ঘিরে।

ফিলিপাইনের ২৪ সদস্যের সিনেটের ১২ সদস্য আজ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। সিনেটের ব্যাপক আইনগত ও রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। এ ছাড়া সিনেট জনমত গঠন করতে পারে, প্রেসিডেন্টের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ভেস্তে দিতে পারে।

ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যারিস আরুগাই বলেন, এই নির্বাচন ফার্দিনান্দ প্রশাসনের প্রতি একটি অনানুষ্ঠানিক গণভোটের চেয়ে বেশি কিছু। সিনেটর নির্বাচনই মূল ছায়াযুদ্ধ। ফার্দিনান্দকে তাঁর আইনগত ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি এগিয়ে নিতে হলে সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা কিংবা সম্ভব হলে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে হবে।

আরও পড়ুনফিলিপাইনের ভাইস প্রেসিডেন্টের শপথ নিলেন রদ্রিগোর মেয়ে সারা২০ জুন ২০২২আরও পড়ুনফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে মার্কোস জুনিয়রের শপথ৩০ জুন ২০২২.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ ল প ইন দ শট র

এছাড়াও পড়ুন:

অনলাইন জুয়ায় সর্বস্ব হারিয়ে দুধ দিয়ে গোসল, ভিডিও ভাইরাল

প্রথমে কাপড়চোপড় এবং পরে পুরাতন মোটরসাইকেলের প্রায় ২১ বছরের ব্যবসা কুষ্টিয়ার কুমারখালীর যুবক সাগর হোসেনের। ব্যবসায়ের টাকা দিয়ে তিলেতিলে গড়েছেন পাকা প্রাচীরে ঘেরা টিনশেডের বিলাসবহুল আধাপাকা বাড়ি। চলতেন দামি মোটরসাইকেলে। সবমিলিয়ে প্রায় ৩৬ লাখ টাকার সম্পত্তির মালিক ছিলেন সাগর। 

তবে এসব এখন তার কাছে শুধুই স্মৃতি। একবছরের মাথায় অনলাইন জুয়ায় সর্বস্ব হারিয়ে পথের ফকির। এমন সর্বনাশা জুয়া আর খেলবেন না বলে সবার সামনে দুধ দিয়ে গোসল করেছেন তিনি। 

শুক্রবার (৯ মে) সন্ধ্যায় কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের পান্টি গোলাবাড়ি বাজারে ঘটে এ গোসলের ঘটনা। সাগর হোসেন ওই এলাকার মো. চাঁদ আলীর ছেলে। পরে রাতে সেই গোসলের এক মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও স্যোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় কয়েকজন প্লাস্টিকের মগ ও কোমল পানিয়ের কাটা বোতল দিয়ে সাগরের মাথায় দুধ ঢালছেন। উৎসুক জনতা ভিড় করেছেন। কেউ কেউ মোবাইলে তা ভিডিও ধারণ করছেন। আর সাগর বলছেন, ‘‘ প্রিয় ভাই ও বন্ধুরা। আমার ছিল বিলাসিতার জীবন। পান্টি একটা মোটরসাইকেলের শোরুম ছিল। আমি খুব সখ করে একটা বাড়ি করেছিলাম। এই মোবাইলে খেলা করে আমার শোরুম চলে গেছে, বাড়ি চলে গেছে। আমার এ দৃশ্য দেখে আপনারা শিক্ষা নেন। কেউ জুয়ো খেলবেন না। অসৎ পথে কেউ বড়লোক হতি পারে না।”

ভিডিওতে আরো বলতে শোনা যায়, “দেহ শরীর সব নষ্ট করে ফেলেছি। আত্মহত্যার পথ বাঁচে নিছিলাম। তিনডে মেয়ে সন্তান আছে। সেজন্য আর কোনোদিন এই জুয়ো খেলব না, খেলব না, খেলব না। মোবাইলের জুয়ো আমি কোনোদিন খেলব না।”

রাতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পান্টি গোলাবাড়ি বাজারের পাশেই সাগরের বিক্রি হওয়া আধাপাকা বাড়ি। পাকা প্রাচীরে ঘেরা বাড়িটিতে লোহার কেচি গেট। বাড়ির ভিতরে ও প্রাচীরে জ্বলছে বাহারি রঙের আলো। ভিতরের কক্ষগুলো সাজানো ও পরিপাটি। খাট ও আসবাবপত্র নেই। উৎসুক জনতা বাড়িতেও ভিড় করেছেন।

এসময় আলাপকালে সাগর হোসেন বলেন, “মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। প্রথমে কাপড়চোপড়ের ব্যবসা ছিল। পরে পুরাতন মোটরসাইকেলের শোরুম দিছিলাম। আল্লাহর রহমতে ভালই চলছিল। মাসে প্রায় ৪০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় হতো। প্রায় ২১ বছর ধরে সৎ পথে আয় করে বাড়ি, গাড়ি সব করেছিলাম। কিন্তু মাত্র এক বছরে অনলাইন জুয়া ‘ওয়ান এক্স বেট’ ও ‘গ্লোরি ক্যাসিনো’ খেলে সর্বশান্ত হয়েছি। ২১ লাখ টাকায় বাড়ি এবং ১৫ লাখ টাকার শোরুম বিক্রি করেও দেনা শোধ করতে পারিনি।” 

তিনি আরো বলেন, “ব্যবসা বন্ধ করে ধারদেনা ও সুদে টাকা নিয়ে জুয়া খেলতাম। পরে সবকিছু বিক্রি করে দিয়েও এখনও সাড়ে ৩ লাখ টাকা দেনা। গত বৃহস্পতিবার আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছিলাম। পরে স্থানীয়রা টের পেয়ে দুধ দিয়ে গোসলের আয়োজন করে।”

তিনি বলেন, “পান্টি এলাকার শত শত মানুষ এই জুয়া খেলেন। আর কেউ যেন লোভে পড়ে সর্বশান্ত না হন। মানসম্মান ত্যাগ করে জনসম্মুখে দুধ দিয়ে গোসল করেছি। জুয়ায় একদিনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পেয়েছি। আর খোয়া গেছে প্রায় তিন লাখ টাকা।”

যাওয়ার জায়গা নেই। ক্রেতা মানবিক কারণে এখনও বিক্রিত বাড়িতেই থাকতে দিয়েছেন বলে জানালেন সাগরের স্ত্রী কনা খাতুন। তিনি বলেন, “অনলাইন জুয়ায় আমার বাড়ি, গাড়ি, গহনা, আসবাবপত্র, সম্পদ সব চলে গেছে। আর কেউ কারো সাথে যেন এমন না হয়। সেজন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।”

পান্টি বাজারের রাসেল কম্পিউটার দোকানের প্রোফাইটর রাসেল হোসেন বলেন, “সাগরের আগে মোটরসাইকেলের শোরুম ছিল। দামি গাড়ি ও বাড়ি ছিল। তবে জুয়া খেলে এখন পথের ফকির। আর জুয়া খেলবে না বলে আজ দুধ দিয়ে গোসল করেছেন তিনি।”

প্রতিবেশি রাশিদুল ইসলাম বলেন, “সবকিছু হারিয়ে সাগর আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। কিন্তু আমরা ১০ লিটার দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে তওবা পড়িয়েছি। যেন আর জুয়া না খেলে। আর অন্যরাও যেন সতর্ক হন। সেজন্য জনসম্মুখে গোসল করানো হয়েছে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, “দুধ দিয়ে গোসল করানোর খবর পেয়েছি। তবে সঠিক কারণ জানা যায়নি। অনলাইন জুয়ার বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/কাঞ্চন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানব পাচারকারীদের ‘জিম্মিঘর’ থেকে উদ্ধার ১৪ কিশোর-তরুণ
  • পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় ও অধিকার রক্ষায় কাজ করবে ‘ফ্যামিলি এইড’
  • অনলাইন জুয়ায় সর্বস্ব হারিয়ে দুধ দিয়ে গোসল, ভিডিও ভাইরাল