কারাগারে বই পড়ে সময় কাটছে সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলকের। আইনবিষয়ক বই তিনি পড়তে চেয়েছেন। তাঁর আইনজীবীদের কাছে পাঁচটি বই চেয়েছেন।

আজ সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের কাঠগড়ায় নিজের আইনজীবীদের এসব কথা জানান পলক। তিনি আজ আদালতে নেওয়ার সময় গণমাধ্যমকর্মীদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি।

কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সরকারঘোষিত নিষিদ্ধ বই ছাড়া যেকোনো ধরনের বই কারাবন্দীরা কারাগারে নিয়ে আসতে পারেন। তবে সরবরাহের আগে কারা কর্তৃপক্ষ সেসব বই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। সবকিছু যাচাইয়ের পর বইগুলো সংশ্লিষ্ট কারাবন্দীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।

প্রায় ৯ মাস কারাগারে রয়েছেন পলক। যখনই তিনি আদালতে এসেছেন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে আজ ছিল ব্যতিক্রম। আজ তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি।

আইনের বই কেন চেয়েছেন পলক

সকাল সাড়ে ১০টার পর পলককে আদালতের এজলাসে তোলা হয়। তাঁর সামনে দুজন আইনজীবী দাঁড়িয়েছিলেন। একজন তরিকুল ইসলাম, অন্যজন ফারজানা ইয়াসমিন। পলক ফারজানা ইয়াসমিনকে ডেকে বলেন, ‘আমাকে কারাগারে কয়েকটি বই পৌঁছে দেবে।’ তখন ফারজানা পলককে বলেন, ‘কী কী বই আপনাকে দিতে হবে।’

পলক ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি), দেওয়ানি কার্যবিধি (সিপিসি), দণ্ডবিধি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে উন্নয়নের দর্শন এবং জাতীয় সংসদে জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক—এই পাঁচ বই চান।

পলকের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক এখন আইনের বই পড়ছেন। তিনি পেশায় আইনজীবী। সংসদ সদস্য হওয়ার আগে তিনি উচ্চ আদালত এবং জজ কোর্টে প্র্যাকটিস করতেন। সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকেই তাঁর আইনচর্চা কমে যায়। কারাগারে যাওয়ার পর তিনি আবার আইনের বই পড়া শুরু করেছেন।’

২৬ ভিআইপি কারাবন্দী একই কারাগারে

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গত বছরের ১৪ আগস্ট গ্রেপ্তার হন পলক। এরপর থেকে তিনি কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দী রয়েছেন। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের জেল সুপারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেবল হাই সিকিউরিটি কারাগারে পলকের মতো ২৬ জন ভিআইপি কারাবন্দী রয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই প্রথম শ্রেণির কারাবন্দীর মর্যাদা ভোগ করছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, শাজাহান খান, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, আমির হোসেন আমু, হাজী সেলিম।

কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক (সিনিয়র জেল সুপার) আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কারাগারে জুনাইদ আহ্‌মেদ পলকসহ ২৬ জন ভিআইপি কারাবন্দী রয়েছেন। জেল কোড অনুযায়ী, একজন প্রথম শ্রেণির কারাবন্দী একটি বিশেষ কক্ষে থাকার সুযোগ পান। সেখানে একটি খাট আছে, একটি টেবিল ও চেয়ার আছে। আরও আছে টিভি এবং একটি জাতীয় পত্রিকা।’

কারা তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, ‘একজন প্রথম শ্রেণির কারাবন্দীর খাবারের মেনুতে থাকে মাছ কিংবা মাংস। আবার কেউ চাইলে কারাগারের ক্যানটিন থেকেও খাবার কিনে খেতে পারেন। খাবারের সুবিধার পাশাপাশি আমাদের কারাগারে একটি লাইব্রেরিও আছে। আমাদের লাইব্রেরিতে দুই হাজারের বেশি বই আছে।’

কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক জানান, কারাবিধি অনুযায়ী, সূর্যোদয়ের পর কারাবন্দীদের সেলগুলো খুলে দেওয়া হয়। তখন বন্দীরা যে যাঁর কাজে যুক্ত হন। ভিআইপি বন্দীদের সেলও সূর্যোদয়ের পর খোলা হয়। তখন ভিআইপি বন্দীরাও নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলার সুযোগ পান।

আনিসুল বললেন, ‘মুরাদ কেমন আছেন?’

প্রায় ৯ মাস আগে গ্রেপ্তার হওয়া আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানকে দুই হাত পেছনে নিয়ে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে তোলা হয়। যখন তাঁদের আদালতে তোলা হয়, তখন দুজনই মাথা নিচু করে ছিলেন। একাধিক গণমাধ্যমকর্মী আনিসুল হকের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলেননি।

আনিসুল ও সালমান কাঠগড়ায় তাঁদের নিজ নিজ আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কতগুলো ও কী কী মামলা হয়েছে, সেসব তথ্য তাঁরা জানতে চেয়েছিলেন। সালমান এফ রহমান তাঁর চশমাটি পরিবর্তন করে দেওয়ার কথা বলেন।

শুনানির একপর্যায়ে আনিসুল হক কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদকে দেখে কাছে ডাকেন। তিনি কেমন আছেন, জানতে চান। মুরাদ জানান, তিনি ভালো আছেন।

পলকও মুরাদের সঙ্গে একান্তে কিছুক্ষণ কথা বলেন। প্রায় ৩০ মিনিট শুনানি শেষ হওয়ার পর তাঁদের কাঠগড়া থেকে আবার হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

আজ সালমান এফ রহমানসহ চারজনকে আরও নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া নিউমার্কেট থানায় করা ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

আরও পড়ুননতুন মামলায় গ্রেপ্তার আনিসুল-সালমান-পলক, ৫ দিনের রিমান্ডে শাহে আলম২ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণম ধ যমকর ম ক র বন দ র র ক র বন দ ন প রথম ম দ পলক ছ ন পলক আইনজ ব ন র বই র আইন ভ আইপ

এছাড়াও পড়ুন:

আমি পাওয়ারকে সিজদা করি: সুব্রত বাইন

আদালতে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি পাওয়ারকে সিজদা করি (উপরের দিকে আঙুল ইশারা করে)। আমার যদি টাকা থাকতো আমি নিজেই পত্রিকা খুলতাম। আপনারা হলুদ সাংবাদিক হইয়েন না। যেটা সত্য, তদন্ত করে আপনারা সেটাই লেখেন। সত্য কথা লিখবেন। ১৯৮৯ সাল থেকে আমার বিরুদ্ধে লিখতেছে। আমার নাম বিক্রি করে যারা চাঁদাবাজি করেন, তাদের আপনারা ধরতে পারেন না? নিজে বাঁচার জন্য আমি কাছে অস্ত্র রাখি। কেউ যদি বলে রাখি না, তাহলে সেটা মিথ্যা হবে।’ 

আজ বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারক আসার আগে কাটগাড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর হাতিরঝিল থানার অস্ত্র আইনের একটি মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ওরফে মো. ফাতেহ আলীকে (৬১)রিমান্ড আবেদনের জন্য  আদালতে হাজির করা হয়। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালত তার আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়া অন্য তিনজনের ছয় দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।  

এ দিন আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক রিয়াদ আহমেদ। রিমান্ড চাওয়া অন্য আসামিরা হলেন- আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ (৫৩), এম এ এস শরিফ (২৫) ও মো. আরাফাত ইবনে মাসুদ (৪৩)। 

পরে আসামি সুব্রত বাইনের আইনজীবী বলেন, মিডিয়া তাকে সৃষ্টি করেছে। শত্রুদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এ লিস্ট তৈরি করা হয়। এরপর ২০২৫ পর্যন্ত আর কোনো লিস্ট কিন্তু তৈরি হয়নি। তিনি তিনবার গ্রেপ্তার হন মিডিয়ার কারণে। তিনিও আয়নাঘরে ছিলেন। গ্রেপ্তার চারজনের কাছ থেকে একটা মোবাইল ফোনও জব্দ হয়নি।

আইনজীবী আরও বলেন, কারাগারে তাকে যেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। 

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ২০০১ সালে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আসামি সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী মোল্লা মাসুদসহ ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করে এবং তাদেরকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। তারা সন্ত্রাসী বাহিনী সেভেন স্টার গ্রুপ পরিচালনা করত। সুব্রত বাইন তৎকালীন খুন-ডাকাতি সংঘটনের মধ্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করেন। আসামিরা বিভিন্ন মামলায় সাজা ভোগ করা অবস্থায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করেন। 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে গতকাল মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালে সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ গ্রেপ্তার হন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, আসামি এস এম শরীফের হাতিরঝিলের একটি বাড়িতে তারা নিয়মিত মিটিং করেন এবং সেখানে তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র, গুলি, অপরাধ সংগঠনের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি রয়েছে। পরে হাতিরঝিল থানাধীন নতুন রাস্তা এলাকা থেকে একইদিন বিকেলে এম এ এস শরীফ ও আরাফাত ইবনে নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার আসামিরা সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের সক্রিয় সদস্য। প্রাথমিক তদন্তে আসামিদের এ মামলায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তার আসামিদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের আরও অনেক সহযোগীকে গ্রেপ্তার এবং আরও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে। তারা জামিনে মুক্তি পেলে চিরতরে পালাতে পারেন। তাই মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিদের ১০ দশ দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সভাপতি-সম্পাদক পদে জামায়াত সমর্থকরা জয়ী
  • ছাত্র জোটের সমাবেশে হামলা ভিন্নমত ও চিন্তা দমনের ফ্যাসিবাদী আক্রমণ
  • মগবাজারে আলোচিত ছিনতাই: চারজন রিমান্ডে 
  • গাজীপুর আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ৫ পদে জামায়াতের বিজয়
  • এ টি এম আজহারের মামলায় ‘স্বার্থের সংঘাত’ নিয়ে দেওয়া কিছু বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়
  • রায়ের কপি পেলে আইন দেখে সিদ্ধান্ত
  • রংপুরে কৃষক সলিম হত্যা মামলায় ৮ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
  • সংবাদপত্রে ঈদুল আজহার ছুটি ৫ দিন
  • সারজিসের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন
  • আমি পাওয়ারকে সিজদা করি: সুব্রত বাইন