আমেরিকাকে বাদ দিয়েই ইউরোপকে চলতে হবে
Published: 25th, May 2025 GMT
নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ায় দুনিয়ায় বড় রকমের পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। ১৯৪৫ সালে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জেতার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল (আর যা ১৯৮৯ সালে শীতল যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আরও দৃঢ় হয়েছিল), সেই সম্পর্ক ট্রাম্পের নেওয়া নানা সিদ্ধান্তের কারণে এখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এই বড় পরিবর্তন এমনভাবে শুরু হয়েছে, যার জন্য আগে থেকে কারও কোনো প্রস্তুতিই ছিল না। আর এই পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে ইউরোপ। ইউরোপ আবার যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে—ইউক্রেনে যে যুদ্ধ চলছে, সেটিই তার স্পষ্ট প্রমাণ। অথচ এ পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসন ইউরোপে থাকা মার্কিন সেনাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে। এর মানে হচ্ছে, ইউরোপকে এখন নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে একাই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আমাদের কী হবে? এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের ইউরোপীয়দের নিজেদেরই দিতে হবে; পুরোপুরি নিজেদের দায়িত্বেই দিতে হবে।
ভুল বুঝবেন না, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ থেকে সরে যাচ্ছে। তারা হয়তো পুরোপুরি বিদায়ের সিদ্ধান্ত এখনো নেয়নি, কিন্তু সব ইঙ্গিত সেই দিকেই যাচ্ছে। তাই ইউরোপীয়দের এমনভাবে কাজ করা উচিত, যেন যুক্তরাষ্ট্রের পুরোপুরি সরে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী।
এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র শুধু দূরে সরে যাচ্ছে না, বরং এটি একটি গ্যারান্টার শক্তি হিসেবে এবং বৈশ্বিক মুক্তবাণিজ্য ব্যবস্থার প্রধান বাজার হিসেবে তাদের ভূমিকা থেকেও সরে আসছে।
এখনই তারা বন্ধু ও বাণিজ্য অংশীদারদের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে অর্থনৈতিক আগ্রাসন শুরু করেছে, যা কিনা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ভারসাম্যহীন করে তুলেছে। মুক্তবাণিজ্যের জায়গায় এসেছে সুরক্ষাবাদ (প্রটেকশনিজম) এবং এর ফলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।
বিশ্ব এখন এমন একটি অবস্থার দিকে এগোচ্ছে, যেখানে শুল্কনির্ভর বাণিজ্যিক গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে নতুন ভূরাজনৈতিক জোটগুলোর প্রতিফলন ঘটবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পশ্চিম ইউরোপ আমেরিকার নিরাপত্তাছায়ার নিচে বসবাস করেছে। এই অঞ্চলগুলো এমন মূল্যবোধ শেয়ার করত, যা গণতন্ত্র ও বাজার অর্থনীতিকে সমর্থন করত। শীতল যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এই মূল্যবোধ পুরো ইউরোপজুড়েই গৃহীত হয়েছিল।
কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য প্রত্যাহার ইউরোপীয়দের সামনে একেবারে ভিন্ন বাস্তবতা হাজির করছে। ইউরোপীয়দের সামনে নতুন বাস্তবতা হলো: নিজেদের নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও ভবিষ্যৎ তাদের নিজেদেরই গড়ে তুলতে হবে। এখন আর পুরোনো ছায়ার নিচে বসে থাকলে চলবে না।
আমাদের এমন একটি ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে, যেখানে একদিকে থাকবে সাম্রাজ্যবাদী ও আগ্রাসী রাশিয়া, আর অন্যদিকে থাকবে এমন একটি আমেরিকা—যার ওপর আর ভরসা করা যাবে না। এই বাস্তবতা আমাদের সামনে একটি মৌলিক প্রশ্ন তুলে ধরছে: আমরা কি সত্যিই নিজেদের এমন একটি শক্তিতে রূপান্তরিত করতে প্রস্তুত, যে নিজে টিকে থাকতে ও নেতৃত্ব দিতে পারে?
যদি ইউরোপের জনগণ এই প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ বলে দেয়, তাহলে ইউরোপীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার সব কাঠামোকে (সামরিক, রাজনৈতিক, আর্থিক, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক) সামনে আনতেই হবে। প্রকৃতপক্ষে সার্বভৌম হওয়ার মানে হলো নিজের শক্তি ও রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির ওপর আস্থা রাখা।
এসব চাপ আগামী মাস ও বছরগুলোতে আরও বাড়বে। কিন্তু ইউরোপীয়দের হাতে এখনো সুযোগ আছে। আমরা চাইলে বর্তমান সংকটকে নতুনভাবে গড়ে তোলার এক সুযোগ হিসেবে নিতে পারি। আমাদের চ্যালেঞ্জ শুধু অভ্যন্তরীণ ও বাইরের বাধাগুলো পেরোনো নয়, বরং নিজেদের বৈচিত্র্যময় পরিচয়ও রক্ষা করা।আমরা এখন শুধু একটি ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি না, বরং একই সঙ্গে এক বিশাল প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মুখোমুখি হচ্ছি। ডিজিটাল বিপ্লব ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থান সব অর্থনীতি ও সমাজে গভীর প্রভাব ফেলবে এবং তাদের মধ্যে জটিল সম্পর্কগুলোকেও নতুনভাবে রূপ দেবে।
এই বিশাল পরিবর্তনের মুখে ইউরোপের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় রাষ্ট্রগুলো কেবল তখনই টিকে থাকতে পারবে, যদি তারা একসঙ্গে মিলিত হয়ে একটি অভিন্ন রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি প্রকাশ করতে পারে। প্রত্যেকে আলাদাভাবে (এমনকি সবচেয়ে বড় দেশ জার্মানিও) এ কাজের জন্য খুবই ছোট ভূমিকা রাখতে পারবে।
আমাদের সামনে যেসব বাইরের চাপ আছে, সেগুলোর গুরুত্ব কমিয়ে দেখার সুযোগ নেই। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং পূর্ব ইউরোপের অন্য দেশগুলোকে হুমকি দিচ্ছেন। ট্রাম্প প্রশাসন ইউরোপের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ তো করেইনি, বরং বরাবরই ইউরোপকে অবজ্ঞা করে এসেছে। শুধু তা–ই নয়, এখন তারা এমন কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে, যাতে আমেরিকা নিজেও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবু তারা সে পথেই এগোচ্ছে। এ অবস্থায় ইউরোপসহ আমেরিকার অন্য বাণিজ্য অংশীদারেরাও অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে পড়ছে।
এ পরিস্থিতির মধ্যেই চীন তাদের শক্তি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আধুনিক সামরিক প্রযুক্তির উন্নয়নে খুব দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। ফলে বিশ্বরাজনীতির ভারসাম্য এখন বড় রকমের পরিবর্তনের মুখে।
এসব চাপ আগামী মাস ও বছরগুলোতে আরও বাড়বে। কিন্তু ইউরোপীয়দের হাতে এখনো সুযোগ আছে। আমরা চাইলে বর্তমান সংকটকে নতুনভাবে গড়ে তোলার এক সুযোগ হিসেবে নিতে পারি। আমাদের চ্যালেঞ্জ শুধু অভ্যন্তরীণ ও বাইরের বাধাগুলো পেরোনো নয়, বরং নিজেদের বৈচিত্র্যময় পরিচয়ও রক্ষা করা।
সময়টা ইউরোপের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সুযোগটা যদি এখন হারিয়ে যায়, তাহলে হয়তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। ট্রাম্প আর পুতিন হয়তো এমন নেতা নন, যাঁদের আমরা এ মুহূর্তে নেতৃত্বে দেখতে চাই, কিন্তু বাস্তবতা হলো—এখন তাঁরা বিশ্বরাজনীতিতে প্রভাব রাখছেন। তাই ইউরোপের আর অপেক্ষা করার সময় নেই। আমাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেদেরই তৈরি করতে হবে। আমাদের এমন একটি শক্তিশালী, স্বাধীন ইউরোপ গড়তে হবে, যে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয় না। অন্যথায় আমাদের ভবিষ্যৎ হবে একটা দুর্বল, ভীত, অন্যের দয়ানির্ভর জীবন।
এই লক্ষ্য পূরণে আমাদের প্রথমত, ইউরোপকে মিলিয়ে এমন একটি শক্তিশালী সামরিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে, যেন কেউ সহজে চোখ রাঙাতে না পারে। দ্বিতীয়ত, ডিজিটাল প্রযুক্তি ও নতুন উদ্ভাবনে এগিয়ে থাকতে হবে, যেন আমাদের অর্থনীতি টিকে থাকতে পারে। তৃতীয়ত, একটি অভিন্ন পুঁজিবাজার তৈরি করতে হবে, যাতে অর্থনৈতিকভাবে ইউরোপ আরও সংহত হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—সব দেশ মিলে একটি সাধারণ রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি ও একে বাস্তবায়নের জন্য শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হবে।
● জোশকা ফিশার জার্মানির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এমন একট র জন ত ক দ র স মন দ র এমন ইউর প র ব স তবত ই ইউর প ইউর প য় মন একট আম দ র র জন য আম র ক সবচ য় হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু
সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।
তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।
দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।
স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।
ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।
স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।
সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।
এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’
যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকাঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।
তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।
ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।
ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদাঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।
১০ নারী প্রার্থীঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।
মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধমাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।