ঢাকার আদালতের হাজতখানার বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। তাঁর মাথার পেছনের অংশে কিছুটা কেটে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার বাথরুমে কামরুল ইসলাম পড়ে যান বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) তারেক জুবায়ের প্রথম আলোকে বলেন, অসাবধানতাবশত কামরুল ইসলাম বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথার পেছনে সামান্য আঘাত পেয়েছেন। আদালতের অনুমতি নিয়ে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ঘটনার পর কামরুল ইসলামের মাথার পেছনের অংশে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে বলে হাজতখানার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, একটি অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাতে কামরুল ইসলামকে দ্রুত আবার কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পরে কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারের চিকিৎসকেরা তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন বলে সেখানকার জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক (সিনিয়র জেল সুপার) সুরাইয়া আক্তার জানিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বয়সের কারণে কামরুল ইসলামের শারীরিক জটিলতা আছে। ডায়াবেটিসও রয়েছে। তিনি ঢাকার আদালতের হাজতখানার বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথার পেছনে সামান্য আঘাত পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর মাথা ফাটেনি। কারাগারের চিকিৎসকেরা তাঁর শরীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। তিনি এখন সুস্থ আছেন।’

কামরুল ইসলামের পড়ে যাওয়া নিয়ে যা বলল পুলিশ

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির একটি মামলার শুনানির জন্য দিন ছিল আজ। এ জন্য তাঁকে প্রিজন ভ্যানে করে সকাল নয়টার দিকে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় আনা হয়।

এ সময় হাজতখানায় দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, কামরুল ইসলামকে যখন আনা হয়, সে সময় হাজতখানার ওই কক্ষে বেশ কয়েকজন সাধারণ কয়েদি ছিলেন। বসার জন্য তাঁকে একটি কাঠের চেয়ার দেওয়া হয়। তিনি সেখানে বসেন। পরে অন্য কয়েদিদের একে একে হাজতখানার ওই কক্ষ থেকে আদালতের এজলাসে নিয়ে যাওয়া হয়। সব কয়েদিকে নিয়ে যাওয়ার পর ওই কক্ষেই একা ছিলেন কামরুল ইসলাম। তিনি চেয়ারে বসা ছিলেন।

সকাল সাড়ে ১০টার পর কামরুল ইসলাম চেয়ারে বসে ঘুমাতে থাকেন। ১০ থেকে ২০ মিনিট তিনি চেয়ারে বসে ঘুমান। এরপর বেলা ১১টার দিকে তিনি ওই কক্ষের এক পাশে থাকা বাথরুমে যান। তখন সেখানে আর কেউ ছিলেন না। হঠাৎ করেই তিনি সেখানে পড়ে যান। একটা চিৎকার দেন। সঙ্গে সঙ্গে হাজতখানার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা নিচে পড়ে থাকা কামরুল ইসলামকে টেনে তোলেন। তিনি নিজেই মাথার পেছনে হাত দেন। মাথার পেছন থেকে রক্ত ঝরছিল। তাঁর পরনের শার্টে রক্ত লাগে।

ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যখনই জানতে পেরেছি কামরুল ইসলাম বাথরুমে পড়ে গেছেন, সঙ্গে সঙ্গে আমরা গিয়ে তাঁকে টেনে তুলেছি। তাঁর মাথা ফাটেনি। মাথার পেছনের কিছু অংশ কেটে গিয়েছিল। সেখান থেকেই ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝরে।’

কামরুল ইসলামকে বাথরুম থেকে টেনে তোলা একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পড়ে থাকা অবস্থায় কামরুল ইসলাম আমাকে বলেন, দেখো তো আমার কোথায় কেটে গেছে? আমি তখন বলি, স্যার, মাথার পেছনে কেটে গেছে। তখন কামরুল ইসলাম বলেন, ক্যামনে যে আমি পড়ে গেলাম!’

হাজতখানার দায়িত্বশীল পাঁচজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কামরুল ইসলামের মাথা কেটে যাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি ঢাকার মহানগর দায়রা জজকে জানানো হয়। উপকমিশনার (ডিসি) তারেক জুবায়ের ঘটনাস্থলে আসেন। কামরুল ইসলাম তাঁর চিকিৎসক ছেলেকে ডেকে আনতে বলেন। পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে তাঁর ছেলেও আদালতে চলে আসেন। এরপর কামরুল ইসলামের মাথার পেছনের যে অংশে কেটে গেছে, সেখানে ব্যান্ডেজ লাগানো হয়।

ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মাঈন উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, চিকিৎসকেরা কামরুল ইসলামের রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের অবস্থা পরীক্ষা করে দেখেছেন। তাঁর রক্তচাপ সামান্য বেশি ছিল। আর রক্তে সুগারের পরিমাণ ১০–এর নিচে ছিল।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ৮ নভেম্বর কামরুল ইসলাম গ্রেপ্তার হন। এর পর থেকে তাঁকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকবার কামরুল ইসলামকে কারাগার থেকে ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়। তিনি লাঠি ভর দিয়ে হাঁটেন। তাঁর আইনজীবীরা ঢাকার আদালতকে একাধিকবার জানিয়েছেন, কামরুল ইসলাম শারীরিকভাবে অসুস্থ।

কামরুল ইসলামের আইনজীবী আসমা ইসলাম আজ প্রথম আলোকে বলেন, কামরুল ইসলামের পাকস্থলীতে ক্যানসার ধরা পড়েছে। গত বছরের নভেম্বর থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আজ হঠাৎ করেই তিনি আদালতের বাথরুমে পড়ে গেলেন। মাথা থেকে ঝরে পড়া রক্তে তাঁর শার্টও ভিজে গিয়েছিল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল শ কর মকর ত কর মকর ত র প রথম আল ক চ ক ৎসক

এছাড়াও পড়ুন:

মুক্তি পেয়ে শাহবাগে সমাবেশে যোগ দিলেন আজহারুল ইসলাম

মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস পেয়ে কারামুক্ত হয়ে শাহবাগে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম।

বুধবার (২৮ মে) সকাল সোয়া ৯টার দিকে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজহারুল ইসলাম মুক্তি পেয়ে তাকে বরণে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ সময় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ শীর্ষ নেতারা তাকে বরণ করে নেন। 

মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির বেঞ্চ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস দেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে। 

আরো পড়ুন:

জামায়াতে ইসলামী ভয়ংকর জুলুমের শিকার হয়েছিল: সংবাদ সম্মেলনে আমির

আসিফ নজরুলের পোস্ট
‘নির্দোষ প্রমাণ হওয়ায় খালাস পেয়েছেন আজহারুল ইসলাম’

রায়ের অনুলিপি মঙ্গলবার রাতেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। 

এর আগে গত ২২ এপ্রিল আজহারুলের করা আপিল পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ৬ মে দিন ধার্য করা হয়। ধার্য তারিখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। ৬ মে আপিলকারীর পক্ষে আইনজীবী শুনানি করেন। শুনানি নিয়ে সেদিন আপিল বিভাগ ৮ মে দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় সেদিন শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগে রায়ের জন্য ২৭ মে দিন রাখেন।

আদালতে আপিলকারীর পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মো. রায়হান উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক ও প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম শুনানিতে অংশ নেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আজহারুলকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন তিনি।

এই আপিলের ওপর শুনানি শেষে আজহারুলের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ রায় দেন। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। 

পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তা পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করেন আজহারুল। এই পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি লিভ মঞ্জুর করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে পাশাপাশি দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সংক্ষিপ্তসার জমা দিতে বলা হয়। পরে আপিলের সংক্ষিপ্তসার জমা দেওয়া হয়। এই আপিলের ওপর শুনানি শেষে গতকাল তাকে খালস দেন আপিল বিভাগ।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকার সিএমএম আদালতে অসুস্থ আসামিদের জন্য হাজতখানায় হুইলচেয়ার প্রদান
  • সারজিসের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন
  • আমি পাওয়ারকে সিজদা করি: সুব্রত বাইন
  • ইশরাকের মেয়র পদ নিয়ে আপিল বিভাগে শুনানি বৃহস্পতিবার
  • আনিস-সালমান রিমান্ডে, নতুন মামলায় গ্রেপ্তার ৯
  • মুক্তি পেয়ে শাহবাগে সমাবেশে যোগ দিলেন আজহারুল ইসলাম
  • আহত জুলাই যোদ্ধাদের খোঁজ নিতে হাসপাতালে ডিএমপি কমিশনারের প্রতিনিধিদল
  • শুরু হচ্ছে মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা
  • এনবিআর চেয়ারম্যানকে ২৯ মের মধ্যে অপসারণে আলটিমেটাম