হজ শব্দের অর্থ ‘ইচ্ছা করা’। ইসলামি পরিভাষায়, হজ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১৩ তারিখে ইহরাম অবস্থায় মিনা, আরাফাত, মুজদালিফায় অবস্থান, কাবাঘর তাওয়াফ, সাঈ, এবং অন্যান্য নির্দিষ্ট কার্যক্রম সম্পন্ন করা। হজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি এবং সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য ফরজ। বাঙালি মুসলমানদের হজযাত্রার ইতিহাস প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই নিবন্ধে হজের ঐতিহাসিক পটভূমি এবং বাঙালির হজযাত্রার বিবর্তন তুলে ধরা হলো।
হজের ঐতিহাসিক পটভূমি
ইবনে কাসিরের আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া অনুযায়ী, জান্নাত থেকে নির্বাসনের পর হজরত আদম (আ.
আদম (আ.)-এর দোয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা কাবাঘর নির্মাণ করেন, যা জান্নাতের বায়তুল মামুরের প্রতিকৃতি। জান্নাত থেকে আদম (আ.) হাজরে আসওয়াদ নামক পাথরটি নিয়ে আসেন, যা কাবাঘরে স্থাপিত হয়। হজরত নুহ (আ.)-এর সময় মহাপ্লাবনে কাবাঘরের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আরও পড়ুনমদিনার হজ কার্যালয় যেন 'বাংলাদেশ'২২ জুন ২০২৪হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও কাবাঘর
বুখারি শরিফের ‘আম্বিয়া কেরামের ইতিহাস’ অনুযায়ী, হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে তাঁর স্ত্রী বিবি হাজেরা (আ.) এবং শিশুপুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে মক্কার জনশূন্য, পানিহীন মরু উপত্যকায় রেখে আসেন। বিবি হাজেরা (আ.) ইব্রাহিম (আ.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, এটি কি আল্লাহর নির্দেশে করা হচ্ছে। ইব্রাহিম (আ.)-এর হ্যাঁ সূচক উত্তরে তিনি বলেন, ‘তাহলে আল্লাহ আমাদের ধ্বংস করবেন না।’ তিনি শিশু ইসমাইল (আ.)-এর কাছে ফিরে যান।
ইব্রাহিম (আ.) দূরে চলে যাওয়ার সময় দোয়া করেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদের কতককে তোমার পবিত্র গৃহের কাছে এক অনুর্বর উপত্যকায় বসবাস করালাম। হে আমাদের প্রতিপালক! যেন ওরা নামাজ কায়েম করে। এখন তুমি কিছু লোকের মন ওদের অনুরাগী করে দাও, আর ফলফলাদি দিয়ে ওদের জীবিকার ব্যবস্থা করো, যাতে ওরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।’ (সুরা ইব্রাহিম, আয়াত: ৩৭)
খাবার ও পানি ফুরিয়ে গেলে তৃষ্ণার্ত বিবি হাজেরা (আ.) পানির সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাতবার ছোটাছুটি করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ ঘটনার স্মরণে হজ ও ওমরাহতে সাঈ করা হয়। সপ্তমবার ফিরে এসে তিনি দেখেন, ইসমাইল (আ.)-এর কাছে মাটি থেকে পানির স্রোত উৎসারিত হচ্ছে। তিনি বালু দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করেন এবং এই স্রোত জমজম কূপে পরিণত হয়।
আল্লাহ ইব্রাহিম (আ.)-কে কাবাঘরের স্থান নির্দেশ করেন, ‘আর স্মরণ করো যখন আমি ইব্রাহিমের জন্য কাবাঘরের জায়গা ঠিক করে দিয়েছিলাম, (তখন) আমি বলেছিলাম আমার সঙ্গে কোনো শরিক দাঁড় করিয়ো না এবং আমার ঘরকে পবিত্র রেখো তাদের জন্য, যারা তাওয়াফ করে ও যারা নামাজে দাঁড়ায়, রুকু করে ও সিজদা করে।’ (সুরা হজ, আয়াত: ২৬)
ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) কাবাঘরের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং দোয়া করেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি আমাদের এই কাজ গ্রহণ করো। তুমি তো সব শোনো আর সব জানো। হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি আমাদের দুজনকে তোমার একান্ত অনুগত করো ও আমাদের বংশধর হতে তোমার অনুগত এক উম্মত তৈরি করো। আমাদেরকে উপাসনার নিয়মপদ্ধতি দেখিয়ে দাও, আর আমাদের প্রতি ক্ষমাপরবশ হও! তুমি তো অত্যন্ত ক্ষমাপরবশ পরম দয়ালু। হে আমার প্রতিপালক! তাদের মধ্য থেকে তাদের কাছে এক রাসুল প্রেরণ করো যে তোমার আয়াত তাদের কাছে আবৃত্তি করবে, তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবে এবং তাদেরকে পবিত্র করবে। তুমি তো পরাক্রমশালী তত্ত্বজ্ঞানী।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১২৭-১২৯)
ইব্রাহিম (আ.) কাবাঘর নির্মাণের সময় মাকামে ইব্রাহিম নামক পাথরের ওপর দাঁড়ান। পরে তিনি স্বপ্নে দেখেন, প্রিয় বস্তু কোরবানি করতে হবে। তিনি ইসমাইল (আ.)-কে নিয়ে মিনায় যান। পথে শয়তান তিনবার প্রতারণার চেষ্টা করে। ইসমাইল (আ.)-এর গলায় ছুরি চালালে আল্লাহ একটি দুম্বা কোরবানি করেন। এই ঘটনাগুলো হজের কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়।
আরও পড়ুনহজ করতে গিয়ে মক্কা মদিনায় হারিয়ে গেলে কী করবেন০৮ মে ২০২৪রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময়ে হজ
৬ হিজরি (৬২৮ সাল): রাসুল (সা.) ওমরাহ পালনের জন্য মদিনা থেকে মক্কায় রওনা হন। কুরাইশদের বাধার মুখে হুদায়বিয়ার সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, তিনি ওই বছর মক্কায় প্রবেশ করেননি। তিনি কোরবানির পশু জবাই করে, ইহরাম খুলে মস্তক মুণ্ডন করেন এবং মদিনায় ফিরে যান।
৭ হিজরি (৬২৯ সাল): রাসুল (সা.) ও সাহাবিরা ওমরাহতুল কাজা সম্পন্ন করেন এবং তিন দিন মক্কায় অবস্থান করেন।
৮ হিজরি (৬৩০ সাল): রাসুল (সা.) মক্কা বিজয় করেন এবং কাবাঘরের ৩৬০টি মূর্তি ধ্বংস করেন। তিনি ওমরাহ পালন করে জিলহজের শেষে মদিনায় ফিরে যান।
৯ হিজরি (৬৩১ সাল): হজ ফরজ করা হয়। রাসুল (সা.) হজরত আবু বকর (রা.)-কে হজ কাফেলার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেন। সুরা তওবা অবতীর্ণ হওয়ার পর হজরত আলী (রা.) মিনায় হাজিদের সামনে এর কয়েকটি আয়াত পাঠ করেন এবং নির্দেশনা ঘোষণা করেন যে অমুসলিমরা কাবাঘরে প্রবেশ করতে পারবে না, বস্ত্রহীন অবস্থায় তাওয়াফ নিষিদ্ধ এবং মক্কা, মদিনা এবং এর আশপাশের নির্দিষ্ট এলাকায় অমুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
১০ হিজরি (৬৩২ সাল): রাসুল (সা.) বিদায় হজ পালন করেন। তিনি হজের নিয়মকানুন, আচার-অনুষ্ঠান, হালাল-হারাম, অবস্থানস্থল, জামরাতে পাথর নিক্ষেপ, তাওয়াফ ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত শিক্ষা দেন। আরাফাতের ময়দানে তিনি বিদায় হজের ভাষণ দেন, যা ইসলামের ইতিহাসে একটি মাইলফলক।
আরও পড়ুনমদিনার হজ কার্যালয় যেন 'বাংলাদেশ'২২ জুন ২০২৪বাঙালির হজযাত্রা: ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
বাঙালি মুসলমানদের হজযাত্রার ইতিহাস প্রাচীনকাল থেকে শুরু হলেও লিখিত তথ্য মধ্যযুগ থেকে পাওয়া যায়। বাংলার মুসলিম শাসনামলে (১৩৪২-১৫৭৬) এবং মোগল আমলে (১৫৭৬-১৮৫৭) হজযাত্রা প্রধানত সমুদ্রপথে হতো। বাঙালি হজযাত্রীরা চট্টগ্রাম বা সাতগাঁও বন্দর থেকে জাহাজে আরবের জেদ্দা বন্দরে যেতেন। এই যাত্রা ছিল দীর্ঘ, ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল। তবু ধর্মীয় ভক্তি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আকাঙ্ক্ষায় বাঙালিরা এই কঠিন পথ অতিক্রম করতেন।
মধ্যযুগে হজযাত্রা
সুলতানি আমল: বাংলার সুলতানরা মক্কা-মদিনার রক্ষণাবেক্ষণে অর্থ সাহায্য পাঠাতেন। কিছু সুলতান, যেমন গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ হজ পালনের জন্য মক্কায় যান। বাঙালি আলেম ও সাধারণ মানুষও সমুদ্রপথে হজে অংশ নিতেন।
মোগল আমল: মোগল সম্রাট আকবর ও জাহাঙ্গীর হজযাত্রীদের জন্য জাহাজ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করতেন। বাংলার নবাবেরাও হজযাত্রীদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। এ সময় চট্টগ্রাম বন্দর হজযাত্রার প্রধান কেন্দ্র ছিল।
ঔপনিবেশিক আমল: ব্রিটিশ শাসনামলে (১৮৫৭-১৯৪৭) হজযাত্রা আরও সংগঠিত হয়। ব্রিটিশরা হজযাত্রীদের জন্য কলকাতা ও চট্টগ্রাম থেকে জাহাজের ব্যবস্থা করত। তবে জাহাজে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, মহামারি এবং সমুদ্রঝড়ের কারণে অনেক হাজি প্রাণ হারাতেন। ১৯ শতকের শেষে বাষ্পীয় জাহাজের প্রচলন হজযাত্রাকে কিছুটা সহজ করে।
আধুনিক যুগ
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান আমলে এবং ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশে হজযাত্রা আধুনিক রূপ পায়। বিমান পরিবহনের প্রচলনের ফলে হজযাত্রা দ্রুত ও নিরাপদ হয়। বাংলাদেশ সরকার হজ ব্যবস্থাপনার জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং হজ এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে হজযাত্রীদের সেবা প্রদান করে। বর্তমানে প্রতিবছর হাজার হাজার বাঙালি হজ ও ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব যান।
বাঙালির হজযাত্রার বৈশিষ্ট্য
ধর্মীয় ভক্তি: বাঙালি মুসলমানরা অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত হজকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পাপমুক্তির মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেন।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ: অতীতে হজের ব্যয়বহুলতা সাধারণ মানুষের জন্য বড় বাধা ছিল। আধুনিক যুগে সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা এই চ্যালেঞ্জ কমিয়েছে।
সাংস্কৃতিক প্রভাব: বাঙালি হাজিরা হজ থেকে ফিরে ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেন। হজের অভিজ্ঞতা তাঁদের জীবনে গভীর আধ্যাত্মিক প্রভাব ফেলে।
বাঙালির হজযাত্রার ইতিহাস হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময় পর্যন্ত ইসলামের ঐতিহাসিক ঘটনাবলির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মধ্যযুগের কঠিন সমুদ্রযাত্রা থেকে আধুনিক বিমানযাত্রা পর্যন্ত বাঙালি মুসলমানরা ধর্মীয় নিষ্ঠা ও ত্যাগের সঙ্গে হজ পালন করে আসছেন। হজ শুধু ধর্মীয় আচার নয়, বরং বাঙালি মুসলমানদের আধ্যাত্মিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আরও পড়ুনহজযাত্রীদের বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে হজ গাইড২৪ মে ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ঙ ল র হজয ত র হজয ত র দ র র হজয ত র র দ র জন য ক ব ঘর র আল ল হ আর ফ ত ওমর হ র সময় ইসল ম অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
অতি মূল্যবান ও পবিত্র হাজরে আসওয়াদ
পবিত্র কাবাঘরের দক্ষিণ–পূর্ব কোণে, মাতাফ থেকে প্রায় চার ফুট উচ্চতায়, রুপার ফ্রেমে বাঁধাই করা কালো রঙের আটটি ছোট পাথরের টুকরা রয়েছে। এগুলো একসময় একটি অখণ্ড পাথরের অংশ ছিল, যা বিভিন্ন ঘটনায় ভেঙে বর্তমানে আটটি খণ্ডে বিভক্ত। এই পাথর হাজরে আসওয়াদ নামে পরিচিত, যা পবিত্র কাবাঘরের একটি অতি পবিত্র ও মূল্যবান উপাদান।
হাজরে আসওয়াদের তাৎপর্য
পবিত্র কাবা শরিফের তাওয়াফ (সাত চক্কর প্রদক্ষিণ) শুরু হয় এই হাজরে আসওয়াদের অবস্থান থেকে। প্রতিটি চক্করের সময় হজযাত্রীরা এই পাথর চুম্বন করেন। ভিড়ের কারণে চুম্বন সম্ভব না হলে ইশারায় চুম্বনের নিয়মও পালন করা যায়। হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) তাওয়াফের সময় হাজরে আসওয়াদ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমি জানি এটি একটি সাধারণ পাথর, যা কারও ক্ষতি বা উপকার করতে পারে না। কিন্তু আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে এটি চুম্বন করতে দেখেছি, তাই আমিও তা করি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৫৯৭)
এ কারণে মুসলিমরা হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করে বা স্পর্শ করে, রাসুল (সা.)–এর সুন্নাহ অনুসরণ করে।
পবিত্র কাবাঘর পুনর্নির্মাণ ও হাজরে আসওয়াদ
রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর নবুয়ত প্রাপ্তির আগে ৬০৫ সালে তাঁর ৩৫ বছর বয়সে, কুরাইশ গোত্র পবিত্র কাবাঘর পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা কাবার মেঝেসহ দেয়াল উঁচু করে ছাদযুক্ত নির্মাণের পরিকল্পনা করে। কিন্তু পবিত্র কাবাঘরের দেয়াল ভাঙার সময় সবাই ভয়ে কাঁপছিল। কারণ, পবিত্র কাবার পবিত্রতা সম্পর্কে আরবদের মধ্যে গভীর শ্রদ্ধা ছিল।
কুরাইশের বিভিন্ন গোত্র পাথর সংগ্রহ করে নির্মাণকাজে অংশ নেয়। কিন্তু হাজরে আসওয়াদকে তার নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপনের সময় গোত্রগুলোর মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়। প্রতিটি গোত্রই পাথরটি নিজেরা স্থাপন করতে চায়, যা তীব্র উত্তেজনা ও সম্ভাব্য রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে এগোয়। চার থেকে পাঁচ দিনের উত্তেজনার পর কুরাইশদের একজন বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা প্রস্তাব দেন, পরদিন সকালে যিনি প্রথম সেখানে আসবেন, তিনিই এই বিরোধের মীমাংসা করবেন।
পরদিন সকালে সবার আগে সেখানে প্রবেশ করেন হজরত মুহাম্মদ (সা.), যিনি তখনো নবুয়ত লাভ করেননি। তিনি ‘আল আমিন’ (বিশ্বস্ত) হিসেবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন। কুরাইশ নেতারা তাঁর কাছে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। তিনি একটি চাদর আনতে বলেন এবং চাদরের মাঝখানে হাজরে আসওয়াদ রেখে সব গোত্রের প্রতিনিধিদের চাদরের কোণ ধরে পাথরটি নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এভাবে তিনি একটি সম্ভাব্য সংঘর্ষ এড়ান এবং হাজরে আসওয়াদ তার স্থানে পুনঃস্থাপিত হয়। তখনো পাথরটি অখণ্ড ছিল।
আরও পড়ুনকাবার মহিমা৩১ জানুয়ারি ২০২৩হাজরে আসওয়াদের ক্ষয়ক্ষতি
পরবর্তী সময়ে হাজরে আসওয়াদ বিভিন্ন ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উমাইয়া খেলাফতের সময় (৬৬১–৭৫০ খ্রি.) উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের সেনাপতি আল–হাজ্জাজের নেতৃত্বে ৬৯২ সালে মক্কা অবরোধ করা হয়। এ সময় ছোড়া পাথরের আঘাতে পবিত্র কাবাঘর ও হাজরে আসওয়াদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পবিত্র কাবায় আগুন লাগে, আর হাজরে আসওয়াদ তিনটি টুকরা হয়ে ভেঙে যায়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.) এই টুকরাগুলো রুপা দিয়ে বাঁধাই করেন।
পরে ৯৩০ সালে কারামাতিয়া সম্প্রদায় হাজরে আসওয়াদ লুট করে এবং পবিত্র কাবার দেয়াল থেকে পাথরটি তোলার সময় হাতুড়ির আঘাতে তা আরও কয়েকটি খণ্ডে বিভক্ত হয়। মক্কার স্বর্ণকারদের সহায়তায় পাথরের টুকরাগুলো মোম, কস্তুরি ও অম্বরের আঠালো মণ্ডে সংরক্ষণ করে রুপার ফ্রেমে বাঁধাই করা হয়। বর্তমানে এই আট টুকরা রুপালি ফ্রেমে আবদ্ধ অবস্থায় পবিত্র কাবাঘরের দক্ষিণ–পূর্ব কোণে স্থাপিত।
আরও পড়ুনহাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করতে হয় ০৭ মে ২০২৪তাওয়াফের নিয়ম
হাজরে আসওয়াদ থেকে মেঝেতে একটি দীর্ঘ দাগ কাটা রয়েছে, যা তাওয়াফের শুরু ও শেষের চিহ্ন। এই দাগ থেকে শুরু করে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে ঘুরে আবার একই স্থানে ফিরে এলে একটি তাওয়াফ সম্পন্ন হয়। এভাবে সাতবার তাওয়াফ করতে হয়। হাজরে আসওয়াদের পবিত্রতা ও তাৎপর্য মুসলিমদের হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তির প্রতীক হিসেবে বিদ্যমান।
আরও পড়ুনহাজরে আসওয়াদ বরাবর থেকে তাওয়াফ শুরু২৭ মে ২০২৩