পাইলস বা হেমোরয়েড হলে পায়ুপথে বিদ্যমান রক্তনালি ফুলে যায় বা প্রদাহ হয়। অর্শরোগের উপসর্গ এর ধরনের ওপর নির্ভরশীল। সাধারণত অভ্যন্তরীণ অর্শরোগের ক্ষেত্রে মলদ্বারে রক্তপাত হয়, যা বেদনাবিহীন। আর বাহ্যিক অর্শরোগ হলে কয়েকটি উপসর্গ দেখা দিতে পারে, থ্রমবোজড হলে তা মলদ্বার অঞ্চলে ব্যথা ও স্ফীতির কারণ হতে পারে। অনেকে পায়ুপথের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলেই তা ‘হেমোরয়েডস’ ভেবে ভুল করেন, আসলে সব সমস্যাই পাইলস নয়।

উপসর্গ

অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক হেমোরয়েডস আলাদাভাবে দেখা দিতে পারে; আবার অনেকের দুটিই থাকতে পারে। থ্রমবোজড বা রক্তনালিতে গঠিত হলে হেমোরয়েডস অত্যন্ত বেদনাদায়ক হতে পারে। হেমোরয়েডস বড় আকারের ও অস্বাস্থ্যকর হলে চারদিকের ত্বকে অস্বস্তি ও চুলকানি হতে পারে। অভ্যন্তরীণ হেমোরয়েডস হলে সচরাচর বেদনাহীন থাকে, উজ্জ্বল লাল রঙের রক্তপাত বা রেকটাল ব্লিডিং হতে পারে। মল রক্ত দ্বারা আবৃত থাকতে পারে, যে অবস্থাকে  হেমাটোকেজিয়া বলে। এ ক্ষেত্রে টয়লেট পেপারে রক্ত দেখা যেতে পারে বা টয়লেটেও রক্তের ফোঁটা ঝরতে পারে। মলের রং সচরাচর স্বাভাবিক হয়। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে শ্লৈষ্মিক স্রাব, মলদ্বারের চারদিকের অংশ পায়ুপথে বেরিয়ে আসা, চুলকানি ও ফিকাল ইনকনটিনেন্স (পায়ুপথে গ্যাস বা মল নির্গমনের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণহীনতা)। 

আরও পড়ুনকাঁচা পেঁপের আশ্চর্য গুণ১২ এপ্রিল ২০১৭

কারণ

হেমোরয়েডসের পেছনে যেসব কারণ দায়ী বলে ধারণা করা হয়, তার মধ্যে রয়েছে: ১.

দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা ২. পুরোনো ডায়রিয়া ৩. মলত্যাগের সময় দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে থাকা ও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা ৪. আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া, ভারী মালপত্র বহন করা, স্থূলতা, কায়িক শ্রম কম করা, ৫. অন্ত্রের সমস্যা (কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া), ব্যায়াম ও পুষ্টি উপাদানে ঘাটতি (স্বল্প আঁশসমৃদ্ধ খাবার), পেটের ভেতরে চাপ বৃদ্ধি (দীর্ঘায়িত চাপ),  ৬. গর্ভাবস্থা ৭. জন্মগত, হেমোরয়েড শিরায় কপাটিকার অনুপস্থিতি ও বার্ধক্য। গর্ভাবস্থায় তলপেটের ওপর ভ্রূণের চাপ ও হরমোনের পরিবর্তনের ফলে হেমোরয়েড রক্তনালি বর্ধিত হয়। প্রসবের কারণেও পেটের ভেতরে চাপ বৃদ্ধি পায়। তবে প্রসবের পর সচরাচর উপসর্গ আর থাকে না।

রোগনির্ণয়

শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে পায়ু ও এর আশপাশের এলাকা ভালোভাবে পরীক্ষা করে বাহ্যিক বা স্থানচ্যুত হেমোরয়েড নির্ণয় করা যেতে পারে। মলদ্বারের টিউমার, পলিপ, বর্ধিত প্রস্টেট বা ফোড়া শনাক্ত করতে মলদ্বার পরীক্ষা করতে হবে।  

আরও পড়ুনপায়ুপথের রোগ মানেই পাইলস নয়০২ সেপ্টেম্বর ২০২১

প্রতিরোধ

মলত্যাগের সময় জোরে চাপ না দেওয়া, আঁশযুক্ত খাদ্য ও প্রচুর তরল বা আঁশের সম্পূরক খাবার গ্রহণের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া এড়িয়ে চলা এবং পর্যাপ্ত ব্যায়াম করা। মলত্যাগকালে অল্প সময় ব্যয়, টয়লেটে বসে পড়া বন্ধ করা এবং অতিরিক্ত ওজন থাকলে ওজন কমানো, ভারী বস্তু উত্তোলন পরিহার করা উচিত। 

চিকিৎসা কী

● এক্সিশনাল হেমোরয়েডেক্টমি/ওপেন হেমোরয়েডেক্টমি।  

● ট্রান্সানাল হেমোরয়েডাল দিয়ার্তেরিয়ালাইজেশন। 

● স্টেপলড হেমোরয়েডেক্টমি, স্টেপলড হেমোরয়েডোপেক্সি—এগুলো ব্যবহৃত পদ্ধতি। 

রতন লাল সাহা, কনসালট্যান্ট, জেনারেল এবং ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ, আলোক হাসপাতাল, মিরপুর ৬

আরও পড়ুনপাইলস চিকিৎসায় কখন সার্জারি০১ জুন ২০২২

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপসর গ প ইলস

এছাড়াও পড়ুন:

আপনি কি পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করছেন

একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য ঠিক কতটা প্রোটিন প্রয়োজন, তা তাঁর ওজনের ওপর নির্ভর করে। ধরা যাক, একজনের ওজন ৫০ কেজি। তাহলে তাঁর জন্য প্রতিদিন ৫০ গ্রাম প্রোটিন দরকার। সহজে, সাধারণভাবে হিসাব করা যায় এভাবে—আপনার ওজন যত কেজি, প্রতিদিন তত গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে বলছিলেন ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মতলেবুর রহমান

কোন খাবারে পাবেন প্রোটিন

যাঁর ৫০ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন, তিনি ৫০ গ্রাম মাংস খেলেই যে তাঁর দেহের চাহিদা মিটে যাবে না, সে তো বুঝতেই পারছেন। কারণ, কোনো খাবারই কেবল একটি পুষ্টি উপাদান দিয়ে তৈরি নয়। প্রতিটি খাবার থেকেই নানা পুষ্টি উপাদান পাই আমরা। আবার সব প্রাণীর মাংস থেকে যে একই পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায়, তেমনটাও নয়। তেমনিভাবে বিভিন্ন ধরনের মাছ, ডিম ও দুধের প্রোটিনের পরিমাণও আলাদা হয়। এসবের বাইরেও উদ্ভিজ্জ উৎস, যেমন ডাল, সয়া, তোফু, বাদাম ও অন্যান্য বীজ থেকে প্রোটিন পাওয়া যায়।

প্রাণিজ প্রোটিন সবচেয়ে বেশি জরুরি বাড়ন্ত বয়সে এবং অন্তঃসত্ত্বা নারী ও স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে অধিকাংশ প্রোটিন গ্রহণ করলে ক্ষতি নেই। তবে কোন খাবার থেকে ঠিক কতটা প্রোটিন পাবেন, তা কড়ায়–গন্ডায় হিসাব করা সবার জন্য জরুরি নয়; বরং সুষম খাদ্যভ্যাস গড়ে তোলার প্রতি জোর দেওয়া প্রয়োজন। তবে নির্দিষ্ট রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অবশ্য এই হিসাব-নিকাশটাই জরুরি হয়ে দাঁড়ায়, সেই হিসাব করে তৈরি করা খাদ্যতালিকাই তাঁদের মেনে চলতে হয়।

আরও পড়ুনকোন প্রোটিন খাব, কতটা খাব১১ জুলাই ২০১৭পর্যাপ্ত প্রোটিন না পেলে

প্রোটিন আমাদের দেহের রোজকার ক্ষয়পূরণ করে। শক্তিও জোগায়। সার্বিক সুস্থতার জন্যই প্রোটিন আবশ্যক। পর্যাপ্ত প্রোটিন না পেলে দেহে কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন—

প্রায়ই জীবাণু সংক্রমণ হওয়া, সহজে ক্ষত নিরাময় না হওয়া।

অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বল অনুভব করা, পর্যাপ্ত খাবার খাওয়ার পরও ক্ষুধা অনুভব করা।

চুল ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া, চুলের গঠন পাতলা হয়ে যাওয়া, চুল পড়ে যাওয়া।

নখ ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া, নখের ওপর খাঁজ সৃষ্টি হওয়া।

পায়ে পানি আসা।

পেশিক্ষয়, ওজন কমে যাওয়া।

আরও পড়ুনকম খরচে পুরো পরিবারের প্রোটিন বা আমিষের চাহিদা মেটাবেন যেভাবে০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫যা করবেন

এ ধরনের উপসর্গ অনেক কারণেই দেখা দিতে পারে। পায়ে পানি আসা, পেশিক্ষয় বা ওজন কমে যাওয়ার মতো সমস্যার ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে প্রথমে সুষম খাদ্যাভ্যাসের প্রতি গুরুত্ব দিন। প্রোটিন ও প্রয়োজনীয় অন্য সব উপাদান গ্রহণ করতে চেষ্টা করুন খাবার থেকে। তাতে উপকার না মিললে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক কারণটি খুঁজে বের করবেন এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দেবেন।

আরও পড়ুনডিমের চেয়ে বেশি প্রোটিন মিলবে চেনা–পরিচিত যে ১৩ খাবারে১২ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আপনার থাইরয়েডকে জানুন, সুস্থ থাকুন 
  • ব্লাড ক্যানসার মানেই মৃত্যু নয়
  • ওভারিয়ান ক্যানসার: নীরব ঘাতক রোগ 
  • অতিরিক্ত রাত জাগছেন
  • পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীদের ডিম্বাশয় ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি
  • আপনি কি পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করছেন