ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত বাণিজ্য শুল্কে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেই সব দেশের অনেক পর্যটক এখন যুক্তরাষ্ট্রকে বিদেশ সফরের তালিকায় রাখছেন না—এমন তথ্য উঠে এসেছে অনলাইন ভ্রমণ বুকিং প্ল্যাটফর্ম ট্রিভাগোর পরিসংখ্যানে।

ট্রিভাগোর তথ্যানুসারে, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরাও ক্রমশ দেশের ভেতরে ছুটি কাটাতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক অস্থিরতা এর মূল কারণ। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

বিশেষ করে জাপান, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রমুখী বুকিংয়ে বড় ধরনের পতন দেখা গেছে—এই হার দুই অঙ্কের ঘরে। ১ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, তার প্রথম শিকার ছিল এই কানাডা ও মেক্সিকো।

বিশেষ করে ট্রাম্পের বক্তব্যে কানাডীয় পর্যটকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। তিনি বারবার বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হিসেবে কানাডাকে যুক্ত করা উচিত।’

ট্রিভাগোর তথ্যানুসারে, জার্মান পর্যটকদের মধ্যেও মার্কিন সফরের আগ্রহ ব্যাপকভাবে কমে গেছে, যদিও সেখানে বুকিং কমে যাওয়ার হার এক অঙ্কের মধ্যে রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি জার্মানি। এ দেশের পণ্যেও ট্রাম্প একাধিকবার বাড়তি শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। শেষমেশ তিনি ঘোষণা দেন, ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ‘সাময়িকভাবে স্থগিত’ রাখা হয়েছে।

যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামী ভ্রমণকারীদের মধ্যে অবশ্য উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য তুলনামূলকভাবে ট্রাম্পের শুল্কনীতির বাইরেই থেকেছে এবং সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিও করেছে তারা।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন বা ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলারের পর্যটনশিল্পে দিন দিন উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। তাদের শঙ্কা, শুল্কযুদ্ধের জেরে বৈশ্বিক অর্থনীতি যেভাবে অস্থির হয়ে উঠেছে, তার প্রভাব পড়ছে পর্যটন খাতেও।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম অফিসের প্রাথমিক তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে।

এদিকে ট্রিভাগোর তথ্যে আরও দেখা যায়, মার্কিন পর্যটকেরাও এখন ব্যয় সাশ্রয়ী হচ্ছেন। সস্তা হোটেল ও কম তারকাবিশিষ্ট হোটেলে থাকার কথা ভাবছেন তাঁরা।

ট্রাম্প ১৮০টির বেশি দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন। অনেক ক্ষেত্রেই এই শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। এ সময় দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার সুযোগ তৈরি করতে এই বিরতি। যুক্তরাজ্যে অভ্যন্তরীণ পর্যটনের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের চাহিদা আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে।

ট্রিভাগোর প্রধান নির্বাহী ইয়োহানেস টমাস বলেন, ‘অনিশ্চিত সময়ে মানুষ ঘরের কাছাকাছি থাকতে চায়।’ তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রিটিশ পর্যটকদের শীর্ষ গন্তব্য এখন লন্ডন। এরপর রয়েছে এডিনবার্গ (যেখানে চাহিদা বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ) এবং তারপর ইয়র্ক, ব্ল্যাকপুল ও ম্যানচেস্টার।

করোনা মহামারির সময় মুখ থুবড়ে পড়েছিল বিশ্বের পর্যটন ও ভ্রমণ খাত। ২০২০ সালের মার্চ থেকেই বিশ্বের প্রায় সব দেশে মানুষের অবাধ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়; শুনসান হয়ে যায় পর্যটনকেন্দ্রগুলো। সেই বাস্তবতা অবশ্য এখন আর নেই।

২০২১ সাল থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে পর্যটন ও ভ্রমণ খাত। ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সের তথ্যানুযায়ী, খাতটি আবার প্রাক্-মহামারি পর্যায়ে ফেরত যাচ্ছে। বিশ্বের দেশে দেশে পর্যটক আগমন ২০২৪ সালে প্রাক্-মহামারি পর্যায়ে ফেরত গেছে। ২০২৩ সালে যা ছিল ২০১৯ সালের ৮৮ শতাংশ। ২০২৩ সালে বৈশ্বিক জিডিপিতে পর্যটন ও ভ্রমণ খাতের অবদান ছিল ৯ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন বা ৯ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প ভ রমণ

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বাণিজ্যযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মানুষেরা

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত বাণিজ্য শুল্কে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেই সব দেশের অনেক পর্যটক এখন যুক্তরাষ্ট্রকে বিদেশ সফরের তালিকায় রাখছেন না—এমন তথ্য উঠে এসেছে অনলাইন ভ্রমণ বুকিং প্ল্যাটফর্ম ট্রিভাগোর পরিসংখ্যানে।

ট্রিভাগোর তথ্যানুসারে, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরাও ক্রমশ দেশের ভেতরে ছুটি কাটাতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক অস্থিরতা এর মূল কারণ। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

বিশেষ করে জাপান, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রমুখী বুকিংয়ে বড় ধরনের পতন দেখা গেছে—এই হার দুই অঙ্কের ঘরে। ১ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, তার প্রথম শিকার ছিল এই কানাডা ও মেক্সিকো।

বিশেষ করে ট্রাম্পের বক্তব্যে কানাডীয় পর্যটকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। তিনি বারবার বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হিসেবে কানাডাকে যুক্ত করা উচিত।’

ট্রিভাগোর তথ্যানুসারে, জার্মান পর্যটকদের মধ্যেও মার্কিন সফরের আগ্রহ ব্যাপকভাবে কমে গেছে, যদিও সেখানে বুকিং কমে যাওয়ার হার এক অঙ্কের মধ্যে রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি জার্মানি। এ দেশের পণ্যেও ট্রাম্প একাধিকবার বাড়তি শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। শেষমেশ তিনি ঘোষণা দেন, ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ‘সাময়িকভাবে স্থগিত’ রাখা হয়েছে।

যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামী ভ্রমণকারীদের মধ্যে অবশ্য উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য তুলনামূলকভাবে ট্রাম্পের শুল্কনীতির বাইরেই থেকেছে এবং সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিও করেছে তারা।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন বা ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলারের পর্যটনশিল্পে দিন দিন উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। তাদের শঙ্কা, শুল্কযুদ্ধের জেরে বৈশ্বিক অর্থনীতি যেভাবে অস্থির হয়ে উঠেছে, তার প্রভাব পড়ছে পর্যটন খাতেও।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম অফিসের প্রাথমিক তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে।

এদিকে ট্রিভাগোর তথ্যে আরও দেখা যায়, মার্কিন পর্যটকেরাও এখন ব্যয় সাশ্রয়ী হচ্ছেন। সস্তা হোটেল ও কম তারকাবিশিষ্ট হোটেলে থাকার কথা ভাবছেন তাঁরা।

ট্রাম্প ১৮০টির বেশি দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন। অনেক ক্ষেত্রেই এই শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। এ সময় দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার সুযোগ তৈরি করতে এই বিরতি। যুক্তরাজ্যে অভ্যন্তরীণ পর্যটনের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের চাহিদা আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে।

ট্রিভাগোর প্রধান নির্বাহী ইয়োহানেস টমাস বলেন, ‘অনিশ্চিত সময়ে মানুষ ঘরের কাছাকাছি থাকতে চায়।’ তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রিটিশ পর্যটকদের শীর্ষ গন্তব্য এখন লন্ডন। এরপর রয়েছে এডিনবার্গ (যেখানে চাহিদা বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ) এবং তারপর ইয়র্ক, ব্ল্যাকপুল ও ম্যানচেস্টার।

করোনা মহামারির সময় মুখ থুবড়ে পড়েছিল বিশ্বের পর্যটন ও ভ্রমণ খাত। ২০২০ সালের মার্চ থেকেই বিশ্বের প্রায় সব দেশে মানুষের অবাধ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়; শুনসান হয়ে যায় পর্যটনকেন্দ্রগুলো। সেই বাস্তবতা অবশ্য এখন আর নেই।

২০২১ সাল থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে পর্যটন ও ভ্রমণ খাত। ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সের তথ্যানুযায়ী, খাতটি আবার প্রাক্-মহামারি পর্যায়ে ফেরত যাচ্ছে। বিশ্বের দেশে দেশে পর্যটক আগমন ২০২৪ সালে প্রাক্-মহামারি পর্যায়ে ফেরত গেছে। ২০২৩ সালে যা ছিল ২০১৯ সালের ৮৮ শতাংশ। ২০২৩ সালে বৈশ্বিক জিডিপিতে পর্যটন ও ভ্রমণ খাতের অবদান ছিল ৯ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন বা ৯ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পর্যটকদের কাছে পছন্দের সেরা ১০ দেশ
  • সেই পেহেলগামে মন্ত্রিসভার বৈঠক করলেন ওমর আবদুল্লাহ