সম্প্রতি চট্টগ্রামের হালিশহরে এক কলেজছাত্রকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। কিশোর গ্যাংয়ের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্য দিয়ে শহরটিতে কিশোর গ্যাংয়ের ভয়াবহ কর্মকাণ্ডের বিষয়টি আবারও সামনে এল। কিন্তু হতাশাজনক ব্যাপার হচ্ছে, কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য রোধে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যা ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা কোনোভাবেই সুফল দিচ্ছে না।

স্থানীয়ভাবে এটি প্রতিষ্ঠিত যে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের ছত্রচ্ছায়ায় বেড়ে ওঠে এসব কিশোর গ্যাং। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে দলটি ও এর অঙ্গসংগঠনের এলাকাভিত্তিক নেতাদের প্রশ্রয়ে গড়ে উঠেছিল অনেক কিশোর গ্যাং। এখন দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলেও কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা থেমে নেই। বরং নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় অন্য রাজনৈতিক বলয়ে যুক্ত হচ্ছে তারা এখন।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, শহরে ২০০টির বেশি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। তাদের পেছনে থাকে একজন বা একাধিক ‘বড় ভাই’। গত ছয় বছরে অন্তত ৫৪৮টি অপরাধের সঙ্গে তারা সরাসরি যুক্ত। এই সংকটের মূলত তিনটি স্তর রয়েছে। প্রথমত, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার অব্যবস্থা। পুলিশ জরিপে দেখা গেছে, স্কুলে অনুপস্থিত ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থী অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এসব কিশোর অনেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিত এবং মূল্যবোধহীন পরিবেশে বেড়ে উঠছে। শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার পর তাদের জন্য কোনো বিকল্প গঠনমূলক কাঠামো নেই। তৃতীয়ত, প্রযুক্তি ও অনলাইনের বিরূপ প্রভাব। সাইবার অপরাধ, জুয়া ও সহিংস গেম তাদের বাস্তব জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

এসব গ্যাংয়ের সদস্যদের বড় অংশই অপেক্ষাকৃত অসচ্ছল ও দরিদ্র পরিবার থেকে আসা। কেউ দোকানে বা কারখানায় কাজ করে। মা–বাবা বেঁচে থাকলেও পরিবারের অভিভাবকত্ব থেকে বিচ্যুত এসব কিশোর বা অল্প বয়সী তরুণ। ফলে এলাকার কথিত ‘বড় ভাই’ তাদের অভিভাবক হয়ে ওঠেন। সেসব বড় ভাইয়ের মাধ্যমে তারা অপরাধজগতে প্রবেশ করে।

পৃথিবীর অনেক দেশে কিশোর গ্যাং রোধে সামাজিক সেবা, কাউন্সেলিং, স্কুলভিত্তিক সহায়তা ও পুনর্বাসনের জন্য সুসংগঠিত ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদেরও এমন পদক্ষেপের দিকে এগোতে হবে। কিশোর গ্যাংকে যারা আশ্রয়–প্রশ্রয় দেয়, তাদেরকে কোনোভাবে ছাড় দেওয়া যাবে না। চট্টগ্রাম পুলিশ প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। শুধু আইনি ব্যবস্থাই নয়, সামাজিকভাবে সচেতনতা তৈরির দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সামাজিক প্রতিষ্ঠান—সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে এখানে সামাজিক সুরক্ষাবলয় তৈরি করতে হবে। আমরা চাই না, আর কোনো কিশোর হত্যাকাণ্ডের শিকার হোক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক ব যবস থ অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

পবিত্র ঈদুল আজহায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে ডিএমপির সমন্বয় সভা

আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা ঘিরে রাজধানীতে নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। সোমবার সকালে ডিএমপি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এক সমন্বয় সভায় এসব উদ্যোগের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।

সভায় ডিএমপি কমিশনার বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরের মতো এবারও নগরবাসীকে নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ ঈদযাত্রা উপহার দিতে হবে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে চালকদের গতি নিয়ন্ত্রণ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ঈদ আনন্দ যেন কারও জন্য শোকের কারণ না হয়, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. সরওয়ার জানান, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢাকার মোটরযান মেরামতকেন্দ্রগুলোতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথাও জানান তিনি।

অপরাধ প্রতিরোধ নিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি ও ছিনতাইকারীদের দমনে ডিএমপির টহল জোরদার করা হবে। বড় অঙ্কের টাকা বহনের ক্ষেত্রে পুলিশের সহায়তা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সভায় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিবহন খাতের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিতে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আলোচনায় সুব্রত বাইনের স্যাটেলাইট ফোন
  • ভারতীয় নাগরিকের মরদেহ হস্তান্তর
  • অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কতদিন লাগিবে?
  • আর কেউ যাতে গুম না হন, রাষ্ট্রকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে: তারেক রহমান
  • সীমান্তে পুশ ইনের সংখ্যা বেড়েছে, আমরা প্রতিবাদ করেছি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • মাদকের ‘অভয়ারণ্য’ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, দিনে বিক্রি হতো ৪০ কেজি গাঁজা
  • সচিবালয়ে নিরাপত্তা জোরদার, বিজিবি মোতায়েন
  • কার্যকর পদক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই
  • পবিত্র ঈদুল আজহায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে ডিএমপির সমন্বয় সভা