রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান এবং কাউন্সিলরদের পুনর্বহালের দাবিতে নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন তাঁদের সমর্থকেরা। তাঁরা দাবি আদায়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাকে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন। দাবি পূরণ না হলে ঈদের পর লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে নগরের শাপলা চত্বর থেকে ‘রংপুর মহানগরবাসী’ ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সিটি বাজারসংলগ্ন নগর ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা। এতে সড়কের এক পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা বলছেন, মেয়র-কাউন্সিলর না থাকায় আমলারা ইচ্ছামতো নগর ভবন পরিচালনা করছেন। এতে নগরবাসী বিড়ম্বনায় পড়েছেন। জন্মনিবন্ধন, নাগরিক সনদসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা পেতে সাধারণ মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

নগর ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জাতীয় পার্টির মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির, জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাকসহ জাতীয় পার্টি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে তাঁরা বক্তব্য দেননি। সাবেক কাউন্সিলর মকবুল হোসেন, ফেরদৌসী বেগম, মোখলেছুর রহমানসহ বিভিন্ন শ্রমিক ও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। সাবেক কাউন্সিলররা সিটি করপোরেশনের নানা ভোগান্তির কথা তুলে ধরে তাঁদের পুনর্বহালের দাবি জানান।

সমাবেশে সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচন বয়কট করলেও তাঁদের মেয়র ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি স্বচ্ছ ভোটে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ গত ১৯ আগস্ট তাঁকে অপসারণ করা হয়। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় সিটি করপোরেশন একটি অথর্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। টাকা ছাড়া সরকারের মনোনীত প্রশাসক কোনো কাজ করছেন না বলে তিনি অভিযোগ করেন।

মোস্তাফিজার রহমান তাঁদের পুনর্বহাল করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাত দিনের সময় বেঁধে দেন। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আগামী ১৩ জুন থেকে নগর ভবনের সামনে মঞ্চ করে লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হবে বলে তিনি ঘোষণা দেন।

২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে পুনর্নির্বাচিত হন মোস্তাফিজার রহমান। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে ১৯ আগস্ট দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম স ত ফ জ র রহম ন ক উন স সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

১৭ হাজার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪৫ হাজার মিশুক

এখন পুরো শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারি চালিত মিশুক। যেন মানুষের চাইতে এ শহরে মিশুকের সংখ্যা বেশি। রেজিস্ট্রেশনের দোহাই দিয়ে তারা রীতিমত রাজত্ব করে চলেছে এ শহরে। যেখানে বাড়তি যানবাহনের চাপে নগরবাসী কোণঠাসা, সেখানে এ হাজার হাজার মিশুক মানুষকে আরও পাগল করে তুলছে।

এখন প্রশ্ন হলো, কোথা থেকে আসলো এত মিশুক? নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কি এত হাজার হাজার মিশুকের রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে?

এক জরিপে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন থেকে মাত্র ১৭ হাজার ৩শ ৪২টি মিশুককে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মিশুক চলছে কমপক্ষে ৪৫ হাজারেরও বেশি। এবং তারা সবাই বলছে তাদের মিশুক রেজিস্ট্রেশন করা। তাহলে তারা এত মিশুকের রেজিস্ট্রেশন পেল কোথা থেকে?

অনুসন্ধানে জানাগেছে, একটি মিশুকের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে প্রায় ১০টিরও বেশি মিশুক চলছে এ শহরে। কিছু অসাধু মিশুক মালিকরা সিটি কর্পোরেশনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে একটি মিশুকের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার নকল করে আরও দশটি মিশুকের পিছনে সাঁটিয়ে পুরো দমে ব্যবসা করে যাচ্ছে।

শুধুমাত্র নাম্বার ভিন্ন ছাড়া রেজিস্ট্রেশন কার্ডগুলো দেখতে প্রায় একই রকম হওয়ায় বুঝার উপায় নেই যে, কোনটা আসল আর কোনটা নকল। আর এ সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়ে ওই চক্রটি লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ওই চক্রটির কারণে হাজার হাজার মিশুকের চাপে শহরে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট, আর এ যানজটের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে নগরবাসী।

শুধু তাই নয়, ওই মালিক চক্রটির কারণে প্রকৃত মিশুক মালিকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তারা এ বিষয়ে একাধীকবার সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গণমাধ্যকর্মীদের।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, সিটি কর্পোরেশনের চরম গাফলতির কারণেই শহরের আজ এ অবস্থা। তাদের নিয়মিত অভিযান থাকলে কোনভাবেই এ শহরে রেজিস্ট্রেশনবিহিন কোন মিশুকই চলতে পারবে না। তারা কি এ শহর দিয়ে চলাচল করে না? নাকি বিমানে চলে?

তারা যদি এ শহর দিয়েই চলাচল করে থাকে, তাহলে তাদের চোঁখে কি পড়েনা এসব অনিয়ম। তারা কেন এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? নগরবাসীর এত দুর্ভোগ পোহলেও শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে তারা কেন এতটা উদাসীন। যদি তারা না পারে জনসম্মুখে বলুক, ছেড়ে দিক চেয়ার। সরকার অন্যজনকে বসাক। কিন্তু না।

তারা সেটা করবে না। আপনারা কাজও করবেন না আবার চেয়ারও আকড়ে ধরে রাখবেন, এ দু’টো একসাথে চলতে পারে না। হয় কাজ করুন, জনদুর্ভোগ দূর করুন আর নয়তো সব ছেড়ে দিয়ে চলে যান।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি রহমান বিশ^াস বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট নিরসনের জন্য সিটি কর্পোরেশন আগে যে রিকশার লাইসেন্সগুলো ছিলো, সেগুলোকে কনর্ভাট করে মিশুকের নামে দিয়েছে। কিন্তু পরবির্ততে কিছু দুষ্ট লোক সেই লাইসেন্সগুলোকে রাতারাতি কপি করে ফেলে।

এ কপি করার ফলে শহরে মিশুকের সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে যানজট নিরসনে সিটি কর্পোরেশন যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলো সেটা অনেকাংশে ব্যর্থ হয়ে যায়। কারণ, একই নাম্বারের গাড়ী যদি ৫টা ছয়টা চলে তাহলে কিভাবে যানজট নিরসন হবে। একই নাম্বারের গাড়ী একটিই থাকতে হবে। তাহলে গাড়ীর সংখ্যাও কম থাকবে আবার যানজটও কমে যাবে।

তিনি বলেন, আমরা হাতে নাতে একটি প্রিন্টিং প্রেসে মিশুকের প্লেট জাল করতে দেখে সিটি কর্পোরেশন এবং থানার ওসিকে কল করেছিলাম। আমরা অনেকক্ষন অপেক্ষা করেছিলাম ভাবছিলাম, হয়তো আইনগত কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে। কিন্তু আমরা প্রায় তিনঘন্টা অপেক্ষা করার পর যখন দেখলাম তাদের কোন সাড়াশব্দ নাই, তখন এক কথায় নিরাশ হয়ে ফিরে যাই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমরা যারা প্রকৃত মিশুক মালিক রয়েছি আমরা নিজেরাও এ বিষয়ে খুব চিন্তার মধ্যে থাকি। কারণ, জানিনা ওই দুষ্ট লোকেরা আবার আমাদের গাড়ীর লাইসেন্সের কপি করে ফেলছে কি না! যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে ধরা খেলেতো আমারও সমস্যা হতে পারে।

এমনও হতে পারে কপি করার অপরাধে আমার নিজের লাইসেন্সই বাতিল করে দিতে পারে সিটি কর্পোরেশন। তখন কি তাদেরকে আমি বুঝাতে পারবো যে, আমি এটা করি নি। তাই বলছি, এসব বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

সবশেষ তিনি একটি সুখবর দিয়ে বলেন, সিটি কর্পোরেশন একটা ডিজিটাল প্লেট দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে। যদি সেটা করা হয় তাহলে এ প্লেটটা কোনভাবেই কপি করা সম্ভব নয়। এটা রংপুরেও হয়েছে। আর আমরা এটা যাচাই করেও দেখেছি। ওই প্লেটটা হাতে পেলেই আশাকরছি নকল নাম্বার নিয়ে যে মিশুকগুলো চলছে সেটা বন্ধ হয়ে যাবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৭ হাজার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪৫ হাজার মিশুক
  • ১৭ হাজার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪৫ হাজার মিশুক