স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও মার্কা দেখে ভোট দিলে পরিবর্তন সম্ভব নয়: সারজিস আলম
Published: 28th, May 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশের বড় বড় শহরগুলোতে একটা আন্দোলন হলে দেশের পরিবর্তন সম্ভব নয়। যদি ভালো নেতা খোঁজেন, তার আগে ভালো ভোটার হতে হবে। বিবেকসম্পন্ন নেতা খোঁজেন, আগে বিবেকসম্পন্ন ভোটার হতে হবে। নিজের বিবেককে কয়েকটা টাকার কাছে, কিছু সুযোগ-সুবিধার কাছে, একজন নেতার কাছে, একটা দলের কাছে, একটা মার্কার কাছে বিক্রি করে দিয়ে যদি এলাকার ভালো খুঁজি, তাহলে সেটা কোনো দিনও সম্ভব নয়।’
আজ বুধবার বেলা একটার দিকে দিনাজপুরের বিরল উপজেলা শহরে বকুলতলা এলাকায় পথসভায় এ কথা বলেন সারজিস আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা সারোয়ার তুষার, আতিক মুজাহিদ, সাদিয়া ফারজানা, রেজাউল ইসলাম, দিনাজপুর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা একরামুল হক, অন্তু খান প্রমুখ।
দল কিংবা মার্কা নয়, জনগণের পাশে থাকেন, এমন ব্যক্তিকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সারজিস বলেন, ‘রাজনৈতিক দল কিংবা মার্কা দেখার দরকার নেই। যে মানুষটা ভালো, টাকা ছাড়া জনগণের কথা বলেন, কাজ করেন, তাঁকে আগামীর বাংলাদেশে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে হবে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও যদি আপনারা দলান্ধ থাকেন, মার্কা দেখে অন্ধভাবে ভোট দেন, তাহলে বাংলাদেশের পরিবর্তন খুব বেশি সম্ভব নয়।’
সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা বিগত সময়ে দেখেছি, রাজনৈতিক নেতারা ইলেকশনের আগে আপনাদের কাছে ভোট চাইতে আসে। পরের পাঁচ বছর আর খুঁজে পাওয়া যায় না। আমরা মনে করি, আগামীর বাংলাদেশে যারা নেতৃত্ব দিতে চায়, তাদের বাংলাদেশের প্রতিটা জেলা-উপজেলা-ইউনিয়নে ঘুরতে হবে। মানুষ কী চায়, রাস্তাঘাটগুলোর কী অবস্থা, হাসপাতালগুলোতে শুধু বিল্ডিং আছে, নাকি ডাক্তারও আছে, থানায় ভালো পুলিশ কর্মকর্তারা আছে, নাকি থানায় কথা বলার আগে টাকা চাওয়ার মতো পুলিশ কর্মকর্তা আছে, ভূমি অফিসে মানুষ তাঁর প্রাপ্য সেবাটুকু সঠিকভাবে পাচ্ছে কি না, আমরা সেগুলো দেখতে এসেছি।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগ করতে চাওয়া উচিত হয়নি: মাহমুদুর রহমান মান্না
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ করতে চাওয়া উচিত হয়নি। ২০ কোটি মানুষ তাঁকে একবাক্যে সমর্থন জানিয়েছিলেন, এটা কোনো সাধারণ বিষয় নয়।
‘জনদুর্ভোগ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন’ শীর্ষক গণশক্তি সভার মতবিনিময় সভায় এ কথাগুলো বলেন মান্না।
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
অধ্যাপক ইউনূসকে রাজনীতি বুঝতে হবে উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘রাজাকে রাজনীতি জানতে হবে। তিনি মেধাবী মানুষ, চাইলেই সেটা পারবেন। কিন্তু এই মানুষ যদি করিডোর দেওয়ার কথা বলেন, সেটা হবে অবুঝ শিশুর মতো কাজ।’
সংস্কারকে চলমানপ্রক্রিয়া উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি করছি। তবে জনগণের দল ক্ষমতায় এলে কাজটা সহজ হবে। “এ” দল বাদ দিয়ে “বি” দলকে বসানোর লড়াই আমরা করি না। কিন্তু মানুষ যদি “বি” দলকে ভোট দেয় সেটা আপনাকে মেনে নিতে হবে। এটাকে প্রত্যাখ্যান করলে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।’
স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, একজন সংসদ সদস্য তাঁর নির্বাচনী অঞ্চলে সর্বেসর্বা থাকেন। তাই স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হতে হবে প্রভাবমুক্ত ও ত্রুটিমুক্ত। যেখানে মানুষ আনন্দিত হয়ে ভোট দেবেন৷
নির্বাচিত সরকারের সুবিধা উল্লেখ করে মান্না বলেন, ক্ষমতাকে এমনভাবে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, যেখানে জনগণের বক্তব্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ থাকে। নির্বাচিত সরকারের কাছে সেই সুযোগ প্রত্যাশা করা যায়।
অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ও নদী বন্দরগুলোর দখলমুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘নগণের কাছে এটাই ছিল সংস্কার। কিন্তু সরকার সেটা পারেনি। আমার মনে হয় সরকার এই সিদ্ধান্তগুলো নিতে ভয় পায়। সরকার বড় মিছিলকে ভয় পায়। আমরা দেখেছি, মিছিলের মুখে আদালতের রায় পরিবর্তন হয়েছে। ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করা হয়েছে।’
অধ্যাপক ইউনূসের ক্ষমতার মেয়াদ প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অনেকে বলেন তাকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখা হোক। আচ্ছা তিনি কীভাবে থাকবেন? তিনি কি নির্বাচন ছাড়াই থাকবেন? বিনা ভোটেই থাকবেন? নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালালে এটা হিতে বিপরীত হবে। মানুষের উচিত, চোরকে ভোট না দেওয়ার জন্য প্রচারণা চালানো।
মতবিনিময় সভার সভাপতিত্ব করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা দ্রুত নির্বাচনের কথা বলছি। মনে হচ্ছে নির্বাচনই যেন একমাত্র কাজ। অনেক রাজনীতিবিদ বলছেন, সরকারের কোনো সফলতা নেই। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে, প্রধান উপদেষ্টার কাছে কোনো জাদুর কাঠি নেই, যে তিনি রাতারাতি সব সমস্যা সমাধান করে নির্বাচন দিয়ে দিতে পারবেন।’
সচিবালয়ে অস্থিরতা সৃষ্টিকে হতাশাজনক উল্লেখ করে গণমুক্তি জোটের মহাসচিব মো. আক্তার হোসেন বলেন, মানুষের দায়িত্ব যাঁরা সঠিকভাবে পালন করবেন, তাঁরাই হবেন সরকারি কর্মচারী। তাঁরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান থাকা উচিত।’
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরের যুগ্ম সচিব ওমর ফারুক, নাগরিক মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী আহসান উল্লাহ, আহাদ নূর চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী আয়েশা সিদ্দিকা, শারমিন সুলতানা চৈতী, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মজুমদার, অধ্যাপক হুমায়ুন কবির, নারী নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌসী আক্তার প্রমুখ।