জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম খালাস পাওয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবির এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। সরকারপক্ষ রায়টিকে ‘ন্যায়বিচারের বিজয়’ বলে আখ্যায়িত করেছে। বিশিষ্টজন বলছেন, এটি বিচার বিভাগের ভাবমূর্তির জন্য অশনিসংকেত। কারণ একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুই সময়ের দুই ধরনের রায় হয়েছে– একবার মৃত্যুদণ্ড, আরেকবার খালাস। এমন রায় যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া ও বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তুলেছে।

রায়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। গতকাল জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ এক বিবৃতিতে গণতন্ত্রের স্বার্থে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রশ্নে একাত্তরে গণহত্যাকারী ও তাদের সহযোগীদের বিচার এবং চব্বিশের গণহত্যাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান করার দাবি জানিয়েছে। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা ভুলিয়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে যেসব অপশক্তি তৎপর, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানায় বাম গণতান্ত্রিক জোট। 

ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল) রায় প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন বামপন্থি কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী। মধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করেন তারা।

সমাবেশে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর আমরা আকাঙ্ক্ষা করেছিলাম, স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু দেখলাম, স্বাধীন বিচার বিভাগের আকাঙ্ক্ষায় শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।’ বক্তব্য দিয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা প্রমুখ।

রাবিতে বাম নেতাদের মশাল মিছিলে ছাত্রশিবিরের হামলা

রাবি প্রতিনিধি জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মশাল মিছিলে ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্যের ব্যানারে’ ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট ও প্যারিস রোডে দুই দফা এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের চার নেতা ও একজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।  ছাত্রশিবিরেরও কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন সংগঠনের সেক্রেটারি মোজাহিদ ফয়সাল।

বিশিষ্টজনের প্রতিক্রয়া
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা.

সারওয়ার আলী বলেন, জামায়াতসহ তার সহযোগীদের ভূমিকা সম্পর্কে একাত্তরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ড. ইউনূস (প্রধান উপদেষ্টা) অবগত। কারণ তিনি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে সেখানে প্রচার চালিয়েছেন। চব্বিশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নানা ধারার মানুষ সরকার পতনের লক্ষ্যে একত্রিত হয়েছিল। তাদের অধিকাংশ ব্যক্তি, দল ও গোষ্ঠী এ ভূমিকাকে সুনজরে দেখে না। 

সারওয়ার আলী বলেন, ‘আমার আশঙ্কা, মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন জামায়াতে ইসলামী এবং তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের হত্যা, ধ্বংস ও ধর্ষণ বিষয়ে যে ঐতিহাসিক সত্য রয়েছে, এ রায়ের ফলে তা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে।’ 

মেজর জেনারেল (অব.) জামিল ডি আহসান বীরপ্রতীক বলেন, ‘তারা তো ধর্মের কথা বলে। সেভাবে বললে, আজহারুলের আমলনামা রয়ে গেছে। আদালতে খালাস পেলেও তাঁর আমলনামার ভিত্তিতে আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ জেলবাস দিয়েছেন। আরও যা আমলনামায় আছে, তা অবশ্যই তিনি সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে পাবেন।’
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, একই ব্যক্তির ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের দুই ধরনের রায় জনমনে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। এটি বিচার বিভাগের জন্য অশনিসংকেত। কারণ এখন মানুষ রায় কী হতে পারে, তা আগেই বুঝতে পারেন।

মনজিল মোরসেদ বলেন, এ রায় বর্তমান প্রজন্মের অনেকে হয়তো মেনে নিতে পারে; কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, দেখেছেন বা যারা গবেষক, তারা কখনও মেনে নিতে পারবেন না। 

গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বীরপ্রতীক বলেন, আগে যারা বিচার করেছিলেন, তারাও বিচারক ছিলেন। এখন যারা রায় দিলেন, তারাও বিচারক। একই বিষয়ে দুই ধরনের সিদ্ধান্ত মানে, সিদ্ধান্তটি  তৃতীয় পক্ষের। 

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে ফেসবুক পোস্টে লেখেন, এই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টির কৃতিত্ব জুলাই গণআন্দোলনের অকুতোভয় নেতৃত্বের। ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত’ হওয়ার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, সেটি রক্ষা করার দায় এখন সবার।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ইসল ম স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

আজহারের রায় নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, মিছিলে হামলা

জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম খালাস পাওয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবির এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। সরকারপক্ষ রায়টিকে ‘ন্যায়বিচারের বিজয়’ বলে আখ্যায়িত করেছে। বিশিষ্টজন বলছেন, এটি বিচার বিভাগের ভাবমূর্তির জন্য অশনিসংকেত। কারণ একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুই সময়ের দুই ধরনের রায় হয়েছে– একবার মৃত্যুদণ্ড, আরেকবার খালাস। এমন রায় যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া ও বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তুলেছে।

রায়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। গতকাল জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ এক বিবৃতিতে গণতন্ত্রের স্বার্থে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রশ্নে একাত্তরে গণহত্যাকারী ও তাদের সহযোগীদের বিচার এবং চব্বিশের গণহত্যাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান করার দাবি জানিয়েছে। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা ভুলিয়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে যেসব অপশক্তি তৎপর, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানায় বাম গণতান্ত্রিক জোট। 

ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল) রায় প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন বামপন্থি কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী। মধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করেন তারা।

সমাবেশে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর আমরা আকাঙ্ক্ষা করেছিলাম, স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু দেখলাম, স্বাধীন বিচার বিভাগের আকাঙ্ক্ষায় শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।’ বক্তব্য দিয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা প্রমুখ।

রাবিতে বাম নেতাদের মশাল মিছিলে ছাত্রশিবিরের হামলা

রাবি প্রতিনিধি জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মশাল মিছিলে ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্যের ব্যানারে’ ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট ও প্যারিস রোডে দুই দফা এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের চার নেতা ও একজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।  ছাত্রশিবিরেরও কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন সংগঠনের সেক্রেটারি মোজাহিদ ফয়সাল।

বিশিষ্টজনের প্রতিক্রয়া
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী বলেন, জামায়াতসহ তার সহযোগীদের ভূমিকা সম্পর্কে একাত্তরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ড. ইউনূস (প্রধান উপদেষ্টা) অবগত। কারণ তিনি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে সেখানে প্রচার চালিয়েছেন। চব্বিশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নানা ধারার মানুষ সরকার পতনের লক্ষ্যে একত্রিত হয়েছিল। তাদের অধিকাংশ ব্যক্তি, দল ও গোষ্ঠী এ ভূমিকাকে সুনজরে দেখে না। 

সারওয়ার আলী বলেন, ‘আমার আশঙ্কা, মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন জামায়াতে ইসলামী এবং তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের হত্যা, ধ্বংস ও ধর্ষণ বিষয়ে যে ঐতিহাসিক সত্য রয়েছে, এ রায়ের ফলে তা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে।’ 

মেজর জেনারেল (অব.) জামিল ডি আহসান বীরপ্রতীক বলেন, ‘তারা তো ধর্মের কথা বলে। সেভাবে বললে, আজহারুলের আমলনামা রয়ে গেছে। আদালতে খালাস পেলেও তাঁর আমলনামার ভিত্তিতে আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ জেলবাস দিয়েছেন। আরও যা আমলনামায় আছে, তা অবশ্যই তিনি সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে পাবেন।’
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, একই ব্যক্তির ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের দুই ধরনের রায় জনমনে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। এটি বিচার বিভাগের জন্য অশনিসংকেত। কারণ এখন মানুষ রায় কী হতে পারে, তা আগেই বুঝতে পারেন।

মনজিল মোরসেদ বলেন, এ রায় বর্তমান প্রজন্মের অনেকে হয়তো মেনে নিতে পারে; কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, দেখেছেন বা যারা গবেষক, তারা কখনও মেনে নিতে পারবেন না। 

গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বীরপ্রতীক বলেন, আগে যারা বিচার করেছিলেন, তারাও বিচারক ছিলেন। এখন যারা রায় দিলেন, তারাও বিচারক। একই বিষয়ে দুই ধরনের সিদ্ধান্ত মানে, সিদ্ধান্তটি  তৃতীয় পক্ষের। 

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে ফেসবুক পোস্টে লেখেন, এই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টির কৃতিত্ব জুলাই গণআন্দোলনের অকুতোভয় নেতৃত্বের। ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত’ হওয়ার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, সেটি রক্ষা করার দায় এখন সবার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ