অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রায় ১০ মাস অতিক্রান্ত হইলেও, দুর্ভাগ্যবশত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হইতেছে না। বিশেষত গত কয়েক দিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ডাকাতি, ছিনতাই, খুনসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের যেই সকল সংবাদ সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হইয়াছে, সেইগুলি উদ্বেগ বৃদ্ধি বৈ হ্রাস করিতেছে না। গত ১০ দিবসেই ঘটিয়াছে অনেক অঘটন। রাজধানীর মগবাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে চাপাতি লইয়া ছিনতাইকারীরা এক তরুণের ব্যাগ ছিনাইয়া লইবার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়াইয়া পড়িয়াছে। রাত্রিবেলায় রাজধানীর কলেজগেট এলাকায় যাত্রীবেশে উঠিয়া চালককে হাতুড়িপেটা করিয়া অটোরিকশা ছিনতাইর ঘটনা ঘটিয়াছে। বাড্ডায় দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হইয়াছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা। পল্লবীতে মেট্রোস্টেশনের নিম্নে ফুটপাতে ধারাল অস্ত্রের মুখে এক ব্যক্তির মোবাইল ফোন ছিনতাই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়াইয়াছে। সোমবার রাত্রে মোংলা সমুদ্রবন্দরের পশুর চ্যানেলে অবস্থানরত একটা বাণিজ্যিক জাহাজে ইঞ্জিনের যন্ত্রপাতি, কম্পিউটারসহ অন্তত ৫০ লক্ষ টাকার মালপত্র ডাকাতেরা লুট করিয়াছে। এই আশঙ্কা অমূলক হইতে পারে না– অপরাধের অনেক ঘটনা সংবাদমাধ্যম পর্যন্ত আসিতে পারে নাই। অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র বর্ণনা অপেক্ষা অধিকতর উদ্বেগজনক।

যাহা পরিহাসের বিষয়, মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি সৃষ্টিকারী উক্ত ঘটনাবলি এমন সময়ে ঘটিতেছে, যখন আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ, র‍্যাবসহ বিভিন্ন নিয়মিত বাহিনী, তৎসহিত সেনাসদস্যরাও সর্বত্র দায়িত্ব পালন করিতেছেন। এমনকি অপরাধীদের বিরুদ্ধে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণের স্বার্থে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করা হইয়াছে। শুধু উহাই নহে, মাত্র কয়েক সপ্তাহ পূর্বে দেশব্যাপী সেনাসদস্যসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চলিয়াছে। সেই সকল অভিযানে আটক হইয়া কয়েক সহস্র ব্যক্তি কারাগারে জীবন অতিবাহিত করিতেছেন। সম্প্রতি পুলিশের সূত্র উল্লেখ করিয়া সংবাদমাধ্যমেই প্রতিবেদন প্রকাশিত হইয়াছে, মাত্র এক মাসেই প্রায় ৫০ সহস্র ব্যক্তিকে বিভিন্ন অপরাধে সংশ্লিষ্ট থাকিবার অভিযোগে আইনি বেষ্টনীতে আনা হইয়াছে। ইতোপূর্বে প্রকাশ্য দিবালোকে বাসে উঠিয়া যাত্রীদের মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ, টাকা কাড়িয়া লইবার ঘটনা আমরা দেখিয়াছি। এমনকি চলমান বাসে অস্ত্র প্রতর্শন করিয়া নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনাও ঘটিয়াছে। 

পুলিশের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করিয়া গত ফেব্রুয়ারিতে সমকাল জানাইয়াছিল, জানুয়ারিতে সমগ্র দেশে যত হত্যাকাণ্ড, চুরি, ডাকাতি, অপহরণ এবং নারী ও শিশু নিপীড়নের ঘটনা ঘটিয়াছিল, তাহা গত বৎসর একই সময় অপেক্ষা অধিক। বিগত মাসগুলিতে এই অবস্থার উন্নতি ঘটিয়াছে– এমন দাবি করা যায় না। সমকালেই উক্ত সময়ে এমন বহু প্রতিবেদন প্রকাশিত হইয়াছে, যথায় চট্টগ্রামের রাউজানসহ দেশের বেশ কিছু এলাকায় একাধিক খুনের ঘটনা ঘটিবার ভয়ংকর তথ্য ছিল। দুঃখজনক হইলেও সত্য, সাম্প্রতিক মাসগুলিতে সামাজিক মাধ্যমে ‘ভাইরাল’ হইলেই কেবল কোনো ঘটনা লইয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হইতেছে। ফলস্বরূপ, কারাগার হইতে ছাড়া পাইয়া যখন অনেক অপরাধী পুনরায় বৃহৎ অপরাধে সংশ্লিষ্ট হইতেছে তখন প্রতিরোধ দূর স্থান; প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাও পরিলক্ষিত হয় না। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানকালে বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ি হইতে লুণ্ঠিত অস্ত্রের বহুলাংশ এখনও বেহাত। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পশ্চাতে সেই সকল অস্ত্রেরও ভূমিকা থাকিতে পারে।
আমরা মনে করি, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান যদ্রূপ সামগ্রিক হইতে হইবে, তদ্রূপ প্রকৃত অপরাধীদের দিকেই সকল মনোযোগ নিবদ্ধ করিতে হইবে। বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে কার্যকর সমন্বয় রাখিয়া অভিযান পরিচালনার বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত হইয় ছ প রক শ ছ নত ই অপর ধ র ঘটন ই সকল

এছাড়াও পড়ুন:

‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি

‎নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল  সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।

সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে  একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য। 

সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের  গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি,  সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।

‎‎মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর)  শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

‎দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।

‎‎জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।

‎‎এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।

‎‎তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।

‎‎এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
  • নুরুল হকের ওপর হামলার ঘটনায় জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
  • ১৭ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ, নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই হাজার সদস্য
  • ফরিদপুরে অবরোধ শনিবার পর্যন্ত স্থগিত
  • আসন্ন নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের