আন্দ্রে আডেমসকে গুডবাই বলে দেওয়ার আগেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নতুন পেস বোলিং কোচ খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। সাম্ভাব্য তালিকায় ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার শন টেইট ও পাকিস্তানের উমর গুল। আলোচনা শেষে বিসিবি টেইটকেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের জন্য নির্বাচিত করেছে। ২০২৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করবেন ৪২ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান এই কোচ।
সাবেক নিউ জিল্যান্ড পেসার আন্দ্রে অ্যাডামসের কাজের ধরণে সন্তুষ্ট না হওয়ায় চুক্তির আগে তাকে বিদায় করেছে বাংলাদেশ। দুই পক্ষের সমঝোতাতেই আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে এই অধ্যায়। টেইট এর আগে পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট দলের এবং আফগানিস্তানের পেস বোলিং কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল), বিগ ব্যাশ লিগ (বিবিএল), পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল), লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগ (এলপিএল) এবং ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটসহ বিশ্বের বিভিন্ন শীর্ষ-স্তরের লিগ এবং প্রতিযোগিতায় কোচিংয়ে ভূমিকা পালন করেছেন। গত বছর বিপিএলে চিটাগং কিংসের প্রধান কোচ হিসেবে কাজ করেছিলেন। যেই দলের হয়ে ২০১২-১৩ সংস্করণে খেলেছিলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম দ্রুততম বোলার টেইট ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপজয়ী দলের অংশ ছিলেন। অস্ট্রেলিয়াকে সব ফরম্যাট মিলিয়ে ৫৯ ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি।
আরো পড়ুন:
অ্যাডামসকে না করে টেইটকে আনছে বিসিবি
বাংলাদেশের পাকিস্তান সফরের সিদ্ধান্ত ‘এখনই নয়’
বিপিএলে কাজ করার সময় বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব পেতে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন টেইট। সেই আশা পূরণ হওয়ায় উচ্ছ্বসিত তিনি, ‘‘বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাথে জড়িত হওয়ার জন্য এখনই ভালো সময়। আমি মনে করি, নতুন যুগের শুরুর সময়। সম্প্রতি অনেকবার কথা বলা হয়েছে – এখানের ফাস্ট বোলারদের সাথে তরুণ প্রতিভার কথা - যা দুর্দান্ত। এটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, উন্নয়ন করার জায়গা নয় এবং সবাই আশা করে যে প্রতিভাবানরা ফলাফল আনবে। এজন্য আমাদেরকে খুব বেশি মনোযোগী হয়ে কাজ করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যেন আমরা আরো বেশি ম্যাচ জিততে পারি।’’
প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে টেইট, ‘‘ফিল সিমন্সের সাথে কাজ করার সুযোগ পাওয়াটাও সমানভাবে রোমাঞ্চকর এবং আমি সামনের যাত্রার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।”
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কিছু সুপারিশ এখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব
স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ এবং জাতীয় আয়ের ৫ শতাংশ বরাদ্দের যে সুপারিশ করেছে, তা বাংলাদেশের বাস্তবতায় বেশি মনে হলেও অযৌক্তিক নয়। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় আয়ের ৫ শতাংশের বেশি ব্যয় করে থাকে। বাংলাদেশ করে ১ শতাংশের কম। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে যে সামান্য বরাদ্দ হয়, সেটাও পুরোপুরি ব্যয় করা হয় না।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। কেউ এই প্রতিবেদনকে যুগান্তকারী ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন, আবার কেউ বলেছেন, এটা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে গত ১৮ নভেম্বর ১২ সদস্যের স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।
কমিশনের সুপারিশ নিয়ে বিতর্ক ওঠা অস্বাভাবিক নয়। অন্যান্য সংস্কার কমিশন নিয়ে আরও বেশি বিতর্ক হয়েছে। এই তর্ক–বিতর্ক ও আলোচনার মধ্য দিয়েই উত্তম কিছু বেছে নিতে হয়। কমিশন তাদের প্রতিবেদনে সংবিধান সংশোধন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিনা মূল্যে দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
এটা দুর্ভাগ্যজনক যে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও সব নাগরিকের বেঁচে থাকার মৌলিক উপকরণগুলো জোগাতে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে অভিহিত করলেও বাধ্যতামূলক নয়। এটা বাধ্যতামূলক হওয়া প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অগ্রাহ্য করা যাবে না।
স্বাস্থ্যসেবা সবার জন্য সাশ্রয়ী, মানসম্মত ও সহজলভ্য করতে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বয় ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথাও বলেছে কমিশন। একসময় সরকারি স্বাস্থ্যসেবাই প্রধান ছিল। সাম্প্রতিক কালে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার প্রসার ঘটেছে। দুই খাতের মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি।
কমিশন অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ প্রাথমিক পর্যায়ে বিনা মূল্যে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহের যে প্রস্তাব করেছে, সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। তারা জাতীয় ফার্মেসি নেটওয়ার্কের আওতায় ২৪ ঘণ্টা ফার্মেসি চালু করার যে সুপারিশ করেছে, তা বাস্তবায়ন করবে বলে জানিয়েছে সরকার। এতে রোগীদের বিড়ম্বনা ও ওষুধ কেনার খরচ কমবে আশা করা যায়। ক্যানসার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও তালিকাভুক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের শূন্য ভ্যাট করার প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন করলে সীমিত আয়ের মানুষ উপকৃত হবে।
ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করেন, এমন সংগঠনগুলো কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। নাগরিক সংগঠন সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ কমিশনের কিছু প্রস্তাবকে অবাস্তব মনে করে। বিশেষ করে একজন রোগী একটা রোগের জন্য একজন চিকিৎসককে দেখাবেন বলে কমিশন যে সুপারিশ করেছে, সেটি অবাস্তব বলে মনে করেন চিকিৎসাসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সরকার বা কমিশন বলে দিতে পারে না কে কোন রোগের জন্য কোন চিকিৎসককে দেখাবেন।
কমিশন বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ নামে একটি স্বতন্ত্র কাঠামো গঠনের প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়ে থাকেন। একাধিকবার বিশেষ পরীক্ষা নিয়েও চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস হলে সেটা লাগবে না। কিন্তু সমস্যা হলো, প্রতিটি বিশেষায়িত খাতের জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান হলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও ব্যয় বাড়বে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরাও মনে করি, যেসব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলোর বিষয়ে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিক। যেসব সুপারিশ নিয়ে বিতর্ক উঠেছে, সেসব বিষয়ে আরও বিচার–বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।