একজোট ইউরোপ কি নেতানিয়াহুকে থামাতে পারবে
Published: 28th, May 2025 GMT
গাজার জনগণের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। সেই নীতির বিরুদ্ধে এখন সারা বিশ্ব এক হয়ে সমালোচনা করছে। এমনকি ট্রাম্প প্রশাসনেরও কিছু মাত্রায় তাতে সায় দিচ্ছে।
নেতানিয়াহু ও তাঁর সরকারের গাজায় চালানো নৃশংসতা, এবং পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণে অব্যাহত আগ্রাসন—এগুলো এখন আর পশ্চিমাদের ভূরাজনৈতিক কৌশলের অংশ নয়। সম্প্রতি পশ্চিমা বিশ্বে যেসব পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে, তাতে এই বিষয়টা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার ওপর সাময়িক স্থগিতাদেশ ঘোষণা করেছেন। এর পাশাপাশি তিনি পশ্চিম তীরে সহিংসতায় জড়িত কিছু বসতি স্থাপনকারী ও সংগঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছেন।
যুক্তরাজ্যের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ইসরায়েলের অংশীদারিত্ব চুক্তি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান। এই আহ্বান ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহু সদস্যরাষ্ট্র সমর্থন করে। তারা প্রকাশ্যে ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা জানায়।
এই প্রক্রিয়ার পরিণতিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পথও তৈরি হতে পারে। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী তো আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে ইসরায়েলকে সরাসরি ‘গণহত্যাকারী রাষ্ট্র’ বলে অভিহিত করেছেন।
অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে সফরে গিয়েছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ একদল কূটনীতিক। ইসরায়েলি বাহিনী তাদের প্রতি ‘সতর্কীকরণ গুলি’ ছোড়ে। এই প্রতিনিধিদলটি সেখানে গিয়েছিল পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের ধ্বংসযজ্ঞ সরেজমিনে দেখতে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পরে বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে জানায় যে কূটনৈতিক বহরটি অনুমোদিত পথ থেকে সরে গিয়েছিল। কিন্তু এই ঘটনার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডা—দুই পক্ষই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানায়। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও পরবর্তীতে তাঁর নির্ধারিত ইসরায়েল সফর স্থগিত করেন।
সব মিলিয়ে এই ঘটনাগুলো ইঙ্গিত করে যে, ইসরায়েলের গণহত্যামূলক নীতির প্রতি পশ্চিমা জগতের দৃঢ় সমর্থনে এখন পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে।
কূটনৈতিক চাপে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুরোধে ইসরায়েল সামান্য কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক গাজার দিকে ঢুকতে দিয়েছে। তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা ও জরুরি ত্রাণবিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল এই সরবরাহকে ‘সমুদ্রে একফোঁটা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
পশ্চিমা বিশ্বে সমর্থনের স্রোত ঘুরে যাওয়ার লক্ষণ এখন স্পষ্ট। তবু ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তাঁর আগের রাজনীতি ও যুদ্ধাপরাধ থেকে একচুলও সরে আসেননি।
ওয়াশিংটন ডিসিতে গত ২১ মে ক্যাপিটল জিউইশ মিউজিয়ামের বাইরে গুলিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মী নিহত হন। এই ঘটনাটি চলমান পরিস্থিতিতে নতুন মোড় এনে দেয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের সঙ্গে সংহতি জানাতে বাধ্য হন। এই হামলার পরপরই নেতানিয়াহু ও তাঁর সরকার ইউরোপের সমালোচনাকেই এ ধরনের ‘অ্যান্টি-সেমেটিক’ অপরাধের উসকানিদাতা হিসেবে দায়ী করে।
নেতানিয়াহু সরাসরি ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং কানাডাকে অভিযুক্ত করে বলেন, তারা সন্ত্রাসীদের সাহস জুগিয়ে চলেছে। তাঁর ভাষায়, ‘তারা চায় ইসরায়েল মাথা নিচু করে মেনে নিক যে হামাসের গণহত্যাকারী বাহিনী টিকে থাকবে, পুনর্গঠিত হবে এবং ৭ অক্টোবরের হত্যাযজ্ঞ আবার ঘটাবে।’
এই ধরনের বক্তব্যে অবাক হওয়ার কিছু নেই। নেতানিয়াহু বারবার ইহুদি জনগণের দুর্দশা এবং ‘ইহুদি-বিরোধী’ সংক্রান্ত ব্যাখ্যাকে বিকৃতভাবে ব্যবহার করে চলেছেন। উদ্দেশ্য একটাই—একটি কর্তৃত্ববাদী ও বর্ণবাদী রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে নিজের দুর্বল অবস্থানকে জোরদার করা।
তাহলে প্রশ্ন হলো—কী তাকে টিকিয়ে রেখেছে, এবং কী তাকে থামাতে পারে?
প্রথমত, ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনও পর্যন্ত নেতানিয়াহুকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারেনি। কারণ বিরোধীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তারা নেতানিয়াহুর জোট সরকারের ওপর তেমন কোনো বাস্তব চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২-এর সাম্প্রতিক এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৬১ শতাংশ ইসরায়েলি নাগরিক যুদ্ধ বন্ধ করে জিম্মিদের মুক্তি দেখতে চান। বিপরীতে, মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষ চান যুদ্ধ আরও বাড়িয়ে গাজা দখল করা হোক।
এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেত। তিনি ডানপন্থী মতাদর্শ ও যুদ্ধ নিয়ে সাধারণ জনগণের হতাশার মাঝে ভারসাম্য বজায় রেখে নতুন নেতৃত্বের সম্ভাবনা তৈরি করতে চাইছেন।
অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটস পার্টির প্রধান ইয়াইর গোলান সরাসরি ইসরায়েলের বর্ণবাদী ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এমন চলতে থাকলে ইসরায়েল এক সময়ের দক্ষিণ আফ্রিকার মতো একঘরে হয়ে পড়বে।’
ইসরায়েলের এক রাজনীতিকের মুখে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে তুলনা আসাটা ঐতিহাসিক ও নৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আজকের ইসরায়েলকে বহু গবেষক ও বিশ্বজুড়ে অধিকারকর্মীরা দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক বর্ণবাদী শাসনব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করছেন। ১৯৯৪ সালে সেই ব্যবস্থা অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং গণআন্দোলনের সম্মিলিত চাপে ভেঙে পড়েছিল।
এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার আগেই দক্ষিণ আফ্রিকায় এই বর্ণবাদ দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে চলেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শীতল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে গিয়ে তৎকালীন ট্রুম্যান প্রশাসন দক্ষিণ আফ্রিকাকে সমর্থন দিয়েছিল। এই সমর্থন চলেছিল পরবর্তী বহু মার্কিন সরকারের আমলেও।
১৯৬০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সাদা পুলিশের গুলিতে ৬৯ জন কৃষ্ণাঙ্গ বিক্ষোভকারী নিহত হন। তখন একটি বড় পরিবর্তন আসে। এই শার্পভিল হত্যাকাণ্ডের পরই জাতিসংঘ দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ডাক দেয়। তখন নিরাপত্তা পরিষদের যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও যুক্তরাস্ট্রের মতো প্রভাবশালী দেশগুলো অনুধাবন করতে থাকে যে আফ্রিকা মহাদেশে উপনিবেশবাদবিরোধী সংগ্রামের বাস্তবতা উপেক্ষা করা যাবে না।
তবে এই আন্তর্জাতিক অবস্থান বদলের পেছনে সবচেয়ে বড় চালিকা শক্তি ছিল বিশেষ করে ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে গড়ে ওঠা তৃণমূল আন্দোলন। এসব আন্দোলনের চাপেই পশ্চিমা সরকারগুলো অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বাধ্য হয়।
১৯৮৬ সালে মার্কিন কংগ্রেস পাশ করে ‘কমপ্রিহেনসিভ অ্যান্টি-আপারথেইড অ্যাক্ট’। এর ফলে বহু আন্তর্জাতিক কর্পোরেশন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়। দেশটির অর্থনীতি ভয়াবহ ধাক্কা খায়।
এই প্রেক্ষাপটে আমাদের মনে রাখতে হবে আজকের ইউরোপজুড়ে ফিলিস্তিন প্রশ্নে চলমান ঐতিহাসিক প্রতিবাদগুলোর কথা। বিশেষ করে গত ১৫ মে নাকবা দিবসে লন্ডনে যে বিপুল জনসমাগম হয়েছিল, তা ছিল নজিরবিহীন। দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাস থেকে শিখে আমরা আজকের ফিলিস্তিন আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক কৌশল—বর্জন, বিনিয়োগ প্রত্যাহার ও নিষেধাজ্ঞা। আন্দোলনের এই শক্তিকে এখন যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে হবে।
ইসরায়েলের প্রভাবশালী পত্রিকা হা’আরেতজ নেতানিয়াহুকে দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিটার বোথার সঙ্গে তুলনা করেছে। বোথার কঠোর দমননীতি দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসনকে টিকিয়ে রেখেছিল। ১৯৮৯ সালে বোথা পদত্যাগ করলে সেই শাসনব্যবস্থার ভাঙ্গন ত্বরান্বিত হয়।
আজ স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা আন্দোলনের সামনে এক বিশাল বাধা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনটি স্তম্ভকে ভর করে তাঁর ক্ষমতা টিকে আছে। তাঁকে মোকাবিলা করতে হলে আমাদের অবশ্যই সেগুলো চিনে নিতে হবে। পরিকল্পিতভাবে সেই স্তম্ভগুলো ভেঙে ফেলার দীর্ঘ লড়াইকে পরিচালনা করতে হবে।
প্রথমত, ইসরায়েলের মধ্যে শক্তিশালী বিরোধিতা এবং নতুন নেতৃত্বের উদ্ভব খুবই জরুরি। এই নতুন নেতৃত্ব অন্তত ফিলিস্তিনিদের ওপর নিপীড়নকে রাষ্ট্রীয় কৌশল হিসেবে ব্যবহার করবে না। এমন একটি নেতৃত্বই কেবল ইসরায়েলের বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা পুনরুদ্ধারের পথে এগোতে পারে।
দ্বিতীয়ত, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে বিরোধিতার শিথিলতা। এই শিথিলতাই নেতানিয়াহুর অপরাধমূলক পদক্ষেপগুলোকে টিকে থাকার প্রধান রসদ জোগায়। যুক্তরাষ্ট্র এখনও ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে নেতানিয়াহুর দমননীতি দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
তৃতীয়ত, ইউরোপীয় দেশগুলো, আঞ্চলিক শক্তিগুলো বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ। এই তিনের সম্মিলিত প্রভাবও গত কয়েক দশকে নেতানিয়াহু বা তাঁর পূর্বসূরিদের যুদ্ধনীতি পরিবর্তনে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। কেবল গাজায় নয়, ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর থেকে তারা যত যুদ্ধ করেছে, তার প্রতিটির পেছনেই এই আন্তর্জাতিক চাপ ছিল প্রায় নিষ্ফলা।
এই তিনটি স্তম্ভ—ইসরায়েলের ভেতরের নেতৃত্ব সংকট, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক চাপের ব্যর্থতা—এই তিনের ওপর ভর করেই নেতানিয়াহু দাঁড়িয়ে আছেন। একের পর এক বিশ্বজনমতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গাজায় দখল ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর নতুন যুদ্ধ পরিকল্পনা, ‘অপারেশন গিদেওন চারিয়টস,’ এই তিনটি ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই অগ্রসর হচ্ছে।
সম্প্রতি ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও কানাডা এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতি গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই বিবৃতিতে সই করেন। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়—যদি ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ না করে, তবে তারা ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করবে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত এই ধরনের হুঁশিয়ারি কিংবা আগের সমর্থনের কোনো প্রত্যাহারই নেতানিয়াহুর নীতিতে কোনো মৌলিক পরিবর্তন আনতে পারেনি।
এই প্রেক্ষাপটে আসন্ন ‘সৌদি-ফরাসি প্যালেস্টাইন সম্মেলন’ নতুন এক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এই সম্মেলন আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর উদ্দেশ্য—প্যালেস্টাইনি রাষ্ট্র গঠনের প্রশ্নে বহুপক্ষীয় সংলাপ ও কূটনৈতিক চাপকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং গাজা সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াগুলোকে সমন্বিত করা।
ফ্রান্স ইতোমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার পথে এগোতে পারে। যুক্তরাজ্যও একই ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছে, যদিও বেশ হালকাভাবে। এরই মধ্যে ইউরোপজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থী তৃণমূল আন্দোলন এবং ইসরায়েলবিরোধী জনমত দিন দিন বাড়ছে। ফলে ভূ-রাজনীতির খাতিরে ইউরোপীয় দেশগুলোর পক্ষে নেতানিয়াহু নেতৃত্বাধীন সরকারকে আর সমর্থন করা হয়তো আগের মতো সহজ নয়।
তবে এই পাশা খেলাতে শেষ পর্যন্ত কে জিতবে তা এখনও বলা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া, ইসরায়েলের অর্থনীতি বাণিজ্যিকভাবে বিপর্যস্ত করা এবং যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার পরই সে সম্পর্কে মন্তব্য করা যাবে।
ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত
ইংরেজি থেকে অনুবাদ জাভেদ হুসেন
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ক টন ত ক র ওপর ন ব যবস থ এই প র এই ত ন র জন ত কর ছ ন ধরন র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতীয়দের সঙ্গে একটি দলের প্রত্যাশা মিলে যাওয়ায় আমরা শঙ্কিত: চরমোনাই পীর
দ্রুত নির্বাচন নিয়ে ভারতীয়দের সঙ্গে একটি দলের প্রত্যাশা মিলে যাওয়ায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শঙ্কিত বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ভারতীয়দের কোনো চাওয়া ও প্রত্যাশা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।
বৃহস্পতিবার বগুড়ার ধুনট শহীদ মিনার চত্বরে এক গণসমাবেশে এসব কথা বলেন সৈয়দ রেজাউল করীম। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) নির্বাচনব্যবস্থা, বিতর্কিত নারী সংস্কার কমিশন বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে ইসলামী আন্দোলন ধুনট উপজেলা শাখা এ গণসমাবেশের আয়োজন করে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এখন দুই ভাগে বিভক্ত। দেশপ্রেমী ও ক্ষমতাপ্রেমী। দেশপ্রেমীরা সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন চাইছে; আর ক্ষমতাপ্রেমীরা দ্রুত নির্বাচন চাইছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের জন্য ভারতীয়রাও আগ্রহী। আমাদের দেশের কিছু দলও আগ্রহী। ভারতীয়দের সঙ্গে এদের আগ্রহ মিলে যাওয়ায় আমরা শঙ্কিত।’
এ সময় হুঁশিয়ারি দিয়ে চরমোনাইর পীর বলেন, ভারতীয়দের কোনো চাওয়া ও প্রত্যাশা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘যারা নির্বাচন করছে, তাদের অতীত জানি। বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন এদের নেতৃত্বেই হয়েছিল। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে সেই সুযোগ আর কাউকে দেওয়া হবে না।’
এ সময় সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, পতিত স্বৈরাচারের লোকপ্রশাসনসহ সর্বত্র ঘাপটি মেরে আছে। তাঁরা সুযোগ খুঁজছে। এরা অন্তর্বর্তী সরকারকে কাজ করতে দিচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন আয়োজন করা।
ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘সেই কাজে প্রত্যাশা পূরণ না হলেও তারা (সরকার) সংস্কার ও বিচারের কাজে এগিয়ে নিচ্ছে। এখানে কোনো অবহেলা হলে আমরা প্রতিবাদ করব; কিন্তু নির্বাচন নির্বাচন করে দেশকে অস্থিতিশীল করার কোনো অর্থ হয় না।’
সমাবেশে অন্যদের মধে৵ বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির আবদুল হক আজাদ, যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল আলম প্রমুখ।